রাজনীতির আবর্জনাগুলো বাদ দিলে আপনার সাথে আমার দ্বিমত খুবই সামান্য।
কয়েকদিন আগে মিডিয়া অঙ্গন হঠাৎ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে সরব হয়ে উঠতে দেখলমা। লন্ডনের হাউজ অফ লর্ডস এ আয়োজিত একটি সেমিনার কে কেন্দ্র করে আওয়ামী মিডিয়া অযথা উত্তেজনা তৈরি করার চেষ্টা করল। এই বিষয় নিয়েই কিছু কথা বলতে চাই।
বলা হলো সেমিনারটি বিতর্কিত , কেন?জামাত ঘরানার কেউ এই সেমিনার আয়োজনের পেছনে আছে.....
প্রথম কথা হচ্ছে সেমিনারটি মোটেই বিতর্কিত ছিলনা বরং সরকার বান্ধব মিডিয়া সরকারের ব্যর্থতা ঢাকতে এটাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছে।
আরিফের পোষ্টে অনেকগুলো মিথ্যাচার করা হয়েছে যেখানে আমি রেফারেন্স সহ ভিন্ন মতামত দিয়েছিলাম কিন্তু দুর্ভাগ্য জনক ভাবে সে মতামত মুছে দিয়েছে এবং আমাকে ব্লক করেছে। আমি এতে মোটেও অবাক হইনি কারন এটাই হচ্ছে প্রতিক্রিয়াশীলদের আচরণ। তর্কে বা যুক্তিতে না পাড়লে গায়ের জোড় খাটিয়ে কোন সত্যকে মিথ্যা প্রমান করা।
শুরুতে বলে নেয়া ভাল আমি এখানে কাউকে ডিফেন্ড কারার জন্য লিখছিনা বরং প্রকাশিত একপেশে খবরের অন্তরালে আরো কিছু খবর বা ভিন্ন মত তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
প্রথম আলো বলেছে, জামায়াতের সম্পৃক্ততার অভিযোগ, প্রবাসী বাংলাদেশিদের বর্জন , প্রশ্ন হলো প্রবাসীরা বর্জন করবেতো তাদেরকে আমন্ত্রন জানানো হলেই!! ঐ সেমিনারে আমন্ত্রন ছিল সীমিত কারন ওখানে কোন দলীয় সমাবেশের জন্য সেমিনারটি ছিলনা বরং ১৯৭৩ এক্টকে সরকারের বলা আন্তর্জাতিক মান নিয়ে বিশ্লেষনের জন্যই ছিল ঐ সেমিনার।
সেমিনারটিতে আমন্ত্রিত ছিল মুলত বিভিন্ন সংগঠন যেমন এমেনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল,হিউমেন রাইটস ওয়াচ ইত্যাদি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ থেকে এই আইনের মাধ্যমেই বিচার করা সম্ভব বলে যারা দাবী করছে তাদের কয়েকটি সংগঠনকেও আমন্ত্রন জানানো হয়েছিল, কিন্তু আওয়ামী বান্ধব ঐ সমস্ত সংগঠন কোন এক অজ্ঞাত কারনে ঐ প্রোগ্রামে জয়েন করেনি। তবে সরকারের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠান লন্ডনস্থ হাই কমিশনার।
এখন দেখি যেই এক্ট নিয়ে এত কথা সেই এক্ট নিয়ে কোথায় আপত্তি...
যুদ্ধাপরাধের বিচারের সাথে কারো দ্বীমত নাই বরং প্রশ্ন উঠেছে স্বচ্ছতা নিয়ে। সরকারের পলিটিকাল মোটিভ এর জন্য মুলত দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে।
যে আইন দিয়ে বিচার করা হবে তা নিয়েই মুলত এই আশংকা জেগে উঠেছে। সরকারই বরং এই সমস্যার সুত্রপাত করেছে, ১৯৭৩ এক্টকে আন্তর্জাতিক মানের সাথে তুলনা করে বা বিচারকে আন্তর্জাতিক মানের করার ঘোষনা দিয়ে।
ঢাকার যে সমস্ত রাজাকারদের বিচার করতে চায় সরকার ,শুরুতে তাদেরকে ধরে সরাসরি ঝুলাইয়া দিলেও জনগন প্রতিবাদ করত না, কিন্তু আওয়ামী সরকার এই বিচার নিয়ে এক ডিলে দুই পাখি মারতে যেয়ে এখন পুরো বিষয়টাকে চ্যালেন্জের মুখোমুখি করে ফেলেছে। সরকার চেয়েছিল বিচারের নামে প্রতিপক্ষ দমন এবং সাথে সাথে আন্তর্জাতিক মানের ঘোষনা দিয়ে বিদেশী প্রভুদেরও খুশি করতে। এখানেই ঘটে বিপত্তি? সাধারনভাবে জনগনের দাবীই হলোএখানে মুখ্য।
আন্তর্জাতিক মানটান কোন ইস্যুর দিকে আমাদের নজর দেয়ার প্রয়োজন ছিল কি?
