http://profiles.google.com/mshahriar
ঢাবিতে পড়ার সময় একদিন ডিপার্টমেন্টের বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলাম৷ শীতের সুন্দর সকাল৷ সোনা রঙা রোদে ঝলমল করছে চারদিক৷ বারান্দায় দাঁড়িয়ে তুখর আড্ডায় মুখর আমরা৷ এমন সময় খুব জোরে বিস্ফোরণের শব্দ৷ আমরা ভাবলাম বোধহয় আমাদের সোনা-রূপা-তামার ছেলেরা পরস্পরকে বোমা মেরে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে, তাই আমরা এরকম আরো বিস্ফোরণের অপেক্ষায় কান পাতলাম৷ কিন্তু দেখা গেলো ঘটনা অন্য৷ যে বিস্ফোরণের শব্দ আমরা শুনেছি, তা বোমার নয়, মানুষের মাথা বিস্ফোরণের শব্দ৷ বিস্ময়ে আমরা বাকরূদ্ধ হয়ে গেলাম৷
রাস্তায় নেমে দেখলাম কি ঘটনা৷ এক বৃদ্ধ জানালেন, তিনি ফুটপাত ধরে হেঁটে যাচ্ছিলেন৷ পাশেই রাস্তায় রিকশায় বসে একাকী যাচ্ছিলো এক তরুণী৷ হঠাৎ ট্রাক এসে ধাক্কা দিলো রিকশাটাকে৷ তরুণী ছিটকে পরলো রাস্তায়৷ ট্রাকের ড্রাইভার ব্রেক কষলো প্রাণপণে, ট্রাকটা থেমে গেলো রাস্তায় পরে যাওয়া তরুণীর মাথার ঠিক পেছনটায়৷ বৃদ্ধ তরুণীকে বললেন, এই মেয়ে, তোমার কিছু হয় নি, উঠে পরো৷
তরুণী হয়তো উঠতো৷ সে নিশ্চয় আমাদের মহিলা রাজনীতিবিদ না যে রাস্তাতেই শুয়ে থাকবে৷ কিন্তু ঠিক সে মুহূর্তে ট্রাকের হেল্পার চেঁচিয়ে উঠলো, ওস্তাদ টান মারেন৷
ওস্তাদ টান মারলো৷ ট্রাকটা সোজা চলে গেলো তরুণীর মাথার উপর দিয়ে৷ আর সেই মাথা বিস্ফোরনের শব্দ পেয়েই আমরা বিহ্বল হয়ে গেছিলাম৷
আমি দেখেছিলাম সেই তরুণীর বিস্ফোরিত মাথা৷ না, সে দৃশ্য বর্ণনা করার ভাষা কারোরই নেই৷ কিন্তু সেই সে শব্দ- ওস্তাদ টান মারেন? সে শব্দ কতোবার শুনলাম এর পরে? সে শব্দে মরে গেলো বন্ধুর বোন, সে শব্দে মরে গেলো শিশু হামিম৷ আরো কতো প্রাণ ঝরে গেলো সে শব্দে কে তার হিসাব রাখে?
সম্প্রতি একই রকমভাবে মারা গেলো মটর সাইকেল আরোহী শাহিন আর তার স্ত্রী শম্পা৷ সেখানেও একইরকম কাহিনী৷ মটর সাইকেলটাকে ধাক্কা দেয়ার পর থেমে যায় বাসটা৷ আর তখনই হেল্পারের চীৎকার- ওস্তাদ টান মারেন! ওস্তাদ টান মারে, আর বাসটা চলে যায় ওদের মাথার উপর দিয়ে৷
এইসব দুর্ঘটনা, এইসব অনাহুত, অপঘাত মৃত্যু বড় করুণ, বড় দুঃখের৷ দুঃখের হলেও আমাদের এই ঠাটকাবাজির দেশে এমন মৃত্যু অহরহই ঘটে৷ আমরা দুঃখ পাই, কখনও কখনও ক্ষোভে দুঃখে কিছু গাড়ি টারি ভাঙচূর করি, আবার ভুলে যাই৷ তারপরও, যখন জানতে পারি যে দুর্ঘটনার পরও কারো বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিলো, কিন্তু এই টান মারার ধাক্কায় তার বেঁচে থাকা হলো না, তখন কেমন জানি লাগে৷ আফসোস হয়৷ মনকে সান্ত্বনা দিই, তার নিয়তিই এমন ছিলো, তাই তার বেঁচে থাকা হলো না৷
এই সময়, এই দেশে জন্মে দিনকে দিন কেমন জানি নিয়তিবাদি হয়ে যাচ্ছি! কোথায় সেই প্রতিবাদ, বিক্ষোভ? কোথায় সেই বিদ্রোহী, যার সব ভাঙচূর করার কথা ছিলো? ভগবানের বুকে পদচিহ্ন এঁকে দিবার কথা ছিলো যার, সে আজ সিগারেটের মাথায় আগুন জ্বালিয়ে বলে, লাভ নাই লাভ নাই৷ এইসব প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, সকলি অর্থহীন৷
শুধু যখন আর্জেন্টিনা বা ব্রাজিলের খেলা দেখার সময় বিদ্যুৎ থাকবে না, তখন না হয় কিছু ভাঙচূর করবো!
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।