তাশফী মাহমুদ
নানা ধরনের কার্যক্রম সহজ হয়ে যাচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে। বর্তমানে ডিজিটাল পদ্ধতির সুবিধা নানা কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে, যার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট (মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট—এমআরপি) চালু করা। বিদেশ যাওয়ার জন্য অতি দরকারি পাসপোর্টে যুক্ত হলো প্রযুক্তি। বিশ্বের অনেক দেশে যা আগেই হয়েছে। চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে বাংলাদেশে এমআরপির জন্য আবেদন ফরম জমা নেওয়া শুরু হয়।
প্রচলিত পাসপোর্টের মতোই দেখতে হবে নতুন এমআরপি। তবে একটি বিশেষ পৃষ্ঠায় থাকবে প্রযুক্তির কারিগরি। ফলেযন্ত্র পড়তে পারবে এই পাসপোর্ট। যন্ত্রে ঢুকিয়ে দিলে কম্পিউটারে চলে আসবে পাসপোর্টে থাকা সব তথ্য। প্রযুক্তির সুবিধা ব্যবহার করে যুক্ত হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থাও।
যাঁরা আগের পাসপোর্ট ব্যবহার করছেন, তাঁদের পুরোনো পাসপোর্টেই চলবে ২০১৫ সাল পর্যন্ত।
যেভাবে পাওয়া যাবে
পাসপোর্টে প্রযুক্তি যোগ করার সঙ্গে সঙ্গে যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট পাওয়ার আবেদনের প্রক্রিয়াও করা হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক। এমআরপির জন্য আবেদন ফরম পাওয়া যাবে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে (http://www.dip.gov.bd) এবং বাংলাদেশ সরকারের ফরমস (http://www.forms.gov.bd) ওয়েবসাইটে। এসব সাইট থেকে আবেদনপত্র নামিয়ে নিয়ে (ডাউনলোড) পূরণ করতে হবে। একইভাবে এসব সাইটে পাওয়া যাবে ভিসা ফরমও।
ঢাকার আগারগাঁওয়ের পাসপোর্ট কার্যালয়ে আবেদন ফরম জমা নেওয়া হয়। আবেদনকারীর একটি রঙিন ছবি (পাসপোর্ট আকারের) ফরমের নির্ধারিত স্থানে আঠা দিয়ে লাগানোর পর সত্যায়ন করতে হবে। আবেদন ফরমের সঙ্গে জমা দিতে হবে জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন পত্রের ফটোকপি। এমআরপির জন্য ব্যাংকে জমা দিতে হবে তিন হাজার টাকা (সাধারণ)। ১৫ দিনের মধ্যে পেতে হলে লাগবে ছয় হাজার টাকা (জরুরি)।
আবেদনকারীকেই আবেদন ফরম জমা দিতে হবে। আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সময় আবেদনকারীর চারটি আঙুলের ছাপ (ফিঙ্গার প্রিন্ট) নেওয়া হবে, তোলা হবে মুখের ছবি এবং নেওয়া হবে ডিজিটাল সই।
নতুন পাসপোর্ট যেমন
নতুন যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট বিভিন্ন দেশের উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর পাসপোর্টের আদলে তৈরি হবে। জানালেন ‘ইন্ট্রোডাকশন অব মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) অ্যান্ড মেশিন রিডেবল ভিসা (এমআরভি) ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. রেফায়েত উল্লাহ। তিনি আরও বলেন, উন্নত দেশগুলোর পাসপোর্টে ব্যবহূত বিশেষ কাপড়ের কভার ব্যবহার করা হবে এই পাসপোর্টে।
বিশেষ সুবিধার এই পাসপোর্ট ইচ্ছেমতো নানাভাবে ব্যবহার করলেও নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। আগের পাসপোর্টের শুরু থেকে পঞ্চম পৃষ্ঠা পর্যন্ত ছবিসহ প্রয়োজনীয় যেসব তথ্য ছিল, তা এক পাতায় থাকছে। থাকছে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরও। পুরোনো পাসপোর্টে বিভিন্ন দেশের ভিসা লাগানো থাকলে সেগুলো নতুন পাসপোর্টে থাকবে না। এ ক্ষেত্রে এই সুবিধা এমআরপিতেও যাতে যুক্ত হয়, সে জন্য পুরোনো পাসপোর্টের নম্বর ও রেফারেন্স যুক্ত থাকবে।
