জীবনের এত গভীরে প্রবেশ করে কি লাভ, জীবনটা হউক হুমায়ুন আহমেদের সাহিত্যের মত !
যুদ্ধাপরাধের বদলে সরকার এবার মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করবে। বাংলাদেশের প্রায় সব সংবাদমাধ্যম এ নিয়ে সংবাদ ও মন্তব্য প্রতিবেদন প্রকাশ করে যাচ্ছে। যুদ্ধাপরাধ বা মানবতা বিরোধীরা যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে সেজন্য সরকারের কর্তাব্যক্তিরা শক্ত সব বক্তব্য দিচ্ছেন। অবশ্য মানবতাবিরোধী অপরাধের সম্ভাব্য অভিযুক্ত জামায়াত ইসলামীর পক্ষ থেকে জোর দিয়ে বলা হয়েছে একজন জামায়াত নেতাও পালিয়ে যাবে না। এ বিষয়ে তারা বরাবরের মতো নির্দোষ দাবি করে পালানোর প্রশ্ন আসে না বলেও মন্তব্য করেছে।
গত ২৪ মার্চ দিগন্ত মিডিয়া কর্পোরেশানের মালিক ও জামায়াত ইসলামীর কার্যকরি পরিষদ সদস্য মীর কাশেম আলী সৌদি আরব গেছেন। এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমগুলো একের পর এক সংবাদ ছাপিয়েছে। তাদের বক্তব্য কিভাবে এ যুদ্ধাপরাধী পালিয়ে গেল। তিনি বিমান বন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ দিয়ে দেশ ত্যাগ করেন। সংবাদ মাধ্যমগুলো বিমান কর্তৃপক্ষের মধ্যে যুদ্ধাপরাধী বড় অফিসার ঘাপটি মেরে আছে বলে দাবি করেছে।
মীর কাশেম আলীর প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বিদেশ সফরের ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। ওমরা হজ্জ্ব পালন এবং করপোরেশনের টিভি চ্যানেল দিগন্ত টিভির অনুষ্ঠান নিয়ে আলজাজিরার সঙ্গে আলোচনার জন্য তিনি সৌদি আরব গিয়েছেন বলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। তারা আরো দাবি করেন ওমরা হজ্জ্ব পালন এবং ব্যবসায়িক কর্মকান্ড শেষে মীর কাশেম আলী দেশে ফিরবেন।
মীর কাশেম আলী বিদেশে কোথায় কোথায় প্রোগ্রাম করছেন এ নিয়ে আমাদের সময় নিয়মিত খবর প্রচার করেছে। ৬ এপ্রিল পত্রিকাটিতে সৌদি আরব দূতাবাসের একটি ব্যাখ্যা দেখা গেল।
দূতাবাসের পক্ষ থেকে সৌদি সরকার নিয়ে মিডিয়ার মিথ্যাচারের প্রতিবাদ করে সঠিক সংবাদ পরিবেশনের পরামর্শ দেয়া হয়। দূতাবাসের ব্যাখ্যা উদ্বৃতি করে পত্রিকাটি লিখেছে, ওমরাহ পালন ও সৌদি ব্যবসায়িদের আমন্ত্রণে সৌদি আরব গেছেন জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলী। এ সময় সৌদি সরকারের কোনো প্রতিনিধির সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করেন নি। গত ৩ এপ্রিল আমাদের সময়ে মীর কাশেম আলীর সৌদি আরব সফর নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের ব্যাখ্যায় এসব তথ্য দিয়েছে সৌদি দূতাবাস।
আমার দেশ এদিন, ‘যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে অপপ্রচার; সৌদি আরবের কড়া প্রতিবাদ’ শিরোণামে একটি সংবাদ ছেপেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে সৌদি আরবকে জড়িয়ে অপপ্রচারের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে সৌদি দূতাবাস। সরকার সমর্থক কিছু পত্রিকা এবং সরকারের দায়িত্বশীল কয়েকজন ব্যক্তি এ অপপ্রচারে নেমেছে। এদিকে ওইসব মিডিয়া ব্যক্তিদের দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্যে বাংলাদেশের সঙ্গে সৌদি আরবসহ মুসলিম বিশ্বের সম্পর্কে