হিন্দু না ওরা মুসলিম ঐ জিজ্ঞাসে কোনজন, কান্ডারি বলো ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা'র
অবশেষে সেই মহান দিনগুলা ফিরা আসতাছে। এক বছর সবাইরে অবাক কইরা দিয়া শেখ হাসিনার মুখ বন্ধ আছিল, আমরা ভাবছিলাম যে তার বয়স হইছে, প্রজ্ঞা বাড়ছে, বেফাস কথাবার্তা আর বলেন না। কিন্তু বছর পার হইতে না হইতেই যেই লাউ সেই কদু। আমাগো ভোটে নির্বাচিত হইয়া সংসদে খারাইয়া খারাইয়া আমাগো কথা বাদ দিয়া যখন জিয়ার মাজার লইয়া আজাইরা পেচাল পারা শুরু করলেন, তার মুখ যে বন্ধ হওয়ার না, সেইটা তখন আমরা বুঝলাম।
পেশাগত কারণে বিএনপির বেশ কয়েকটা সংবাদ সম্মেলন কাভার করতে যাইতে হইছিলো।
সাংবাদিকরা জানে খোন্দকার দেলোয়ার কি বলবেন, না শুইনাই লেইখা দেয়া যায়। টাল হওয়া অবস্থায় ভ্যা ভ্যা করতে করতে সরকার’রে আবার নির্বাচন দিতে বলবেন, এইটা নিত্য দিনের ঘটনা। কিন্তু, তারপরেও বিএনপি যে হরতাল ডাকে নাই, এই কারণে আমরা তাগো উপরে কৃতজ্ঞ ছিলাম। তারা ক্ষমতাবানা মানুষ, চাইলেই হরতাল ডাকতে পারে। সুতরাং ডাকতাছেনা যখন, তাগো চরিত্র মনে হয় সংশোধিত হইতাছে।
দেশের রাজনীতির ভ্যাপসা গরমেও সামান্য দক্ষিনা সুবাতাশে একটু হইলেও ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছি।
কিন্তু যেই লাউ সেই কদুই। বিএনপি হরতাল ডাকছে। ক্যান ডাকছে। কারন দর্শানো হইছে, “দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি, জনজীবনে অস্থিরতা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা, প্রশাসনে দলীয়করণ, বিচারব্যবস্থায় সরকারের নগ্ন হস্তক্ষেপসহ বিভিন্ন সমস্যা”।
এখন, আমি আম বাঙাল, আমার মতো অনেক আম বাঙালই এই প্রশ্নটা করতেই পারেন, “এই হরতালের মাধ্যমে এইসব সমস্যার একটাও কি এক ফোটা নিরসন হবে”। যদি কেউ আমারে বুঝাইতে পারেন যে হবে, তাইলে ২৭ জুন আমি নিজে রাস্তায় নাইমা পিকেটিং করুম, কসম। বাস্তবতা হইলো বিএনপিও জানে যে হবে না।
তাইলে ক্যান এই হরতাল? ব্রিটিশ আমলে মহাত্মা গান্ধি প্রথমে সাউথ আফ্রিকায় হরতালের প্রচলন করছেন। তারপর ভারতিয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে হরতালের ভূমিকা ছিলো জোরদার।
এই কারণে হরতালের একসময় একটা বিপ্লবী মাহাত্ম ছিল। এই বিপ্লবী মাহাত্ম বজায় ছিল পাকিস্তানী স্বৈরশাসক বিরোধী আন্দোলনে এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্বৈরাচারী এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে। বিপ্লবী হরতালের এই মাহাত্ম নষ্ট করছে শেখ হাসিনার আওয়ামীলীগ, গনতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে সিরিজ হরতাল দিয়া। আর বিএনপি দলটার রাজনৈতিক বোধবুদ্ধি নাই, সে আওয়ামীলীগ যা করে তারই অনুকরণ করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই বছরের লাইগা মসনদে বসার আগে ১৫ বছর এই হরতালে বাংলাদেশের জনগণের যেই কয় হাজার কোটি টাকা নষ্ট হইছে সেই টাকার হিসাব দিতে কি আওয়ামীলীগ আর বিএনপি কবর থাইকা শেখ মুজিব আর জিয়াউর রহমানরে তুইলা আইনা দেওয়াইতে পারবো, সবকিছুতে তো এগোরে কবর থেইকা তুইলা আইনাই জনগণের লগে প্রতারণা করে এই দুইটা দল।
