চেনা রূপ , প্রতিদিন,
অনেক দিন যাবত কিছু লিখি নাই। লিখিতে আজ আর আগের মতো এনার্জি পাই না। এনার্জি যাহা ছিলো তাহা অন্য খাতে খরচ হইয়া যাইতেছে। দিন দিন বুড়া হইয়া যাইতেছি। আর যতই বুড়া হইতেছি ততোই মনের খেদ বাড়িতেছে।
এখনও বিবাহ হইলো না!
অনেকদিন পরে জলিল পাগলের কথা মনে পড়িলো। পাগল একখান ছিলো বটে।
এখানে একটু বলিয়া রাখা ভালো- যাহাদের হালকা চুলকানি রোগ রহিয়াছে আমার গল্পের ১০০ হাত সীমানার মধ্যে তাহাদের প্রবেশের উপরে কার্ফ্যু জারি করা হইলো।
জলিল পাগলের গল্পের সুচনায় কালিপদ ডাক্তারের ভুমিকা বড়ই যোগাযোগপূর্ণ। বেচারী MBBS ডাক্তার।
বাজারে তাহার ডিসপেনসারি রহিয়াছে। সকাল বিকালে সাইকেল যোগে ডিসপেনসারিতে উনার কম্পলসারি যাতায়াত। পরনে ইদ্রিস দর্জির বানানো ঢোলা প্যান্টালুন। গতরে হোসিয়ারি গেন্জি। মাথায় কাউবয় হ্যাট।
পেটখানা মাশাল্লাহ। যথেস্ঠ পুস্ট। সাইকেলে বসিয়া যখন পেডেল মারিয়া রাস্তা দিয়া যাইতে থাকেন , কয়েকবার দেখিয়াছি, জনাব ভুড়ির প্রবল বাঁধায় হাটু দুইখানি আন্দাজ এক মিটারের ভিতরে একে অপরের কাছে ঘেষিতে পারে না। পাঠক কল্পনা করিতে পারিতেছেন তো।
সব মানুষের কিছু কিছু সখ রহিয়াছে।
কালিপদ ডাক্তারের সখ জমিন কিনিয়া ভুস্বামী হইবার। জলিল পাগলের কিছু জমিন হয়তো ভুল করিয়া কিনিয়াছিলেন। তাহার দাম শোধ হইয়াছিলো কিনা জানিনা, তবে তাহার জন্য জলিল পাগল ষষ্ঠি হস্থে কালিপদ ডাক্তারের পিছনে দৌড়াইতেছে , দেখিবার সৌভাগ্য হইয়াছিলো বেশ কয়েকবার।
সেদিনকার কথা। যাহার জন্য গল্পের অবতারনা।
অমাবস্যার রাত হইবে। ঘুটঘুটে অন্ধকার। গ্রাম-গন্জে এখনকার মতো তখন বিজলি বাতির অতো কেরামতি ছিলো না। অন্ধকারে হাতের টর্চ লাইট অথবা হ্যারিকেনই ছিলো ভরসা। রাত বারোটা নাগাদ কালিপদ ডাক্তার তাহার টর্চ লাইটের সহায়তায় হাতে সাইকেল ঠেলিয়া রাস্তা দিয়া যাইতেছিলেন।
গ্রামের অধিকাংশ লোক তখন ঘুমে। আমার মতো কিছু কিছু হতভাগারা হয়তো তখনও জাগিয়া রহিয়াছিলো আগামীকল্য মাস্টার মহাশয়ের ষষ্ঠির ভয়ে। আর তাহাদের পিতামাতা।
আমার পিতা মহাশয় বারান্দায় বসিয়া ছিলেন। বাহিরে প্রবল চেঁচামেচির শব্দ শুনিয়া হ্যারিকেন হস্তে দৌড়াইয়া বাহির হইয়া গেলেন।
ফিরিয়া আসিয়া যাহা বর্ননা করিলেন তাহাই আজিকার গল্পের বিষয় বস্তু।
কালিপদ ডাক্তার রাস্তা দিয়া যাইতেছেন। হঠাত গর্জন শুনিলেন। কে? কিডা যায়?
