আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যেখানে আপনি মোবাইল অপারেটরদের নিজ হাতে আরো বিশাল বিশাল বাঁশ দিতে পারেন, সেখানে শুধু মিসড-কলের মত ছোট হাতিয়ার ব্যবহার করার কি দরকার?

আজকে আমাদের গণ মিসড-কল দিবস। মোবাইল হাতে নিলাম, ফোনবুকে যার নাম্বারই পাইলাম (নানা-নানু আর স্যারের নাম্বার বাদ দিয়ে), তারেই মিসড কল দিয়ে নেটওয়ার্ক সাধ্যমত জ্যাম করলাম। কিন্তু দিনশেষে মনে হলো খুব একটা লাভ হয়নাই। রাস্তা দিয়ে গাড়ি গেলে রাস্তায় পড়ে থাকা কাদাপানি যতটুকু গতিরোধ করতে পারে গাড়িটার, আমাদের মিসডকল আন্দোলনও মাল্টি-মিলিয়নেয়ার অপারেটরদের ততটুকুই ক্ষতি করতে পারবে। ফলে এতে কতটুকুই বা টনক নড়বে মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোর সে বিষয়ে কিছুটা সন্দেহ থেকেই যায়।

তাই চিন্তা করলাম, গাড়ির গায়ে কাদাপানি যখন ছিটাবোই, ভালভাবেই ছিটাই। পারলে গাড়িটাকেই কিভাবে কাদাপানিতে চুবানো যায় ওই চেষ্টা করে দেখি না কেন? দূর্যোধন, সিডেটিভ, আরিফ ভাইয়ের ইভেন্ট ইনফোতেই পরিষ্কার করে তুলে ধরা হয়েছে অন্যান্য দেশের তুলনায় আমরা কত বেশি দাম দিয়ে কত বাজে মানের ইন্টারনেট সার্ভিস পাচ্ছি। সুতরাং, আমি আর সে বিষয়ে কথা না বাড়িয়ে আরেকটি দিকে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করলাম। আমি টেকনিকাল বিষয়বস্তু কম বুঝি, তাই আমার মত মুক্ষু-সুক্ষু মানুষদের উপযোগী করেই লিখলাম। শুরুতেই কিছু কথা বলে নেই, আমাদের ইন্টারনেট স্পীড এত কম হওয়ার কি কি কারণ থাকতে পারে? আমাদের দেশের জন্য সাবমেরিন কেবল থেকে যে পরিমাণ ব্যান্ডউইডথ আমাদের দেশের মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো ব্যবহার করতে পারে, তার পরিমাণ আসলে খুবই কম।

এই কম পরিমাণ ডাটা ৫-৬টা অপারেটরের মধ্যে ভাগ হয়ে যাওয়ার পর অবশিষ্ট যা থাকে, সেটার পরিমাণও খুবই কম। এই অল্প পরিমাণ ব্যান্ডউইডথেরও বেশ খানিকটা অংশ খরচ হয়ে যায় অবৈধ ভিওআইপি কলে। এখন যদি কেউ বলেন আমাদের অপারেটররা সাধুবাবা, তারা এই কাজ কখনো করেননাই, তাহলে বলবো আপনি বোকার স্বর্গরাজ্যে শুধু বাসই করছেন না, আপনি সেই রাজ্যের একচ্ছত্র অধিপতি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ভিওআইপি ব্যবসার কারণে বেশ বড়-সড় ধরাই খেয়েছিল দেশের সবগুলো মোবাইল অপারেটর। তারপরও তারা মানুষ হয়নাই।

