আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফানপোস্ট: কেজিতে পড়ার সময়কার দুর্দান্ত ২টা চাপাবাজি

My scars remind me that the past is real, I tear my heart open just to feel........

জীবনে মাত্র ৪ জায়গায় পড়েছি। শুরু করেছিলাম বাসার পাশেই এক কেজি-তে। সেখানেই ক্লাশ থ্রী তে পড়ার সময় ক্লাশের দুই বালক দুইটা কঠিন চাপাবাজি করেছিল, একটায় ধরা খেয়েছিলাম ক্লাশের বাদবাকি সচেতন বালকেরা, যারা নারী-অধিকার এবং নারী-নির্যাতন সম্পর্কে সদাসচেতন; আর বাকিটাতে আমি একা; পুরা আবুল বইনা গেছিলাম গো যাউক শুনা যাক কাহিনী দুইটা! চাপাবাজি নং ১: ক্লাশ থ্রী-এর শেষের দিকের কথা। ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে, প্রতিটা পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে ক্লাশের সবাই একসাথে কথাটথা বলি,পরীক্ষা ভাল হয় নাই, সামনের ছেলেটা অথবা মেয়েটা ডাকলেও তাকায় না, পাশে ঐ ক্লাশের একটা ভোম্বল দাশ বসছে, ইত্যাদি, ইত্যাদি। ২টা পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর রবিন আমাদের নামের এক ক্লাশমেট কয়েকজনকে ডেকে বলল 'সুমনের তো লক্ষণ ভাল না।

ও ঠিক করছে পরীক্ষা যেদিন শেষ হবে, সেদিন জিরো পয়েন্টের সামনে তেড়ী, চশমু, শাবনূর আর পপিরে ধরবে। ধরে ওদের গালে গুলতি দিয়ে ঢিল ছুড়বে, আর যেকোন একজনকে চোকা পেন্সিল দিয়ে গালে গর্ত করে দেবে। ও মনে হয়না একা থাকবে, সাথে মুন্সী, নিজাম ওরাও থাকবে। ' তো আমাদের যে কয়জনকে বলল কথাটা, সবাই ধরলাম ওকে 'যা ভুয়া খবর দেয়ার জায়গা পাস না! কে বলসে এগুলো তোরে?' তো রবিন বলল, 'ওদের সবাই গত কয়েকদিন ধরে রোজ মেয়েগুলোকে ফলো করছে বাসা পর্যন্ত, পেছন পেছন যায়, ফিসফাস করে কি জানি বলে কানেকানে, আর কাল দেখলাম মুন্সী গুলতি কিনছে ৩টা। আর চোকা পেন্সিল দিয়ে যে গুতাবে এটা সুমন নিজে বলছে আমারে, কারে গুতাবে জানতে চেয়েছিলাম, হাসছে- নাম বলে নাই।

' তো আমরা সচেতন বালকেরা এবার একটু চিন্তায় পড়ে গেলাম। আসলেই তো ঘটনা কি? তাও দুয়েকজন বলছিল, যাহ বেটা গুলবাজি করিস না, তখন রবিন শেষ ঢিলটা মারল, 'তোরাই বল, ওদের কারো গাল যদি গর্ত বানিয়ে দেয়, ওদের মা ওদের বকবে না? ওদের কি পরে আর কেউ দেখলে সুন্দর বলবে?' ব্যাপক রিএ্যাকশন হল এই কথায়, আসলেই তো, তারউপর সচেতন বালকদের মাঝে ১জন আবার তেড়ীকে পছন্দ করত! নাহ, অবশ্যই একটা কিছু করা দরকার, আমরা না করলে রাস্তাঘাটে মেয়েদের সুরক্ষায় কারা এগিয়ে আসবে? প্ল্যানে বসলাম কি করা যায়। পরেরদিন রবিন নতুন খবর নিয়ে এল, ওদের সাথে ক্লাশে শেষের দিকের আরো কয়েকটা ছেলে যোগ দিয়েছে। এদের মাঝে একটা ছেলে আসলেই একটু ষন্ডা টাইপের ছিল, ওর কাছে শুনে যারা দোটানায় ছিলাম তারাও বিশ্বাস করে ফেললাম। ঠিক করলাম শেষ পরীক্ষার দিন, পরীক্ষা শেষ হলে সবাই মেয়েগুলোকে গার্ড দিয়ে বাসায় পৌছে দিয়ে আসব, প্রয়োজনে মারামারি করব, কিন্তু মেয়েগুলোর গায়ে ফুলের টোকাটাও মারতে দেব না।

