এক স্বনামধন্য প্রফেসর বল্লেন, অনেক ক্লাশ নিজে নিই। এরকম চমৎকার আলোচনা আমার শোনা হয়নি, করা হয়নি। এক ডাক্তার বল্লেন, আলোচনা শোনে রোগ ভাল হয়ে যায়, তা আমি বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু কোয়ান্টামের আলোকায়নে এসে দেখলাম, চিকিৎসা বিজ্ঞানে গবেষণার সর্বাধুনিক বিষয়গুলো কত সহজে এখানে আলোচনা করা হয়, যা সবাই বুঝতে পারে ও জীবনে অনুসরণ করতে পারে। মনের শক্তির এত সহজ আলোচনা মনোবিজ্ঞানেও করা হয় না।
মন ব্রেনকে চালায়, এটা বিশ্বাস হয় কোয়ান্টামে এসে। সত্যিকার অর্থে, কোয়ান্টামের যত প্রোগ্রাম, সাধারণের জন্যে এত সমৃদ্ধ প্রোগ্রাম আর দ্বিতীয়টি নেই। সাধারণ মানুষের কষ্টকে সামনে রেখে, সাধারণ মানুষের সুস্বাস্থ্যকে সামনে রেখে, সাধারণ মানুষের সাফল্যকে সামনে রেখে বহু গবেষণামুলক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে হৃদয়গ্রাহি করে সাজানো হয় এই প্রোগ্রাম। বিষয় বস্তু সব সময় আধুনিক। এমনকি ডাক্তারাও জানবার আগে কোয়ান্টামের একদল চৌকস গবেষক তা তুলে আনেন আলোচনায় তাদেরই শেষ গবেষনালব্দ বিষয়।
এমনও দেখা গেছে, যে বিষয়বস্তু নিয়ে কোয়ান্টাম আলোচনা করেছে, তাদের বুলেটিনে ছাপাও হয়েছে, সেই বিষয়টি চার বছর পর বিশ্বের নামী পত্রপত্রিকা বিশেষ ক্রোড়পত্র করে প্রচার করেছে, তারপর বাংলাদেশের প্রত্রিকাগুলো একযোগে একই বিষয়ে ছেপেছে তাদের প্রতিবেদন। যেমন ২০০৩ সালে “টাইম ম্যাগাজিন” এর প্রচ্ছদ প্রতিবেদন,
আলোকায়নের মূল আলোচ্যই হচ্ছে জীবনঘনিষ্ট বিষয়। কেমন করে প্রশান্তি লাভ করা যায়। আপনি বলবেন, এটা একটা প্রাপ্তি হল নাকি, বিষয় হিসেবে তো নস্যি। আপনি বলতে পারেন, আল্লাহ যেহেতু আপনাকে বলবার জন্যে মুখ দিয়েছেন, কিন্তু মাথা খাটালে বুুঝবেন প্রশান্তিই আসল প্রাপ্তি।
“চবধপব ড়ভ গরহফ রং ঙঘঊ, ধহফ ডরঃযড়ঁঃ চবধপব, ঙঃযবৎ ঊাবৎু ঞযরহম রং তবৎড়.”
