রং বলতে শুধু সাদা আর কালো। তাতেই স্বর্গীয় সুষমা এর রূপে। চোখে পড়লে নজর ফেরানো দায়। আর যখন সে ওড়ে, সে দৃশ্য যে কত অপরূপ! মনে হয় ‘একটি সুন্দর স্বপ্ন যেন চলে যাচ্ছে চোখের সামনে দিয়ে। ’ সুন্দর স্বপ্ন যেমন ইচ্ছে হলেই ক্ষণে ক্ষণে দেখা যায় না, এই পাখিটির দেখা পাওয়াও তেমনি দুর্লভ।
নাম দুধরাজ। বুলবুলের সমগোত্রীয় নয়, কিন্তু অনেকে শাহ বুলবুল নামেও চেনেন। ইংরেজি পরিচয় প্যারাডাইস ফ্লাই ক্যাচার, বৈজ্ঞানিক নাম Terpsiphone paradisi.
দুধরাজের স্বভাব বড্ড চঞ্চল। কোথাও দু মুহূর্ত স্থির থাকার ধৈর্য নেই। এই এসে বসল তো এই আবার উধাও।
ফলে এর অমন চোখজুড়ানো রূপ যে একটু প্রাণভরে দেখবেন, সে উপায়ও নেই।
সার্থক নাম এর বাংলা-ইংরেজি উভয় ভাষায়। গলার নিচ থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত দুধের মতোই শ্বেতশুভ্র। পেটও সাদা। পাখার নিচে কালো রেখা, শেষদিকে অল্প কালো ছোপ।
বুক থেকে শুরু করে গলা, মাথা তেলচকচকে কালো। মাথায় এক দর্শনীয় চূড়া। একটু বাঁকানো নীলচে রঙের তীক্ষ ঠোঁট। চোখের মণিও নীলচে, কেন্দ্রে সূক্ষ্ম সাদা বিন্দু। পা হালকা লালচে।
শরিফ খান লিখেছেন, ‘এইটুকু নিয়েই সে সুন্দর পাখি হতে পারত। তার উপরেও প্রকৃতি তাকে দিয়েছে লেজের লম্বা দুটি পালক, যা তাকে দিয়েছে অপরিসীম সৌন্দর্য। ’
দুধরাজের বিশেষ বৈশিষ্ট্য এর লেজের এই দুটি শুভ্র পালক। ঠোঁট থেকে সাধারণ লেজ পর্যন্ত এর মাপ প্রায় ১৯ থেকে ২১ সেন্টিমিটার। আর লেজের শেষ প্রান্ত থেকে লম্বা পালক দুটির দৈর্ঘ্য ২১ থেকে ২৪ সেন্টিমিটার।
ওড়ার সময় পালক দুটি বাতাসে অনুপম ভঙ্গিতে আন্দোলিত হতে থাকে। ডালে বসে থাকার সময় বেঁকে থাকে।
মেয়ে দুধরাজের লেজের এই বাড়তি পালক দুটো থাকে না বলে এরা পুরুষ দুধরাজের মতো এতটা সুদর্শন নয়। জোড় বেঁধে থাকে। এরা উড়ন্ত পোকামাকড় ধরতে সুনিপুণ।
সেগুলোই এদের খাদ্য। উঁচু গাছের শাখায় বাসা করে। ডিম দেয় তিন থেকে পাঁচটি। সবগুলো ডিম ফোটে না। যেগুলো ফোটে তার সব বাচ্চাও বাঁচে না।
এদের ছানার মৃত্যুর হার অন্যদের চেয়ে বেশি। সে কারণে দুধরাজের সংখ্যা বরাবরই কম। পাহাড়ি অঞ্চলে তেমন নেই। সুন্দরবনে যথেষ্ট আছে। আছে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও।
বাঁশঝাড়ই এর প্রিয় ঠাঁই। গ্রামের ঘন গাছগাছালি সন্নিবেশিত বনজঙ্গলে তাদের নিবাস। সাধারণত একটু উঁচু দিয়ে ওড়ে। খুব সতর্ক এর চলাফেরা। ফলে সচরাচর চোখে পড়ে না।
তবে সারা দেশেই দুধরাজ বেশ ভালোই আছে। এরা বিপন্ন নয়।
শুধু রূপ দিয়ে তো চলে না, কঠিন দুনিয়ায় বাঁচতে হলে বুদ্ধি আর সাহসও থাকা চাই। তা পর্যাপ্ত আছে দুধরাজের। শত্রুভাবাপন্ন কেউ বাসার ধারেপাশে এলে যেন বাজ, ফিঙে বা অনেক বড় পাখিকেও এরা তাড়িয়ে বেড়ায়।
সে কারণে অনেক নিরীহ পাখি এদের বাসার কাছে বাসা তৈরি করে।
হঠাৎ যদি এমন একটি লম্বা লেজওয়ালা মরিচা লাল রঙের পাখি চোখে পড়ে, তাহলেও বিভ্রান্ত হওয়ার কারণ নেই। সেটি নবীন দুধরাজ। ডিম থেকে ফোটার পর হালকা গোলাপিই থাকে এদের রং। শৈশব-কৈশোর পেরিয়ে যখন সে যুবক, তখন বদলে যায় রং।
সাদা-কালোয় হয়ে ওঠে স্বর্গীয় কান্তিমান। সময় লেগে যায় আড়াই থেকে তিন বছর। গড়পড়তা ১০-১২ বছরের জীবন দুধরাজের, তারপর স্বর্গের পাখির স্বর্গের দিকে যাত্রা।
ছবি : নেট
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।