আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সোহাগ সকালের প্রথম প্রেম, প্রথম ভালোবাসা অতঃপর ডার্লিং এর দাদীর কাছে ধরা এবং দৌড়ানি খাওয়া

আমার ব্লগ আমি আমার ডায়েরীর মতো করে ব্যবহার করি। এখানে আমি একটা গল্প অথবা কবিতা লিখতে পারি, অথবা আজকে কিসের তরকারী দিয়ে ভাত খেলাম, সেইটাও লিখতে পারি। । প্রেম-ভালোবাসা কে না করতে চায়? অনেকে তো মায়ের পেট থেইকা বাইর হইয়াই হাসপাতালের সুন্দরী নার্সের দিকে দুই পাটি দাঁতহীন মাড়ি দেখাইয়া কুটকুট কইরা হাসে। আর আমি তো নিছক একজন সাধারণ যুবক মাত্র।

যদিও এখন আমি যুবক, তয় প্রথম যখন প্রেমে পড়ছিলাম, তখন ছিলাম পুলাপান। ক্লাস নাইনে আইসা ভর্তি হইলাম। নতুন ইস্কুল, নতুন ইস্টুডেন্ট! ক্লাসের মোট স্টুডেন্টসের ৮০ ভাগ মাইয়া জাতি! এমনিতেই নতুন, তাঁর উপর আবার প্রচন্ড লাজুক । কোনো ছেলেপেলের সাথে খাতির নাই। একা একা কলম দিয়া টেবিল দাগাদাগি আর ছাদের সাথে ঝুলানো ফ্যান ঘোরা দেইখাই অবসর সময় কাটাইতে হয়।

মাঝে মাঝে খাতার সাদা কাগজে হাবিজাবি আঁকা-আঁকি করি। স্যার আসেন, ইংরেজী পড়ান, না বুঝলেও মাথা ঝাকায়া কই বুঝছি! স্যার আসেন, অংক কষেন, মাথা ঝাকায়া এমন ভাব ধরি, যেন এইসব আরও বিশ বছর আগেই খতম দিয়া আসছি। নতুন ছোকরা আসছে ইস্কুলে, আশেপাশে আমারে নিয়া হাবিজাবি কানাকানি হয়। সেইসব কানাকানি, ফিসফিসানির কিছু শুনি, কিছু হারিয়ে যায় দূরে টাঙানো ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার পতপত কইরা উড়তে থাকা পতাকার মাঝে। তারপর সেই পতাকা উড়তে দেখি আর ভাবি, আর্জেন্টিনার হাত থেইকা ফুটবল বিশ্বকাপ নেয়, এরাম কুন হালার পুতের দ্যাশ আছে দুনিয়ায়? স্যারের ধমকানিতে সম্বিৎ ফিরা পাই।

একদিন টিফিনের ছুটিতে মারাত্মক খিদা লাগলো। বই-খাতা ইস্কুলে রাইখা-ই দৌড় লাগাইলাম বাড়ির দিকে। তারাতারি কিছু পেটের মধ্যে ঢুকায়া-ই আবার ইস্কুলের দিকে দৌড়! কেলাশ রুমে ঢুইকা দেখি, একদল ফাজিল মাইয়া আমার বই-খাতার পোষ্ট মর্টেম করতাছে। আমারে দেইখা সবাই “ভাগ ভাগ” বইলা ভাগলো। আমার খাতার মধ্যে কোনো কামের জিনিস ছিলনা।

খাতা ভরা হাবিজাবি আঁকা-আঁকি ছিল। মনে মনে ব্যাফুক খুশি হইলাম। আমার আঁকা-আঁকি দেইখা অবশ্যই ললনারা আমার প্রতি একটু ভক্তিমাখা চোখে তাকাইবো! ভাবতেই নিজেরে জয়নুল আবেদীন অথবা কামরুল হাসানের মতো মনে হইলো। তবে দুই সাবজেক্টের কেলাশ শ্যাষ হওয়ার পরে তো আমার আক্কেল গুরুম! আব্দুর রউফ স্যার কাঁচাপাকা দাড়ি চুলকাইতে চুলকাইতে আমার সামনে আইসা দাড়াইলো। তারপর একখান কাগজ আমার চক্ষের সামনে ধইরা কইলো, “এইডা কি?” আমি মাথা নিচু কইরা পায়ের আঙ্গুল দেখতে লাগলাম।

সেইদিন আমারে প্রথম কেলাশে কানে ধরায়া খাঁড়া করায়া রাখলো। মনে মনে কইলাম, যেই শালী আমার এই সর্বনাশ করলি, তোর সর্বনাশ আমি কইরাই ছাড়ুম! প্রতিজ্ঞা করলাম, আর ভালা থাকা যাইবো না। দুনিয়ায় ভালা মাইনষের দাম নাই। কেলাশ শ্যাষ হওয়ার পর দেখলাম পুলাপান খালি আমার লগে ঘেঁষতে চায়। কাহিনী বুঝলাম না।