এক পাতার এসব তথ্যের পাশাপাশি একপাশে থাকছে বিশেষ সাংকেতিক নম্বর, যাকে ‘যন্ত্রে পাঠযোগ্য এলাকা’ বলা হয়। এই নম্বরের মধ্যেই থাকছে পাসপোর্টধারীর সব তথ্য, যা যন্ত্রে পাঠযোগ্য হবে। পুরো প্রক্রিয়াটিই চলছে আন্তর্জাতিক যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্টের অনুমোদন সংস্থা আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার (আইসিএভি) নির্দেশনা অনুসারে।
এমআরপির তথ্যগুলো যখনই কম্পিউটার এই নম্বরের মধ্যে পড়বে, তখনই মনিটরে সেসব তথ্য দেখা যাবে। এই পৃষ্ঠায় রয়েছে জাতীয় পশু বাঘ, জাতীয় ফুল শাপলার জলছাপ।
আরও আছে নানা ধরনের নিরাপত্তা দাগ। পাতার বিভিন্ন স্থানে বাঘের ছবির সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের নাম ও শহীদ মিনারের ছবি। এসব জলছাপ বিশেষ আলো দিয়ে দেখলে লেজার রশ্মির মতো দেখাবে। মো. রেফায়েত উল্লাহ জানান, প্রতিটি কার্যক্রমই যুক্ত হয়েছে নিরাপত্তার খাতিরে। একমাত্র দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাই এসব তথ্য দেখতে এবং প্রয়োজনে প্রমাণের কাজে ব্যবহার করতে পারবেন।
এমআরপির প্রথম পাতায় থাকছে জাতীয় সংগীত। আর আছে স্মৃতিসৌধের ছবি, শেষ পাতায় থাকছে সংসদ ভবনের ছবি ও পরিচিতি।
শুথু এসব তথ্যই নয়, এই পাতায় যুক্ত ছবির ক্ষেত্রেও থাকছে জলছাপের সুবিধা। যেখানে নামসহ পাসপোর্টধারীর বিভিন্ন গোপনীয় তথ্যও যুক্ত থাকবে। সব ধরনের তথ্যই যন্ত্রে পাঠযোগ্য হবে এবং দায়িত্বশীলরাই এসব তথ্য জানতে পারবেন।
এমআরপিতে সব মিলিয়ে প্রায় ৩৮টি নিরাপত্তা বিষয় যুক্ত করা হবে, যা এই পাসপোর্টের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে বলে জানান মো. রেফায়েত উল্লাহ। নতুন এমআরপি হবে ৪৮ পাতার, যাতে নিরাপত্তার জন্য নেওয়া হবে চারটি আঙুলের ছাপ।
উন্নত প্রযুক্তির বিশেষ কাগজে বিভিন্ন নিরাপত্তা বৈশিষ্ট যুক্ত হবে এমআরপিতে। পোল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান পিডব্লিউপিডব্লিউ বুকলেটটি তৈরি করেছে। বুকলেটে নির্দিষ্ট ব্যক্তির তথ্য পার্সোনালাইজেশন যন্ত্রের মাধ্যমে প্রিন্ট হবে।
জার্মানির রুলমার্টের তৈরি এ যন্ত্রে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় এক হাজার এমআরপি ছাপানো যাবে। যে পাতায় পাসপোর্টধারীর তথ্য এবং বিশেষ নিরাপত্তা তথ্য থাকবে সে পাতার লেমিনেশন একবারেই হবে। অর্থাৎ প্রিন্ট হয়ে লেমিনেশন হলে তবেই পূর্ণাঙ্গ পাসপোর্ট বের হবে। লেমিনেশন ফয়েল তৈরির যন্ত্রটি ফ্রান্সের হলোগ্রামের তৈরি। বিশেষ সুবিধার ওয়ান পাস যন্ত্রে এ কাজটি একবারেই হবে।
বাংলাদেশেএমআরপি ও এমআরভির পুরো কাজটি যৌথউদ্যোগে করা। এই কনসোর্টিয়ামের নেতৃত্ব দিচ্ছে মালয়েশীয় প্রতিষ্ঠান আইআরআইএস কর্পোরেশন বারহেড। বাংলাদেশে সহযোগী প্রতিষ্ঠান ডেটা-ইজ লিমিটেড।
অনলাইনে আবেদনপত্র পূরণ
ওয়েবসাইটে প্রাপ্ত এমআরপির আবেদন ফরম নামিয়ে প্রিন্ট করে তাতে হাতে লিখতে হয়। কম্পিউটারে টাইপ করে ফরম পূরণ করার সুযোগ নেই।
মো. রেফায়েত উল্লাহ জানান, এমআরপির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে কাজ শেষ হয়নি এখনো। আগামী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে এমআরপি দেওয়া শুরু হবে বলেও জানান তিনি।
নতুন প্রযুক্তি আর সম্ভাবনা
নতুন প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে উন্নত নিরাপত্তাসহ এমআরপির রয়েছে নানা ধরনের সুবিধা। যন্ত্রে পাঠযোগ্য হওয়ায় সহজে প্রয়োজনীয় নানা কার্যক্রম সম্পন্ন করা যাবে।
শুরুতে কিছু সমস্যা হতে পারে, তবে বিতরণ শুরু হলে ছোট ছোট সমস্যা থাকবে না—বললেন মো. রেফায়েত উল্লাহ। পাসপোর্টের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে সর্বোচ্চ ১৫ দিনের মধ্যে এমআরপি পাওয়া যাবে। এমআরপির প্রক্রিয়াটি চালু হয়ে গেলেই এসব কার্যক্রম আরও সহজ হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।