Right is right, even if everyone is against it; and wrong is wrong, even if everyone is for it
আমি রনি, ঢাকা শহরের পথে পথে ঘুরে ফুল বিক্রী করি। সেই কাক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে শাহবাগ থেকে পাইকারী দামে তাজা ফুল কিনে সারাদিন সেগুলো বিক্রী করি। আর রাতে রাস্তার ধারে কোনো এক জায়গায় ঘুমিয়ে পরি। এই পৃথিবীতে আমার আপন বলতে কেউ নেই। মা-বাবা, ভাই-বোন কেউ নেই আমার।
যেদিন থেকে বুঝতে শিখেছি সেই দিন থেকেই শুধু জানি আমি একজন পথশিশু। লোকে আমাকে এই নামেই ডাকে। ঢাকা শহরের বিভিন্ন রাস্তায় এবং বিভিন্ন পার্কে আমি ফুল বিক্রী করতে যাই। বিশেষ কোনো দিবস থাকলে আথবা রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম বেশি থাকলে আমার ফুল বিক্রী ভালো হয়। একদিন কাওরান বাজারে ট্রাফিক সিগন্যাল এ ফুল বিক্রী করছিলাম।
কিছুদূর যেতেই চোখে পড়লো একজন বড় সাহেব এর বিশাল দামী পাজেরো গাড়ি। আমি মনে মনে খুশি হলাম এই জন্য যে সাহেব মনে হয় আমার থেকে ফুল কিনবে। এই ভেবে আমি কাছে যেয়ে সাহেব এর গাড়ির জানালায় টোকা দিলাম। সাহেব এর গাড়ির জানালা আস্তে আস্তে খুলতে লাগলো। আমিও ফুল গুলো বড় সাহেবের দিকে বাড়িয়ে দিলাম কেনার জন্য।
হঠাৎ বড় সাহেব হাতের পাঁচ আঙ্গুল দিয়ে আমার গালে জোড়ে এক চড় বসিয়ে দিলেন। চমকে উঠলাম আমি। যেই হাত থেকে আমি ফুল বিক্রীর টাকা সংগ্রহ করবো ভেবেছিলাম সেই হাত থেকেই আপ্রত্যাশিত ভাবে টাকার বদলে পেলাম চড়। কান্নায় আমার দুচোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরতে থাকলো আর বড় সাহেব আনবরত আমাকে আকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করে যেতে লাগলেন। বিশ্বাস করুন আমার তেমন কোনো দোষ ছিলোনা।
আমার আপরাধ ছিল একটিই আর সেটি হোলো আমার নিশ্বাস বড় সাহেবের দামি গাড়ির জানালা নষ্ট করে দিয়েছে। হঠাৎ ট্রাফিক সিগন্যাল এর লাল বাতি নিভে সবুজ বাতি জ্ব্লে উঠলো। আমি বড় সাহেবের গাড়ির কাছ থেকে চলে এসে রাস্তার ধারে এসে দাড়ালাম,বড় সাহেব এর গাড়ী ও চলে গেলো। আমি পথের ধারে বসেই আমার যন্ত্রনায় আক্রান্ত গাল ধরে কাঁদছিলাম আর ভাবছিলাম,মানুষ এতো নির্দয় কিভাবে হতে পারে। আমি তো কোনো আন্যায় করিনি তবুও কেনো আমাকে আঘাত পেতে হলো ? বড় সাহেবের হাত আমার গালে আঘাত করার সাথে সাথে আমার মনেও আঘাত করলো।
সেই দিন থেকে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আমি একদিন বিশাল বড়লোক হবো। আমাকে বড়লোক হতে হবে। আমারো একদিন বড়সাহেবের মতো বিশাল দামি গড়ী থাকবে। সেই গাড়ীর জানালা আমি সবসময় খোলা রাখবো। আর গাড়ীর ভেতরে রাখবো অনেকগুলো টকটকে লাল তাজা গোলাপ ফুল।
আমার গড়ীর কাছে এসে কেউ ফেরৎ যাবেনা। আমার মতো কাউকে চড় খেতে হবেনা। আমার গড়ীর জানালা দিয়ে আমি সবাইকে মমতা আর ভালোবাসা বিলিয়ে দেবো। এভাবে ভাবতে ভাবতে কখন যে পথের ধারেই ঘুমিয়ে পরলাম টের পেলাম না। ঘুমের মাঝেই আমি যাত্রা শুরু করলাম নতুন গন্তব্যে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।