‘আল্ফ লায়লা ওয়া লায়লা’র এক সওদাগর বানিজ্যে গেলেন। বিরাট কাফেলা, সমাজে নাম ডাক। ফিরে এলেন প্রচুর লাভজনক মালামাল নিয়ে। বাড়ি ফিরতে রাত হয়ে গিয়ে ছিল। সদর দরজা বন্ধ।
পেছনের ফটক দিয়ে পুকুর পাড় হয়ে মূল বাসায় ফিরতে হয়। ফটক পার হয়ে তিনি দেখলেন, তার সুন্দরী স্ত্রী সবল দুই ক্রীতদাসের বাহুকোলে জলকেলি করছেন।
সওদাগর দেখলেন, আর ভাবলেন, ভাবলেন আর ভাবলেন, ভাবনায় ডুবে গেলেন। বৃথা এই জগৎ। তিনি যেভাবে চুপিসারে এসে ছিলেন, সেভাবে বের হয়ে গেলেন।
তার জীবন থেকে প্রশান্তি দূর হয়ে গেল। সব কিছুই ছিল, ছিল না শান্তি। অনেকে বলে, তিনি কাপুরুষ ছিলেন, তাই স্ত্রীকে অন্যের বাহুলগ্না দেখে কিছু না বলে জীবন থেকে পালালেন। বেশীর ভাগ লোকেরা বলে, তিনি বিচক্ষণ ছিলেন, তাই কিছু না বলে তার সামাজিক সম্মান বাচিঁয়ে অর্থবিত্ত নিয়ে চলে গেলেন। ক্রীতদাসকে হত্যা করে বা স্ত্রীকে শাস্তি দিয়ে তিনি শান্তি পেতেন না, আরো অনেক ফ্যাসাদে পড়তে হত তাকে।
অর্থাৎ জীবনে যত অর্জন, প্রশান্তিই মূল। আমরা আসলে বুঝতে পারি না, মনের গভীর লেভেলে আমরা কিন্তু প্রশান্তিই চাচ্ছি।
আমার এক সহপাঠি, ভাল ব্যবসা বুঝতো, রাজনীতি বুঝতো। করতো ব্যবসা, আর গোষ্টি উদ্ধার করতো কিছু রাজনীতিবিদ নামক নীতিহীন মানুষদের। অকালে বিয়ে করে ছেলেমেয়ের বাপ হলো।
সম্পদ যা চেয়ে ছিল, তার চেয়ে বেশীই অর্জন করে ছিল। ফোন করলেই বলতো, সময় নাই, বাসায় যাই রাত এগারোটায়। কি করিস রাত এগারোটা পর্যন্ত? বলতো, তুই গাধাঁ বুঝবে না, টাকা কিভাবে কামাতে হয় তুই বুঝলি না, শুধু লেখা আর দেশ দেখা। ব্যবসায়ী হলে বুঝতে বাসায় ফিরতে রাত কেন গভীর হয়। আমি কিছু বলতাম না।
আমাদের স্যারের কথা মাঝে মাঝে শুনিয়ে দিতাম। তিনি বলতেন, জীবনে যারা শুধু টাকার পেছনে ঘুরে, কম বয়সেই তারা রোগাক্রান্ত হয়। তখন এই রোজগারের টাকা ডাক্তার আর ঔষধ কোম্পানীকে দিয়েও স্বাস্থ্যটাকে ঠিক করতে পারে না, রোগ আর সারে না। সম্পদ শেষ করেও রোগের শেষ হয় না, সে নিজে শেষ হয়ে যায়। আমার সহপাঠিটি শুনতো আর বলতো, স্যারও ব্যবসায়ী ছিলেন না।
বয়স চল্লিশ পার হতেই একদিন ফোন করলো। দোস্ত, আমার ডায়াবেটস হয়ে গেছে, এখন তো সব কিছু মেপে মেপে খেতে হবে। তার আলাপ থেকে বুঝলাম, ডায়াবেটিকস না হলে আর লোকে বড়লোক বলবে কি করে, ইহা ছোট লোকদের রোগ নয়। এর দশ বছরের মাথায় তার প্রেসার গেল হাই হয়ে, তারপর প্রেসার হল এবনরমাল। তার কয়েক দিন পরে এক টেষ্টের পর জানা গেল, তার দুই কিডনিই গেছে নষ্ট হয়ে।
সে নিজেই বলে, মানি বিগেষ্ট মানি, টাকায় টাকা আনে। এখন রোগ বিগেষ্ট রোগ। দেহের উপর অনেক অত্যাচার করে ফেলেছি দোস্ত!
