বাঙালিত্ব
বাংলাদেশে জাহাজ নির্মাণ খাতে সাত হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে একটি মার্কিন কোম্পানি। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত একজন কানাডীয় নাগরিকের মালিকানাধীন কোম্পানিটি এ দেশে অত্যাধুনিক মানের বৃহৎ একটি শিপইয়ার্ড প্রতিষ্ঠা করতে চায়, সেখান থেকে বাংলাদেশের বছরে ২০ কোটি ডলার আয় হবে। আর এই শিপইয়ার্ডকে ঘিরে কমপক্ষে ছয় হাজার লোকের কর্মসংস্খান হবে বলে কোম্পানিটি মনে করছে। ওয়ান বাংলাদেশ ভেঞ্চারস নামের কোম্পানিটি বিভিন্ন ধরনের জাহাজ তৈরির জন্য চারটি দেশ থেকে ইতোমধ্যে ৩০ কোটি ডলারের অর্ডার পেয়েছে। শিপইয়ার্ড প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দফতর ছাড়াও অর্থ ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে কোম্পাটি প্রস্তাব দিয়েছে।
ভোলা জেলার সন্তান মাহবুবুল হক প্রায় ১৫ বছর আগে কানাডায় বসবাস শুরু করেন। শিক্ষাজীবন শেষ করে সেখানকার নাগরিক হিসেবে ব্যবসা-বাণিজ্যে নিয়োজিত হন। পরে তার গণ্ডি যুক্তরাষ্ট্রে বিস্তৃত হয়। সেখানে শিপইয়ার্ড ব্যবসা শুরু করেন তিনি। ‘থ্রি এস করপোরেশন’, ‘ওয়ান বাংলাদেশ ভেঞ্চারস’সহ কয়েকটি কোম্পানি গড়ে তোলেন।
কোম্পানিগুলো যুক্তরাষ্ট্রে রেজিস্টার্ডভুক্ত। এই কোম্পানিগুলোর ব্যবস্খাপনা পরিচালক তিনি। নিজ মাতৃভূমি বাংলাদেশে জাহাজ নির্মাণ খাতে অপার সম্ভাবনা দেখে এই বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। সে অনুযায়ী সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও শিপিং করপোরেশনকে প্রস্তাব দেন।
ওয়ান বাংলাদেশ ভেঞ্চারস্-এর ব্যবস্খাপনা পরিচালক মাহবুবুল হক এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্বের শিপইয়ার্ডগুলো এখন আগামী দুই-তিন বছরের জন্য কোনো অর্ডার নিতে পারছে না।
বাংলাদেশে এ খাতে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই আমার জন্মভূমিতে এ খাতের উন্নয়নে ভূমিকা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে আমরা বিভিন্ন দেশের কোম্পানির কাছ থেকে ৩০ কোটি ডলারের অর্ডার পেয়েছি। মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, ভারত ও হংকং এ অর্ডার দিয়েছে। এর মধ্যে সমুদ্র ও নদী উভয় পথের জলযান রয়েছে।
অর্ডার পাওয়া জাহাজগুলোর মধ্যে কনটেইনার শিপ, মাদার ট্যাঙ্কার, বাল্ক ক্যারিয়ার, প্রোডাক্ট ক্যারিয়ার, ইনল্যান্ড রিভার কার্গো ফেন্সটার, ইনল্যান্ড সুপার বাঙ্কার, কম্বি ফেন্সটার, কম্বি কোস্টার, ইনল্যান্ড প্যাসেঞ্জার ভেসেল, ইনল্যান্ড ড্রাই ক্রুজার ছাড়াও রয়েছে ড্রাই ডক। মাহবুবুল হক বলেন, জাহাজশিল্পে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে সরকারকে সহায়তা করতে হবে। এ শিল্পে বিনিয়োগে উদ্যোক্তাদের উৎসাহী করতে রফতানির ক্ষেত্রে ইনসেনটিভ দিতে হবে, যেভাবে প্রতিবেশী ভারত এবং চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া এ খাতে আর্থিক সুবিধা দিচ্ছে। এ জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে জাহাজ রফতানির ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ ইনসেনটিভ দেয়ার জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। সরকার অভ্যন্তরীণ নৌযানও প্রস্তাবিত শিপইয়ার্ডে তৈরি করবে বলে তিনি জানান।
এর ফলে সরকারের বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে।
কোম্পানিটির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, তাদের অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত শিপইয়ার্ড তৈরিতে ব্যয় হবে ৫০ কোটি ডলার। কানাডার কনস্ট্রাকশন প্রতিষ্ঠান বিশ্ব বিখ্যাত ‘এসএনসি লাবালিন’ এই শিপইয়ার্ড প্রতিষ্ঠা করবে। এই জাহাজ নির্মাণশিল্পে থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি। বর্তমানে এ দেশের শিপইয়ার্ডগুলোতে ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে জাহাজ নির্মাণ করা হলেও প্রস্তাবিত এ শিল্পে রোবট ওয়েল্ডিং এবং লেজার কাটিং পদ্ধতিতে জাহাজ প্রস্তুত হবে।
এর ফলে সময় কম লাগার পাশাপাশি আর্থিক সাশ্রয় এবং গুণগতমান নিশ্চিত হবে। ওয়ান বাংলাদেশ ভেঞ্চারস্ এ প্রস্তাব দিলেও প্রস্তাবিত শিপইয়ার্ড প্রতিষ্ঠার পর তা পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে আরেক কোম্পানি থ্রি এস করপোরেশন।
কোম্পানির এক কর্মকর্তা বলেছেন, প্রাথমিকভাবে তারা চট্টগ্রামের মীরেরসরাইয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। এ জন্য সাগরের ভেতরে প্রায় তিন লাখ বর্গমিটার জায়গা লাগবে।
ওয়ান বাংলাদেশ ভেঞ্চারস্ জাহাজ নির্মাণশিল্পে বিনিয়োগ ছাড়াও এ দেশে নদীপথের নাব্যতা ফিরিয়ে আনার বিষয়েও বিআইডব্লিউটিএ’কে আলাদা একটি প্রস্তাব দিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, প্রথমে কোম্পানিটি নদী ড্রেজিংয়ের জন্য সব অর্থ ব্যয় করবে। কাজ শেষে সরকার কিস্তিতে একটি নির্দিষ্ট হারে সুদসহ ওই অর্থ পরিশোধ করবে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।