গত বছরের শেষদিকে অফিসের কাজে দুবাই গিয়েছিলাম। ছিলাম চারদিন। ততটা ঘুরে দেখা হয়নি। আছে অনেককিছূ। তবে উঁচু ভবন, গাড়ী আর ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস, ওভারপাস নিয়ে অনেকটা যান্ত্রিক শহর।
আমার অবশ্য ধারণা ছিল, এয়ারপোর্ট থেকে নেমেই খেজুর গাছ দেখব। যে খেজুর গাছে থোকা থোকা পাকা খেজুর ঝুলে থাকবে। যে খেজুর খেয়ে জীবনধারণ করতেন সেখানকার প্রাচীন মানুষ।
তবে শহরে খেজুর গাছ তেমন নেই। কান্ট্রি ক্লাব হোটেলে যাওয়ার পথে পাকিস্তানি স্মার্ট ট্যাক্সিচালকের কাছে জিজ্ঞেস করতেই সে বলল, আবাসিক এলাকায় কিছু গাছ আছে।
সেখানে প্রতিটা বাড়ি খেজুর গাছ দিয়ে ঢাকা। আর বানিজ্যিকভাবে যেখানে খেজুর চাষ হয়, সেটা আরও দুরে। শহর ছাড়িয়ে, মরুভূমির মধ্যে।
খেজুরের পরে আসা যাক নারীদের কথায়। দুবাইয়ে আমি তিন ধরনের নারী দেখেছি।
এক ধরনের মেয়েরা আছে তারা পোশাক-আশাকে বেশ খোলামেলা। শর্ট ড্রেস পরে। কোনো কোনো সময়ে তারা আটশাট জিনস-গেঞ্জি পরে। এ পোষাক পরেই অফিসে যায়। রেস্টুরেন্টে যায়।
দুবাইয়ের ভারতীয়রা এবং কিছু প্যালেস্টাইনি মেয়ে এ ধরনের পোশাক পরে। এই মেয়েগুলাই মাশাল্লাহ যে কোনো অনুষ্ঠান গরম করে রাখে।
আরেক ধরনের মেয়ে আছে, যারা বোরকা পরেন, কিন্তু মুখ খোলা। এবং এ বোরকাগুলো খুব টাইট, আটশাট। ইরান, ওমান ও কাতারি মেয়েরা, যারা দুবাইয়ে থাকেন, তারা এ ধরনের পোশাক পরেন।
দুবাইয়ে কিন্তু মানুষ থেকে বাইরের লোক বেশি। অনেক সময় তাদের জিনসের ওপরে জামা, মাথায় স্কার্ফ পরতে দেখেছি।
আর কিছু মেয়ে আছেন, তারা আপাদমস্কক ঢাকা বোরকা পরেন। জানলাম, তারা নাকি একেবারেই স্থানীয়। একটা মেলায় দেখলাম, ২০ বা ২২ জন মেয়ে তাদের স্বামীদের সঙ্গে মেলায় ঢুকলেন।
স্বামীরা সবাই স্থানীয় পোশাক পরা, অর্থাৎ সাদা জোব্বা। (বাংলাদেশ কী পারে না সেখানে জোব্বা রপ্তানী করতে) সবাই খুব লম্বা আর মোটাসোটা। সেই তুলনায় তাদের স্ত্রীরা বেশ স্লিম, দীর্ঘাঙ্গি। তারা কেবল নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলেন।
দুবাইয়ে পয়সা করেছেন ভারতীয়রা।
তাদের মধ্যে কেরালার লোকেরা। এদের একটা বড় অংশ আবার মুসলমান। হোটেল, জুয়েলারি, নানা ব্যবসায় তারা এগিয়ে গেছেন। কেমনে হলো? জানতে চাইলাম আমার এক বাঙ্গালি ভাইয়ের কাছে। যিনি ১২ বছর ধরে এখানে আছেন।
কিন্তু তার ভাষায় কিছু করতে পারেননি। বললেন, এরা প্রথম এদেশে এসে তাদের বউ-মেয়েদের আরবীদের বাসায় পাঠিয়ে দেয়! এর বিনিময়ে আরবীদের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করে। প্রথমে আমি কথাটা ঠিক বুঝতে পারিনি। পরে বুঝলাম। এটা কী আমার বাঙ্গালি ভাইয়ের ক্ষোভ নাকি সত্য কথা, তা ঠিক বোঝা গেল না।
হয়তো কিছুটা সত্যি, আর কিছু তার ক্ষোভ! তবে তিনি স্বীকার করেন, কেরালার লোক একজন আরেকজনের জন্য জান কোরবান করতে রাজি। কিন্তু অন্য কোনো দেশের লোকের জন্য পাচ পয়সার উপকার করতেও রাজি না তারা। সেখানকার অভিবাসী অনেত তরুনেরই স্বপ্ন, কেরালার কোনো মেয়েকে বিয়ে করা। ফিলিপাইনের একটা ছেলে বলছিল এ রকম কথা। তার ধারণা, এতে সে প্রচুর যৌতুক পাবে।
ব্যবসার দিকটা ইরানিরা যে কতটা ভালো বোঝে তা দেখলাম। তাদের একটা চেইন শপ আছে। নাম ডে টু ডে। এখানে কেনাটাকা করতে আসার জন্য তারা নাকি লোককে ভিসা দিয়ে এখানে নিয়ে আসে।
আগামী পর্বে লিখব, মিশরীয়দের রাতভর সীসা খাওয়ার গল্প।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।