আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কোথায় এখন মহিউদ্দিন চৌধুরীর ৪০ দফা ?



বিগত নির্বাচনে প্রাক্তন সিটি মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী ঘোষিত ৪০ দফা নির্বাচনী ইশতেহারের একটিও বাস্তবায়িত হয়নি। ২০০৫ সালের মেয়র নির্বাচনে মহিউদ্দিন ৪০দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু তার পাঁচ বছরের কার্যকালে ওই ৪০ দফার একটি দফাও বাস্তবায়ন করা হয়নি। এতে অনেক দফা ছিল যেগুলো তাঁর কাজের আওতাভূক্ত নয়। নিজ ইশতেহারের কিছু কিছু দফার বিপক্ষে মেয়র কাজ করেছেন।

মহিউদ্দিনের দাবি, ৪০ দফার সবগুলোই বাস্তবায়ন হয়েছে। এ কারণে এবারের নির্বাচনের ইশতেহারে কোনো দফা নেই। তিনি সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেন, আগামীতে নির্বাচিত হওয়ার পর আমার কাজ হবে একটি। সেটি হচ্ছে সিটি গভর্নমেন্ট পদ্ধতি চালু করা। ২০০৫ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ৪০ দফার মধ্যে এটি ছিল এক নম্বর দফা।

সেবার বিপুল ভোটে বিজয়ের পরদিন (১০ মে) মেয়র লালদীঘি মাঠে বিশাল জনসভা করে দুই মাসের মধ্যে সিটি গভর্নমেন্ট চালুর ঘোষণা দেন। সরকার এটা করতে না দিলে সরকারের কোনো মন্ত্রীকে চট্টগ্রামে ঢুকতে দেওয়া হবে না, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কোনো মালামাল বাইরে যেতে দেওয়া হবে না। ওই সমাবেশে তিনি বলেছিলেন, সিটি গভর্নমন্ট চালুর ৪০ শতাংশ কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজ দুই মাসের মধ্যে শেষ করা যাবে। মেয়র পরবর্তী পাঁচ বছরেও সিটি গভর্নমেন্ট চালু করা নিয়ে মহিউদ্দীনকে কোনো সংগ্রাম করতে দেখা যায়নি।

এ প্রসঙ্গে মহিউদ্দিন সম্প্রতি বলেছেন, সিটি গভর্নমেন্ট চালু করতে গেলে অনেক কাজ করতে হবে। এজন্য জাতীয় সংসদে আইন করতে হবে। সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব আয়ের উৎস দেখাতে হবে। ’ তিনি বলেন,‘ আমি মনে করি আগামীতে নির্বাচিত হলে আমি সরকারের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হব। তখন সিটি গভর্নমেন্ট চালু করা সম্ভব হবে।

শতেহারের দ্বিতীয় দফা ছিল,‘চট্টগ্রাম মহানগরীর আয়তন ৬০ থেকে ১২০ বর্গকিলোমিটারে উন্নীত করা হবে। কিন্তু এবার কর্পোরেশন এলাকা ৬০ বর্গকিলোমিটার ধরেই নির্বাচন কমিশন আগামী ১৭ জুন ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা করেছে। তৃতীয় দফায় ছিল কর্ণফুলী নদীর ওপর সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে বিওটি ভিত্তিতে ঝুলন্ত ব্রিজ অথবা নদীর তলদেশে টানেল এবং কালুরঘাটে সড়ক ও রেল চলাচলের উপযোগী নতুন সেতু নির্মাণ। বিগত জোট সরকারের আমলে কর্ণফুলী নদীর ওপর ঝুলন্ত ব্রিজের পরিবর্তে একটি পিলার সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত হলে মেয়র তার বিরোধিতা করেন। উল্টো মেয়র সেখানে ঝুলন্ত সেতু নির্মাণের জন্য আলাদা একটি কার্যালয় খুলেছিলেন।

কিছুদিন পর মেয়রের ওই প্রকল্প কার্যালয় গুটিয়ে নেওয়া হয়। পরে সরকারি সিদ্ধান্ত মত পিলারের সেতু নির্মিত হয়। ইশতেহারের চতুর্থ দফায় ভূ উপরিস্থ পানি (সারফেস ওয়াটার) ব্যবহার করে নগরীর পানি সংকট নিরসন ও পয়:নিস্কাশন ব্যবস্থা চালুর ঘোষণা ছিল। সিটি করপোরেশন নগরীতে পয়:নিস্কাশন ব্যবস্থা চালুর কোনো উদ্যোগ না নিলেও ‘প্রিমিয়ার ড্রিংকিং ওয়াটার’ নামে একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে সম্প্রতি। করপোরেশন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মতো বোতলজাত পানি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চট্টগ্রামে বিপনন করেছে।

