আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জাবি পাঠকমেলার সময়োপযোগী উদ্দ্যোগ “ইভটিজিং: সামাজিক অবয় এবং আমাদের করণীয়” শীর্ষক মুক্ত আলোচনা



ক্যাম্পাসের চায়ের দোকানে কজন যুবক বসে আছে, সামনে দিয়ে তাদেরই ক্যাম্পাসের ক’জন ছাত্রী কিংবা বান্ধবী যাচ্ছে হঠাৎ যুবকদের মধ্যে কেও অশ্লীল বা বাজে কোন মন্তব্য করে বসল। মেয়েটি তখন যে পরিস্থিতির বা কষ্টদায়ক অনুভুতির স্বীকার হয় তা অবর্ণনীয়। এই অপমান কষ্ট সহ্য করতে না পেরে গত কমাসে অভিমান ােভে আত্মহত্যা করেছে ইলোরা সিমিদের মত অনেকে। এরা সকলে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত সমস্যা ‘ইভটিজিং’ এর স্বীকার। যা বর্তমানে ভয়াবহ রুপ ধারণ করেছে।

যা ব্যাধির মত ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। বর্তমান সমাজ ও রাষ্ট্র জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষতায় পরিপূর্ণ। তবুও আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কিছু কিছু বিষয় আমাদের মানবিকতা সভ্যতাকে প্রশ্নের মুখোমুখি দাড় করায়। আমরা মুখে কথার খই ফোটাই,নীতি কথার বান ছোটাই, সমাজ সংসার রাষ্ট্রকে আমরা আরও এগিয়ে নিতে চাই। অথচ আমাদের সমাজের সর্বত্র এখনও নারী ঘরের বাইরে স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারেনা।

পুরুষতান্ত্রিক সমাজের যাতাকলে নারীরা প্রতিনিয়ত পিষ্ট হয়। কখনওবা আতœহত্যা করে বসে। নারীদের উপর এই নির্যাতনের মাত্রা অব্যাহতভাবে বেড়েই চলছে। বর্তমানে ইভটিজিং এর মাত্রা এত বেশি বাড়ছে যে, এটা সামাজিক এক সমস্যার গন্ডী ছাড়িয়ে রাষ্ট্রীয় সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। আরও দূর্ভাগ্যজনক হল খোদ রাজধানী ঢাকাতে এর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি।

ইভটিজিংয়ের ফলে দিন দিন মেয়েরা আরও বেশি হতাশাগ্রস্ত ও ভীত হয়ে পড়ছে আর যুবকেরা হচ্ছে বিপথগামী । ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে দেশের সর্বত্র প্রতিরোধ গড়ে উঠলেও দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়ে কোন উদ্দ্যোগ ল্য করা যায়নি যা দেশবাসীকে হতাশ করেছে। এদেশে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে তাদেরকেই সর্বোচ্চ মেধাবী ভাবা হয়, আগামী দিনের সমাজ রাষ্ট্রের নতুন বিনির্মাণ এদের দ্বারাই হবে বলে সবাই বিশ্বাস করে। তবুও ইভটিজিংয়ের মত এক ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি অপরাধের বিরুদ্ধে কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কার্যক্রম না দেখে আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পাঠকমেলার সবাই সিদ্ধান্ত নিলাম, না হয় আমাদের দিয়েই, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ শুরু হোক। অবশেষে দৈনিক আমার দেশ পাঠকমেলার সহযোগিতা ও অর্থায়নে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পাঠকমেলার আয়োজনে গত ২৪ মে সোমবার অনুষ্ঠিত হয়ে গেল “ইভটিজিং: সামাজিক অবয় এবং আমাদের করণীয” শীর্ষক মুক্ত আলোচনা।

সন্ধ্যাবেলায় যে প্রদীপ জ্বালানো হয় তার সলতে নাকি সকালেই পাকিয়ে রাখতে হয়। আমাদেরও তেমন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে গিয়ে পদে পদে গলদঘর্ম এমনকি বিব্রতও হতে হয়েছে। অনুষ্ঠানের পোষ্টারিং করতে বিশাল ক্যাম্পাসের সর্বত্র পায়ে হেটে বেড়াতে হয়েছে। বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন শিকদেরকে আমন্ত্রণ পত্র দিতে হয়েছে। ক্যাম্পাসের সকল সামাজিক , স্বেচ্ছাসেবী, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

আমার সাথে সাহায্য করবার জন্য জাবি পাঠকমেলার যুগ্ম সম্পাদক আবু আজাদকেই ডাকামাত্র পেয়েছি। কখনও কখনও আমাদেরকে একাধিক কাশ মিস দিতে হয়েছে শুধু অনুষ্ঠানটা ভাল করতে হবে এই আশায়। নানা ব্যস্ততার ভেতরে এই কাজে সর্বত সহায়তা করেছে পাঠকচক্র সম্পাদক ইমরান হোসেন, প্রচার সম্পাদক ইকবাল হোসাইন সৈকত, নাট্যকলা সম্পাদক আহমদুল হাসান আশিক। জাবি পাঠকমেলার সমন্বয়ক কৌশিক ভাই শত ব্যস্ততায়ও আমাদেরকে নানাভাবে সাহায্য করেছেন। জাবি পাঠকমেলার সভাপতি নাজমুস সাকিব অণু ভাইয়ের পরীার কারণে সময় দিতে না পারলেও সর্বদা যোগাযোগ রেখে পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করেছেন।