এক পোলা কয়, “ভাইরে! রউফ স্যারের ছবিটা তো সেরাম আকছস! তয় তাঁর জায়গা মতো যেই বাশটা ঢুকতাছে, সেই বাশের আইক্কা গুলা আরও স্পষ্ট হইলে ভালা হইতো”। আমি এতক্ষণে বুঝলাম, মাইয়ার দল আমার খাতা থেইকা কোন ছবিটা নিয়া গেছিলো! এইদিকে যেই পুলা আমারে লক্ষ্য কইরা কথাটা কইলো, তাঁর দিকে তাকায়া মনে মনে কইলাম, এই পোলা নিশ্চয়ই আমার মতই পুংটা হইবো। ওরেই দরকার আমার। বন্ধুত্ব হইলো। সেরাম বন্ধুত্ব।

প্রত্যেকদিন পঞ্চাশ-ষাট টাকা খাওয়া যায় তাঁর পকেট থেইকা। সপ্তাহ দুয়েক পর একদিন পোলারে কইলাম, “দোস্ত! সেইদিন যেই মাইয়া আমার সর্বনাশ করলো, তারে চিনস?” দোস্ত কইলো, “আবার জিগায়! ঐডা তো তোর ভাবী!” আমার মাথায় আকাশ ভাইঙ্গা পড়লো। হালায় কইলো কি! মাইয়াডারে আমি পছন্দ করতে চাই, এই কথা শুইনা তো দোস্ত আমারে পারে তো মাটির নিচে পুইতা রাখে। কটমট কইরা কইলো, “ওই মাইয়ার দিকে আরেকবার তাকাইলে তোরে উড়াইলামু!” জানের ভয়েই হোক, আর যেই কারনেই হোক, সেই মাইয়ার দিকে আর তাকাইনাই। তয় আমার প্রতিশোধ তো নিতেই হইবো।

বন্ধুরে পটাইলাম এই বইলা, “দোস্ত! তোর নাকি একটা শালী আছে? আমগো নিচের কেলাশে পড়ে? তোর কোনো আপত্তি না থাকলে, তুই আর আমি ভায়রা ভাই হইতে পারি”। দোস্ত রাজি হইলো। মাইয়ার ছোট বইনের সাথে প্রেম করা আর মাইয়ার সাথে প্রেম করা তো একই কথা! দোস্তের সাহায্যে, নিচের কেলাশের এক মাইয়ারে হাত করলাম। এই মাইয়া আবার আমার জান্টুশের বান্ধবী। কয়েক সপ্তাহ খাটা-খাটুনির পর মাইয়ার কানে আমার টগবগে প্রেমের কথা পৌঁছাইতে পারলাম।

তারপর থেইকা মাইয়া আমারে দেখলে খালি মিটমিট কইরা হাসে। তাঁর হাসি দেখলে তো আমার মাথা-মুথা ঠিক থাকেনা। আফসোস করি, দুনিয়াতে ক্যান খালি আমি আর সে-ই জন্ম নিলাম না। তাইলে আদম-হাওয়ার মতো সারাদিন প্রেম-ভালোবাসা করতাম। বাপ-মায়ের প্যাদানী খাওয়ার ডর থাকতো না।

এমনেই চলতে থাকলো দিনকাল। তয় এমনে আর কদ্দিন? এখনও কথাই কইতে পারলাম না। কথা না বইলা বোবার মতো প্রেম-ভালোবাসা হয় নাকি? প্রেম ভালোবাসা করতে হইলে মোবাইলে কথা বলা লাগে। তাঁর মোবাইল নাম্বার নাই আমার কাছে। তাঁর বান্ধবীরে কইলাম, যেকোনোকিছুর বিনিময়ে মোবাইল নাম্বার চাই! বান্ধবী গিয়া তারে এই কথা কইলো।

তারপর বান্ধবীরে সাথে নিয়া সে নিজেই আসলো। তারে এত কাছে এর আগে দেখিনাই। আমার হাত-পা তো থরথর কইরা কাপা শুরু কইরা দিছে! প্রসাবে পেশার দিচ্ছে! নিজেরে ঠিক করার আগেই সে আমারে হাসি আর ভালোবাসা মাখা মুখে টাইনা টাইনা কইলো, “এইই যে! আপনার মোবাইইল নাম্বারটা আমাকে দেএয়া যাবেএএ?” আমার তো হার্ট অ্যাটাক হওয়ার অবস্থা! দুধ না চাইতেই গাভী! কি আনন্দ আকাশে বাতাসে। চট কইরা সাদা কাগজে নাম্বারটা লেইখা ডার্লিং এর নরম হাতে তুইলা দিলাম। আরেকটু হইলে, সত্যি সত্যিই আনন্দে ১ নাম্বার কইরা দিতাম।