টানাপড়েনের আশংকা দেখা দিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দিপু মনি ও শ্রম কর্মসংস্থান প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে শ্রমিক প্রেরণ কমে যাওয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের ইসলামী দলগুলো ও যুদ্ধাপরাধীদের সংশ্লিষ্ট করে এর আগে বক্তব্য রেখেছেন। গতকালও মন্ত্রিসভার বৈঠকে যুদ্ধাপরাধের বিচারে সৌদি আরব বাধা দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।
হিসাব কষলে মুজাহিদ মিছা! প্রথম আলোর শেষ পৃষ্টার একটি শিরোণাম। জামায়াতের সেক্রেটারি আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের একটি বক্তব্যকে হিসাব কষে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে পত্রিকাটি এ প্রতিবেদনের মাধ্যমে। মুজাহিদ দাবি করেছেন চারদলীয় জোটের আমলে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। প্রথম আলো নিজ উদ্যোগে হিসাব করে দেখিয়েছে মুজাহিদ রাজনীতির মাঠে মিথ্যা বক্তব্য দিয়েছেন।
আহমদ আকবর সোবহান আর প্রথম আলোর মধ্যে আবারো শুরু হয়ে নিলর্জ্জ প্রতিযোগিতা।
আগে আহমদ আকবর সোবহানের হাতে কোনো সংবাদ মাধ্যম ছিল না। এখন দু‘দুটি সংবাদ পত্র তার মালিকানাধীন। একটি বিশাল কলেবরের পত্রিকা কালের কণ্ঠ। এ পত্রিকা সবচেয়ে বেশি পাতা দিয়ে থাকে। অন্যদিকে পত্রিকাটির কাগজের মান অন্য পত্রিকার চেয়ে অনেক ভালো।
বেশি কাগজ আর রংবেরংয়ের ছবি নিয়ে পত্রিকাটি বাজার পেয়েছে। প্রথম শ্রেণীর কয়েকটি দৈনিকের মধ্যে এটিও একটি। আহমদ আকবরের মালিকানাধীন অন্য পত্রিকাটির নাম বাংলাদেশ প্রতিদিন। এটি বাজারে সবচেয়ে কম দামের পত্রিকা। মাত্র দুই টাকায় ১২ পৃষ্টার পত্রিকাটির বাজার কাটতিও বেশ ভালো।
আগে প্রথম আলো একচেটিয়া আহমদ আকবর সোবহানের বিরুদ্ধে লিখেছে। অন্যদিকে বসুন্ধরার মালিক আহমদ আকবর অন্য জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন দিয়ে এবং নানান পোষ্টার ছাপিয়ে প্রথম আলো এবং পত্রিকাটির মালিক প্রতিষ্ঠান ট্রান্সকমের মালিক লতিফুর রহমানের বিরুদ্ধে লড়েছে। কয়দিন আগে ঢাকায় এক প্রভাবশালী ওয়ার্ড কমিশনার খুন হয়েছে। প্রথম আলো রিপোর্ট করেছে আহমদ আকবর সোবহানকে এই খুন সূত্রে গোয়েন্দারা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছে। এর পরদিন থেকে বসুন্ধরার মালিকানাধীন দুটি পত্রিকায় গড়ে রিপোর্ট শুরু হয়ে যায় প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান এবং ট্রান্সকমের মালিক লতিফুর রহমানের বিরুদ্ধে।
৭ এপ্রিলের কালের কণ্ঠের প্রথম পাতায় বক্স করে লতিফুর রহমানের ছবি দিয়ে তার দুর্নীতির খবর ছাপে। শিরোণাম করেছে, হাতেনাতে ধরা পড়ে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেল ট্রান্সকম।
প্রথম আলো দেশের সবচেয়ে বড় পত্রিকা। বেশ কয়েক বছর ধরে পত্রিকাটি একচেটিয়া অবস্থানে রয়েছে। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পত্রিকাটির রিপোর্ট দেশের জন্য ভালো কি না খারাপ করেছে সেটা মন্তব্য না করলেও একটা বিষয় পরিস্কার এ পত্রিকাটির মালিকের ব্যবসা এবং যাবতীয় আয় ছিল নিরাপদ।