এই সরকারের আমলেও দেশের ৬টা অপারেটরই আবারও জরিমানা দিতে বাধ্য হয়েছে। যদিও যে পরিমাণ জরিমানা তারা গুনেছে, তার কয়েকগুণ লাভ তারা উঠিয়ে নিয়েছে, তাই এই ব্যবসা বন্ধ করার কোন কারণই নেই নিজের লাভ উঠিয়ে আনতে হলে। গুগলে “ভিওআইপি জরিমানা” লিখে সার্চ দিন, অনেক তথ্যসূত্র পেয়ে যাবেন এর বিপরীতে। এখন কথা হচ্ছে, এতকিছু থাকতে আমি ভিওআইপি ধরে টান দিলাম কেন? আমরা তো বিদেশী অপারেটরের পরিবর্তে দেশী টেলিটক ব্যবহার করেও তাদের ব্যবসায় ধস নামাতে পারি। হ্যাঁ, তা পারি।

কিন্তু এতে নিজের ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বার পরিবর্তন করা সহ আরো কিছু সমস্যা আছে। এরচেয়ে বড় সমস্যা হলো এতে অপারেটরদেরকে দেওয়া বাঁশের ডাইমেনশনটা একটু ছোট হয়ে যায়। কিন্তু আমার উদ্দেশ্য তো তাদের সিস্টেমেই সম্পূর্ণ বৈধ উপায়ে সরকারকে ট্যাক্স পরিশোধ করে তাদেরকে বাঁশ দেওয়া। সে প্রসঙ্গেই ভিওআইপি’র কথা তুললাম। আমরা সবাই স্কাইপ এর নাম জানি।

স্কাইপ কিন্তু কাজ করে ভিওআইপি সিস্টেমেই। সেক্ষেত্রে আপনি যদি আপনার ভয়েস কলের ক্ষেত্রে আপনার মোবাইল অপারেটরের ইন্টারনেট প্যাকেজ ব্যবহার করে কাউকে কল দেন, তাহলে কিন্তু দিনশেষে আপনারই লাভ! কিভাবে? আমি জিপি’র P6 প্যাকেজ(১জিবি ভলিউম, ৩০দিন মেয়াদ) ব্যবহার করি বলে এই প্যাকেজের রেটেই ছোট-খাটো একটা প্র্যাকটিকাল উদাহরণ দেই। পকেটে টাকা পয়সার অভাব বলে বাজারে যত প্যাকেজ আছে ব্রডব্যান্ড, মোবাইল, ওয়াইম্যাক্স মিলিয়ে, এই প্যাকেজটাই আমার সাধ্যের সবচেয়ে কাছের। তাই মাসের শুরুতেই টাকা-পয়সা হাতে আসলে এই প্যাকেজ সাবস্ক্রাইব করি সারা মাসের নেটের খোরাক মিটানোর জন্য। সাথে আরও ১৫০-২০০টাকা রিচার্জ করতে হয় এদিক-সেদিক কল/এসএমএস করার জন্য।

কিন্তু, পি৬ প্যাকেজে এদিক-সেদিক আমার অধিকারের ব্যান্ডউইডথ চুরি করে জিপি আমাকে যে স্পীড প্রোভাইড করে, সেটা দিয়ে ফেসবুকের হোমপেজ ওপেন হতেই ১২-১৫সেকেন্ড লেগে যায়। ডাউনলোড স্পীড সর্বোচ্চ ২৫-২৭কেবিপিএস। এরমধ্যে সারা মাস ডাউনলোড করা তো কখনোই সম্ভব না, ব্রাউজিং করেও ১জিবি শেষ হয়না। ফলে দেখা যায় মাসের শেষে আমার ২০০-৩০০মেগাবাইট অপচয়ের হুমকিতে পড়ি। গরুর গাড়ি মার্কা স্পীড দিয়ে শেষ ৪-৫দিনে ডাউনলোড করেও ওই এমবি শেষ করা যায় না।