তবে মাঝপথে এসে আমাদেরকে হতাশ হতে হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাড়া না পেয়ে! একাধিকবার চেষ্টা করেও প্রো-ভিসিদ্বয়ের কাওকেই অনুষ্ঠানের প্রধান হিসেবে পাইনি আমরা । তবু সব প্রতিকুলতা পেরিয়ে একটি সফল মুক্ত আলোচনার আয়োজন করতে পেরেছি শেষ পর্যন্ত। এই মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় জাবি কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামের সেমিনার ক। ে সন্ধ্যা ছয় টায় অনুষ্ঠান শুরু হয়ে রাত আট টা পর্যন্ত চলে। বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিার্থীর অংশগ্রহণে এই মুক্ত আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট মানবাধিকার নেত্রী ড. নাসিম আকতার হোসাইন, বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. এ টি এম আতিকুর রহমান, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তমালিকা সুলতানা, পাঠকমেলার কেন্দ্রীয় পরিচালক খোমেনী ইহসান, সহকারী পরিচালক আরিফ মুহাম্মদ।

মুক্ত আলোচনা অনূষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন জাবি পাঠকমেলার সমন্বয়ক রেজাউল হক কৌশিক। আর গোটা অনুষ্ঠান সাবলীল ও প্রানবন্ত উপস্থাপনায় আরও প্রানবন্ত করে তোলেন নাজমুস সাকিব অণ্ ূ। অনুষ্ঠানের শুরুতেই মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. নাসিম আকতার হোসাইন। তার প্রবন্ধের সবটুকু অংশ জুড়ে ছিল ইভটিজিং এর কারণ প্রভাব ও করণীয়। নিচে মূল প্রবন্ধ দেয়া হল।

যৌন হয়রানি (ইভটিজিং) সামাজিক অবয়: আমাদের করণীয় - ড. নাসিম আখতার হোসাইন মূল প্রসঙ্গ নারী নির্যাতন: সামাজিক অবয় নারীর উপর অত্যাচার ও আক্রমন এত বৃদ্ধি পেয়েছে যে প্রায়শই কাগজে থাকছে যে হয়রানি ও নিপীড়নের শিকার হয়েছে নারী। নিপীড়নের মধ্যে গুরুতর হচ্ছে যৌন নিপীড়ন। এ সবের কারণ বিভিন্ন রকম হতে পারে। যেমন- উত্যক্তকরণ, যৌন আক্রমন, ধর্ষণ, এসিড নিপে, নারীর সামাজিক অসহায়ত্ব, মানসিক নির্যাতন ইত্যাদি। বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণীর নারী এইসব নিপীড়নে বিপর্যস্ত।

আজকাল বাড়ীর বাইরে রাস্তায় বা যেকোন পাবলিক স্পেসে, যানবাহনে যেকোন বয়স ও পেশার নারীকে উত্যক্তকরণ বা ইভটিজিং প্রায় প্রত্যেক নারীর প্রতিদিনের জীবনের নিত্য ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিপীড়নের একটি ধরন হিসেবে ইভটিজিং ব্যাপকভাবে জারি আছে যা দেখতে আর পুঁজিবাদী শোষণ এতটাই তীব্র এবং ‘কমনসেন্স’ পরিণত যে নিপীড়নের নিদারুন শিকার নারীর আর্তনাদ স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়ে গেছে। এতদসত্ত্বেও নারীর প্রতিদিনের লড়াই ঘরে বাইরে যৌন নিপীড়নের প্রতিরোধ সংগ্রাম চলছে। স¤প্রতি প্রকাশিত বেশ কিছু যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের সংবাদ সমাজ, রাষ্ট্র কাঠামো এবং প্রশাসন যন্ত্রের দুর্বলতা বা অকার্যকারিতার দিকগুলি তুলে ধরেছে। গত চার মাসে চৌদ্দজন ইভটিজিং এ আক্রান্ত নারী পরিবার ও সমাজে বেঁচে থাকার কোন পথ দেখতে না পেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।

একটি পরিসংখ্যানে জানা যায় যে ২০০৮ সালে জানুয়ারি থেকে জুলাই মাসের মধ্যে তের হাজার নারী ইভটিজিং এর শিকার হয়েছেন বলে রিপোর্ট করা হয়েছে। অনুমান করা কঠিন নয় যে আরও অনেকে ভয়ে, সম্মান হানির আশংকায় কিংবা সমাজের মানুষজনের গালগপ্পের বিষয়ে পরিণত হতে চান না বলে তাদের প্রতি সংঘটিত উত্যক্তকরণের অভিযোগ উত্থাপন করেননি। ২০০২ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত পাঁচ হাজার ধর্ষণের কেস রেকর্ড করা হয়েছে। এদের মধ্যে দুই হাজার জন কিশোরী যাদেরকে ইভটিজিং এ সাড়া না দেবার শাস্তি হিসেবে ধর্ষণ করা হয়। আবার এদের মধ্যে ৬২৫ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এবং ৬৯ জন আত্মহত্যা করেছে।