কালের কণ্ঠ প্রথম আলোর সেই একচেটিয়া সুবিধার মধ্যে ভাগ বসিয়েছে। শেষের পত্রিকাটি এরই মধ্যে পার্টিজান প্রতিবেদন দিয়ে জনগণের মাঝে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারালেও প্রথম আলোকে নির্ভর করে যারা দুর্নীতি করার সুযোগ পেত সেটা কিছুটা হলেও বিনষ্ট করেছে।
ট্রান্সকমের মালিকের বিরুদ্ধে করা ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রান্সকম গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ‘ট্রান্সকম ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড’ মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য এনে শুল্ক ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে ধরা পড়েছে রাজস্ব বিভাগের কাছে। পরে তারা সরকারের প্রাপ্য শুল্ক পরিশোধ করে আর কখনো এমন কাজ করবে না বলে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছে। ট্রান্সকমের চেয়ারম্যানের ছবি এবং হেডলাইন এমনভাবে দেয়া হয়েছে তাতে মনে হচ্ছে লতিফুর রহমান নিজেই মুচলেকা দিয়ে মুক্তি পেয়েছেন।
ঢাকার কমিশনার হত্যা এবং এ নিয়ে আহমদ আকবরের সম্পৃক্ততা নিয়ে করা প্রতিবেদনটি প্রথম আলো যেভাবে কাভারেজ দিয়েছে তাকে আতিশয্য বলা যায়। খবরটি তারা ছবিসহ প্রথম পাতার উপরে তিন কলাম জায়গা জুড়ে দেয়। এরপরদিন থেকে কালের কণ্ঠ এবং বাংলাদেশ প্রতিদিন তারচেয়ে জোরকদমে প্রথম আলো এবং ট্রান্সকমের বিরুদ্ধে খবর প্রকাশ করছে। এর ফলে বাংলাদেশের আস্থাহীন মিডিয়ার উপর মানুষের আস্থা আরো কমছে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন মহিলা কাউন্সিলর ফেরদৌস বেগম মুন্নি।
খবরটি দিয়েছে যুগান্তর। পত্রিকাটি জানায়, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নগরীর ২ নম্বর জালালাবাদ ওয়ার্ড আয়োজিত সদস্য নবায়ন সভা দু‘পক্ষের হাতাহাতিতে পণ্ড হয়ে যায়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন মেয়র মহিউদ্দিন। স্থানীয় কয়েকজন নেতা সভায় উপস্থিত হলে মেয়র মুন্নিকে মঞ্চের চেয়ার ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেন। মুন্নি তাতে আপত্তি জানালে মেয়র তাকে ধাক্কা দিয়ে তুলে দেন।
এ নিয়ে দুপক্ষের হাতাহাতির সূত্রপাত হয়ে সভাটি পন্ড হয়ে যায়।
এদিন আমার দেশের পাতায় পত্রিকাটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান একটি মন্তব্য প্রতিবেদন লিখেছেন। শিরোণাম ছিল মোটরসাইকেল আরোহীরা রক্ষী না আততায়ী। তিনি জানিয়েছেন বেশ কয়েকজোড়া মোটরসাইকেল প্রতিদিন আসা যাওয়ার পথে তাকে অনুসরণ করে। এ নিয়ে তিনি ওই প্রতিবেদনে হাসিনা সরকারের কড়া সমালোচনা করেন।
পত্রিকাটির প্রথম পাতায় দুটি সংবাদ লক্ষ্যণীয়। একটি যুদ্ধাপরাধ নিয়ে। পত্রিকাটি লিখেছে, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সাত মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা, লুটপাট, ধর্ষণ ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে ময়মনসিংহ ফুলবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য অ্যডভোকেট মুসলেম উদ্দিনসহ ১৪ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পত্রিকাটি আরেকটি খবরের শিরোনাম, ‘প্রধানমন্ত্রী, প্রতিদিন দুই ঘন্টা লোডশেডিং সহ্য করুন। ’ এটি সিটিজেন রাইটস মুভমেন্ট নামক একটি নাগরিক ফোরামের আহবান।