ফলে ওই ২০০-৩০০এমবি বাঁচাতে গিয়ে এদিক-সেদিক ধারদেনা করে মাসের ২৫তারিখেই আমার প্যাকেজ রিনিউয়াল করতে হয়। এভাবে ৩০দিনের জায়গায় ২৫দিনেই আমার প্রতিমাস নেট ইউজ হয়, ৫দিনের নেট এদিক-ওদিক করে অপচয়ের খাতায়ই চলে যায়। এখন এই অতিরিক্ত ২০০এমবি যদি আমি স্কাইপে ভয়েজ কলে ব্যবহার করি তাহলে আমার আসলে মাসে ৩৫০টাকার বেশি এক পয়সাও খরচ হয়না মোবাইলের পিছনে! এখন ছোট্ট একটা হিসাব করে দেখি, জিপি’র P6 প্যাকেজের ডাটা ভলিউম= ১গিগাবাইট= ১০২৪ মেগাবাইট। প্যাকেজের মূল্য = ৩০০টাকা + ৫টাকা এসএমএস চার্জ + ৪৫টাকা ভ্যাট= ৩৫০টাকা। স্কাইপ ভয়েস কলে প্রতি মিনিটে ডাটা খরচ= ০.৫মেগাবাইট তাহলে, প্রতি মেগাবাইটের দাম পড়ে= ৩৫০/১০২৪= ০.৩৪১ টাকা এবং প্রতি মিনিট স্কাইপ ইউজ করে ভয়েস কলের খরচ= ০.১৭ টাকা = ১৭পয়সা মাত্র!!! ১০২৪এমবি অর্থাৎ ৩৫০টাকা খরচ করে আপনি সারামাসে কথা বলতে পারবেন= ১০২৪/(.৫X৬০) = ৩৫০/ ০.১৭ = ৩৪+ ঘন্টা এখন চিন্তা করে দেখেন, বাজারে অপারেটররা সর্বনিম্ন যে কলরেট অফার করে তা হল ২৫পয়সা (ভ্যাটসহ ২৯পয়সা)।

আর সে জায়গায় আমি আমার নেটের ভলিউম দিয়ে কোন ঝামেলা ছাড়াই কথা বলতে পারছি কম রেটে উপরন্তু কোন খরচ ছাড়াই! মাসে অতিরিক্ত ১৫০টাকা খরচও বেঁচে গেল, সাথে ৫দিনের ইন্টারনেটও অপচয় হলোনা। এতক্ষণ বললাম টাকা-পয়সার হিসাব, এখন আসি সুবিধা-অসুবিধার কথায়। অসুবিধাঃ ১। যাকে স্কাইপ থেকে কল দিবেন, তার মোবাইলে স্কাইপ দিয়ে লগড ইন থাকতে হবে। এ কারণে আপনার আশেপাশে প্রচুর পরিমাণ স্কাইপ ইউজার না থাকলে আপনার জন্য এই সিস্টেম ততটা লাভজনক হবে না।

২। সারাদিন স্কাইপে লগইন থাকলে আপনার মোবাইলের চার্জ প্রচুর পরিমাণে নষ্ট হবে। ৩। কথা কিছুটা দেরিতে আসতে পারে, যা বিরক্তিকর। সুবিধাঃ ইদানীং স্মার্টফোন এতটাই সহজলভ্য যে আশেপাশে যে কাউকেই আপনি মোটিভেট করতে পারবেন স্কাইপে একাউন্ট খোলার জন্য।

হ্যাঁ, ১৫-২০সেকেন্ডের ছোটখাটো কলের জন্য স্কাইপ ইউজ ঝক্কির ব্যাপার, কিন্তু কলের পরিবর্তে এসএমএস দিয়ে স্মল টকের কাজ চালাতে পারেন। কিন্তু ১০-১৫মিনিটের উপর লম্বা কথা বললে আপনার শুধুই লাভ আর লাভ। যারা বাসার বাইরে থাকেন, কিংবা প্রেম করেন, তাদের কিন্তু দিনে অন্তত দিনে আধাঘণ্টা থেকে ২-৩ঘন্টাও ফোনে কথা বলা হয়। সেক্ষেত্রে আপনার অনেক খরচ বেঁচে যায়, অপারেটরও বাঁশ খায়! আর আপনি যদি ওয়াই-ফাই সুবিধাযুক্ত স্মার্টফোন ইউজ করেন, তাইলে তো আপনার খরচের হিসাবে লাভের অংক আরো ফুলে-ফেঁপে উঠে। সেই সাথে আপনি ওয়াইম্যাক্স অপারেটরদেরও আপনার প্রদত্ত বাঁশের অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।