এখন সমস্যা হল, ওরা মোট হয়েছে ৮ জন, আমরা আছি মোট ৫ জন। তাহলে পারব কিভাবে? তো সচেতনদের একজন বুদ্ধি দিল ক্লাশ টুতে ইলিয়াস কাঞ্চন আছে, ওর সাথে মারামারিতে ক্লাশ ফাইভের ছেলেরাও পারবে না। ওকে বললে ও আমাদের সাথে আসবে ঐদিন। ভাল কথা আমরা মিটিং ডাকলাম ওকে সহ, ওকে খুলে বললাম সব কিছু; শুনে ও নিজেই বলল- 'ভাইয়া আমি থাকতে কোন টেনশন নাই, আমি ঐটাকে ২লাথি মেরে সোজা করে দেব। ' অস্ত্রশস্ত্র নিয়েও কথাবার্তা হল, ঠিক করলাম ঐদিন সবাই পরীক্ষার হলে ক্লিপবোর্ড নিয়ে আসব নাহলে গুলতির ঢিল ঠেকাতে পারব না, আর আমরা পেটানোর জন্য কাঠের স্কেল নিয়ে আসব।

কই যে ভাগবে ওরা মার খেয়ে। তারপর ফিল্ডপ্ল্যান সেরে ফেললাম কে কাকে ধরবে। আমি নিলাম সবচেয়ে দুর্বল, কাঠির মত পাতলা ছিল যে, তাকে; আর মিডিয়াম সাইজের আরেকটাকে! মোট ৬জন হয়েছিলাম, তাই একজনকে আবার ব্যাকআপ রেখেছিলাম, ওর কাজ ছিল কারো অবস্হা বেশি খারাপ দেখলে তাকে সাহায্য করতে যেন যায়! পুরা হলিউডি একশন মুভি! যাই হোক, ফাইনাল পরীক্ষা তো চলছে। শেষ পরীক্ষার দিন আমরা ৪জন চরম উত্তেজিত (রবিন আর জুনিয়র ছেলেটার কথা বললাম না), ক্লাশ টু-এর পরীক্ষা ১দিন আগে শেষ, ই.কা. স্কুলের গেটে আমাদের পরীক্ষা শুরুর আগে থেকে দাড়িয়ে আছে- একসাথে একশনে যাব। পরীক্ষা শেষে রবিন বলল, 'আমার একটু বাথরুম পেয়েছে, আমি একদৌড়ে যাব আর আসব, তোরা এগুতে থাক ওদের পেছন পেছন।

' মনেমনে কয়েকটা গালি দিয়ে বাকি ৫ জন (ই.কা. সহ) গেটের বাইরে যেয়ে দাড়ালাম, একহাতে ক্লিপবোর্ড আর এক হাতে স্কেল নিয়ে......ঐ যে ক্লাশের সবাই বের হওয়া শুরু করেছে গেট দিয়ে, আজকে একেবারে...........। ওমা, ষন্ডাটা দেখি সুমনের সাথে কথাই বলল না। সুমনরেও দেখি ওর মা নিতে এসেছে, ওকে নিয়ে বেবি ট্যাক্সি করে কোথায় জানি রওয়ানা হয়ে গেল! আমরা বুঝলাম কোথাও সিরিয়াস একটা গোলমাল আছে, তবে কি অন্য কেউ মারবে মেয়েগুলোকে? নাআআআআআ......... ইয়াল্লা, ক্লাশের সব মেয়ে দেখি একসাথে ক্লাশেরই আরেক মেয়ের বাসায় যায়, আমাদেরকেও ডেকে বলল চল, আন্টি পিঠা খাওয়াবেন! ষন্ডাটাকে দেখলাম আরেকটা ছেলের সাথে আইসক্রীম খেতে খেতে আরেক দিকে হাটা ধরল। তখন বুঝলাম ঘটনা। শালা মজা করেছে! ঠিক করলাম আজকে ওকেই গদা দেব! আধঘন্টা পরে দেখি ও ওর মায়ের সাথে বের হচ্ছে।

আমাদের একবার হাত নাড়িয়ে টা টা দিল। পুনশ্চ: পরের বছর রবিন আর ঐ স্কুলে পড়েনি, মনিপুর স্কুলে ভর্তি হয়েছিল, বাসাও চেন্জ করে ফেলেছিল ফাইনাল পরীক্ষার কয়েকদিন পরেই। আর আমাদের ৪জনের একজন অনেকদিন ভুলতে পারেনি ঐ ধোঁকা খাওয়ার ঘটনা, ওর মনে অনেক আশা ছিল রাস্তায় মারামারিটা হলে তেড়ী হয়ত ওকে ভালবেসে ফেলত! চাপাবাজি নং ২: এটার শিকার আমি একা থ্রীতে পড়ার সময় এক ছেলেকে প্রায়ই ব্ল্যাকমেইল করতাম; ও যে রেগুলার হোমওয়ার্ক করে না বলে কান ধরে প্রায়ই দাড়িয়ে থাকে ওর বাসায় জানিয়ে দেব। তো ও আমাকে খুশি করতে একটা ছোট ইলেক্ট্রিক মটর দিয়ে বলল, এটা দিয়ে ফ্যান বানায়, জাহাজও এটা দিয়ে চলে। আমিও বাসায় নিয়ে টিনের কৌটার ঢাকনা ফুটা করে ফ্যানের ব্লেড বানিয়ে চালালাম কয়েকদিন।