এখন এর পক্ষে বিপক্ষে এত প্রচার হয়েছে যে সরকারের পক্ষে যা তা করে কোন রকমে ক্যান্গারু ট্রায়াল করাও সম্ভব নয়।
১৯৭৩ এক্ট নিয়ে সমালোচনা; ১৯৭৩ এক্টের সমালোচনা আসে প্রথমে আওয়ামী বান্ধব প্রত্রিকাগুলোতে।
১। 1973 War Crimes Act: Getting it right
২। War crimes law 'falls short এই সমালোচকে ভাল করে চিনে রাখুন.....??
বিশেষজ্ঞরা এই আইনকে নিয়ে যা বলেছেন;
সরকারের পক্ষ থেকে ১৯৭৩ এক্টের আওতায় আন্তর্জাতিক মানের সাথে সামন্জস্য পূর্ন বিচার করা হবে ঘোষনা দেয়ার পরপরই আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ বিশেষজ্ঞরা ঐ আইনকে নিয়ে বলেন যে তা ওয়ার্লড স্ট্যান্ডার্ড নয়।
সাথে সাথে দেশী আইন বিশেষজ্ঞগনও একই মতামত দেন, এবং আইন সংশোধনের পরামর্শ দেন।
এরই মধ্যে সরকার এই বিষয়গুলো আমলে নিয়ে এই আইনে কিছুটা পরিবর্তন আনে, বিস্তারিত পাবেন এই পোষ্টে ইফতেখার মোহাম্মদের মতামতে
কিন্তু সরকার যে পরিবর্তন এনেছে বলে দাবী করছে তাও আন্তর্জাতিক মান পুরোপুরি বজায় রাখতে পারছেনা। আর এই জন্যই হাউজ অফ লর্ডসে ঐ সেমিনার। ঐ সেমিনারে কেউই বিচারের বিপক্ষে কথা বলেনি ইভেন যাদেরকে সোকল্ড জামায়েতের লোক বলা হচ্ছে।
সেমিনারটির উদ্দেশ্য সম্পর্কে লর্ড এভেবারির(আয়োজক) মুখ থেকেই শুনুন;
The purpose was not to challenge the right of Bangladesh to try the perpetrators of these crimes, but to ensure that no objection to the proceedings would be likely to arise on the grounds that the 1973 Act was not in conformity with developments in the legal standards developed over the last 37 years.
বিচারের সচ্ছতার দাবী আমাদের সকলেরই।
একটা জগাখিছুড়ি বিচার করে নতুন করে ইতিহাস করার কোন মানে নেই। এইটার সাথে কারো দ্বীমত আছে বলে আমার মনে হয়ন। আমার পারসোনাল ভিউ হচ্ছে সরকার ঐ সেমিনারে অংশগ্রহন করে ১৯৭৩ এক্টের বিরুদ্ধে যারা প্রচার চালাচ্ছে তাতে সরকারের অবস্থান তুলে ধরার একটা সুযোগ ছিল,
event was organised by parliamentary
HR group and chaired by someone who has
always been known as the pro-AL
lobby for last 40 years
আয়োজকদের সাথে আওয়ামী লবিস্টদের খাতির বহু পুরাতন এবং গভীর হওয়া সত্ত্বেও সরকার প্রফেশনালী এই ইস্যুকে মোকাবেলাতো করলইনা বরং ঐটাকে পলিটিকালাইজড করে জামায়েতকে কিছু ক্রেডিট দিয়ে দিল।
আমাদের মত আমজনতার ভিতরে প্রশ্ন তৈরি হওয়া স্বাভাবিক সরকার কি আসলেই লিগালি প্রস্তুত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার জন্য?!
আইনের যে ধারা এখনো প্রশ্নের সম্মুক্ষীন: ইন্টারন্যাশনাল বার এসোসিয়েশনের যুদ্ধাপরাধ বিষয়ের চেয়ার স্টুয়ার্ট আলফোর্ড ১৯৭৩ এক্ট সম্পর্কে, এখনো যে বিষয়গুলো নজর দিতে হবে;
১। "মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধকে" সঠিকভাবে সংজ্ঞায়িত করা।
২। আইনটির ৪(২) ধরা
৩। উপধারা ৬(৫)
৪। ধরা ৮ এর উপধারা ৫,৬ এর সংশোধন।
এই গুলোর সাথে একাত্ততা ঘোষনা করে বাংলাদেশ বার এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন ১৯৭৩ আইনের অনেকগুলো ধারা বর্তমান সময়ের আন্তর্জাতিক আইনি মানদন্ডের সাথে কোনভাবেই সঙ্গতিপূর্ন নয়!?
সুত্রঃ লন্ডন বাংলা এবং সাপ্তাহিক বাংলাদেশ(লন্ডন থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক)
পরিশেষে বলতে চাই যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করতে যেয়ে সরকার যাতে নতুন কোন অপরাধ না করে বসে সে দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
এই বিচার যাতে নতুন করে কোন ইস্যু তৈরি না করে সেদিকেও লক্ষ্য রাখা উচিত। এই বিচারকে দলীয় দৃষ্টিকোন থেকে একেবারে শতমাইল দুরে রাখতে হবে অন্যথায় এর মান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে। একে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে নয় বরং দেশবাসীর আত্বার দাবী মনে করে এই মহান দায়িত্ব সরকারকে এই আমলেই শেষ করার আহবান জনাই।
লর্ড এভেবারির প্রেস রিলিজটি দেখতে পাবেন এইখানে;
War Crimes trials should comply with international standards
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।