স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে মায়ের ভাষা বাংলায় মাতৃভূমির কথা বলি।
একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) পৃথিবীর দরিদ্র জনগোষ্টির জন্য খুলে দিয়েছে অপার সম্ভাবনার দুয়ার। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় কৃষি বিপ্লব, শিল্প বিপ্লবের পর বর্তমান পৃথিবী নতুনতর এক বিপ্লবের মুখোমুখি যার নাম তথ্য বিপ্লব। একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যদি এই শতাব্দীকে নতুন কোন নামে অভিহিত করা হয় তবে তথ্য প্রযুক্তির শতাব্দী হবে তার জন্য উপযুক্ত। বর্তমান গ্লোবালাইজেশনের যুগে আইসিটির অন্যতম উপাদান হচ্ছে কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট ।
কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটের বদৌলতে পৃথিবী এখন গ্্েরাবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে। বলা চলে পৃথিবী হাতের মুঠোয় নয় আঙুলের ডগায় চলে এসেছে।
বর্তমান শতাব্দীতে তথ্যের আদান প্রদানের ক্ষেত্রে প্রেরক কত দ্রƒত ও কত সূষ্ঠুভাবে প্রয়োজনীয় বার্র্তা প্রাপকের কাছে পৌছাঁতে পারে এই ভাবনায় এখন উদ্ভাবকের বহূবিধ উদ্ভাবনের ভিত্তি হিসাবে কাজ করছে । কম্পিউটার এবং স্যাটেলাইট প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে যে পদ্ধতিটি অভূতপূর্ব, যুগান্তকারী বিপ্লব সাধিত করেছে তার নাম ইন্টারনেট। কম্পিউটার ভিত্তিক তথ্য বিনিময়ের অপূর্ব এই ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে বিশ্বের তথ্য অবকাঠামো বা গ্লোবাল ইনফরমেশন ইনফ্রাষ্ট্রাক্চার বা সংক্ষেপে জিআইআই।
পৃথিবীর প্রায় সব ধরনের তথ্য ব্যবস্থা এই জিআইআই এর অন্তর্ভূক্ত হচ্ছে; তথ্যের এই মহা রাজপথে যার অবস্থান যত দৃঢ় হবে ঠিক সেই অনুপাতে তথ্য আর জ্ঞানের ভান্ডার চলে যাবে তার নিয়ন্ত্রণে , যা ছাড়া ভবিষ্যতে ঠিকে থাকা যেন এক দুঃসাধ্য ব্যাপার।
বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির(আইসিটি) কথা উপলব্ধি করে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন; যা আমাদের জন্য অত্যন্ত আশার কথা। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার মূল যে হাতিয়ার তা হচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আর এই প্রযুক্তিকে ব্যবহার করার জন্য দরকার দক্ষ আইসিটি জ্ঞান সম্পন্ন মানব সম্পদ। দক্ষ মানব সম্পদ তৈরীর জন্য দরকার উপযুক্ত কম্পিউটার শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এরং এর উন্নয়নের জন্য দরকার গবেষণা; এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় বিভাগীয় শহরগুলোর পরেই বগুড়ার অবস্থান। বগুড়া ইতোমধ্যে পরিচিতি পেয়েছে সাইবার নগরী হিসেবে।
১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত বগুড়ার নট্রামস থেকেই যাত্রা শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের তৃণমূল পর্য্যায়ে কম্পিউটার শিক্ষার বিস্তার আর এক্ষেত্রে যে ব্যক্তিটি বাংলাদেশের সর্বস্তরে শহর থেকে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কম্পিউটার শিক্ষাকে ছড়িয়ে দিয়েছেন তিনি বগুড়ার নট্রামসের প্রতিষ্টাতা এবং বর্তমান জাতীয় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমীর বর্তমান পরিচালক মোঃ আব্দুল মান্নান সরকার।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণায় বগুড়ার যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান অদ্যবধি অবদান রেখে চলেছে তাদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরা হলোঃ
উচ্চ শিক্ষায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি
