uব্লগিং করলে নাকি জাতে উঠা যায় !জাতে ওঠার তীব্র আকুলতায়
নাটোরের পথে ঢাকা ছাড়ছি । কল্যানপুর বাসস্ট্রান্ডে বাস ছাড়ার অপেক্ষা করছি । হটাত ৩০/৩২ এর এক সুদর্শন যুবক হন্তদন্ত হয়ে বাসে উঠল । কাধে ব্যাগটা অযত্নে কোন রকম ঝুলে আছে । এক পাটি জুতার ফিতা খুলে গেছে, সেদিকে নজর নেই ।
উদভ্রান্ত দৃষ্টিতে বসার একটা জায়গা খুজছে । সম্ভবত মাত্রই কোন দুর্ঘটনার খবর পেয়েছে । যুবকের প্রতিটি কর্মকান্ডেই একটা অস্থিরতার ছাপ । বাস তার নিজস্ব গতিতেই চলছে অথচ ভদ্রলোক বড্ড অসহিষ্ণু !কিছুক্ষন পর পর সুপারভাইজারকে ধমকাচ্ছে গাড়ী এত আস্তে চলছে কেন । তার অস্থিরতা মোবাইল ফোনেও প্রকাশ পাচ্ছে ।
একটার পর একটা নম্বর টিপছে । সম্ভবত কয়েকটা রিং হবার পর কেটে আবার অন্য নম্বরে ডায়াল করছে ।
এক সময় তার অস্থিরতার কারন জানা গেল । ভদ্রলোক জীবনে প্রথম বারের মতো বাবা হতে চলেছেন । স্ত্রী রুপাকে অপারেশন থিয়েটারে ঢোকান হয়েছে ।
কাল রাত পর্যন্ত নরমাল ডেলিভারী হবে বলে নিশ্চিত ছিল কিন্তু সকালেই হটাত সব এলোমেলো হয়ে গেছে । ভদ্রলোক তার মাকে ফোনে বলছে "মা তুমি এখনও যাওনি,রুপাকে অপারেশন থিয়েটারে ঢোকান হয়েছে । সম্ভবত ওপাশ থেকে তাকে বারবার দুশ্চিন্তা করতে নিষেধ করা হচ্ছে । তাদের উপদেশ যে কাজে লাগছে না তা ভদ্রলোকের টপটপ করে ঘাম পড়াতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে । আবার কাকে যেন ফোন দিয়ে বললেন "রুপা কি কথা বলতে পারছে ?এবারের উত্তরটা ধারনা করতে পারলাম না তবে ভদ্রলোককে বিড়বিড় করে কি যেন আওড়াতে দেখলাম ।
সম্ভবত দোয়া দুরুদ পড়ছেন । ফর্সা মুখটা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তায় লাল হয়ে আছে । একবিন্দু স্থীর হতে পারছেন না কোথাও । ব্যাগটা কোলের উপর রেখে ব্যার্থ ঘুমানোর চেষ্টা করলেন । এক একবার ফোনের রিং টোন বাজতেই চমকে উঠে ফোন রিসিভ করছেন ।
ভদ্রলোক রাজশাহী যাবেন । আমি নামব নাটোর । মনে মনে দোয়া করছি ভদ্রলোকের স্ত্রীর খবরটা যেন শুনে যেতে পারি । হয়ত এই ভদ্রলোকের সাথে জীবনে আর কখনওই দেখা হবে না । তারপরও কি যেন একটা বাধন তৈরি হয়ে গেল ।
পৃথিবীতে আসার আগেই একটি সন্তান কতগুলো বাধন তৈরি করে দিয়েছে । ঘন্টা খানেক পর ফোনটা বেজে উঠল । স্পষ্ট শুনতে পেলাম তিনি দোয়া ইউনুস পড়ছেন । তারপর ফোনটা রিসিভ করলেন । ওপাশ থেকে সম্ভবত কোন সুসংবাদ জানানো হলো ।
এক পলকেই দেখলাম যুবকটির মুখ থেকে সব দুশ্চিন্তা দুর হয়ে সেখানে লজ্জা মিশ্রিত অবয়ব চলে আসল । শুনলাম তার একটি মেয়ে হয়েছে । অস্থির লোকটা হটাত বড্ড লাজুক হয়ে উঠেছে । একে ওকে ফোন দিয়ে মেয়ে হবার ঘটনা জানাল । মেয়ে এবং স্ত্রী সুস্থ আছে এটি তার কাছে এখন পৃথিবীর সবথেকে বড় সুসংবাদ ।
মাকে ফোন দিল,লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বলল "মা রুপার জ্ঞান ফিরলে আমার সাথে একটু কথা বলিয়ে দিও । মেয়েটি দেখতে কেমন হয়েছে সেটা ছোট ভাইকে ফোন করে জানল মাকে বলার সাহস হলো না মনে হয় । আমি তখন নাটোরের কাছাকাছি ।
আচ্ছা ঐশীর জন্ম হবার দিন নিশ্চয়ই তার বাবাও এমন করেছে !বাস থেকে নেমে যেতে মনে মনে বললাম আল্লাহ মেয়েটিকে তুমি ঐশী বানিয়ো না !
সত্যি বলছি আমি ঐশীকে ক্ষমা করতে পারছি না । ওর বয়সী যে কোন মেয়েকে দেখলেই আমার ভয় লাগে ।
মনে হয় প্রতিটি সুন্দর চেহারার মধ্যে একটা ঐশী লুকিয়ে আছে । হয়ত রাতে বাড়ী ফিরেই ঘুমের ওসুধ খাইয়ে বাবা মাকে মেরে ফেলবে । আমি বাবা মার সামনে দাড়াতে পারি না । লজ্জা লাগে । বারবার মনে হয় মা বাবা কি একবারও নিশ্চিত হতে চান নি যে আমার ভেতর কোন ঐশী লুকিয়ে আছে কি না !তারা যদি আমার হাতে চা না খান ,রাতে ঘুমানোর আগে যদি দরজা আটকে ঘুমান তবে !
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।