যুদ্ধাপরাধের বিচার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে হরতাল দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সরকারের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির নেতারা। গতকাল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও পানি, বিদ্যুৎ গ্যাসের দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে দলের নেতারা এ কথা বলেন। সমাবেশে সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ক্ষোভ ঝাড়েন ওয়ার্কার্স পার্টির নেতারা।
সরকার পরিচালনায় শরিকদের কোন পরামর্শ নেয়া হচ্ছে না এমন অভিযোগ করে দলের সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, জোট সরকার মানে একক কর্তৃত্ব নয়। দলের সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান মল্লিক বলেছেন, একসঙ্গে আন্দোলন ও সরকার গঠনের লক্ষ্যে মহাজোট হলেও এখন সরকারে ১৪ দলের অবস্থান খুঁজে পাওয়া যায় না।
দলের পলিটব্যুরোর সদস্য বিমল বিশ্বাস বলেন, জনসেবার নামে এখন দলবাজি মাস্তানি হচ্ছে। এসব বিষয়ে ধরাকে সরাজ্ঞান করলে সরকারের জন্য বিপদ অপেক্ষা করছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সমস্যা সমাধানের দাবিতে মুক্তাঙ্গনে আয়োজিত সমাবেশে তারা এসব কথা বলেন। সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে রাশেদ খান মেনন বলেন, বিএনপি’র আন্দোলন এবং হরতালের লক্ষ্য হলো যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ করা। তিনি বলেন, ১৬ মাসে সরকারের অনেক সাফল্য এসেছে।
তবে সব সাফল্য ম্লান হয়ে যায় যখন মানুষের পেটে ভাত থাকে না। যখন দ্রব্যমূল্য তরতর করে বাড়ে। সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পর জিনিসপত্রের দাম কমলেও পরে বেড়ে গেছে। এর কারণ বাজার এখনও সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। এতে মনে হয়, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে সিন্ডিকেট ভাঙতে চাচ্ছে না।
মানুষের পেটে ভাত না থাকলে, জিনিসপত্রের দাম বাড়লে মানুষ চুপ করে বসে থাকবে না। আর এ সুযোগই নিয়েছে বিএনপি। বিদ্যুৎ সমস্যার বিষয়ে তিনি বলেন, অতীতের সরকার সমস্যার সমাধান করেনি একথা বললে মানুষ বুঝবে না। সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করতে হবে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে দেশের স্বার্থবিরোধীরা বসে আছে, এদের রেখে বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হবে কিভাবে? মেনন বলেন, এভাবে ছাত্রলীগের টেন্ডারবাজি, ভর্তিবাণিজ্য চললে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার আর সম্ভাবনা থাকে না।
এখন দুর্নীতি দমন কমিশনকে ক্ষমতাহীন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর তা করা হলে দেশ আবার দুর্নীতিবাজ দেশ হিসেবে পরিচিতি পাবে। তিনি বলেন, বিরোধী দল এখন আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে। তাদের সে আন্দোলন জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হলে আগে সমস্যার সমাধান করতে হবে। তিনি বলেন, সরকারকে যে কোন মূল্যে সফল হতেই হবে।
আর নিজেদের অনৈক্যের, একচোখা নীতির, অসহযোগিতার কারণে যদি সরকার ব্যর্থ হয়, জোটে যদি ফাটল তৈরি হয় তাহলে দেশে আবার অন্ধকার ফিরে আসবে। তিনি একই দাবিতে ৫ই জুন সারা দেশে উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে পথসভা, হাটসভার কর্মসূচি ঘোষণা করেন সমাবেশ থেকে। সমাবেশে দলের সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান মল্লিক বলেন, দেশের জ্বালানি খাত নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সাম্রাজ্যবাদীরা দেশের খনিজ সম্পদ লুটেপুটে খাওয়ার ষড়যন্ত্র করছে। সরকার ১৬ মাসেই জাতীয় শ্রমনীতি করতে পারছে না।
শিক্ষানীতি আলোর মুখ দেখেনি এখনও। এ অবস্থায় জোটের শরিকরা হতাশ। পলিটব্যুরোর সদস্য বিমল বিশ্বাস বলেন, সরকার যখন জনগণের জন্য কাজ করছে তখন চাপাতি হাতে ছাত্রলীগের কর্মীদের ছবি ছাপা হচ্ছে। যুবলীগের কর্মীদের টেন্ডারবাজির খবর প্রকাশ হচ্ছে। এগুলো জোট সরকারের নৈতিক রাজনীতির পক্ষে নয়।
এসব বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে শুধু কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হচ্ছে। কোথাও কোথাও গ্রেপ্তারও করা হচ্ছে। পরে আবার তাদের ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, এসব বিষয়ে ব্যবস্থা না নিলে আমরাই জনগণকে বলতে বাধ্য হবো। ওয়ার্কার্স পার্টি ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজি মেনে নেবে না।
তিনি বলেন, কৃষক ও দরিদ্র মানুষের সহায়তার নামে গ্রামে দলবাজি মাস্তানি হচ্ছে। সরকার দেশ পরিচালনায় শরিকদের পরামর্শ নিচ্ছে না। শুধু বিপদে পড়লে শরিকদের কথা মনে পড়ে। শুধু আদর্শিক কারণে তাদের সঙ্গে ওয়ার্কার্স পার্টির ঐক্য হয়েছে। তিনি বলেন, কিছু লোক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও কয়লা উত্তোলনের বিষয়ে সরকার ও প্রধানমন্ত্রীকে কুপরামর্শ দিচ্ছে।
সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, সরকারের ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প, প্রতি পরিবারে একজন করে চাকরি দেয়ার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল তা সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে না। তিনি বলেন, সরকারের যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রমও গতি পাচ্ছে না। যুদ্ধাপরাধীরা এখনও দাপটের সঙ্গে কথা বলছে। তারা সরকারের প্রতি চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে ওয়ার্কার্স পার্টি সমমনা দলগুলোকে নিয়ে হরতাল দেবে।
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল পল্টন এলাকার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।