জীবন ,সে তো পদ্ম পাতায় শিশির বিন্দু"
"সব ক'টা জানালা খুলে দাও না
আমি গাইবো, গাইবো বিজয়েরই গান
ওরা আসবে চুপি চুপি
যারা এই দেশটা ভালবেসে দিয়ে গেছে প্রান"
সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া খুবই বিখ্যাত একটা গান। বহুল প্রচারিত এই গানটির পিছনে কিছু ঘটনা জড়িয়ে আছে যা অনেকে হয়তো জানেন না। ১৯৮৪ সালে গানটি যখন প্রথম বারের মত প্রচারিত হয়, তখন চমৎকার বাণী ও সমৃদ্ব গানটি শুনে মুগ্ধ হয়ে সাধারন শ্রোতা তো বটেই ; অনেক সঙ্গীত বিশারদরাও নড়েচড়ে বসলেন, যার হাওয়া মানচিত্র পেরিয়ে ভারতে গিয়েও পৌছালো। যার ফলে, ভারতের বিখ্যাত HMV কোম্পানী গানটির স্বত্ব কিনে নিতেও চাইল। মূহুর্ত দেরী না করে গানটির সুরকার জনাব আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল আর সাবিনা ইয়াসমিন যোগসাজসে গানটি পূনরায় HMV'র জন্য রেকর্ড হয়ে LP বন্দীও হল।
কাহিনীর সূত্রপাত এখানেই। এমন একটা গান যা আবার দেশাত্ববোধক, সেটা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল অন্য একটা দেশে বিক্রী করলেনইবা কি করে! এ নিয়ে শুরু হল পত্র-পত্রিকায় বিস্তর লেখালেখি। আত্মপক্ষ সমর্থন করে বুলবুল নিজেকে গানটির গীতিকার ও সুরকার দাবী করে জানালেন, তার নিজের গান যেখানে খুশী সেখানে বিক্রী করতেই পারেন। তখন পর্দার আড়াল থেকে বেরিয়ে আসলেন অন্য আর একজন। গীতিকার নজরুল ইসলাম বাবু (প্রয়াত)।
উনি বললেন তার লেখা গানকে বুলবুল নিজের লেখা বলে দাবী করেন কি করে? শুরু হল গান নিয়ে টানা হ্যাঁচড়া। উভয়ই গানের দাবীদার। কোর্ট-কাছারি গড়ানোর অবস্হা। নজরুল ইসলাম বাবুর ভাষ্যনুযায়ী, দেশপ্রমে উদ্বুদ্ব হয়ে তিনি গানটি লিখে বিটিভি কে দান করে দেন যা প্রতিদিন জাতীয় সংবাদের আগে প্রচার করা হয়। কিন্তু বিটিভি সেটা দান হিসেবে না নিয়ে উপযুক্ত সম্মানী হিসেবে মাসে মাসে রয়্যালটিও দিয়ে থাকে ।
যোগাযোগ করা হল বিটিভির কাছে। তারা উত্তর দিলো গানটি লিখে বাবু-ই বিটিভি কে দেন। আর লিস্টেড সুরকার হিসেবে বিটিভি কর্তৃপক্ষ বুলবুলকে দেন সুর তুলার জন্য। থলের বেড়াল বেরিয়ে গেলে প্রমাণিত হয়ে গেল গানটির মূল গীতিকার নজরুল ইসলাম বাবু-ই। বলাবাহুল্য, বুলবুলের মুখে আর 'রা' শব্দটিও বের হলনা।
যাইহোক, এমন খবরের জন্যই তো পত্রিকাওয়ালারা তো মুখিয়ে থাকে। এগিয়ে এলো তখনকার "পাঠক হট কেক" যায় যায় দিন। বের করে আনলো আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের নাড়িভূড়ি। প্রতিবেদনে উল্লেখ করলো "আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল নিজেকে একজন মুক্তিযোদ্বা হিসেবে দাবী করেন। কিন্তু তার বয়সের হিসেব কষলে দেখা যায় যুদ্বের সময় তার বয়স ছিল মাত্র চৌদ্দ।
এই ১৪বছর বয়সে একজন লোকের মুক্তিযুদ্বে অংশগ্রহনটাও কতটা স্বাভাবিক এবং যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। তবে তর্কের খাতিরে না হয় মেনে নেয়া যায় উনি সত্যি সত্যিই অংশগ্রহন করেছিলেন। যেহেতু ব্যাতিক্রম সর্বত্রই বর্তমান। কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্বা হয়েও একটা দেশাত্ববোধক গান বাইরের একটা দেশে বিক্রী করে দিলেন, তাহলে তিনি কেমন মুক্তিযোদ্বা ! নাকি রাজাকার?"
যাই হোক, বুলবুল অনেক প্রতিভাবান লোক। সুরকারের পাশাপাশি তিনি পার্টটাইম গীতিকার ও বটে।
এখনোও শ্রোতারা নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত হয় তার লেখা গান "আমার সারাদেহ খেয়ে ওগো মাটি, "আমার বুকের মধ্যখানে,আমি তোমার দুটি চোখে দুটি তারা হয়ে থাকবো"কিংবা অতি সাম্প্রতিক কালের সামিনার গাওয়া "আমার দুই চোখে দুই নদী" সহ আনেক চমৎকার গান। সুরও দিয়েছেন অনেক কালজয়ী গানের। ব্যাক্তিগতভাবে অসংখ্য লোকের মত আমিও উনার ভক্ত। তবে সেই কবেকার ঘটনাটা মনে পড়লো, যখন দেখলাম এবার তাকে দেশের সর্বোচ্চ সম্মান "একুশে পদক" দেয়া হয়েছে। ভাবলাম,এটা কিভাবে সম্ভব হল?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।