সমাজের মানুষজন যৌ হয়রানির অপরাধ বিষয়ে সচেতন হলে অপমৃত্যুর হাত থেকে কতজন নারীকে বাঁচানো সম্ভব হতো? এখানেই শেষ নয়। দেখা যাচ্ছে যে উত্যক্তকারীর কবল থেকে রা করার জন্য আতংকগ্রস্ত বাবা মা কিশোরীদেরকে স্কুলের পড়া বন্ধ করে বাড়ীতে থাকতে বাধ্য করছেন। এমনকি অপ্রাপ্ত বয়সে তাদের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন। জানা যায় যে দেশের প্রায় অর্ধেক কিশোরীদের বিয়ে হয়ে যায় তাদের বয়স ১৫ বছর হওয়ার আগেই। টিন এজার থাকতে থাকতেই তারা প্রথম সন্তানের মা হয়ে যান।

১৫-১৯ বছর বয়সী মায়েদের মাতৃত্বকালীন মৃত্যুর ঝুকি ২০-২৪ বছর বয়সীদের তুলনায় ২০-২০০% বেশি। এভাবে উত্যক্তকরণের ফলাফল নারীর প্রতি বৈষম্য সৃষ্টি করে আর নারীর জন্য আন্তঃপুরের অবস্থান নির্দিষ্ট করে দেয়। যৌন হয়রানির অপরাধ দমনের জন্য কার্যকর আইন প্রণয়ন করে প্রকৃত অপরাধীকে শাস্তি দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন একেবারে অসম্ভব নয়। কিন্তু রাষ্ট্রের আইন শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠানগুলি নারীর নিরাপত্তা বিধানে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি তাদের মধ্যে কেউ নিজেরাও নির্যাতনকারীর ভূমিকায় আবির্ভূত হয়েছে।

পুরুষাধিপত্বের সুবাদে ও দলীয় পৃষ্ঠপোষকতায় নির্যাতনকারীরা আইনের সহায়তা লাভ করে বেরিয়ে যাচ্ছে। কখনো ত্র“টিপূর্ণ তদন্ত করে অপরাধীদের বেকসুর খালাস দেয়া হচ্ছে। অথবা ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়ে অত্যাচারীকে বীরদর্পে ঘুরে বেড়াতে আর নির্যাতিত নারীকে অপবাদের দায়ভার বহন করতে বাধ্য করা হচ্ছে। আবার দেখা যাচ্ছে মতাসীনরা অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার নারীকে ‘মন্দনারী’ হিসেবে চিহ্নিত করে অপপ্রচার চালায়। ফলে অধিকাংশ নারী ‘ভালোনারী’র মডেলভুক্ত হয়ে নিপীড়ন, নির্যাতন মেনে নিয়ে নিশ্চুপ থাকছে।

নারীর সীমিত মতা এবং দুর্বলতাই তার অধিকার বঞ্চনার জন্য দায়ী। ইভটিজিং সঠিক নামকরণ নয়: ইভটিজিং শব্দটি যৌন হয়রানির অমার্জিত (ংষধহম) ভাষা যা বাইবেলে বর্ণিত প্রথম নারী চরিত্রকে নির্দেশ করে। এখানে ইভের রমনীয় প্রকৃতিকে মুখ্য করে তোলা হয়। ইভকে প্রলুব্ধ করার গুন সম্পন্ন বলে ধরা হয় এবং অন্যদিকে তাকে উত্যক্ত করার জন্য তাকেই দায়ী করা হয়। নারী একাধারে ভিকটিম এবং ভিকটিম হওয়ার কারণ।

আর নারীর প্রতি পুরুষের আক্রমনাত্মক প্রতিক্রিয়া অপরাধ না হয়ে স্বাভাবিক বলে গণ্য হয়। ভিকটিম হওয়ার ফলে নারী হয়ে যায় অচ্ছুতের ন্যায়। কারণ তার প্রতি সংঘটিত পাপের জন্য সেই হয় পাপী। আবার অনেকে মনে করেন ইভটিজিং শব্দটি পাবলিক স্পেসে নারীর প্রতি যৌন হয়রানির শ্র“তিমধুর অভিব্যক্তি। আসলে একে ‘তিকারক পরিহাস’ বা ‘যধৎসভঁষ ভঁহ’ বলে এর আড়ালে পুরুষের যৌন অত্যাচারকে আড়াল করা হয়।

