maanush84@yahoo.co.uk
আমি র্যাবের কর্মকর্তা। আমার ওষ্ঠ্যে একটিমাত্রই ডায়লগ ছিল- ধর তক্তা মার পেরেক। ইতিপূর্বে আমি টেলিভিশনে একান্নবর্তী নাটাকখানা অবলোকন করিতাম। কিন্তু আমার স্ত্রী গুলশান এভিনিউ নাটকখানা অত্যাধিক ভালবাসে বিধায় এখন আমার আর উহা অবলোকন করা হয় না। র্যাবের কর্মকর্তা হইলেও শ্বশুরালয়ের আশ্রয়ে থাকিয়া স্ত্রীর সহিত কলহ করিবার দুঃসাহস আমার নাই।
একদা নিজের উপর আমার বিশ্বাসের কোন ত্রুটি ছিল না। আমি নিশ্চিত জানিতাম, শীর্ষ সন্ত্রাসীদিগকে যেমন করিয়া ক্রসফায়ারে ফেলিয়াছি ঐ রূপে সুন্দরী স্ত্রী'কেও বশে আনিব নতুবা চিরতরে অবশ করিয়া ফেলিব। মানু এ সংসারে পশ্চাতে পড়িয়া থাকিতে পারে না।
র্যাবের কর্মকর্তা হইতে যা দেরি, আমার স্ত্রীর সহিত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হইতে অতঃপর আমার শ্বশুরালয়ে আস্তানা গাড়িতে অধিক বিলম্ব হইল না।
উজ্জ্বল শিখা হইতে যেমন করিয়া কজ্জলপাত হয় তেমনি করিয়া আমার স্ত্রীর মুখাগ্নি হইতেও নানাবিধ কালিমা বাহির হইত।
সেটাতে অবশ্য আমার কাজের বিশেষ ব্যাঘাত ঘটিত না; কারণ র্যাব কর্মকর্তারা কখনই কোন কিছু কানে নেন না - তাহাতে আমার স্ত্রীর মুখরা মুখ শত মৌখিকতায় মুখরিত হইয়া উঠিত। আমাকে শ্বশুরালয় হইতে উৎখাত করিবার জন্য বলিত, “তুমি যে এমন করিয়া শ্বশুরালয়ে ঘর জামাই হইয়া থাক তোমার লজ্জা করে না?” আমাকে তাহাকে বলিতাম, “লজ্জা মানুষের ভুসন, র্যাবেদের উহা মানায় না। ”
স্ত্রী বলিত, “তোর পরনের ভুসন খুলে রাস্তায় ছেড়ে দিব মুখ পোড়া মিনসে। ”
র্যাব লাইনে আমি সকলের সেরা হইব, একটা নাম রাখিব এ প্রতিজ্ঞা আমার দৃঢ় ছিল। সে কারণে আমার কাষ্টডিতে যাহাকে পাইতাম তাহাকেই ক্রসফায়ার করিতে বাকি রাখি নাই।
কিন্তু তথাপি মনের অসন্তোষ এবং অধীরতা বাড়িতে লাগিল।
কারণ , আমাদের দেশের অপরাধীগুলা ভীরু এবং নির্বোধ , অপরাধগুলা নির্জীব এবং সরল , তাহার মধ্যে দুরূহতা দুর্গমতা কিছুই নাই । আমাদের দেশের খুনী নররক্তপাতের উৎকট উত্তেজনা কোনোমতেই নিজের মধ্যে সংবরণ করিতে পারে না । জালিয়াত যে জাল বিস্তার করে তাহাতে অনতিবিলম্বে নিজেই আপাদমস্তক জড়াইয়া পড়ে , অপরাধব্যূহ হইতে নির্গমনের কূটকৌশল সে কিছুই জানে না । তাহার পরেও ইহারা কিরূপে জানি ছাড়া পাইয়া যায়।
এইরূপ আহাম্মক টাইপ অপরাধীকুলকলঙ্ক কিরূপে পার পাইয়া যায় ভাবিয়া ভাবিয়া একদা বিনিদ্র রজনী পার করিতেছলাম। হেনকালে খুটখাট শব্দে সচকিত হইয়া উঠিলাম। আড় নেত্রে চাহিয়া দেখি আমার স্বীয় স্ত্রী আমারই পকেট কাটিতেছে। আমার ভিতরের স্ত্রৈণ আমিরে পদদলিত হঠাৎ করিয়াই ঘুমন্ত র্যাব জাগিয়া উঠিল। তারস্বরে বলিয়া উঠিলাম, “হ্যান্ডস আপ, আঈন নিজের হাতে তুলে নিবেন না।
” জবাবে আমার স্ত্রী মুচকি হাসিয়া আমার বাম হাতে পাঁচশত টাকার এক খানা নোট গুঁজিয়া দিয়া বলিল, “ফেল কড়ি মাখ তেল। ”
এতক্ষণে আমার নিকট সকল রহস্যের জাল খোলাসা হইল। মৃদু হাসিয়া নাকে তৈল দিয়া বাকি রাত্রিটুকু ঘুমাইবার প্রস্তুতি নিলাম।
এখন আমার ওষ্ঠ্যে দুইটি ডায়লগ, “ফেল কড়ি মাখ তেল নইলে ধর তক্তা মার পেরেক।
*www.amrabomdhu.com এ পুর্ব প্রকাশিত
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।