আসলে এই যে অবিদ্যা, এই ধরণের হাজার অবিদ্যা থেকে মুক্তির জন্যে কোয়ান্টাম আলোচনা গুলো সাজায় তথ্য ও উপাত্ত দিয়ে। থাকে নানা দেশ বিদেশের গল্প। গল্পের মাধ্যমে সাজায় কথামালা, আর তা ব্রেনে গেঁথে দেওয়ার জন্যে থাকে মেডিটেশনের ব্যবস্থা।
কেউ কেউ আবার আসেন শান্তি পাওয়ার জন্যে। সারাদিনের ক্লান্তি দূর করার বা প্রশান্তিটা লাভ করার আর কোথাও কোন জায়গা নাই, আসেন কোয়ান্টামে। এখানের মেডিটেশনটা মন থেকে সকল ভার দূর করে দেয়, টেনশন দূর করে দেয়। ডাক্তাররা বলেন, ঔষধ দিয়ে টেনশন দূর করা যায় না, ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া যায়। ঘুম øায়ুর টেনশন দূর করতে পারে না, মাসুলকে শুধু রিলাক্স করতে পারে।
টেনশন থেকে মুক্তি পেতে হলে করতে হবে নিয়মিত মেডিটেশন, ধ্যান, মোরাকাবা। মেডিটেশন একই সাথে পেশীর টেনশন ও øায়ুর টেনশন দূর করতে পারে।
অনেকে আসেন এখানের কাউন্সিলারদের সাথে একটুখানি কথা বলতে। তাদের কাছেই সুখ-দুঃখের দুটো কথা বলা যায়। বাপ-মার সাথেও তারা শেয়ার করতে পারেন না।
তাদের সমস্যার কথা, ছেলের ব্যর্থতার কথা, সংসারের কথা, শ্বাশুড়ির যন্ত্রণার কথা, অসুখের কথা, চাকুরিতে ব্যর্থতার কথা, ব্যবসায় লালবাতি জ্বালানোর কথা। এখানে আসলে পথ একটা পাওয়া যায়। হাজার হাজার মানুষ পাওয়া যায়, যারা দোয়া করেন কল্যাণের জন্যে, সমস্যা তখন দূর হয়ে যায়।
আলোকায়নের বিষয়গুলো সম্পর্কে একটা ধারণা এখন প্রায় সবার জানা। সারা দেশে প্রতি মঙ্গলবারে হয় এই প্রোগ্রাম।
আসেন হাজার হাজার মানুষ। বিভিন্ন পেশা, কেহ রিটায়ার্ড, কেহ কর্মজীবি, কেহ শিক্ষার্থী, কেহ শিক্ষক, কেহ ইঞ্জিনীয়ার, কেহ রোগী, কেহ চিকিৎসক, কেহ সচিব, কেহ বিচারপতি, কেহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর, কেহ লেখক, কেহ কবি, কেহ ব্যবসায়ী, কেহ গৃহিনী, কেহ প্রবাসী। তাই বিষয় বিন্যাসও এরকম। সবার জন্যেই প্রয়োজনীয় ও আকর্ষণীয়। যেমন, আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হবার উপায়, মেধার বিকাশে মেডিটেশন, কোয়ান্টাম : নতুন সহস্রাব্দের জীবন যাপনের বিজ্ঞান, স্বত:স্ফূর্ত সাফল্য : মেডিটেশনের প্রাপ্তি, প্রাচুর্যের সহজ সূত্র : দান, প্রশান্তি, সুস্বাস্থ্য ও প্রাচুর্য লাভের পথ : কোয়ান্টাম, আত্মপরিচয় সৃষ্টিতে বাঁধা : হীনম্মন্যতাবোধ, আত্মনিরাময়ে মেডিটেশন, সাফল্যের জননী : আত্মবিশ্বাস, রাগ ও ক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে মেডিটেশন, সুসম্পর্ক নির্মাণে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি, টেনশন ও অস্থিরতা মুক্তির উপায়, সফল কর্মজীবন : কোয়ান্টাম পঞ্চসূত্র, স্বত:স্ফূর্ত সাফল্যের পথ : শোকর ও সবর; কত বলবো! প্রতি সপ্তাহে একটি নুতন বিষয়ে পুণাঙ্গ আলোচনা।