যেমন এসিড ছুড়ে নারীর মুখ ঝলসে দেয়ার মত ঘটনার কারণ হিসেবে বলা হয় ‘প্রেমের প্রস্তাবে রাজী হয় নাই’। যৌন নির্যাতন করার কারণ হিসেবে বলা হয় ‘মেয়েটি রাতের বেলা একা একা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল’। আরও বলা হয় ‘মেয়েটি বেশি অহংকারী’, ‘ছেলেটি একটু রাগী’, ‘মেয়েটি সিনেমা হলের ভীড়ের মধ্যে গিয়েছিল’। কিংবা বলা হয় ‘আজকাল ডিস দেখে দেখে ছেলেমেয়েদের মেজাজ বদল হয়ে যাচ্ছে’ অথবা ‘আজকাল আইন শৃঙ্খলা নাই’। ইভটিজিং বলে যেমন নারীকে দায়ী করা হচ্ছে তেমনি ধর্ষণ শব্দটি না বলে ‘সম্ভ্রমহানি’, ইজ্জতহানি’, ‘শ্লীলতাহানি’, ‘লাঞ্ছিত’ এ সকল শব্দ ব্যবহার করে পুরুষের অপরাধের জন্য নারীকে দোষী করা হচ্ছে।

কারণ নারী সম্ভ্রম ও ইজ্জত হারিয়ে অপরাধী হয়ে যান। এভাবে ভিন্ন শব্দের ব্যবহার নিপীড়নকেই প্রশ্রয় দেয় এবং নারীর নিরাপত্তা অনিশ্চিত করে তোলে। যে সব অপরাধমূলক কাজ ইভটিজিং এর অন্তর্ভুক্ত তা হলো- লম্পট চাহনি, টিটকারী, ব্যঙ্গবিদ্রুপ, ধূর্ততার সঙ্গে নারীর প্রতি অঙ্গভঙ্গী করা, শিষ বাজানো, উস্কানিমূলক তালি বাজানো, গায়ে ধাক্কা দেয়া, সম্মতির বিরুদ্ধে নারীর অঙ্গ স্পর্শ করা বা আঘাত করা, উদ্দেশ্যমূলকভাবে যৌন আবেদনময়ী গাণ গাওয়া, অশ্লীল মন্তব্য করা, হুমকি প্রদান, যৌন অর্থবাহী ছবি অথবা বিডিও দেখানো, নাম ধরে ডাকা, মুঠোফোনে বার বার মিসকল দেয়া, প্রেম ও যৌন সম্পর্ক স্থাপনে চাপ প্রয়োগ করা, প্রতারণা, ভয় প্রদর্শন করে কোন কিছু করতে বাধ্য করা, শিা, কর্মজীবন ব্যহত করা, অশ্লীল মেসেজ পাঠানো ইত্যাদি। দেখা যায় যে নারীদের দলবেধে পুরুষরা তাদের প্রতি কুৎসিত আচরণ করে, হাসাহাসি, ঠাট্টা মশকরা করে, ধাক্কা দেয়, চিমটি কাটে, জাপটে ধরে কিংবা কাপড় ধরে টানে। আসা যাওয়ার পথে উপর্যপুরি এসব শারিরীক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন।

একটি গবেষণায় জানা যায় যে বাংলাদেশে ১০-১৮ বছর বয়সী নারীদের ৯০% নিয়মিত ইভটিজিং এর শিকার হন। আক্রমনকারী ধনী, দরিদ্র, শিতি, অশিতি, রিক্সাচালক, অফিসের কর্তাব্যক্তি সহকর্মী যে কেউ হতে পারেন। গবেষণায় জানা যায় যে আক্রমনকারীদের ৩২% ছাত্র, ৩৫% অসামাজিক ব্যক্তিবর্গ ও ২৭% মধ্যসয়সী পুরুষ। ইভটিজিংকে হালকা করে দেখার জন্য বলা হয় যে ‘এসব বখাটে ছেলেদের কাণ্ড’। আরও বলা হয় যে ‘ছেলেরা এসব করে মেয়েদের আকর্ষণ করার জন্য’, ‘মেয়েদের সাজসজ্জা পোশাক উগ্র হওয়ায় ছেলেরা উত্তেজিত হয়’।