আসেন, আজকে বিএনপির ডাকা হরতালের মাযেজা বোঝার চেষ্টা করি। যেহেতু যেইসব সমস্যার অযুহাতে হরতাল ডাকা হয় সেইগুলা সমাধানের হরতাল কোন কাজেই আসেনা তাইলে এরশাদ পতনের পর থাইকা হরতাল কি কামে লাগছে তা চিন্তা কইরা দেখি। হরতালে দুইটা মূল কাম হয়,
১। বাহুবল প্রদর্শনঃ ব্যাপক জমায়েত আর ভাঙচুরের মাধ্যমে এবং সরকারের বিরুদ্ধে গিয়া প্রতিনিয়ত কর্মকান্ড বন্ধ কইরা সরকারের চেয়ে বেশি শক্তি প্রদর্শন করা হয়।
২।
আন্দোলনের ফিল্ড তৈরি করাঃ হরতালে ক্যাডার-পুলিশ মারামারি হয়। পুলিশি গ্রেফতার হয়। কিছু লোক আহত হয়, আন্দোলনের ইস্যু বাড়ে। আর যদি আল্লা আল্লা কইরা একটা লাস পরে, তাইলে তো কথাই নাই। খুনী সরকারের পতনের জোরদার আন্দোলনের সুযোগ।
৩। মরাল বুস্টঃ নিজের কর্মীগো মধ্যে সাংগঠনিক ঐক্যের অভাব এবং হতাশা দেখা দিলে হরতাল দিয়া চাঙ্গা করা যায়।
বিএনপির এইবারের হরতালে নিঃসন্দেহে ৩ নম্বর কারনটা মূখ্য, ১ এবং ২ গৌন। বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা এই মুহুর্তে খুব ভালো না এইটা সবাই জানে। কর্মিগো মনোবল আগের মতো নাই, একটা জোরালো ঝাকুনি দিয়া মরাল ঠিক করা দরকার।
হরতাল এই ক্ষেত্রে ভালো ঔষধ। এক মাসেরও বেশি সময় তারা এমনি এমনি নেয় নাই, কর্মী বাহিনী গুছাইতে হইবো। সেই সাথে ১ নম্বরটা ঠিকঠাক মতো করতে পারলে, জনগণ আমাগো ডাকে সারা দিছে এইধরণের ডায়লগও দেয়া যায় আবার বাহুবল দেখানোও হয়। আর ৩ নম্বর ভাগ্য ভালো হইলে যদি ঠিকঠাক মত হইয়া যায় তাইলে তো কথাই নাই।
২৭ জুনের হরতাল যেই সব কারন দেখাইয়া ডাকা হইছে ঐসব ইস্যু গুলার যদি সমাধান হইতো তাইলে আমাগো জনগণেরই লাভ হইতো।
কিন্ত সেইতা হবে না। লাভ যদি কিছু হয় তো বিএনপি নামক পার্টির হবে। আমাগো লস হইবো ৫০০ কোটি টাকা। শালার ৫০০ টাকা পকেটে থাকলে এই দেশের কত মানুষ নিজের ঘরের মাইনসেরে ভালো মতো বাজার কইরা খাওয়াইতে পারে। সেইখানে ৫০০ কোটি টাকা নষ্ট করবো, আবার চায় আগাম ক্ষমা।
বাঙালির পাছা লাত্থি খাইতে খাইতে শক্ত হইয়া গেছে, লাত্থি দিয়া মাপ চাইছে, হেতেই সবাই খুসি।
বিএনপি হরতাল ডাইকা প্রমান করলো তারা আগে যা ছিলো তাই আছে, আওয়ামীলীগের চেয়ে ভালো হওয়ার যোগ্যতা তাগো নাই। যারা এইক্ষেত্রে আওয়ামীলীগের হরতালের উদাহরণ দিবো, তাগোরে কমু যান, ছাত্রলীগের মতো কোপাকুপি কইরা আসেন। হ্যারা গু খাইলে আপনেও গু খান।
হরতালে লাভ নাই।
হরতালরে তাই না বলি। ব্লগে বেশিরভাগই আমরা নতুন প্রজন্ম। আসেন আওয়ামীলীগ, বিএনপি, বাম (জাশি বাদে, জাশি আইলে উষ্টা) নির্বিশেষে সবাই হরতালরে না বলি। সরকার এবং বিরোধী দলরে দেখাই আমরা নতুন প্রজন্ম হরতালের পক্ষে নাই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।