আলোচনার বৈচিত্রতার জন্যেই লোকজন একবার আসলে আবার আসতে চায়। দ্বিতীয় বার যখন আসে, তখন আর একা আসে না, পরিবারের সদস্য বা বন্ধুদের নিয়ে আসে। তারা যুক্ত হয় সাফল্যের সাথে, বেড়ে যায় তাদের আত্মবিশ্বাস, বেড়ে যায় তাদের অর্ন্তগত শক্তি। মেডিটেশনের গুরু শহীদ আল মহাজতক বলেন, মানুষের অর্ন্তগত শক্তি যখন জাগ্রত হয়, আপাত যে কোন অসম্ভবকে সে সম্ভব করতে পারে। ভেতরের শক্তিকে জাগ্রত করে সে নিরাময় করতে পারে নিজেকে, দূর করতে পারে মাইগ্রেন, দূর করতে পারে এজমা, তাড়াতে পারে বেক পেইন, বিদেয় করতে পারে ডায়াবেটস, মুক্তি পেতে পারে হাই প্রেসার থেকে, সে হতে পারে খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব, সে পেতে যৌক্তিক সকল চাওয়া, সে হতে পারে সফল ব্যবসায়ী, যেতে পারে যেখানে ইচ্ছা।
আসলে মানুষ তখন তার অর্ন্তগত শক্তির স্ফুরণ দেখে নিজেই অবাক হয়ে যায়, তার আর আপাত অসাধ্য, অসাধ্য থাকে না।
কোয়ান্টাম কিছু অটোসাজেশন বার বার বলতে বলে। নিজেকে নিজের প্রয়োজনীয় কথা শোনানোর নাম অটোসাজেশন। গবেষকরা বলেন, এগুলো মনে গেঁথে গেলে মন আপনাতেই কাজ করতে শুরু করে। এর কিছু নমুনা বলি।
“আামি জানি, রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন- তাই আমি সবসময় ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নেবো ও কাজ করবো”, “খাবার টেবিলে গীবত ও পরচর্চা থেকে আমি সবসময় নিজেকে মুক্ত রাখবো”, “দৃষ্টিভঙি বদলান, জীবন বদলে যাবে”, “আমি সবসময় হাসিমুখে কথা বলবো। যে যা-ই বলুক, সবসময় প্রো-এশটিভ থাকবো। ” “যে কোন পদক্ষেপ নেওয়ার আগে আমি ভাববো। আমি প্রজ্ঞার সাথে কাজ করবো। ” “আমি আমার মস্তিস্কের অপরিসীম ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন।
আমি মস্তিস্ককে বেশী বেশী ব্যবহার করবো। ” “জীবনে আমি হব লাখো মানুষের ভরসারস্থল। মরণেও তারা হৃদয়ের অশ্র“তে শেষ বিদায় জানাবে আমাকে। তারপরও প্রজন্মের পর প্রজন্মের হৃদয়ে বেঁচে থাকবো আমি তাদের আনন্দে, বেদনায়, সংকটে, সম্ভাবনায় প্রেরণার উৎসরূপে। ” - -- ইত্যাদি।
এরকম হাজারটা অটোসাজেশন দিয়ে একটি চমৎকার বই বের করেছে কোয়ান্টাম, যে কোন বইদোকানে এটা পাওয়া যায়।
মানুষের সমস্যা মুক্তির জন্যে, প্রশান্তির জন্যে, সুস্বাস্থ্যের জন্যে, সাফল্যের জন্যে মানুষ এখন ঝুকছে মেডিটেশনের প্রতি, কোয়ান্টামের প্রতি।
সিলেটের মিরেরময়দানস্থ কোয়ান্টাম মেডিটেশন হলে আলোকায়ন প্রোগ্রাম হয় প্রতি মঙ্গলবার বাদ আসর। বর্তমান সময় বিকেল ৫ টা থেকে ৬ টা এবং সন্ধ্যে সাড়ে ছয়টা থেকে রাত সাড়ে সাতটা। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসরের নেতৃত্বে একটি টীম এই প্রোগ্রাম পরিচালনা করে থাকে, আলোচনায় অংশ নেন দেশবরেণ্য আলোচকবর্গ।
জীবন বদলের জন্যে প্রথম প্রয়োজন নিজের ভেতরটাকে বদলানো। আর নিজের ভেতর বদলাতে হলে প্রয়োজন আত্মউপলব্ধি। মানুষের আত্মউপলব্ধি ঘটে যখন সে ধ্যানস্থ হয়। আর কোয়ান্টাম শেখায় ধ্যানন্থ হওয়ার কৌশল।
আসুন আলোকায়নে, আলোকিত করুন নিজেকে, আলোকিত করুন আপনার চারপাশকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।