যাহোক ইভটিজিং পুরুষের জন্য তামাশা হলেও নারীর জন্য যন্ত্রণার কারণ। বলা হয় পুরুষরা নানাবিধ হতাশা থেকে আক্রমনাত্মক হয়ে উঠেন এবং নারীকে উপলে পরিণত করেন। অনেকে এটিকে পুরুষের জীবন চক্রের (ৎরঃব ঃড় ঢ়ধংংধমব) অংশ বলে মনে করেন- পৌরুষ অর্জনের মাধ্যম। অন্যদিকে ইভটিজিং এর ফলে আক্রান্ত নারীর উপর জীবন ও কর্ম বিনাশী প্রতিক্রিয়া পড়ে বলে জানা যায়। ক্স কর্মের পরিধি কমে যাওয়া, স্কুলে ফলাফল খারাপ করা, অনুপস্থিত থাকা; ক্স চাকরী হারানো, আয় রোজগার কমে যাওয়া; ক্স স্কুলে ছেড়ে চলে যাওয়া, শিা পরিকল্পনা পরিবর্তন করা; ক্স নারীর ব্যক্তিগত জীবন অন্যদের নজরদারির বিষয়ে পরিণত হয়- যখন মানুষজন নারীর পোশাক, সাজ সজ্জা, জীবন যাপন সব কিছু পরীা করে; ক্স মানুষজনের গালগপ্পের বিষয়ে পরিণত হয়ে আপমানিত হওয়া; ক্স নারীর যৌন অস্তিত্ব মুখ্য হয়ে উঠে- অন্যান্য গুন গৌণ হয়ে যায়; ক্স চরিত্রহনন হয় এবং সম্মান ও মর্যাদা হারায়; ক্স যে পরিবেশে ইভটিজিং এর হয়রানি ঘটে, সে পরিবেশের উপর নারীর আস্থা হারায় এবং ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে; ক্স মানুষের উপর বিশ্বাস হারায়; ক্স ব্যক্তিগত সম্পর্কের সৃষ্টি হয়- এতে বিবাহ বিচ্ছেদ, বন্ধুত্বে ফাটল ও সহকর্মীদের সঙ্গে বিরোধ দেখা দেয়; ক্স অন্যরা যেমন ভিকটিমের কাছ থেকে দূরে চলে যায় তেমনি ভিকটিমও নিজেকে গুটিয়ে নেয় একাকীত্বের মাঝে; ক্স স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দেয়, যেমন- হতাশা, দুশ্চিন্তা, আকারণে ভয় পাওয়া, ঘুম না হওয়া; ক্স দুঃস্বপ্ন দেখা, লজ্জা পাওয়া, ও অপরাধী ভাবা, মনোযোগ কমে যাওয়া, নেশা করার প্রবণতা, উচ্চ রক্তচাপ, খাদ্যাভাস বদল, ওজন বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া, আত্মহত্যার প্রবণতা ইত্যাদি।

আমাদের করণীয়: ক্স প্রথমে স্বীকার করতে হবে যে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নারীর মন ও শরীরের উপর কুৎসিত বিভৎস ও বর্বর আক্রমন। এটি মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্যতম অপরাধ। যৌন নিপীড়নকে আড়াল করে নির্যাতিত নারীকে অপরাধী বানানোর চেষ্টা বন্ধ করতে হবে। ক্স নারী নির্যাতনের কারণ যে সমাজ কাঠামোতে নিহিত তা বুঝতে হবে। সমাজে নারীর চলাফেরা, স্বাধীনতা, কর্মকাণ্ড সবকিছু পুরুষ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত গওয়া সঠিক বলে ধরে নেয়া হয়।

পুরুষাধিপত্যের কারণে পুরুষরা নারীদের বশ্যতা স্বীকার করার জন্য হুমকি দেন এবং বল প্রয়োগ করেন। কখন অধীনস্ত হিসেবে নারী লাঞ্ছিত হয়? যখন পুরুষ ও নারীর মধ্যে বিরাজ করে অসম মতা সম্পর্ক। নারীদের প্রান্তিকতা দূর করতে হবে। ক্স সমাজে যৌনতা লজ্জাকর বিবেচিত হওয়ায় আক্রান্ত নারীকেই সকলে দোষারোপ করে। ফলে নারী যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উত্থাপন করা থেকে বিরত থাকে।

যে কথাটি বলতে মানা যে অপরাধের কথাটি নারীকে বলতে শিখতে হবে। ক্স ইভটিজিং এর মত যৌন হয়রানি করা যত সহজ, তা কোর্টে প্রমাণ করা ততটাই কঠিন। নিপীড়কগণ অনেক নিপুনতার সঙ্গে এই অপরাধ সংঘটিত করে যাতে একে অপরাধ বলে ভ্রম হয়। তবুও নারীবাদী গবেষকগণ একে ‘ষরঃঃষব ৎধঢ়ব’ বা প্রায় ধর্ষণ বলে মনে করেন। এ ধরনের অপরাধের বিচার করার জন্য বিশেষ আইন প্রণয়ন করা জরুরী।

ক্স বাংলাদেশে ইভটিজিং এর মত অপবাদের জন্য উপযুক্ত আইন নেই। নতুন আইনী কাঠামোও বিধান কার্যকর করা আবশ্যক। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অডিন্যান্স ১৯৭৬ এর ৭৬ নং অধ্যাদেশ এবং পেনাল কোড ১৮৬০ এর ৫০৯ অধ্যাদেশে মর্যাদাহানি করার জন্য সংঘটিত যে কোন কাজ, আচরণ অথবা মৌখিক উচ্চারণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। পূর্বের নারী ও শিশু নির্যাতন আইন ২০০০ এর ১০(২) অধ্যাদেশে এ ধরনের অপরাধের বিচারের বিষয় ছিল। কিন্তু ২০০৩ সালে এটি বাতিল করা হয় এই মর্মে যে আইনটির অপপ্রয়োগের আশংকা আছে।

