পাওয়ার অব পিপল স্ট্রংগার দেন দি পিপল ইন পাওয়ার। http://mhcairo.blogspot.com/
অনেকদিন যাবৎ রিকশা নিয়ে একটি পোষ্ট দিব ভাবছি, কিন্তু দেয়া হচ্ছে না। আজ হটাৎ শিককাবাব ভাইয়ের লেখা দেখে মনে হল কিছু একটা লিখে ফেলি রিকশা নিয়ে।
আমার 'মনের' মনে হয় কিছু প্রবললেম আছে। অনেক বড় হয়েছি তবুও এখনো রক্ত দেখতে পারি না।
সারাদিন ছিনামা দেখি কিন্তু এখনো ছুরি দিয়ে কাটাকাটির দৃশ্য দেখতে পারিনা। তখন আমি খুব ছোটও নই, এসএসসি (দাখিল) পাশ করেছি। আমাদের মসজীদের পিলারের জন্য বড় বড় করে গর্ত করে রাখা হয়েছে। এশার নামাজ আদায় করতে গিয়ে দেখলাম, সেই গর্তে চারটা 'চিকা' (ইদুরের মত একটু বড় সাইজ) পরে আছে। চারিদিক দৌড়াদৌড়ি করছে কিন্তু উপরে উঠা আসম্ভব।
আমার মনে খুব মায়া হলো। সবাই যখন নামাজে দাড়াল, আমি তখন বাথরুম থেকে একটা প্লাস্টিকের বদনা নিয়ে নালার অংশে রশি বেঁধে নিচে নামিয়ে চিকার মুখের সামনে ধরলাম, এভাবে নামাজ শেষ হতে হতে দুইটি 'চিকা' উঠাতে সক্ষম হলাম। জামাত শেষে মানুষজন চলে এলে আমিও ফিরে যেতে বাধ্য হলাম। বাসায় গিয়ে পড়তে বসলেও কিছুতেই যেন সেই চিকাদের চিকচিক শব্দ ভূলতে পারছিলাম না। মাথায় শুধু তাদের একদিক থেকে আরেকদিক দৌড়াদৌড়ির দৃশ্য ঘুড়পাক খেতে লাগল।
তাই ঘন্টা খানেক পরার ভান ধরে আবার বেরিয়ে আসলাম মসজীদের নিকট, এবং একই পদ্দতীতে বাকি দুটো প্রাণিকে উপরে তুলে সস্থির সাথে বাসায় ফিরলাম।
সেই বয়স থেকেই আমার মনে খটকা লেগে আছে রিকশা নিয়ে। মানুষ কিভাবে মানুষ টানতে পারে? যেখানে আমাদের দুইমাইল পরিমান পথ রিক্সায় বসে থাকতে অস্থির লাগে, সেখানে একজন বৃদ্দ কিভাবে মাইলের পর মাইল কখনো অঝোড় ধারায় বৃষ্টিতে কিংবা কখনো ঠাটা পরা রৌদ্রের মাঝে রিক্সা চালিয়ে হাসি মুখে মানুষকে বিদায় করে দেয় মাত্র ২০টি টাকার উদ্বেশ্যে।
কাজেই আমি রক্সায় চড়ার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মানার চেষ্টা শুরু করলাম। পারত পক্ষে কোন বৃদ্বলোকের রিক্সায় চড়তাম না।
আবার তারা কষ্ট পাবে বলে তাদের সামনে থেকেও রিক্সা নিতাম না। বেছে বেছে যুবক বা মধ্য বয়সি রিক্সাওয়ালাদের রিক্সায় চড়তাম।
২০০২ আমি ঢাকায় চলে আসলাম। ঢাকা থেকে একদিন মানিক গন্জের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম বিআরটিসি বাসে করে। গাবতলি এলাকাতে এসে কঠিন জ্যামে পরেগেলাম।
জানালার পাশে বসে জ্যামের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখলাম, এক বৃদ্ব ৫৫ বছরের কাছাকাছি হবে তার রিক্সায় বসে আছে দুই ভদ্র মহিলা, রাস্তা কিছুটা ভাঙা তার উপর আবার কাদা পানি, দুই ধারে থামিয়ে রাখা বাস, রিক্সা, সব কিছুর মাঝখানে নতুন রিক্সা ওয়ালা একে বারে অপদস্থ হয়ে গিয়েছে। রিক্সার হেন্ডেল ঘুড়িয়ে বামে নিতে গেলে রিক্সার এক চাকা উঠে যাচ্ছে ফুটপাতের উপর, আবার ডানে যেতে চাইলে আরেক রিক্সার চাকার সাথে বাজিয়ে দিচ্ছে তার রিক্সার চাকা। পেছনে আমাদের গাড়ীর ঘন ঘন হর্ণ। কখনো কখনো অন্য গাড়ি ওয়ালাদের বকা। আমি শুধু তার মুখের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে অনুভব করতে লাগলাম, কিশের নেশায় সে এমন করছে? এটা তার কোন অপরাধের সাস্থি ভুগ করতে হচ্ছে এই ৫৫ বচর বয়সে? এই দৃশ্য লিখে বা বলে কখোনই বুঝানো যাবে না, যতক্ষন না কেউ এটা অন্তর দিয়ে উপলব্দি না করবে।
সে দিন থেকে আমার মনে জেগে উঠল সে এই পরিশ্রম করছে শুধু মাত্র কিছু টাকার জন্যে, যেই টাকা দিয়ে তার সংসার চলেব, ছেলে মেয়েরা ক্ষুধা নিবারণ করবে, অসুস্থের চিকিৎসা হবে। আমাদের সরকারতো আর তাকে এসব কিনে দিবে না, তা হলে কেন আমার মত যুবক ছেলে মেয়েরা রিক্সায় উঠার ক্ষেত্রে বেছে বেছে যুবকদের রিক্সায় উঠবে? সে দিন থেকে আমি আমার পুর্বের পরিকল্পনা পরিবর্তন করলাম, আর ঠিক করলাম, এর পরথেকে রিক্সা ঠিক করার ক্ষেত্রে বৃদ্বলোকদের রিক্সাকেই প্রাধান্য দিব।
২০০৪ সালে মিশরে চলে আসলাম। মিশরে প্রচুর বাংলাদেশী শ্রমিক গার্মেন্ট্স এ কাজ করে। একবার এক মিশরী গারমেন্টসের মালিক বাংলাদেশে গিয়েছে শ্রমীক আনার জন্যে।
সে এক সপ্তাহ থাকার কথা থাকলেও চারদিন পর চলে আসে। এসে সে বাঙালীদের ডেকে বলতে লাগল, তোদের দেশে কি গাধা নাই? আমাদের দেশে যেই কাজগুলা গাধা করে তোদের দেশে সেই কাজগুলোও মানুষ করে। সে বারবার জিজ্ঞাস করতে লাগল, মানুষ কি ভাবে মানুষ কে কাঁধে নিয়ে বয়ে চলে?? সে বলতে লাগল শুধু মাত্র এই দৃশ্য দেখেই আমি দ্রুত চলে এসেছি
তার কথার উত্তর অনেক দেয়া যাবে, তবে আমাদের অন্তর থেকে বিবেচনা করলে, রিক্সা আসলেই একটি অতি অমানবিক বাহণ। আমাদের দেশে এর পরিবর্তন চাই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।