সত্য প্রকাশে আপোষহীন
মূল পোষ্ট
সংবাদঃ ট্রানজিটের জন্য বাংলাদেশের সড়ক ও রেলপথের উন্নয়নে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে কঠিন শর্ত দিয়েছে ভারত। প্রতিশ্রুত এ ঋণের জন্য পৌনে ২ শতাংশ হারে সুদ চেয়েছে দেশটি। সুদের বাইরে কমিটমেন্ট ফি নামে অতিরিক্ত সুদও দাবি করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ঋণখেলাপি হলে আরো ২ শতাংশ হারে জরিমানা দিতে হবে বাংলাদেশকে। সবচেয়ে কঠিন যে শর্তটি আরোপ করা হয়েছে তা হলো, ঋণের টাকার শতভাগ দিয়ে কেবল ভারতের কাছ থেকেই পণ্য ও সেবা কিনতে বাধ্য থাকবে বাংলাদেশ।
প্রতিক্রিয়াঃ ভারত বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কিছুদিন আগে যখন ভারত সফরে গেলেন অনেক খুশি হয়ে দেশে ফিরলেন। কারন একটাই ভারত বাংলাদেশকে ১০০ কোটি ডলার (৭০০০ কোটি টাকা) ঋন দিচ্ছে আরও অনেক চুক্তি হয়েছে যা বাংলাদেশের পক্ষে যাবে। কিন্তু এসব শর্ত যে ভারত তাদের ঋনের সাথে জুড়ে দিচ্ছে তা উনার জানা ছিলো কি না তা আমার পক্ষে বলা সম্ভব না। ঋনের সাথে যে মোটা অঙ্কের সুদ দিতে হবে এপার বাংলার (বাংলাদেশের) জনগনের জানা ছিলো না।
যেখানে বাংলাদেশ আইএমএফ-এর বিনা সুদে এবং শিথিলযোগ্য শর্তে ঋন ঠিক মত ব্যবহার করতে পারে না সেখানে চড়া সুদে ভারতের কাছে ঋন নেবার অর্থ কি?
ট্রানজিট সুবিধা পেলে লাভ হবে ভারতের; বাংলাদেশের নয়। বাংলাদেশের লাভ যদিও হয় তাহলে ভারতের সাথে বাংলাদেশের লাভের তফাৎ হবে আকাশ পাতাল। বাংলাদেশের মানুষ ভারতীয় পন্যের উপর নির্ভরশীল কিন্তু ভারতীয়রা বাংলাদেশের উপর নির্ভরশীল নয়।
ভারত বাংলাদেশকে দিয়ে বাংলাদেশের সড়ক ও রেলপথের উন্নয়ন করে নিজের বানিজ্য স্বার্থ হাসিল করতে চায়। এ ক্ষেত্রে তারা বিনিয়োগ তো করবেই না বরং ঋনের বোঝা বাংলাদেশের গোবর গনেশ মানুষের উপর চাপিয়ে দিয়ে নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে চায়।
ট্রানজিট সুবিধা দরকার ভারতের বাংলাদেশের নয়। ট্রানজিট সুবিধা দিলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে ভারত বাংলাদেশের বানিজ্য-ঘাটতি কমেছে কিন্তু আসলে বানিজ্য ঘাটতি বাড়বে। ভারতের ট্রানজিট সুবিধা প্রয়োজন উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোয় পণ্য আমদানি, রফতানি ও পরিবহনের জন্য যেখানে বাংলাদেশ বড় অঙ্কের পন্য রপ্তানি করে। ভারত বাংলাদেশের সেই সুবিধা কেড়ে নিতে চায়।
চীন >> ভারত >> বাংলাদেশ
কিছু বুঝলেন? ছোট্ট দুইটা উদাহরন দিচ্ছি।
যা বলতে যাচ্ছি বুঝে নেন।
১) বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা টিপাইমুখ বাঁধের স্থান পরিদর্শন করে বলে দিলেন যে এতে বাংলাদেশের কোন ক্ষতি হবে না বরং লাভ হবে। আবার চীন ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর পৃথিবীর দীর্ঘতম বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এখানে ভারত সরকার এবার বড় প্রতিবেশী চীনের একতরফা সিদ্ধান্তে নিজেদের সম্ভাব্য ক্ষতির বিষয়টি আঁচ করতে পেরে বাংলাদেশের সহযোগিতা চেয়েছে। ভারতীয় বিশেষজ্ঞদের মতে এ বাঁধের কারণে বাংলাদেশ ও ভারত ঝুঁকির মুখে পড়বে।
বাংলাদেশের অর্ধেক এলাকা মরুভূমিতে পরিণত হবে। উভয় দেশের কৃষি ও মৎস্য সম্পদের অপূরণীয় ক্ষতি হবে। থেমে যাবে ব্রহ্মপুত্র, পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার পানিপ্রবাহ। টিপাইমুখে বাঁধ দিলে কি বাংলাদেশের ক্ষতি হতো না?
২) ভারত চীন থেকে সব ধরনের টেলিকম যন্ত্রপাতি আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। সার্বিক নিরাপত্তার ধূয়াঁ তুলে ভারত সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
২০০৯ সালের নভেম্বরে ভারত সরকার চীনে তৈরি প্লাস্টিকের খেলনা আমদানি ও বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এগুলোর আসল কারন হচ্ছে, চীনের সস্তা মোবাইল সেট এবং খেলনা ভারতের বাজার দখল করে ফেলছে দেখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে ভারতের ৮০-৯০ শতাংশ বাজার দখল করে ফেলেছিলো চীনের সস্তা মোবাইল সেট এবং খেলনা।
এরকম সিদ্ধান্ত নিয়ে ভারত সরকার বাংলাদেশের অনেক পন্যের প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দিয়েছে। যেগুলো পন্যে প্রবেশাধিকার দিয়েছে তার সাথে বিশাল অঙ্কের টাক্স-ভ্যাট সংযুক্ত করেছে যাতে ভারতীয় মানুষ বাংলাদেশের পন্য কিনতে আগ্রহ না দেখায়।
অবশেষে আপনারাই সিদ্ধান্ত নেন যে ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দেয়া হলে তা বাংলাদেশের জন্য কতটুকু লাভজনক হবে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।