নতুন আইনের ৯ নং অধ্যাদেশে বলা হয়েছে যে যদি কারো ইচ্ছাকৃত অসম্মানজনক কাজ, (রিষষভঁষ ফরংযড়হড়ৎ) যৌন হয়রানি, কিংবা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ফলে কোন নারী আত্মহত্যা করেন তাহলে অপরাধীকে সর্বোচ্চ ১০ বৎসর ও সর্বনিম্ন ৫ বৎসর কারাদণ্ড প্রদান করা হবে। কিন্তু ইভটিজিংকে এই ধরনের অপরাধ ভুক্ত করা হবে কিনা তা নিয়ে বিতর্ক আছে। যদিও এই আইনে অপরাধীকে শাস্তি দেবার বিধান আছে তথাপি উল্লেখ্য যে তা কেবল নারী আত্মহত্যা করলেই সম্ভব। মৃত্যুবরণ না করলে একজন ভিকটিম আইনের আশ্রয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। যেহেতু অপরাধী আইনের ফাঁক গলিয়ে বের হয়ে যায় এবং ইইনের যথাযথ প্রয়োগ নেই সে কারণে নির্যাতিত নারী অভিযোগ করার ব্যাপারে উৎসাহ হারান।

ক্স শিাঙ্গনে ও কর্মস্থলে যৌন হয়রানি বন্ধের ল্েয হাইকোর্ট যে প্রতিমালা প্রণয়ণ করেছে তাতে অভিযোগ কেন্দ্র স্থাপনের বিধান আছে। এই কেন্দ্রের সদস্যদের অভিজ্ঞ, আইন সম্পর্কে ধারণা সম্পন্ন ও নারীর প্রশ্নে সংবেদনশীল হওয়া আবশ্যক। কেন্দ্রটিকে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর ভেতর ক্রিয়াশীল মতার রাজনীতির উর্ধ্বে স্থাপন করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনী সংস্কার করা জরুরী। ক্স ল্যনীয় যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যৌন হয়রানি ও অপরাধ বিষয়ে বিশেষ জ্ঞান সম্পন্ন না হওয়ায় তারা প্রচলিত পুরুষতান্ত্রিক মতাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত হন।

অনেক সময় পুলিশও নারী নির্যাতন করেন। জেণ্ডার ট্রেনিং এর মাধ্যমে তাদেরকে দ করে তোলা প্রয়োজন। অপরাধের অভিযোগ জানানোর জন্য পুলিশ কেন্দ্রে হট লাইন থাকতে পারে। সিভিলিয়ান পোশাকে বিভিন্ন স্থানে নারী ও পুরুষ পুলিশ মোতায়েন করে ইভটিজিং বন্ধের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। ক্স পুরুষাধিপত্য ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে নারী প্রতিনিয়ত বেঁচে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত হন।

নারীর প্রতিরোধের ধরন তাদের প্রতিদিনের লড়াই। যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা আবশ্যক। এবং তা এখনই শুরু করতে হবে। এখনই আওয়াজ তুলতে হবে। নারীর জন্য রুখে দাড়ানো ব্যতীত বিকল্প কিছু নেই।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তমালিকা সুলতানা বলেন- ইভটিজিং সমস্যাকে যেকোন ভাবে দমন করতে হবে। এর কারণে একটি মেয়ে মানসিক ও শারীরিক ভাবে তির স্বীকার হবার পাাশাপাশি তার পরিবারকেও এ নিয়ে বিপদে পড়তে হয়। ইভটিজিং বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। এটা প্রতিরোধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করতে হবে। আরিফ মুহাম্মদ বলেন- (----ু) খোমেনী ইহসান বলেন- ইভটিজিং কে সামাজিক অবয় হিসেবে চিহ্নিত করে আসলে এই বিষয়টাকে নৈতিক দিক থেকে বিবেচনা করা হচ্ছে।

এটা মূলত এক রাষ্ট্রীয় অপরাধ। আপনি যদি রাষ্ট্রে বিশ্বাস করেন তবে ইভটিজিংকে রাষ্ট্রীয় অপরাধ হিসেবে এর প্রতিবিধান নিশ্চিত করতে হবে। ইভটিজিং রোধে তাই সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে । সুনির্দিষ্ট আইন প্রনয়ণ করতে হবে। পুলিশ সহ অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ব্যবহার করতে হবে।

একই রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে নারী ও পুরুষের সহজাত যে অধিকার তা নিশ্চিত করতে হবে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের যে প্রকট দিক তা থেকে নারীর মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। পোশাক কিংবা সংস্কৃতি এগুলো কোন বিষয় নয়। স্বাধীন নাগরিক হিসেবে মেয়েরা যে কোন পোশাক পড়তেই পারে এতে ছেলেদের সমস্যা কোথায়? তবে কেও যদি অশালীন বা উত্তেজক পোষাক পরে সে দায়িত্ব রাষ্ট্রের, আমার আপনার নয়। পোশাকের কারণে মেয়েদেরকে টিজিং করা হয় এ যুক্তি ভুল।