উত্তর হইল- "যে আমি, কালিপদ। কালিপদ ডাক্তার।
"
বলিয়াই বুঝিতে পারিলেন-নাম বলিয়া দেওয়া ঠিক হয় নাই। হাতের টর্চ লাইট শব্দের উৎসের দিকে ধরিয়া পুরা সিউর হইলেন। কিন্তু ততক্ষনে বড় দেরী হইয়া গিয়াছে। জলিল পাগল হাতের লাঠি ঘুরাইতে ঘুরাইতে আগাইয়া আসিতেছে।
বাবারে মারে বলিয়া সাইকেল ফালাইয়া উল্টা মুখে দৌড় শুরু করিলেন।
সাথে জলিল পাগল। এ রাস্তা ও রাস্তা দৌড়াইতেছেন আর বলিতেছেন- ওরে কিডা কনে আছো গো। আমারে বাঁচাও। আমারে আজ বোধহয় মারিই ফেলবে।
কিন্তু জলিল পাগল পিছনে পড়িতেছে না।
সাথেই আসিতেছে। অবশেষে উপায়ান্তর না পাইয়া মোতালেবের গোয়াল ঘরে ঢুকিয়া পড়িলেন। সাথে জলিল পাগল। হাতে ছিল বাঁশ। গোয়াল ঘরের চটার বেড়ায় বাঁধা পাইয়া চট পট শব্দ করিয়া উঠিল।
শান্তশিষ্ঠ গরুগুলি এই অশান্ত পরিবেশের জন্য প্রস্তুত ছিলো না। প্রবল রবে হাম্বা হাম্বা ডাকিয়া উঠিয়া এদিক ওদিক ছুটাছুটি শুরু করিল।
মাঝখানে গরু এপাশে জলিল পাগল ওপাশে কালিপদ ডাক্তার। প্রান ভয়ে বলিতে লাগিলেন- বাপরে, আমারে এবারের জন্য ছাড়ি দে। আমি আর রাত বারোটায় বাড়ি যাবো না।
আমারে ছাড়ি দে তোর দোহাই লাগে বাপ।
প্রচন্ড রাগে জলিল পাগলের হাতের বাঁশ নিম্ন মুখে নামিয়া আসিলো। সামনে ছিল গরু তাহার পিঠে বাঁধা পাইয়া আর কালিপদ ডাক্তারের মাথায় পড়িল না। ব্যাথায় গরু লাফ দিয়া সরিয়া গেল। কালিপদ ডাক্তার এ যাত্রা বাঁচিয়া গেলেন।
কিন্তু নিজের উপরে কন্ট্রোল হারাইয়া ফেলিলেন। প্যান্টালুন ভিজিয়া গেল।
এদিকে জলিল পাগল বলিতেছে- কি বলিলি? মাফ! মাফ করেগা হাম তুঝে!! উল্লুক কাঁহেকা। আগে নামাজ পড়।
সাথে সাথে হুকুম তামিল হইল।
কালিপদ ডাক্তার সিজদায় পড়িয়া গেলেন। মাথা তুলিলেন বাঁশের খোঁচা খাইয়া। ভয়ে গলার শব্দ বন্ধ হইয়া গেল। চেহারা ও চক্ষুর সহায়তায় বিনয় লইয়া ভাব প্রকাশ করিলেন- কি হইয়াছে আবার! আমি তো নামাজ পড়িতেছি।
আওয়াজ হইলো- বিয়াদপ.....বেলেহাজ!!! আল্লাহু আকবার না বলিয়া সিজদায় পড়িয়াছিস্।
বল্ , আল্লাহু আকবার বল্। (আবার বাঁশ উঁচা হইল। )
কালিপদ ডাক্তার একের পর এক সিজদা দিয়া যাইতেছেন আর পিছনে জলিল পাগল লাঠি হাতে লইয়া ইমামতি করিতেছে।
এদিকে কালিপদ ডাক্তার আর জলিল পাগলের চেঁচামেচি শুনিয়া যে দুই একজন জাগনা পাইয়াছিলো এবার তাহাদের প্রবল চেঁচামেচিতে গ্রামের অন্য লোক গুলির হুশ হইলো বোধহয় গ্রামে ডাকাত পড়িয়াছে। যার হাতের কাছে যা ছিল তাহা লইয়া বাহির হইয়া আসিল।
কেউ লইল দাঁ, কেউ বা আবার লাঠি। আমার পিতা মহাশয় হ্যারিকেন লইয়া আসিয়াছিলেন।
ক্রমে সবাই মোতালেবের ঘরের চতুর্দিকে আসিয়া ঘিরিয়া দাড়াইল। উদ্দেশ্য জীবন লইয়া ডাকাত দলের কাহাকেও ফিরিয়া যাইতে দেওয়া যাইবে না। এতক্ষনে উহাদের কলরব কালিপদ ডাক্তারের কানে যাইয়া পৌছাইল।
মানুষের শব্দ পাইয়া ডুকরিয়া কাঁদিয়া উঠিলেন। বলিলেন--
ওরে আমারে গোয়াল ঘরে আটকাইয়া রাখিছে। তোমরা ইদিকে আসো।
(বেশ কিছু জায়গায় প্রকাশিত)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।