হাউকাউ পার্টি জানি পশু-পাখি প্রেমীরা অনেক রাগ করবেন, তাই শুরুতেই দু:খিত বলে নিচ্ছি।
বিষয়টা হলো আমার পাখি পোষার শখ নিয়ে। সেই ছোট বেলা থেকেই যেটা আমার মনের মধ্যে ঘাপটি মেলে বসে থাকে, সুযোগ পেলেই ডালপালা মেলে মহিরুহ হতে চায়।
মনে আছে অনেক ছোট বেলায় আমাদের বাসায় একটা পেয়ারা গাছ ছিল, সেটার মাঝে মাঝেই টিয়ে পাখির দল পেয়ারা খাবার জন্য হামলা চালাতো। তো একবার এভাবে আসা একটা টিয়ের বাচ্চা গাছের নীচে দেখি একদিন পরে আছে, উড়তে পারে না।
আমার তো পোয়াবারো, কিছুতেই সেই পাখি আমি ছাড়বো না। আর মা রাখতে দেবে না, বলে "মনে করো তোমাকে যদি খাচায় আটকে রাখে তাহলে কি হবে!"
কিন্তু কে শোনে কার কথা, আমি রাখবোই। শেষে মেয়ের কাছে হার মানতে হলো মাকে, আমাকে একটা খাচা কিনে দেয়া হলো। সেটায় আশ্রয় হলো তার, ওর নাম রেখেছিলাম পিংকি। দু' বছর ছিল আমার সাথে, কি সুন্দর করে যে শুকনো মরিচের মধ্য থেকে ঠুকরে ঠুকরে বীজ বের করে সেই বীজের মধ্যে থেকে আবার শাস বের করে খেত, আমি প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরে ঘন্টা খানেক হা করে শুধু তাই দেখতাম।
এরপরে একদিন একটা নাটক দেখলাম সেখানে ছোট একটা মেয়ে, সম্ভবত ঈষিতা, টিয়া পুষতো। এরপরে একদিন তারা কোথায় বেড়াতে গেছে, ফিরে এসে দেখে টিয়া মরে পরে আছে খাচায়। এই নাটক আমার শিশু মনে খুব দাগ কাটে, কেঁদেকেটে একাকার আমার টিয়ের কথা মনে করে। তাই পরদিন সকালে ছেড়ে দিলাম পিংকিকে। মজার ব্যাপার, খাচার দরজা খোলার পরও সে উড়ে যাচ্ছিল না, এরপর হাত দিয়ে বের করে দেবার পরও অনেকক্ষণ আমাদের বারান্দার সামনের নারকেল গাছে বসে ছিল।
সেই থেকে বহুদিন আর পাখি পোষার কথা ভাবিনি। এরও অনেক অনেক পরে, একবার উয়ারীতে ফিল্ড ওয়ার্কে গেছি। গ্রামের এক লোক, রতন ভাইয়ের বাসায় আমরা কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নিতাম, একদিন দেখি তার একটা ঘরে ঘুঘুর ফাঁদ' বলে অদ্ভুত এক যন্ত্র। জীবনে সেই প্রথম ঘুঘুর ফাদ দেখা
দেখি সেটায় দুটো ছিট ঘুঘুর বাচ্চা। জানতে চাইলাম কি হবে এটা দিয়ে, বলে জবাই করে নাকি খাবে!
এত টুকু বাচ্চা, ভাল করে পালক গজায় নি, সেটা নাকি খাবে! বল্লাম রতন ভাই, আমার কাছে বেচে দেবেন? উনি রাজি হলেন, সেই ঘুঘুর বাচ্চা দুটো পঁচিশ টাকা দিয়ে কিনে আনলাম।
এরপর প্রায় তিন বছর তারা ছিল আমার সাথে।
ঝিম ধরা দুপুরে উদাস করে দিয়ে ডাকতো তারা। খুব মায়া পরে গিয়েছিল তাদের উপর। পরিবারের একজন মনে হতো।
এই সময়েই আমার পাখি প্রেমের জন্য দুটো বার্জার আর চারটা খয়েরী মুনিয়া গিফট পেলাম।
আমার বাসায় তখন পাখির চেচামেচি সারাদিন।
এর মধ্যেই একদিন খাচার দরজা খোলা পেয়ে আমার এতদিনের প্রিয় ছিট ঘুঘুদ্বয় উড়াল দিল একদিন। বনের পাখি কি আর পোষ মানে!
