"পসার বিকিয়ে চলি জগৎ ফুটপাতে, সন্ধ্যাকালে ফিরে আসি প্রিয়ার মালা হাতে"
প্রেমময় ফ্রেম বনাম ফ্রেমময় প্রেম
আমার “সিঙ্গেল লেন্স রিফ্লেক্স” মনে প্রথম যেদিন তোমাকে “ফোকাস” করি সেদিন মনটা ছিল "নরমাল লেন্স"। অনেক চেষ্টা করেও সেদিন তোমার “ক্লোজআপ” পেলামনা। তাই দূর থেকে তোমাকে দেখে আমার মন ভরলোনা। বেশ কিছুদিন ধরে তুমি “আউট অফ ফোকাস” হয়েই রইলে। অতঃপর বুঝে নিলাম আমার এনালগ মনের একটা আপডেট একান্তই প্রয়োজন।
তাই একদিন মনের নরমাল লেন্সটা পাল্টে একটা “জুমলেন্স” লাগালাম। এবার তোমাকে দূর থেকে ফোকাস করে ধীরে ধীরে কাছে নিয়ে এলাম। “থ্রু দ্যা লেন্স” তোমাকে ততটা স্পষ্ট দেখতে পেলামনা। আলোর স্বল্পতার কারণে প্রথম দেখার যে “সেনসিটিভিটি” বা “আইএসও” তার মাত্রা কিছুটা কম ছিল। ভাবলাম “ডেপথ্ অফ ফিল্ড” ভাল পেতে হলে চোখের “আ্যাপারচার” ও হৃদয়ের “শাটার স্পীড” দুটোই “প্রায়োরিটি", তাই তাদের যথাযথভাবে সমন্বয় হওয়া বাঞ্ছণীয়।
একদিন দেখি তোমাকে নিজের ইচ্ছেমতো “ফেড ইন” করতে যেয়ে কাছের মানুষগুলো ধীরে ধীরে “ফেড আউট” করে ফেলেছি। এরপর থেকে দেখি "লং", "শর্ট", "ওয়াইড" সকল এঙ্গেলেই শুধু তুমি আর তুমি। আমার মনের “মিরর”-এ শুধুই তোমার “রিফ্লেক্স” আর “ফোকাল লেন্থ” এর সবটা জুড়ে শুধুই তোমার উপস্থিতি। আমি ইচ্ছেমতো "ক্লিক" করেই যাচ্ছি।
একদিন দিনবদলের ধকলে হুট করে আমার “সিঙ্গেল লেন্স রিফ্লেক্স” মনটা "ডিজিটাল"-এ রূপান্তরিত হয়ে গেল।
এরপর থেকে নিজের ইচ্ছার উপর আর তেমন নিয়ন্ত্রণ রইলোনা। যখনই তোমাকে দেখি তখনই “ক্লিক” করি। "অটো ফোকাস", সবকিছুই অটোম্যাটিক। আলোর স্বল্পতা বা আধিক্য নিয়ে কোন ভাবনা নেই। “আ্যাপারচার” বা “শাটার স্পীড” পরিবর্তন নিয়ে কোন ঝামেলা নেই।
“ফিল্ম সেনসিটিভিটি” বা “আইএসও” নিয়েও কোন ভাবনা নেই। “ডেভেলপ” বা “প্রিন্ট” করার কোন ঝামেলা নেই। একটা ছোট্ট “মেমোরী কার্ড” তোমার অসংখ্য ছবি “ক্যাপচার” করতে পারে। ইচ্ছে হলে কম্পিউটার মনিটরে দেখতে পারি। ফটোশপে যেয়ে নানা কেরামতি করতে পারি।
আমার নিজের বলতে গেলে তেমন কিছুই করার থাকলোনা। সবই ডিজিটালি কনট্রোলড্।
এরপর আমি রীতিমতো ডিজিটালে অভ্যস্ত হয়ে গেলাম। এরপর আমার মাথায় ভূত চাপলো। আমার কাজের বিষয়ে পরিবর্তন এলো।
এখন মাথার মধ্যে শুধু “ম্যাক্রো”, “মাইক্রো” ইত্যাদি সব জটিল বিষয়। নরম্যাল লেন্সের জায়গায় এলো “ম্যাক্রো লেন্স”। সেই সাথে যোগ হলো “এক্সটেনশন বেলো”, "লেন্স এ্যটাচমেন্ট", “রিং ফ্লাশ" ইত্যাদি। যে তুমি একদিন আমার মন ক্যামেরায় “নরম্যাল লেন্স” থেকে “টেলিলেন্স”, “জুমলেন্স” থেকে “ওয়াইড এঙ্গেল লেন্স”, “লং শট ” থেকে “মিড শট”, “ক্লোজ আপ শট” থেকে “এক্সট্রিম ক্লোজ আপ শট” এ আমাকে সমৃদ্ধ করেছো আজ সেই জায়গায় “ম্যাক্রো” এসে জুড়ে বসেছে। এবার তোমার অপরূপ রূপের বৈশিষ্ট আরো স্পষ্ট হতে শুরু করেছে, বলতে পারো ম্লান হতে শুরু করেছে।
তোমার গালের ও চিবুকের যে কালো তিল আমার একান্ত প্রিয় ছিল আজ সেই তিল ম্যাক্রো লেন্সের কারিশমায় তা “বীভৎস মৌচাক” হয়ে ধরা পড়ছে। যে ত্বকের সৌন্দর্য ও কমনীতায় তুমি মুগ্ধ ছিলে আমি আজ তাতে ক্ষুব্ধ। কারণ তোমার ত্বকজুড়ে আজ স্পষ্টতঃই অসংখ্য ইঁদুরের গর্ত আর সেই গর্তজুড়ে অতি রুক্ষ বটগাছের জটা। আমি আজ সেগুলো কিছুতেই লোমকূপ ভাবতে পারিনা। তোমার নেইলপালিশ মাখানো যত্নের নখগুলো নিড়ানির চাইতে বেশী কিছু নয়।
তোমার সুন্দর হাসির মূলে যে ধবধবে সাদা দাঁত তা ঘরে ব্যবহৃত টাইলস্-এর চেয়ে বেশী কিছু মনে হয়না। যে নরম ঠোঁটদুটো এতোকাল গোলাপের পাঁপড়ি ভাবতাম আজ তা নিতান্তই ব্রয়লার মুরগীর মাংশ ছাড়া আর কিছুই মনে হয়না।
তুমি আমাকে ক্ষমা করো প্রিয়। আমি আমার সেই এনালগ মনটা আজ ফিরে পেতে চাই। আমার প্রেমময় ফ্রেমে তোমার যে এনালগ রূপ আমি দেখেছি আজ এই ডিজিটাল ফ্রেমময় প্রেমে তাকে কলুষিত করতে চাইনা।
এককালে কবি সাহিত্যিকরা নারীদের শাশ্বত রূপের যে বন্দনা করে গেছেন হাজারো গল্প-কবিতা-উপন্যাসে আমি আমার ডিজিটাল চোখ দিয়ে সেই রূপের অপব্যাখ্যা দিয়ে চাইনা। আমার এনালগ মনে তুমি চিরকাল প্রেমময় হয়ে থাকো- আমার মনের ফ্রেমে আমি সেই তোমাকেই চাই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।