সরকারী আযিযুল হক বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ বাংলাদেশের সরকারী কলেজ গুলোর মধ্যে একমাত্র কলেজ যেখানে বাংলাদেশ সরকারের বিজ্ঞান এবং আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ২০০৪ সালে দক্ষ প্রোগ্রামার ও প্রশিক্ষক তৈরীর লক্ষ্যে এক বছর মেয়াদী আইসিটির উপর পোষ্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা কোর্স প্রবর্তন করে যা এতদাঞ্চলের জ্ঞান পিপাসু শিক্ষার্থীদের আইসিটির উপর উচ্চ শিক্ষা গ্রহনে সহায়তা করছে। উত্তরাঞ্চলের উচ্চ শিক্ষার একমাত্র বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় পুন্ডু ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি; যেখান থেকে ৪ বছর মেয়াদী কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপর বিএসসি ডিগ্রী প্রদান করা হতো । কিন্তু বগুড়া বাসীর ভাগ্যের নির্মম পরিহাস কোন এক অদৃশ্য কারনে বর্তমানে ইউনিভার্সিটির কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বগড়া বাসী আশা করে অচিরেই বিশ্ববিদ্যালয়টি চালু করার মধ্যে দিয়ে আবারো সুযোগ পাবে দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার।
কারিগরী শিক্ষায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি
কারিগরী ও প্রযুক্তিগত শিক্ষা ছাড়া একটি দেশ উন্নত দেশের কাতারে শামিল হতে পারে না। তৃতীয় বিশ্বভুক্ত দেশ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে নোবেল বিজয়ী পাকিস্তানের পদার্থ বিজ্ঞানী অধ্যাপক আবদুস সালাম যথার্থই বলেছিলেন -”অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য বিশ্ব জ্ঞান ভান্ডারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে নিজেদের করায়ত্ব করা এবং কেবলমাত্র এর মাধ্যমেই তৃতীয় বিশ্বভুক্ত রাষ্ট্রগুলো উন্নত বিশে^র সামিল হতে পারে। ” বৈদেশিক মুদ্রার সিংহভাগ আসে মানব সম্পদ রপ্তানীর মধ্যে দিয়ে একজন দক্ষ মানব সম্পদ ১০জন অদক্ষ শ্রমিকের চেয়ে বেশী বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠাতে পারে সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশ কারিগরী শিক্ষা বোর্ডের কম্পিউটার টেকনোলজির উপর ৪বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স পরিচালনা কলে আসছে । সরকারীভাবে বগুড়াতে এই কোর্স পরিচালনা করছে বগুড়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট। বেসরকারীভাবে অনেকগুলো কারিগরী প্রতিষ্ঠান এই কোর্স পরিচালনা করছে তার মধ্যে উল্ল্যেথযোগ্য হচ্ছে-, টিএমএসএস টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড বিজনেস স্টাডিজ ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ইনফরমেশন টেশনলোজি, বগুড়া টেকনোলজিক্যাল ইন্সটিটিউট, নর্থ বেঙ্গল ইন্সটিটিউট অব কম্পিউটার টেকনোলজি, ইসলামী ব্যাংক ইন্সটিটিউট অব টেশনোলজি, ইন্সটিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে কম্পিউটার শিক্ষা
ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকার মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে কম্পিউটার শিক্ষা কার্যক্রম প্রবতর্ন করেছেন । যার ফলে সরকারী এবং বেসরকারী স্কুল এবং কলেজ গুলোতে কম্পিউটার শিক্ষা চালু হয়েছে। বগুড়ার উল্ল্যেখ্যযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর মধ্যে -, বগুড়া সরকারী আযিযুল হক কলেজ, সরকারী শাহ সুলতান কলেজ, মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ, শেরপুর কলেজ, বগুড়া জিলা স্কুল, ভিএম স্কুল, ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজ, বিয়াম স্কুল এন্ড কলেজ, আমর্ড পুলিশ ব্যাটেলিয়ন, এসওএস হারম্যান মেইনার স্কুল, মিলেনিয়াম স্কলাস্টিকা, ওয়াইএমসিএ, করতোয়া মাল্টিমিডিয়া স্কুল প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার শিক্ষা চালু রয়েছে।