দোস্তরে নিয়া ইস্কুল পলায়ন করলাম। আজকের এই খুশির দিনে, স্যারদের প্যানপ্যানানি শোনার কোনো মানে হয় নাকি! দোস্তরে মিষ্টির দুকানে নিয়া আনলিমিটেড মিষ্টি খাওয়াইলাম। হালায় মাগনা মিষ্টি পাইয়া জম খাওয়া খাইলো। রাইতে তো আমার আর ঘুম হয়না। খালি মোবাইলের দিকে তাকাই।

এই বুঝি জান্টুশের কল আইলো! সারারাত জাইগা থাইকাও ফোন পাইলাম না। তাতে কি? প্রথম দিনেই ফোন দিতে হইবো, এমন কোনো কথা আছে নাকি? আর দুইদিন দেখা যাক। দুইদিন দেইখাও কাম হইলোনা। ফোন আর আসেনা। ডার্লিংও ইস্কুলে আসেনা।

কি বিপদ! মাথা-মুথা নষ্ট হওয়া অবস্থা! দোস্তরে কইলাম, যেইভাবেই হোক, জান্টুশরে আমার দেখা লাগবোই লাগবো! দোস্ত কয়, “তোর মিষ্টি খাইয়া আমার পেটের এখন ক্যাড়াব্যাড়া অবস্থা। ক্যামনে কি করি?” আমি কইলাম, “যেমনেই হোক, কিছু একটা কর। আজকের মধ্যে আমার ডার্লিংরে না দেখতে পারলে আগামীকাল বুঝি আমারে আর পাইতেছিস না এই দুনিয়ায়!” দোস্ত আমারে আশ্বাস দিলো। বিকালে মাইয়ার বাড়ির ওইদিকে যাওয়া হবে। সেরাম ইস্টাইলের পার্ট লইলাম।

চুলে তিনদিন পর চিরুনি লাগাইলাম। দাত গুলা আরেকবার মাইজা নিলাম। দামী সুগন্ধী শরীরে মাইরা বিকালে বাইর হইলাম। দোস্ত আসেনা ক্যান! কইতে না কইতেই দোস্ত হাজির। হালায় দেখি আমার থেইকা বেশি পার্ট লইয়া আইছে! কইলাম, “ওই ওই! ডেটিংএ কি আমি যাইতেছি? না তুই?” হালায় কয়, “আরে ব্যাটা, তোর ডার্লিংএর বড় বইন তো আমার ডার্লিং।

আমি কি হুদাই তোর লগে যাইতেছি? এই সুজোগে নিজের ডার্লিংরেও একবার দেইখা আসলাম”। দোস্ত পেটে খোঁচা মাইরা কইলো, “চিঠিটা আনছস?” আমি কইলাম, “আব্বার জিগায়!” দোস্ত চিঠি পুড়াটা পইড়া চোখ বড় বড় কইরা কয়, “এই চিঠি পড়লে তো দুনিয়ার সব থেইকা সুন্দরী মাইয়াও তোড় প্রেমে পইড়া যাইবো রে!” আমি নায়কের ভাব নিলাম। একটা মিচকা হাসি দিলাম। আর দেরী না কইরা গন্তব্যস্থলে হাটা দিলাম। রাস্তার দুই পাশের বড় বড় গাছ আর চিপা-চাপা রাস্তার শাখা-প্রশাখা দিয়া হাটতে হাটতে ডার্লিংএর বাড়ির কাছে পৌঁছাইলাম।

জান্টুশরে দেখলাম, তাঁর বইনের সাথে গপ্পো করছে। তারে দেইখা আমার, আর তাঁর বইনেরে দেইখা আমার দোস্তের, চোখ দুইটা চকচক কইরা উঠলো! সুন্দরী দুইটা আমগো দিকে তাকায়া যেন লজ্জা পাইলো। তা দেইখা আমরাও ইট্টু লজ্জা পাইলাম। পকেট থেইকা চিঠিটা বাইর কইরা সুন্দরী দুইটাকে দেখাইয়া রাস্তায় ফালাইলাম। চিঠি রাস্তায় পড়তে না পড়তেই দেখি সুন্দরীদের দাজ্জাল দাদী আমগো পেছনে খাঁড়ায়া রইছে! চিঠিটা সে হাতে নিতে না নিতেই আমরা দুইজন চোখ-মুখ বন্ধ কইরা দিলাম দৌড়! পেছন থেইকা বুড়ি দাদী ডাকতেছে, “অই হারামজাদারা! খাঁড়া খাঁড়া!” কিসের খাঁড়াখাঁড়ি! আমি তো দৌড়ের উপ্রে আছি! পেছনে তাকাইয়া দেখি, দোস্ত দুই হাত দিয়া পেট চাইপা ধইরা দৌড়াইতেছে! বেচারা! দৌড়ানোর চোটে আবার কোনো অঘটনই ঘটায়া ফালায় কিনা কে যানে! ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।