কোন ছেলে যদি রাস্তায় হাফ প্যান্ট পড়ে ঘুরে আমরা তাকে কেন টিজ করিনা। জাবি পাঠকমেলাকে ধন্যবাদ যে, জাবিতে সবচেয়ে বেশি যৌন নির্যাতন ও যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটলেও এই ক্যাম্পাস থেকেই ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে সবার আগে প্রতিরোধ শুরু হলো। অধ্যাপক ড. এটিএম আতিকুর রহমান বলেনÑ মেয়েদের প্রতি এই যে নির্যাতন তাকে ইভটিজিং হিসেবে নামকরণ করা উচিত নয় । তাছাড়া জাবিতে সবচেয়ে বেশি নারী নির্যাতন হয় তা মিথ্যে, কারণ এখানে যা ঘটে তার প্রতিবাদ করা হয় বলেই প্রকাশ পায়। অন্যান্য ক্যাম্পাসে যৌন নির্যাতনের তেমন প্রতিবাদ ল্য করা যায়না।

যৌন হয়রানি বা ইভটিজিং শিকার মেয়েরা অনেকেই বলতে লজ্জা পায়, কিসের লজ্জা? এই না বলতে পারাটাই একটা সমস্যা এতে করে প্রকৃত সমস্যার চিত্র ধরা পড়েনা। আর পোশাকের কথা যদি বলতে হয় তবে আমি বলব বাংলাদেশের মেয়েরাই পৃথিবীর সবচেয়ে শালীন পোশাক পড়ে। এটা আমাদের গর্ব। পৃথিবীর নানা নৃ-গোষ্ঠীর মেয়েরাও তো খুব স্বল্প পোশাক পড়ে, অথচ তাদের সমাজে তো মেয়েদের মর্যাদা অনেক বেশি। আমাদের পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার বদল করতে হবে।

অবদমন করতে হবে। আমাদের সমাজে নারী লাঞ্ছিত হলে তাকে অমর্যাদা করা হয় কেন তা খুঁজে বের করতে হবে। নারীর সমমর্যাদা দিতে হবে। অতিথিদের আলোচনা শেষে দর্শকদেরকে মুক্ত আলোচনার জন্যে আহ্বান জানানো হলে অনেকেই ইভটিজিং বিষয়ে তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। প্রাণীবিদ্যা বিভাগের এমফিল গবেষক মিজানুল কায়েস বলেন- ইভটিজিং নানা কারনে ঘটে ।

মেয়েরা তাদের প্রতি বিদ্রুপের কথা বলেনা, যদি তারা পরিবার বা বন্ধুদেরকে বলে তবে এই সমস্যাটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। তাছাড়া কোনটা যৌন হয়রানি কোনটা ইভটিজিং যৌন উত্তেজনার সীমারেখাই বা কি এসবের স্পস্ট সংজ্ঞা থাকা দরকার। আমরা যদি মেয়েদের সৌন্দর্য্য স্বীকার না করি কিংবা তাদেরকে সুন্দরী না বলি তবে তার সাথে সম্পর্ক টিকে থাকেনা। তবে এটাকে কি বলা হবে? ইভটিজিং বিষয়ে সচেতনতা জাগাতে ৫ম শ্রেণীর পাঠ্যবই থেকেই এ বিষয়ে অধ্যায় সংযোজন করা উচিত। গনমাধ্যমে যে বিদেশী সংস্কৃতিকে দায়ী করা হয় আমি তা মনে করিনা কেননা ওদের ভাল দিকগুলো আমরা নিচ্ছিনা কেন? ইভটিজিং বন্ধে আইন প্রনয়ণ এবং তা যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে।

ইতিহাস বিভাগের ৩৫ তম ব্যাচের ছাত্র আক্তারুজ্জামান বলেন- মূল প্রবন্ধে ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে আসলে নারীদের করনীয় কি তা বলা হয়নি। তাছাড়া ইভটিজিংংেয়র বিরুদ্ধে ছেলেরাই সব করছে তবে মেয়েদের ভূমিকা কি? তাছাড়া মেয়েদের পোশাক যথেষ্ট অশালীন ও উত্তেজক । তারা আকাশ সংস্কৃতি অনুযায়ী চলে বলেই ইভটিজিংয়ের স্বীকার হচ্ছে। এতে কি সত্যিই মেয়েদের কোন দায় নেই? রসায়ন বিভাগের ৩৩ তম ব্যাচের শিার্থী জালালউদ্দীন বলেনÑ ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে মূলত মেয়েদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। তাছাড়া মূল প্রবন্ধে আরও সংযোজন করা উচিত ইভটিজিংয়ের স^ীকার মেয়েকে তার পরিবারের সাথে এ বিষয়ে খোলামেলা পরামর্শ করা উচিত।

