আসন্ন বাজেট সামনে রেখে দেশের শেয়ারবাজারের লেনদেনে কিছুটা গতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মাত্র ১৫ কার্য দিবসের ব্যবধানে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন ১০৭ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) লেনদেনও বেশ বেড়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আসন্ন বাজেট সামনে রেখে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে আস্থার সঞ্চার হতে শুরু করেছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতা কিছুটা কমে যাওয়ায় অনেকে বাজারে সক্রিয় হচ্ছেন, যার ইতিবাচক প্রভাব বাজারে দেখা যাচ্ছে।
ডিএসই সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১ জানুয়ারি ডিএসইতে ৬৬৯ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল। একই বছরের ১১ মার্চ লেনদেন হয়েছিল ১২৭ কোটি টাকার। এরপর লেনদেন বেড়ে ১৫ এপ্রিল দাঁড়িয়েছিল ১২ শ কোটি টাকার ওপরে। ৮ জুলাই এই লেনদেন ১১৫ কোটি টাকায় নেমে আসে। এরপর আবারও লেনদেন বাড়তে শুরু করে।
১৯ সেপ্টেম্বর ডিএসইর লেনদেন দাঁড়ায় এক হাজার ২৮৮ কোটি টাকায়। এভাবেই ওঠানামা করে লেনদেন। সর্বশেষ গত ৬ মে ডিএসইর লেনদেন ১০৭ কোটি টাকায় নেমে আসে। এরপর আবারও লেনদেন বাড়তে শুরু করে, যা ১৯ মে ৫৩৮ কোটি টাকায় দাঁড়ায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর সভাপতি রকিবুর রহমান প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, তারল্য সংকটের কারণে লেনদেন কমে যাচ্ছে বিষয়টি এমন নয়।
মূল কথা হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট। মানুষের কাছে টাকা আছে। আস্থা পেলে তাঁরা বাজারে আসবে। আমাদের সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। আর এ-কারণেই লেনদেনের ওঠানামা লক্ষ করা যাচ্ছে।
রকিবুর রহমান আরও বলেন, বাজার স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে বলে অনেক বিনিয়োগকারী মনে করছেন। এক্ষেত্রে সরকারের সদিচ্ছা লক্ষ করা যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে নতুন করে স্বল্প সুদে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসকে এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা পুণঅর্থায়নের সুবিধা দিচ্ছে। যে সব ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সুদ মওকুফ করেছে তারাই কেবল এই সুবিধা পাবে।
বর্তমানে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম অনেক আকর্ষণীয় পর্যায়ে রয়েছে বলে মনে করছেন ডিএসইর সভাপতি।
তিনি বলেন, ‘এ অবস্থায় বাজারে ঢুকলে লাভবান হওয়া যাবে বলে অনেকে নতুন করে বাজারে ঢুকছেন। ’
রকিবুর রহমান বলেন, অতীতে বেশ কয়েকবার সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কাছ থেকে দায়িত্বহীন কথাবার্তায় বাজারে নেতিবাচক প্রভাব দেখা যায়। তাই দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কাছ থেকে দায়িত্বশীল কথাবার্তা আসা উচিত বলে মনে করেন তিনি। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের দৃষ্টিভঙ্গী পুঁজিবাজার বান্ধব থাকলে বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরতে বাধ্য বলেও মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস (এআইএস) বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, বাজারে লেনদেন একেবারে কমে যাওয়ার বিষয়টি ছিল অস্বাভাবিক।
গত বছর ব্যাংকগুলোর ব্যাপক তারল্য সংকট এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা এর প্রধান কারণ। এ ছাড়া সংশ্লিষ্টদের বেশ কিছু পদক্ষেপ বাস্তবায়িত না হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা বার বার আশাহত হয়েছেন।
তবে বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্প্রসারিত মুদ্রানীতি, কলমানি রেট কমে যাওয়া তারল্য সরবরাহ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া আসন্ন বাজেটে শেয়ারবাজার বান্ধব ফিসকল পলিসিসহ শেয়ারবাজারের জন্য ইনসেনটিভ বিশেষ বরাদ্দ থাকতে পারে। এতে করে কিছুটা হলেও বিনিয়োগকারীদের জন্য স্বস্তি বয়ে আনবে।
মার্কেট মেকার হিসেবে পরিচিত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী যেমন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের মুভমেন্ট বাড়াতে পারে। আর তাদেরকে অনুসরণ করে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে আসবে।
তবে তাদের এই মুভমেন্ট যাতে করে স্পেকিউলেটিভ বা ফটকামূলক না হয়ে স্থিতিশীলমূলক হয়। তুলনামূলক খারাপ শেয়ারের দাম না বেড়ে যাতে ভাল শেয়ারের দাম বাড়ে সেদিকে সংশ্লিষ্টদের খেয়াল রাখতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারী মো. আলমগীর হোসন প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে শেয়ারবাজারে অনেক কম লেনদেন হচ্ছিল।
হঠাত্ করে লেনদেন বেড়ে গেছে। এই সুযোগে কারসাজিচক্র আবার বাজারে সক্রিয় হয়ে বাজার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এমনকি সরকারি কয়েকটি ব্যাংকের বাজার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার খবরও আমাদের কাছে রয়েছে। এটা যদি হয় তাহলে তা বাজারের জন্য ক্ষতির কারণ হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান উর রশিদ চৌধুরী প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, বাজারের প্রধান সমস্যা হলো বিনিয়োগকারীদের আস্থা।
বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে লেনদেন বাড়ার বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিনিয়োগকারীদের এই নেতা। তিনি বলেন, আসন্ন বাজেটকে সামনে রেখে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হওয়ায় বাজারে তার ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায়। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ অব্যাহত রাখারও আহ্বান জানান তিনি। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।