মানুষ মারা গেলে নিজেদের কর্মী বলে টানাটানী-----------কিন্তু ছাত্রদল নেতারা পাশে দাঁড়ানো অস্ত্রধারীদের চিনে না........................
সিলেটে বিএনপির দুই পক্ষে সংঘর্ষের সময় অস্ত্রের মহড়ায় অংশ নেওয়া যুবকদের কাউকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। পুলিশ দাবি করছে, গতকাল শুক্রবার সংবাদপত্রে যেসব অস্ত্রধারীর ছবি প্রকাশিত হয়েছে, তাঁদের নাম-পরিচয় বের করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তবে পত্রিকায় ছবি দেখে অস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষকে ধাওয়াকারীদের মধ্যে ছাত্রদলের ক্যাডার রেজাউল করিম ওরফে নাচন, কোহিনূর, জাহেদ ও মামুনকে স্থানীয় ব্যক্তিরা শনাক্ত করেছেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার নগরে বিএনপির দুই পক্ষের এম ইলিয়াস আলী ও প্রয়াত এম সাইফুর রহমানের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের একজন মধ্যরাতে সিলেটের হাসপাতালে মারা গেছেন। তাঁর নাম সাজু আহমদ ওরফে রাজন (২৬)।
তাঁকে বিএনপির বিবদমান দুই পক্ষই নিজেদের কর্মী বলে দাবি করেছে। তবে পুলিশ কোনো পক্ষকে লাশ না দিয়ে বিশ্বনাথ উপজেলার গ্রামের বাড়িতে তাঁর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। নিহত সাজুর বাবা মনোহর আলী বলেছেন, তাঁর ছেলে সিলেটের একটি দোকানে চাকরি করতেন, কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য ছিলেন না।
নিহত সাজুকে দুই পক্ষই নিজেদের কর্মী দাবি করলেও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলায় অংশ নেওয়া যুবকদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা কেউ স্বীকার করছে না।
অস্ত্রধারী কারা: মহানগর পুলিশ গতকাল সংবাদপত্রে প্রকাশিত ছবির সূত্র ধরে কাটা রাইফেল, এলজি ও পিস্তল প্রদর্শনকারীদের নামও সংগ্রহ করেছে।
পুলিশ এবং স্থানীয় ও দলীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, মিছিলে অস্ত্রধারীরা ছিলেন প্রয়াত সাইফুর রহমানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত বিএনপির শাহরিয়ার-শামীম-আরিফ সমর্থিত অংশের ক্যাডার। তাঁরা সিলেট মহানগর ছাত্রদলের সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ও মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক সাঈদ আহমদের নেতৃত্বে বৃহস্পতিবারের সংঘর্ষে অংশ নেন।
বিভিন্ন সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে, গতকাল পত্রিকায় ছাপা হওয়া ছবিতে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরীর পাশে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শনকারী যুবক হলেন ছাত্রদলের ক্যাডার রেজাউল করিম ওরফে নাচন, দক্ষিণ সুরমার ছাত্রদল ক্যাডার কোহিনূর ও জাহেদ এবং বড়ইকান্দির মামুন।
এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। তাতে নাচন, জাহেদ, কোহিনূরসহ ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১৫০ জনকে আসামি করা হয়।
মহানগর পুলিশ সূত্র জানায়, প্রদর্শিত আগ্নেয়াস্ত্রসহ অস্ত্রের মজুদ ও সরবরাহ সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছে পুলিশ। তবে কাউকে ধরার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করা হচ্ছে। মহানগর পুলিশ কমিশনার আফতাব আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, পত্রিকায় প্রকাশিত ছবি দেখে অস্ত্রধারীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এখন অস্ত্রধারীদের খুঁজে গ্রেপ্তার করা হবে।
এদিকে ঘটনাস্থল থেকে ফটোসাংবাদিকদের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় গতকাল শুক্রবার কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন স্থানীয় দৈনিক শ্যামল সিলেট পত্রিকার ফটোসাংবাদিক সাব্বির আহমদ।
মামলায় আগ্নেয়াস্ত্রধারী হিসেবে ছাত্রদলের সাবেক নেতা মইনুদ্দিন ওরফে সুহেল, মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক সাঈদ আহমদ, নাচন, রকিবসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
তাঁরা কী বলেন: অস্ত্রের মহড়া সম্পর্কে বিএনপির নেতা শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, ‘পত্রপত্রিকায় যেসব ছবি এসেছে, তাদের আমরা চিনি না। পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার সময় কে কোথায় ছোটাছুটি করছে জানি না। ’ পত্রিকায় প্রকাশিত ছবিতে তাঁর পাশে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে যেসব যুবকের অবস্থান ছিল, তাঁরা কারা—এ প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার চৌধুরী বলেন, ‘এটা আমি লক্ষ করিনি। আপনারা খোঁজ নিন।
তবে ইলিয়াস আলীর সমর্থকেরা সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ’
কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য আবুল কাহের শামীম অভিযোগ করেন, সরকারবিরোধী আন্দোলন নস্যাৎ করতে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের মাঠে নামিয়েছেন ইলিয়াস আলী। অস্ত্রধারী কারা, পুলিশ চিহ্নিত করুক।
অস্ত্রধারীরা এম ইলিয়াস আলীর অনুসারী—এ অভিযোগ ‘হাস্যকর’ দাবি করে সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল গফ্ফার বলেন, ‘বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বড় সমস্যা এই অস্ত্রবাজি। আমরা এখন বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা নয়, পুলিশকে বলব অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তার করুন।
’ প্রসঙ্গত, আবদুল গফ্ফার বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
এদিকে বৃহস্পতিবারের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ইলিয়াস আলীর অনুসারী সিলেট মহানগর বিএনপির আটজন যুগ্ম আহ্বায়ক যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। তাঁরা শাহরিয়ার-শামীম-আরিফকে জাতীয়তাবাদী দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে আখ্যায়িত করে এঁদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার আহ্বান জানিয়েছেন। বিবৃতিতে সই করেছেন নোমান মাহমুদ, আবদুল কাইয়ূম জালালী, মকসুদ আলী, সাইফুল ইসলাম, বদরুজ্জামান, শামসুজ্জামান, জন্নুন মাহমুদ খান ও আজমল বখত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।