আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশাল বিশ্বে তুমি আমি অভিন্ন



আজ বিকাল চারটায় হিমির সাথে আমার দেখা করার কথা কফি পারলারে। এখন বাজে দুপুর দুইটা। আমি আছি তাজমহল রোডে। হাতে দুই ঘন্টা সময় আছে। এখন আমি যাবো আজিজে।

তপন বাবুর সাথে কিছু জরুরী আলাপ আছে। আলাপ শেষ করে সেগুন বাগিচা কফি পারলার। তপন বাবুর সাথে কথা বলতে বলতে কখন সাড়ে চারটা বেজে গেছে খেয়াল করিনি। হিমি আমার জন্য কফি পারলারে বসে আছে একথা মনে পড়তেই দৌঁড় দিলাম। পাঁচটায় কফি পারলারে পৌছে দেখি হিমি দুই হাত গালে দিয়ে বসে আছে।

দুই হাত ভরতি তার কাঁচের চুড়ি। সামনে কফির মগ। খুব সুন্দর একটা শাড়ি পড়ে আছে। নীল আর সাদা। দেখে মনে হলো যেন ঝলমলে দুপুরের স্বচ্ছ নীলাকাশ।

হিমির পাশের টেবিলে চৌদ্দ পনের জনের একটা দল বসে আছে। সবার'ই বয়স পঞ্চাশ এর উপরে। তারা সবাই নীচু গলায় কথা বলছেন। হঠাৎ ইচ্ছা করলো হিমির কানের কাছে গিয়ে বলি-"আমার শূন্যতা তুমি পূর্ন করি গিয়েছ আপনি/জীবন আঁধার হলো,সেই ক্ষনে পাইনু সন্ধান/পূজামূর্তি ধরি প্রেম দেখা দিল দুঃখের আলোতে। " আমি মাথা নীচু করে গিয়ে হিমির সামনে বসি।

আমি হিমির দিকে না তাকিয়ে খুব বুঝতে পারি হিমি দুই হাত গালে রেখেই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি কোনো দিন'ই হিমির সাথে সময় মতো দেখা করতে পারিনি। কিভাবে কিভাবে যেন দেরী হয়ে যায়। একবার শীতের সময় হিমিকে নিয়ে যাওয়ার কথা বুড়িগঙ্গা নদীর ঐ পাড়ে। একটা গ্রামে দারুন কাশফুল হয়েছে।

হিমি কাশফুল অনেক পছন্দ করে। সেদিন আড়াই ঘন্টা দেরী করেছি। আহা... সেদিন হিমি আড়াই ঘন্টা গুলশান লেকের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। আড়াই ঘন্টা পর যখন আমি হিমির কাছে যাই,সে একবারও জানতে চায়নি -আমার কেন দেরী হলো। আমি যখন নিজ থেকে বলতে চাইলাম,তখনও সে শুনতে চাইলো না।

খুব নরম সুরে শুধু বলেছিল-আমি জানি তুমি ইচ্ছা করে দেরী করনি। আমি কখনো দুপুরে খাওয়ার পর ঘুমাই না। সেদিন হঠাৎ এমন ঘুম দিলাম। আমাদের পাশের টেবিলের বুড়ো গুলো খুব বেশী ক্যাট ক্যাট করছে। ঝগড়ার মতো অবস্থা।

তাদের দিকে তাকাতেই আমি অবাক হয়ে গেলাম!আরে...এদের সবাইকে তো আমি চিনি!শুধু আমি না হিমি ও চিনে। খুব ভালো করে চিনে। আমি বললাম হিমি দেখ আমাদের পাশে কারা বসে আছেন!হিমি একটু আগ্রহ দেখালো না। তাদের দিকে ফিরেও তাকালো না। আমি বললাম হিমি তুমি পাঁচ মিনিট বসো আমি তাদের সাথে দেখা করে আসি।

হিমি কঠিন চোখে আমার দিকে তাকালো। আর তখন হিমিকে আমার হিংসুটে হিমি বলে মনে হলো। হিমিকে বলতে ইচ্ছা করলো -তোমার বান্ধবীরা ঠিক'ই বলতো,হিংসুটে মিতু। হিমি যখন ক্লাশ এইটে পড়ে তখন হিমির খুব কাছের একটা বান্ধবী রেগে বলেছিল-''হিংসুটে মিতু''। হিমি তো বাসায় এসে কান্দাকাটি শুরু করেছে।

হিমি কাঁদতে কাঁদতে তার বাবা কে বললো-বাবা,মিতু নাম আমার ভালো লাগে না,তুমি আমার নতুন একটা নাম রেখে দাও। সবাই আমাকে হিংসুটে মিতু বলে ডাকে। হিমির বুদ্ধিমান বাবা তখন অনেক ভেবে চিন্তে বললেন-শোন আজ থেকে তোর নাম হিমি। নামটা মিতুর খুব পছন্দ হলো। (আসলে মিতু'র বাবা কে এই বুদ্ধিটা দেই আমি।

