জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান আমির নিজামীর বিরুদ্ধে অষ্টম সাক্ষী খলিলুর রহমান সোমবার বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ সাক্ষ্য দেন।
ষাটোর্ধ্ব খলিলুর বলেন, ১৯৭১ সালের ২৭ নভেম্বর রাতে ধুলাউড়ি গ্রামে নিজামীর আদেশে সব পুরুষদের ধরে প্রাইমারি স্কুলের মাঠের পাশে ইছামতী নদী তীরে নেয়া হয়। সেখানে তাদের গলা কাটা হয় এবং বেয়নেট চার্জ করা হয়।
ওই দিনে রাজাকাররা গ্রামের অনেক নারীর স্বর্ণালঙ্কার ছিনতাই করেন এবং অন্তত দুই নারীকে পাকিস্তানি সৈন্যরা ধর্ষণ করে বলে জানান সাক্ষী।
সাঁথিয়ার বাসিন্দা খলিলুর রহমান ১৯৬৭ সালে ম্যাট্রিকুলেশন (এসএসসি) পাসের পর তার মামার কন্সট্রাকশন ফার্মে কাজ করতেন।
মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে প্রশিক্ষণের জন্য জুন মাসে ভারত যান খলিলুর। এরপর নভেম্বরে পাবনার সুজানগর আসেন। সুজানগর থেকে হেঁটে ২৭ নভেম্বর ধুলাউড়ি গ্রামে ঢোকেন তিনি, আশ্রয় নেন একটি বাড়িতে।
সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যার বর্ণনা দিয়ে খলিলুর বলেন, “রাত সাড়ে ৩টার দিকে আর্মিদের পায়ের বুটের শব্দ শুনতে পাই। তখন আমি ওই ঘরের পূর্ব-দক্ষিণ দিকের জানালা খুলে দেখতে পাই নিজামী সাহেব ও দখলদার বাহিনীকে বাড়ির দিকে আসতে দেখি।
“আমি তখন ঘরের উত্তর দিকের দরজা দিয়ে বের হই। তখনই কয়েকটি গুলির শব্দ, লোকজনের কথাবার্তা ও ‘হ্যান্ডস আপ’ বলার শব্দ শুনতে পাই। আমি বুঝতে পারি, আমাদের ঘিরে ফেলেছে। তখন আমি আউয়াল সাহেবের বাড়ির পশ্চিম পাশের বটগাছে উঠে আত্মগোপন করি। ”
ওই বটগাছ থেকে চাঁদের আলোতে আশেপাশের ঘটনা দেখতে পান বলে খলিলুর জানান।
“ভোরের দিকে দেখি অনেক মেয়ে গাছের নিচে এসে জড়ো হচ্ছে এবং তাদের কাছ থেকে গহনা ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে রাজাকাররা। এসময় দুই জনকে পাকিস্তানি সেনারা ধরে পাশের ঘরে নিয়ে যায়। ওই দুজনের কান্নাকাটির শব্দ শুনতে পাই। মনে হয়, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছিলো। ”
এরপরই নিজামীকে সব পুরুষদের ধরে নিয়ে যাওয়ার আদেশ দিতে শোনেন বলে জানান খলিলুর।
“শুনতে পাই নিজামী সাহেব রাজাকারদের বলেন, সব পুরুষদের ধরে নিয়ে আসো। তারপর সব পুরুষদের ধরে নিয়ে ওই বটগাছটির দক্ষিণ দিকে প্রাইমারি স্কুলের দিকে চলে গেলেন। স্কুলের পাশেই মাঠ, তার পাশেই ইছামতি নদী। ”
“বটগাছ থেকে সকাল ৯টা-সাড়ে ৯টার দিকে নামি, মিলিটারিরা তখন চলে গেছে। তখন আমি ইছামতি নদীর ধারে যাই।
সেখানে গিয়ে দেখি ২০-৩০ জনের লাশ পড়ে আছে। ”
খলিলুর জানান, সেখানে দুজন সহযোদ্ধাকে জীবিত অবস্থায় পান তিনি। তারা হলেন- শাহজাহান ও মাজেদ। শাহজাহানের গলাকাটা ছিলো, মাজেদের পেটে বেয়নেট চার্জ করা হয়।
জবানবন্দী শেষে সাক্ষীকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম।
জেরা অসমাপ্ত রেখে মঙ্গলবার পর্যন্ত আদালত মুলতবি ঘোষণা করা হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।