আমার সম্পর্কে বলার মতো কিছু নেই।
সঙ্গীতশিল্পী ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ :
বিশ্ববরেণ্য সঙ্গীতজ্ঞ সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ (১৮৬২ - ১৯৭২) একজন বাঙালি সঙ্গীতজ্ঞ। বাবা আলাউদ্দিন খান নামেও তিনি পরিচিত ছিলেন। সেতার ও সানাই এবং রাগ সঙ্গীতে বিখ্যাত ঘরানার গুরু হিসাবে সারা বিশ্বে তিনি প্রখ্যাত। মূলত সরোদই তাঁর শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বাহন হলেও সাক্সোফোন, বেহালা, ট্রাম্পেট সহ আরো অনেক বাদ্যযন্ত্রে তাঁর যোগ্যতা ছিল অপরিসীম।
আলাউদ্দিন খাঁর জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার শিবপুর গ্রামে। তাঁর শৈশব কাটে মূলত এক সঙ্গীত কাননে । ফলে সঙ্গীতের স্বাভাবিক নেশা তাকে পেয়ে বসে শৈশবে কালেই । প্রথম তালিম গ্রহন করেন বড় ভাই সঙ্গীত সাধক ফকির আফতাবউদ্দিন খার কাছে । কিন্তু সঙ্গীতের জন্যে তাঁর অনন্ত তৃষিত আত্না সুরের অপার তৃষ্ণায় ধুকে ধুকে মরছিল যেন ।
তাই যথা সময়ে তিনি বেড়িয়ে পড়ের বিশ্ব সুরের সন্ধানে । বাংলার লোক জনপদে ঘুরে ঘুরে তিনি খুঁজে পান লোকসুরের ভান্ডার । তিনি কলকাতার বিখ্যাত সঙ্গীত সাধক গোপালকৃষ্ণ ভট্টাচার্য ওরফে নুনো গোপালের শিষ্যত্ব গ্রহন করেন । এখানে তিনি সাত বছর সরগম সাধনা করেন । পরর্বতীতে তিনি যন্ত্রসঙ্গীত চর্চা করেন ।
অমৃত লাল দত্ত ওরফে হাবু দত্তের কাছে তিনি বাঁশি , পিক্র, সেতার , মেন্ডেলীণ ,ব্যাঞ্জো প্রভূতি যন্ত্রে দক্ষতা অর্জন করেন । পরবর্তীতে তিনি পাশ্চাত্য পদ্ধতি ও দেশীয় পদ্ধতিতে বেহালা বাদন রপ্ত করেন । এছাড়া সানাই , নাকাড়া , টিকাবা সহ সকল বাদ্যযন্ত্রেই দক্ষ হয়ে উঠেন । আলাউদ্দিন খাঁ ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় জমিদার বাড়িতে ওস্তাদ আহমদ আলী খাঁর কাছে সুরের তালিম নেন । তাছাড়া রামপুরের ওস্তাদ ওয়াজির খাঁর কাছে সরোদ শিক্ষা লাভ করেন ।
ওস্তাত ওয়াজির খাঁর কাছে তিনি সেনী ঘরানার গুরুত্বপূর্ন সঙ্গীত কৌশল চর্চা করেন । ১৯১৮ সালের পরে আলাউদ্দিন খাঁ মাইহারের রাজদরবারে সঙ্গীত গুরুর আসন লাভ করেন । বিশ্ববিখ্যাত নৃত্যশিল্পী উদয় শন্করের সঙ্গে তিনি বিশ্বভ্রমণে বের হন ১৯৩৫ সালে । উপমহাদেশের সঙ্গীত ঐতিহ্য ও বৈশিষ্ট্যকে তিনি বিশ্ব সভায় তুলে ধরেন । এ সময়ে তিনি ইংল্যান্ডের রাণী কর্তৃক সুর সম্রাট খেতাব প্রাপ্ত হন ।
ওস্তাত আলাউদ্দিন খাঁ ১৯৫২ সালে সঙ্গীত একাডেমী পুরষ্কার ১৯৫৮ সালে পদ্নভূষণ পুরষ্কার ১৯৭১ সালে পদ্মবিভূষণ, ১৯৬১ সালে বিশ্ব ভারতীয় প্রবর্তিত দেশিকোত্তম খেতাব প্রাপ্ত হন । শান্তি নিকেতনে কিছু দিন অধ্যাপনাও করেন । তিনি অনেক বাদ্যযন্ত্র উদ্ভাবন এবং সরোদের আধুনিকায়ন করেন । সঙ্গীতে বিশ্বখ্যাত আলাউদ্দিন ঘরানার জনক ওস্তাত আলাউদ্দিন খাঁ হেমন্ত , দুর্গেশ্বরী , মেঘ-বাহার , প্রভাতকেলিসহ অনেক রাগরাগিনীরও উদ্ভাবক ছিলেন ।
তাঁর সন্তান ওস্তাদ আলী আকবর খান ও অন্নপূর্ণা দেবী নিজস্ব ক্ষেত্রে উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
আচার্যের বিখ্যাত শিষ্যরা হলেন পন্ডিত রবি শংকর, পন্ডিত নিখিল ব্যানার্জী, বসন্ত রায়, পান্নালাল ঘোষ সহ আরো অনেকে। আচার্য আলাউদ্দিন খান সাহেব নিজেও অনেক বিখ্যাত গুরু হতে দীক্ষা নিয়েছেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন কিংবদন্তীতুল্য ওস্তাদ ওয়াজির খান।
কয়েকজন বিখ্যাত শিষ্যঃ রবি শংকর, নিখিল ব্যানার্জী, পান্নালাল ঘোষ।
১৯৭২ সালের ৬ নভেম্বর এই মহাসঙ্গীত সাধক পরলোক গমন করেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।