পঞ্চম দফায় সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করে লোডশেডিং সংকটের সমাধান, ষষ্ঠ দফায় গৃহকর না বাড়িয়ে এক শতাংশ কমানোর কথা বলা ছিল। এর কোনটিই বাস্তবায়ন হয়নি। সপ্তাম ও অষ্টম দফায় যথাক্রমে রিক্সার লাইসেন্স ফিস না বাড়ানো ও নগরীর বসিত্ম এলাকায় প্রসূতি মায়েদের জন্য একদল চিকিৎসকের সমন্বয়ে অ্যাম্বুলেন্সসহ একটি টিম তৈরির ঘোষণা ছিল। মহিউদ্দীনের সময়কালে রিক্সার লাইসেন্স ফিস বাড়ানো হয়নি। কিন্তু রিক্সাকে লাইসেন্সের ব্যবস্থায় আনার চেষ্টা করা হয়েছিল।

প্রসূতি মায়ের জন্য স্বাস্থ্যসেবা চালু নিয়ে কিছুদিন তোড়জোড় হলেও তা চালু করা সম্ভব হয়নি। ইশতেহারের নবম দফায় ভয়াবহ এইচআইভি/এইডস রোগ প্রতিরোধে চিকিৎসা ও গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের কথা ছিল। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের নীচতলায় জার্মান সহযোগিতা সংস্থা জিটিজেটের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় এইচআইভি/এইডস চিকিৎসা ও সচেতনতা কার্যক্রম সেই নির্বাচনের এক বছর আগে অর্থাৎ ২০০৪ সালে চালু হয়। গত বছরের জানুয়ারি থেকে এটা বন্ধ রয়েছে। অথচ বিদেশি সংস্থার সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী ২০১১ সাল পর্যন্ত এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকার কথা।

দশম দফায় কর্পোরেশনের জন্য মানসম্মত ওষুধ সরবরাহে একটি ওষুধ কারখানা তৈরির কথা বলা হয়। দ্বিতীয় দফায় মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর মেয়র সাগরিকা এলাকায় এই ওষুধ কারখানা নির্মাণ সম্পন্ন হয়। সরকার এই কারখানায় উৎপাদনের অনুমোদন দেয়নি বলে জানা যায়। এছাড়া চট্টগ্রাম শহরের যানজট নিরসনের লক্ষ্যে ফৌজদারহাট থেকে ইপিজেড হয়ে সিআরবি পর্যন্ত সিটি সার্কুলার ট্রেন সার্ভিস চালু, কর্ণফুলীর তীর ঘেষে পতেঙ্গা থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত দুই স্তরের সড়ক নির্মাণ (২২ নং দফা), যানজট নিরসনে সড়ক প্রশস্তকরণ ও বহদ্দারহাট থেকে সিইপিজেড পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণের (২৩নং), টাইগারপাস হিলে আধুনিক পাঁচ তারকা মানের হোটেল নির্মাণ (২৪ নং দফা), পর্যটন সুবিধা বাড়াতে পতেঙ্গায় ৫৫০ কোটি টাকায় পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন (২৬ নম্বর) ইত্যাদি ছিল মহিউদ্দীনের তৃতীয় দফায় প্রতিদ্বন্দ্বিতার সময় ঘোষিত ইশতেহারের গুরুত্বপূর্ণ দফা। এগুলোর কোনোটি তার সময়কালে বাস্তবায়িত হয়নি।

ইশতেহারের ১৪ দফায় নগরীর আবর্জনাকে সম্পদে রূপান্তরের লক্ষ্যে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে হালিশহরে আবর্জনা থেকে জ্বালানী কাঠ, গ্যাস ও সার উৎপাদন কারখানা চালুর ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, এ ধরণের আরো একাধিক প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে। অথচ বর্তমানে ওই প্রকল্পটিই অকেজো পড়ে আছে। ২৭ নম্বর দফায় চাক্তাই খালের পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে খালের মুখে ইস গেইট স্থাপন করে মালামাল পরিবহনের জন্য খালে সাম্পান চলাচলের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু গত পাঁচবছরে চাক্তাই খালের মুখটিও খনন করা হয়নি। উল্টো খালের মুখে কর্ণফুলী নদীতে জেগে ওঠা চর দখল করে ৭০টি দোকান নির্মাণ করেছে সিটি কর্পোরেশন।

সুশীল সমাজের আন্দোলনের মুখে এসব দোকান ভেঙে ফেলার আশ্বাস দেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। ইশতেহারের ২৯ দফায় বিদেশি পর্যটক আকর্ষণ করতে বান্দরবানে দার্জিলিংয়ের আদলে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা, ৩৩ দফায় দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল যোগাযোগ স্থাপন, ৩৪ দফায় আনোয়ারার পারকিতে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা, ৩৫ দফায় সন্দ্বীপ চ্যানেল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর সম্প্রসারণ করার উদ্যোগ নেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। বাস্তবে এগুলো সিটি করপোরেশনের কাজের আওতারও বাইরে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।