তখন টিভিতে একটা সিরিয়াল চলত, বিটিভিতে, কি উইজার্ড জানি নাম। ঐ সিরিয়ালের এক বামন কাঁধের একটা ব্যাগে দুনিয়ার রিমোটওয়ালা খেলনা নিয়ে ঘুরত, যেকোন বিপদে ঐ খেলনাগুলো ইউজ করেই সে বেচে যেত। তো একদিন ঐ সিরিয়ালেই দেখলাম, এরকম ছোট একটা মটর দিয়েই সে মুটামুটি সাইজের একটা হেলিকপ্টার বানিয়ে ফেলেছে, সেটা দিয়ে কিছুটা ভারি একটা জিনিস সে আনানেওয়াও করতে পারল। পরেরদিন ক্লাশে আমার ঐ ফ্রেন্ডকে বললাম, আমাদের একটা বড় মটর থাকলে আমরা তো হেলিকপ্টারই বানাতে পারব। তো গিটঠু আমাকে বলল, এরকম একটা অনেক বড় মটর ওর আছে, আমি বললে ও কয়েকদিনের মধ্যে কপ্টারটাই বানিয়ে ফেলতে পারবে।

আমিও এমন গাধা, ওর কথা বিশ্বাস করেছিলাম। ওকে বললাম, শুরু কর, দেখা যাক কয় দিন লাগে। ২সপ্তাহ পরে ওকে একদিন ধরলাম, কিরে হেলিকপ্টারের খবর কি? কাজ কতদূর? ও বলল, স্কুল থেকে বাসায় ফিরে খুব একটা সময় পাচ্ছে না বিকালে, তাই কাজ স্লো আগাচ্ছে! আর ২দিন লাগবে। ভেরি গুড। ২দিন পরে ওকে বললাম কিরে শেষ? ও বলল, প্রায় শেষ, খালি বাইরে রং আর সামনের গ্লাসটা লাগান বাকি।

আমি কালকে উড়িয়েছিলাম, কোন সমস্যা দেখিনি। তো আমি ওকে বললাম তাহলে তুই এক কাজ কর, আজকে বিকালে ৫.৩০ এ আমি ছাদে থাকব, তুই এসে আমাকে উঠিয়ে নিস, একটু উড়ে দেখি কেমন লাগে। ও বলল, ঠিক আছে। আমি আবার বলে দিলাম নতুন ব্যাটারি (!) লাগিয়ে নিস, নাইলে ক্র্যাশ করে এত উপর থেকে পড়ল বাচব না। বিকালে ছাদে ক্যাপ পরে উঠলাম (সিনেমাতে দেখতাম সবাই কপ্টারে ক্যাপ পরে উঠে)।

ছাদে উঠে সবাইকে আবার বললাম, আমার এক ফ্রেন্ড হেলিকপ্টার বানিয়েছে, আমরা সেটা চড়ে একটু ঘুরতে বের হব আজকে। ৫.৩০ বাজলে ও আমাকে নিতে আসবে কপ্টার সহ। শুনে সবকয়জন মুখ টিপে হাসল। আমার রাগে পিত্তি জ্বলে গেল কিন্তু কিছু বললাম না। হেলিকপ্টারে উঠলেই সবাই বুঝবে আমি আসলে কে, হুহ! ৫.৩০ বাজল, ৬টা বাজল, শালার আসার নাম নাই।

৬.৩০ সময় যখন মাগরিবের আজান দিল তখন আম্মা বাসায় নিয়ে গেল ছাদ থেকে। রাগে, দুঃখে, ক্ষোভে আমি তখন কাতর, কতজনের হাসি শুনতে হল শালার জন্য। বানানো না হলে বলত, আরো কয়েকদিন পরেই না হয় উঠতাম! পরেরদিন স্কুলে গিয়ে ওকে ধরলাম, 'আসিসনি কেন? মানুষের টিটকারি খেয়ে আমার অবস্হা কাহিল'। ব্যাটার উত্তর কি, 'আরে কালকে আসতাম ,বাসায় নতুন ব্যাটারি ছিলনা, তাই হেলিকপ্টার স্টার্ট দিতে পারিনি। আজকে অবশ্যই আসব।

' সেদিনও যথারীতি দাড়িয়ে থাকলাম, আসল না। বি.দ্র: কয়েকদিন আগে কিন্ডারগার্টেনের এক ফ্রেন্ড স্বীকার করেছে, সেও মনে করেছিল হেলিকপ্টার আসলেই আসবে, সেও নাকি সেইদিন কপ্টার দেখার জন্যই ছাদে ওয়েট করছিল *** প্রত্যেকটা নামই ছদ্মনাম। আসল নাম বলে গণধোলাই খেতে চাইনা!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.