কম্পিউটার প্রশিক্ষণে বগুড়া
বাংলাদেশের একমাত্র জাতীয় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমী বগুড়ায় অবস্থিত। এখানে কম্পিউটারের উপর স্বল্প ও মধ্য মেয়াদী প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়ে থাকে।
আরো সরকারী যে প্রতিষ্ঠান গুলো কম্পিউটারের উপর স্বল্প ও মধ্য মেয়াদী প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়ে থাকে তাদের মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হচ্ছে-, আইসিটি ইন্সটিটিউট, সরকারী আযিযুল হক কলেজ, বগুড়া পলিটেকনিক ইনাসটিটিউট, টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার(টিটিসি), যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মহিলা অধিদপ্তর, সমাজ সেবা কেন্দ্র। এছাড়া বেসরকারীভাবে সীট ফাউন্ডেশন, সাইবার টেক কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, নিট, ওর্য়াল্ড ভিশন, সিজর্যাম কম্পিউটার্স , আব্দুল মান্নান সরকার টাইপও বহুভাষী সাটলিপি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ওয়েব লিংক, টিএমএসএস টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট ইত্যাদী ক¤িপউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।
তথ্য ও প্রযুক্তি গবেষণায় বগুড়া
তথ্য ও প্রযুক্তি গবেষণায় যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে তাঁদের মধ্যে জাতীয় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমী এবং আইসিটি ইন্সটিটিউট, সরকারী আযিযুল হক বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ অন্যতম। জাতীয় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমী ইতোমধ্যে তথ্য বিপ্লব গড়ার কৌশল শীর্ষক এক ওয়ার্কশপের মাধ্যমে নতুনভাবে গবেষণা কাজ শুরু করেছে-, ভার্চুযাল লাইব্রেরী, ডিসট্যান্স লার্ণিং এর ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল ইউনিভার্সিটি কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায় সেই বিষয়টি গবেষণা করছে। আইসিটি ইন্সটিটিউট, সরকারী আযিযুল হক বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ইতোমধ্যে মৌলিক কিছু গবেষণা কার্য সম্পাদন করেছে এবং সেগুলো মাল্টিমিডিয়া সিডি আকারে প্রকাশ করেছে যার মধ্যে উল্ল্যেখ যোগ্য হলো -, বাংলাদেশের সাওঁতালের জীবন যাত্রা, পাইওনিয়র পার্সোনালিটি পার্সপেক্টিভ বগুড়া, শিশুদের জন্য বর্ণমালা প্রভৃতি।
পনেরো কোটি জনসংখ্যার এই দেশে অর্ধেকের বেশী নারী সেখানে পুরুষ এবং নারীর যৌথ আইসিটি শিক্ষার বিকল্প নেই । নারী কম্পিউটার শিক্ষায় প্রশিক্ষিত হলে অর্থনৈতিক ভাবে সমতা আসবে, দেশ সমৃদ্ধ হবে। মনে রাখতে হবে আমাদের সন্তানদের মেধা রয়েছে, সৃজনশীলতা রয়েছে , রয়েছে উদ্ভাবনী শক্তি, শুধু প্রয়োজন সঠিক দিক নির্দেশনা প্রদান করা। শুধু মাত্র পুথিঁগত শিক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান আহরণের ক্ষেত্র তৈরী করে দিতে হবে। জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ বির্ণিমানের লক্ষে বিশ্বের প্রাচীনতম নগরী পুন্ড্রু বর্ধণ খ্যাত তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষার সম্ভাবনাময় সাইবার নগরী বগুড়াকে আরো বেশীকরে তথ্য ও প্রযুক্তি চর্চার নগরীতে পরিণত করতে হবে।
সে দিন আর বেশী দুরে নয় যে দিন বগুড়ার মানুষ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে দক্ষ মানব সম্পদ তৈরীর মধ্যে দিয়ে বগুড়াকে তৈরী করবে বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল নগরী হিসেবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।