সর্বোপরি মেয়েদের পোশাক সহ অন্যান্য বিষয়ে আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। দর্শন বিভাগের ৩৬ তম ব্যাচের ছাত্রী লায়লা শারমিন বলেন- ইভটিজিহং নিয়ে অনেক ছেলেই যে কথা বলছে তা আসলে ঠিক নয়। তারা শুধু মেয়েদের পোশাক নিয়ে কথা বলছে এতে করে মূল বিষয় বিচ্যুত হয়ে গেছে। ইভটিজিংয়ের কারনে বাধ্য হয়ে অনেক মেয়েকে কম বয়সে বিয়ে দিয়ে দেয়া হচ্ছে। টিজিং তো মজা করার কোন বিষয় নয় ।

ছেলেদেরকে নৈতিক দিক দিয়ে শুদ্ধ হতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মত সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে পড়ে একটা ছেলে যদি তার সহপাঠীনি বা কোন মেয়েকে যোগ্য সম্মান মর্যাদা দিতে না পারে তবে দেশ কার কাছ থেকে কি পাবে? সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৩৭ তম ব্যাচের শিার্থী সজীব বলেন- মেয়েরা পুরুষ শাসিত সমাজের দ্বারা প্রাচীনকাল থেকেই নির্যাতনের স্বীকার হয়ে আসছে। আমাদের ধর্মে লোভ ত্যাগ করতে বলা হয়েছে। নারীদের প্রতি পুরুষের সবরকম লোভ ত্যাগ করতে হবে। নারীদের সমান স্বাধীনতার কারণে তারা যে কোন পোশাক পড়তে পারে।

তবে অশালীন বা দৃষ্টিকটু পোশাক বন্ধ করতে হলে পরিবার থেকে উদ্দ্যোগ নিতে হবে। নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের ৩৭ তম ব্যাচের ছাত্র ও ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী সিনা বলেন- ইভটিজিংয়ে পোশাক কে দায়ী করা হচ্ছে, তবে সৌদি আরবে কি ইভটিজিং নেই? ৫ম শ্যেণী থেকে পাঠ্য বইতে এসব দিয়ে আসলে কি কাজ হবে আমরা তো ১ম শ্রেণী থেকেই নৈতিকতা শিখে আসছি! ইভটিজিং অবশ্যই একটা নেতিকতা সম্পর্কিত বিষয়। কেবল নৈতিকতা বিচ্যুত হলেই তা অপরাধ হয়। অনেকে বলেছেন মূল প্রবন্ধে নাকি বিস্তারিত আসেনি কিন্তু ভাল করে পড়ে দেখুন সেখানে নারীর করনীয় সহ সবকিছুই আছে। ইভটিজিংয়ের জন্যে আকাশ সংস্কৃতি ও গনমাধ্যম সম্পূর্ণ দাযী।

কেননা এখন একটা ছেলে ও মেয়ে ভাবে তারা মান্না শাবনুর হবে ওদের মত পোশাপ পড়বে। গনমাধ্যম ও ইভটিজিংয়ের বিস্তারে দায়ী। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী বদলাতে হবে, ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে। মুক্ত আলোচনায় দর্শক মতামতের জবাব দিয়ে গিয়ে মূল আলোচক ও প্রবন্ধ উপস্থাপক ড. নাসিম আকতার হোসাইন বলেন- ইভটিজিং একটা অপরাধ একে তাই গন্য করতে হবে। আমাদের মনোভাবের পরিবর্তন করতে হবে।

আমরা যে পুজিবাদী সমাজে বাস করছি তারাই পরো ভাবে তাদের কালচার পোশাক দিয়ে ইভটিজিংকে উস্কে দিচ্ছে। পুজিবাদী সমাজ আমাদের কে একাকিত্বের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আর পোশাক তো ছেলেদের ও হচ্ছে কই তাতে কি সমস্যা হচ্ছে? রাস্তা দিয়ে ছোট পোশাক পড়ে একটা সুন্দরী মেয়ে হেটে গেলেই মাথা নষ্ট হয়ে যাবে তা কেন? ছেলেদের আত্মনিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে। বাবা-মা কে সন্তানের নিয়ন্ত্রণ শেখাতে হবে। ইভটিজিং আসলে যতটা না পোশাক সৌন্দর্য্য বা অঙ্গ-ভঙ্গীর তার চেয়ে বেশি মনের।

এর থেকে বেড়িয়ে এসে আমাদেরকে ইভটিজিং মুক্ত সমাজ গঠনে নারী পুরুষ সম্মিালতভাবে কাজ করতে হবে। এরপরে মুক্ত আলোচনার সভাপতি রেজাউল হক কৌশিক সবাইকে ধন্যবাদ ও ইভটিজিং বন্ধে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে আলোচনার সম্পপ্তি ঘোষনা করেন। অনুষ্ঠানের শেষে জাবি পাঠকমেলার সদস্যরা উপস্থিতির সবাইকে আপ্যায়ন করায় । ইভটিজিং প্রতিহত প্রতিরোধ ও এর কুফল তুলে ধরবার প্রত্যয় নিয়ে মুক্তআলোচনা শেষ হয় রাত ৮ টায়। সোহেলুর রহমান সাধারণ সম্পাদক দৈনিক আমারদেশ পাঠকমেলা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।

হধনড়শড়নর@মসধরষ.পড়স

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।