আপনার বাসা/অফিসের ওয়াইফাই রাউটার অথবা শপিং মল/ ফাস্টফুড শপের ফ্রি ওয়াইফাই ইউজ করেন আর আনলিমিটেড কথা বলেন মোবাইল অপারেটরদের এক পয়সাও না দিয়ে (খরচের ভারটা অফিস/শপিং মলের মালিকের উপর চালাইয়া দিলেন আর কি)। আর স্কাইপে কথা দেরিতে আসে বলে যে ধারণাটা আছে সেটাও আংশিক সত্য। আপনি যদি পিসি থেকে স্কাইপ ইউজ করেন জিপি নেট ব্যবহার করে, তাহলে কথা কিছুটা আটকে যায় অথবা দেরিতে আসে যা আসলেই বিরক্তিকর। কিন্তু মোবাইলের ক্ষেত্রে এই সমস্যা নেই। আমি নিজে কথা বলি মোবাইল ইউজ করে, তাই এই ব্যাপারটা আপনাদের কনফার্ম করতে পারি।

আর হ্যাঁ, সারাদিন স্কাইপে অনলাইন থাকলে আপনার মোবাইলের ব্যাটারি ২মাসেই অক্কা পাবে। কিন্তু এইক্ষেত্রেও মাথা খাটালেই সলিউশন পাওয়া যাবে। সবসময় অনলাইন থাকার কোন মানে হয়না। ধরুন আপনি আপনার কোন বন্ধুকে কল করবেন যে কিনা স্কাইপে বর্তমানে অফলাইন আছে। তাকে ২টা মিসড কল দিয়ে বুঝান আপনি ওর সাথে কথা বলতে চান, সে যেন অনলাইন হয় (এই চান্সে কিন্তু মিসড কল দিয়ে অপারেটরের নেটওয়ার্ক কিছুটা জ্যাম করা গেল যা আমরা আজ সারাদিন করার চেষ্টা করলাম)।

সে যদি ব্যস্ত না থাকে এবং আপনার সাথে কথা বলতে রাজি থাকে তাহলে সে-ও আপনাকে ২টা মিসকল দিয়ে সম্মতি জানালো (দুই-দু’গুণে চাইর মিসকল, নেটওয়ার্কের মায়রে বাপ) এবং আপনারা দুইজনই অনলাইন হয়ে কথা-বার্তা বললেন। কথা শেষে আবার অফলাইন। এতে আপনি যদি কারো সাথে কোন বিশেষ সময় কথা না বলতে চান, তাকে এভয়েড করা যাবে। চারিদিকে আপনার খালি লাভ আর লাভ!! এভাবে চাপে পড়লে মোবাইল অপারেটররা খালি ইন্টারনেটের দামই না, কলরেটেরও ট্যারিফ কমাতে বাধ্য হবে। তাহলে আর দেরি করে কি লাভ? আশেপাশে আপনার পরিচিত সব স্মার্টফোনে স্কাইপ ইনস্টল করে সবাইকে একটা আইডি ইনস্টল করে দিন, নিজের খরচ কমান, মোবাইল/ ওয়াইম্যাক্স অপারেটরদের মনোপলি বিজনেসে ধস নামান।

এন্ড্রয়েড, আইফোনের জন্য স্কাইপ ডাউনলোড লিংক সিমবিয়ানের জন্য ডাউনলোড লিংক ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.