খুব কষ্ট পেলাম, অনেকটা স্বজন হারানোর মতো কষ্ট। তাই বাকিদেরও ছেড়ে দিলাম এক দিন....যা চলে যা।
শুন্য খাচা গুলো পরে রইলো স্টোরের এক কোনে।
তারপর আবার অনেক দিন...
কি মনে হতে একদিন কিনে ফেললাম এক জোড়া স্ফিঞ্চ আর লাভ বার্ডস। এবার আমার সাথে আছে আমার মেয়ে সোহা, দু'জনায় মহাউৎসাহে আবার শুরু করলাম.....
সাদা আর সাদা খয়েরিতে মেশানো ছোট্ট দুটো পাখি হলো স্ফিঞ্চ।
একদিন দেখি তারা বাসা বাঁধছে মাটির ঘরে, খরকুটো দিয়েছিলাম দোকানীর কথা মতো। তারা সুখে বসবাস করছে এখন।
খুব ছটফটে এই পাখি গুলো, এক দন্ড স্থির হয়ে বসে না।
তাই ফটোশেসনও তেমন ভাল হলো না
লক্ষী পাখি হলো লাভ বার্ডস, যদিও গলার স্বর একটু চড়া। এরা জোড়ায় জোড়ায় থাকে। যদিও দোকানিরা এই পাখি গুলোকে লাভ বার্ডস নামে বিক্রী করে, আসলে এটার নাম বার্জার, অনেকে প্যারাকেটস নামেও ঢাকে টিয়া প্রজাতির এই পাখিকে।
আমার চারটা বার্জার, তিনটা সবুজাভ হলুদ আর একটা নীল।
একটু আলস টাইপের পাখি।
আমরা জানি পাখির ডাকে মানুষের ঘুম ভাঙে, কিন্তু এরা ঘুম থেকে ওঠে বেলা ফোটার পরে।
দুপুরে খেয়েদেয়ে একটা আরেকটির ঘা ঘেসাঘেসি করে পালকে মুখ গুজে আবার ঘুমায় কিছু সময়। তারপর সন্ধ্যার আবার কিছুক্ষন খেয়েদেয়ে রাতে মাটির বাসায় গুটিসুটি দিয়ে ঘুম ......
মাঝে মাঝে অদ্ভুত কায়দায় ঠোট দিয়ে খাচার রড কামড়ে ধরে ধরে হেটে বেড়ায়, খুব মজা লাগে তখন।
এদের ছাড়াও আমাদের সাথে ছিলেন এক জোড়া সবুজ মুনিয়া দম্পতি। কিন্তু সম্প্রতি পত্নী বিয়োগ হবার কারণে এখন মুনিয়া সাহেব, লাভ বার্ডসের ফ্লাটেই থাকে!
ওহ, আরেকটা সুখবর তো বলাই হয়নি।
আমাদের স্ফিঞ্চ দম্পতি বাবা মা হতে চলছে, দুটি ডিমে তারা পালা করে তা দিচ্ছে। দোয়া করবেন এদের জন্য।
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ:
পাখি পুষলে প্রথমেই খেয়াল রাখতে হবে পরিচ্ছন্নতা নিয়ে। ১৫ দিনে একবার খাচার নীচের ট্রে টা পরিস্কার করা উচিত। ভাল হয় এতে কাঠের গুড়ো ছড়িয়ে রাখতে পরলে।
পানিটা রেগুলার চেঞ্জ করতে হবে, কারণ পাখি কিন্তু ময়লা হলে সেই পানিটা খায় না।
অতি শীতে পাখি মরে যায় অনেক সময়, তাই এ সময়ে চেস্টা করবেন
খাঁচা উষ্ণ জায়গায় রাখতে। না হলে চটের ছালা দিয়ে ভাল করে ঢেকে দেবেন খাঁচা।
আর সব চাইতে বড় কথা হলো পাখি থেকে বিভিন্ন রোগ জীবানু ছড়াতে পারে, যেমন যাদের হাপানীর সমস্যা আছে বা এলার্জী আছে,এমন হলে পাখি না পোষাই ভাল। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।