)হিংসুটে থেকে হি আর মিতু থেকে মি,হিমি। হিমি হলো আকাশের একটা তারার নাম। এই তারাটা অন্যসব তারা থেকে অনেক বেশী ঝলমল করে। তারপর থেকে মিতু'র নাম হয়ে গেল হিমি। আমি হিমির কঠিন চোখকে সম্পূর্ন অগ্রাহ করে পাশের টেবিলে বসা বুড়োদের টেবিলের দিকে পা বাড়ালাম।

বুড়ো গুলোতো আর সাধারন বুড়ো না। এক একজন কিংবদন্তি পুরুষ। সক্রেটিস,আইনষ্টাইন,আব্রাহাম লিংকন,ব্রার্টান্ড রাসেল,রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,ডারউইন,ফ্রয়েড,ভিঞ্চি,হো চে সিন,এডিসন,গোর্কি,পীথাগোরাস,বিটোফেন,শেক্সপিয়ার আরো দুইজন কে ঠিক চিনতে পারছি না। আমি রবীন্দ্রনাথের সামনে দাঁড়িয়ে হাসি মুখে বললাম- হ্যালো স্যার! আপনারা সবাই কেমন আছেন?আইনষ্টাইন আর রবীন্দ্রনাথ ছাড়া সবাই আমার দিকে এক মুহূর্ত তাকিয়ে আবার তাদের কথায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। আইনষ্টাই আমার দিকে তাকানি কারন সে একটা ডাব গেছের দিকে তাকিয়ে ছিলেন।

সেই ডাব গাছে দুইটা কাক কা কা করছিলো। আর রবীন্দ্রনাথ তাকিয়ে ছিলেন আমার হিমির দিকে। হয়তো ভাব ছিলেন-"যাকে না পেলে চলে না তাকে না পেয়ে কী করে দিনের পর দিন কাটবে,ঠিক এই কথাটার সুর পাই কোথায়?" সক্রেটিস,হো চে সিন কে বলছেন-বলেন রাষ্টবিজ্ঞানের সংজ্ঞা কি? শেক্সপিয়ার আব্রাহাম লিংকন কে ভারী গলায় কবিতা আবৃওি করে শুনাচ্ছেন। "In the forgeten days of sunny April- /Through the forest path, /He Comes,comes, ever comes. /In the rainy of July night on the /Thunderingcharriot of cloud /He comes, comes, ever comes." ভিঞ্চি,ফ্রয়েড কে মোনালিসার হাসির ব্যাখ্যা করছেন। ব্রার্টান্ড রাসেল,পীথাগোরাস কে বলছেন-আপনি কি আমার 'বিবাহ ও নৈতিকতা' বইটি পড়েছেন? বিজ্ঞানী ডারউইন-গোর্কি কে বিবর্তনবাদ বুঝাচ্চছেন।

আর বিটোফেন সবার দিকে বোকার মতো তাকিয়ে আছেন। আর একটু পরপর কোটের ভেতর থেকে একটা ছোট বোতল বের করে চুপি চুপি চুমুক দিচ্ছেন। আমি কফি পারলারের একটা ছেলেকে ডেকে বললাম-এদের সবাইকে কফি দাও। আর প্রত্যেক কে এক প্যাকেট করে বেনসন সিগারেট। আর হিমি কে দেখিয়ে বললাম-ঐ টেবিলে দুই মগ চা দাও।

বুড়োদের বক বক ভালো লাগছে না। এখন হিমির সাথে কথা বলব আর চা খাবো। হিমি চা কফি কিছুই খায় না,তারপরও আমি একা চা খেতে পারি না বলে সে চায়ে সুন্দর করে চুমুক দেয়। রবীন্দ্রনাথ আমার দিকে তাকিয়ে বললেন আমি ধুম পান করি না। হো চে সিন বললেন আমি চা কফি কিছুই খাই না।

গোর্কি বলছেন... হঠাৎ হিমির দিকে চোখ পড়তেই দেখি,হিমি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এখনো দুই হাত তার গালে। শেষ বিকেলের আলো হিমির মুখে। হিমি কে এতো সুন্দর লাগছে,মনে হচ্ছে এই মেয়ে এই ভুবনের মানবী হতেই পারে না। হিমির চোখের কোনায় দুই ফোঁটা জল হীরার মতো জ্বল জ্বল করছে।

আমার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করল হিমি...। কিন্তু তার আগেই পেছন থেকে কে যেনো আমাকে ডেকে উঠলো। উঠ এই উঠ....দশ টা বাজে। বলতে বলতে গায়ে ধাক্কা দিল। আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল।

দেখি মা ডাকছে। বিছানায় উঠে বসতেই মা বলল,যাও বিদুৎ বিল টা দিয়ে আসো। আজ কেই শেষ দিন। মা'র পেছন থেকে ভাবি বললেন নাস্তা খেয়ে তাড়াতাড়ি যাও। (উৎসর্গঃ মইনুল আহসান সাবের।

আমাদের সাবের ভাই। আমার খুব প্রিয় একজন মানুষ। আজ স্যারের জন্মদিন। অনেক শুভ কামনা। )


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.