বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ
ওস্তাদ আলী আকবর খাঁন।
আজ সকালে শুনলাম যে তিনি গতকাল চলে গেছেন।
ওস্তাদ আলী আকবর খাঁন।
কত কথা যে মনে পড়ছে ...
১
সেই ১৯৯৮/৯৯ সালের কথা।
আমার এক ছোট ভাই, সালাউদ্দীন শান্তুনু, পন্ডিত শিবকুমার শর্মার কাছে সন্তুর শিখত। প্রায়ই ইন্ডিয়া যেত।
তো, একবার আমি সালাউদ্দীন শান্তুনুকে বললাম যে-আমি আলী আকবর খাঁ সাহেবকেই উপমহাদেশের জীবিত শ্রেষ্ট ধ্রুপদী শিল্পী মনে করি- পন্ডিত শিবকুমার শর্মার ও তাইই মনে করেন কিনা সম্ভব হলে সুকৌশলে জেনে নিও।
সালাউদ্দীন কয়েক মাস পর বোম্বে থেকে ফিরে এলো।
বলল, হ্যাঁ, পন্ডিতজীও আলী আকবর খাঁ সাহেবকেই উপমহাদেশের জীবিত শ্রেষ্ট ধ্রুপদী শিল্পী মনে করেন।
২
ওস্তাদ আলী আকবর খাঁন আমাকে আমার ২১ বয়স বয়েসে
ভীষনই এলোমেলো করে দিয়েছিলেন। আমার তৎকালীন বিশ্বাসের ভিতটি
একেবারেই ধ্বসিয়ে দিয়েছিলেন ...আমাকে ভীষনই অস্বস্তির ভিতর ফেলে দিয়েছিলেন
উপমহাদেশের জীবিত শ্রেষ্ট ধ্রুপদী শিল্পীটি। এই অস্বস্তি আমি এখনও বয়ে বেড়াচ্ছি।
অর্থহীন ও অযৌক্তিক বলে যা কোনওদিনই মেনে নিতে পারি নি
সেই ঈশ্বরের প্রতি আমাকে আমার ২১ বছর বয়েসে ওস্তাদ আলী আকবর খাঁন
তাঁর বাজনার মাধ্যমে দারুণ কৌতূহলী করে তুলতে পেরেছিলেন ।
৩
সম্ভবত
মানুষের মস্তিস্কের ভিতরের
কোনও গুপ্তস্থানে থাকে ঐশ্বরিক অনুভূতি-কোষ।
সুপ্ত থাকে; সহজে যা জাগ্রত হয় না, তবে পরম মুহূর্তে জেগে উঠতে পারে।
আমার জীবন ও আমার জীবনের যা সকল বিস্ময়কর ঘটনা-সেসবের কারণ নির্ণয়ে আমি সক্ষম
বলেই ঐশ্বরিক অনুভূতি কোষ আমার মস্তিকের ভিতরে কখনও জাগে নাই।
৪
মনোরম এ সবুজাভ ব-দ্বীপে জন্মলাভের সুফল হিসেবে
মা ও অন্যান্য নারী-তাদের কবোষ্ণ স্নেহপ্রেম
রোদ,
রাত, তার গভীরতা
একটি চড়ূই পাখির খুঁটিনাটি সৌন্দর্র্য ও বিস্ময়-
তারপর, শৈশবেই মেঘনানদীর মোহনামূখী বিস্তার দর্শন
জীবনে প্রথম সমুদ্র দেখার অনুভূতি
কিংবা
কিতাবের সুরেলা শোলোক
কিংবা
রহস্যময় আষাঢ় শ্রাবণের আলোআধাঁরি -তাদের শব্দময় বৃষ্টিপাত,
আশ্বিনের ভোর কিংবা
কুয়াশা লিপ্ত কার্তিকের ঘোর সন্ধ্যা ...ইত্যাদি
সিগারেট ও নেশা করার উন্মাতাল দিনগুলিতেও আমার
ঐশ্বরিক অনুভূতি জাগ্রত হয় নাই ...
কেবল; .....................................কেবল .............
আমার ২১ বছর বয়সে
আলী আকবর খানের মহিমাময় সরোদে
রাগ যোগিয়া কালেংগ্রা শোনার সময়-
আমার আজও মনে আছে
হে, ঈশ্বর আমি কেঁপে উঠেছিলাম
হ্যাঁ, আমি ...কী আশ্চর্য! ...আমি আমার ভিতরে প্রবল এক
ঐশ্বরিক অনুভূতি টের পেয়ে শিউরে উঠেছিলাম।
আশ্চর্য! যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব আমি অর্থহীন ও অযৌক্তিক মনে করতাম।
এবং আজও করি।
অথচ, কেবল; আলী আকবর খানের মহিমাময় সরোদে
রাগ যোগিয়া কালেংগ্রা শোনার সময়
ঐশ্বরিক অনুভূতিটি আমার মথ্যে বলে মনে হয় নি।
আজও হয় না। আমার সিডি প্লেয়ারে রাগ যোগিয়া কালেংগ্রা বাজার সময়
মনে হয় জীবন অর্থহীন নয়, জীবনের মানে আছেন, ঈশ্বর পরম যত্নভরে জীবন সাজিয়েছেন ...
এবং মানবরুপে জন্ম লয়ে আমার জীবন সার্থক। সার্থক ও পরিপূর্ন।
এ বোধ তীব্র সূখকর যৌনানুভূতিরর চেয়েও সাবলাইম
সাবলাইম এবং গভীর
এই অনুভূতিতে যৌন-পরবর্তী কোনও অতৃপ্তি বা গ্লানিবোধ নেই ...
এবং
এভাবেই আমাকে ভীষন অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছেন
উপমহাদেশের শ্রেষ্ট ধ্রুপদী শিল্পী ওস্তাদ আলী আকবর খাঁন ...
যেহেতু আমি বিশ্বাস করি ঈশ্বরের অস্তিত্ব অলীক ও অপ্রয়োজনীয় ...
৫
তখন বলেছি
সম্ভবত
মানুষের মস্তিস্কের ভিতরের
কোনও গুপ্তস্থানে থাকে ঐশ্বরিক অনুভূতি-কোষ।
সুপ্ত থাকে; সহজে যা জাগ্রত হয় না, তবে পরম মুহূর্তে জেগে উঠতে পারে।
প্রশ্ন এই-কে পারে জাগাতে?
আমি তো একজনের নামই জানি ...
গতকাল তিনি চলে গেছেন।
পুনশ্চ: যোগিয়া ও কালেংগ্রা দুটি পৃথক রাগ; আলী আকবর খাঁন অতি সুকৌশলে বুনেছেন। রাগটির লিঙ্ক এখনই দিতে পারলাম না বলে আন্তরিক দুঃখিত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।