সরকারি সব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এজন্য মন্ত্রী এমপিদের বিদ্যুতের দ্বৈত লাইন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীও এ সুযোগ গ্রহণ করেন। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। সরকারের এ প্রভাবশালী মন্ত্রী নিজের বাসায় বিদ্যুতের দ্বৈত সংযোগ নেননি।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা দ্বৈত সংযোগের প্রস্তাব নিয়ে গেলে তাতে তিনি সম্মতি দেন নি। খবরটি ৭ এপ্রিলের মানব জমিনে প্রথম পাতায় গুরুত্বসহকারে ছাপা হয়েছে। এরপরদিনই বদরুদ্দিন উমর নগরজীবনের বিদ্যুৎ, গ্যাস সঙ্কট নিয়ে আমার দেশে লেখা এক নিবন্ধে মতিয়ার একাজটিকে অত্যন্ত স্বাভাবিক বলে আখ্যায়িত করেছেন। কিন্ত অন্য প্রভাবশালী মন্ত্রীরা নিজেদের ক্ষমতার অতিরিক্ত ব্যবহার করে যে অতিরিক্ত সুবিধা নিচ্ছেন সেটা অন্যায় বলে মত দিয়েছেন। বরং মতিয়া বিদ্যুতের দ্বৈত লাইনের সুবিধা না নিয়ে সঙ্গত কাজটি করেছেন।
এজন্য এমন বাহবা দেয়ার কিছু নেই বলে মত ব্যক্ত করেন তিনি।
প্রতিবাদের ভাষা যখন আত্মহনন! আমাদের সময়ের ৯ এপ্রিলের প্রথম পাতার এক কলাম একটি শিরোণাম। খবরটিতে লেখা হয়েছে, প্রতিদিন পত্রিকায় নারী নির্যাতনের সংবাদ থাকছে। তবে দেশে যে হারে নারী নির্যাতন হচ্ছে তার অর্ধেক খবরও পত্রিকায় আসেনা। (প্রকৃতপক্ষে নারী নির্যাতনের ১ শতাংশ খবরও পত্রিকায় আসে না, লেখকের অভিমত)।
অনেক নির্যাতনের কাহিনী চারদেয়ালের মধ্যে গুমড়ে মরে। অতীতে শুধু বিবাহিত নারীরা যৌতুক আর স্বামীর পরকীয়ার কারণে নির্যাতিত কিংবা খুন হতো। আমাদের সময়ের প্রতিবেদনটিতে বর্তমান সময়ে নারী নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্রটি তুলে ধরার চেষ্টা হলেও তার ভয়াবহতা সেভাবে প্রকাশ পায়নি।
যৌতুকের বলি নূরজাহান
এবার যৌতুকের বলি হলেন ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার এক গৃহবধূ। চরব্রাহ্মণদী গ্রামের নূরজাহানকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে পাষণ্ড স্বামী রাজ্জাক।
বর্বরোচিত নির্যাতন চালিয়ে হত্যার পর আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার নাটকও সাজানো হয়েছে। খুনি রাজ্জাক এবং তার আত্মীয়রা রীতিমতো নূরজাহানের আত্মীয়স্বজনদের হুমকি ধামকি দিয়েছে। পুলিশের সামনেই এই হুমকি ধামকির ঘটনা ঘটে। দুঃখজনক হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হত্যাকারিদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তারা বীরদর্পে চোখের সামনে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
যৌতুকের দাবিতে পাষণ্ড স্বামীদের এই উন্মাদ আচরণ এদেশে একটি স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এজন্য দুটো জিনিসকে প্রধানত দায়ী করা যায়। প্রথমত আমাদের নৈতিক অবক্ষয়, দ্বিতীয়ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বহীনতা। যতদিন না আমাদের সামাজিক নৈতিকবোধ এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে না যায় এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতেই থাকবে।
নূরজাহান হত্যা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে আমাদের সামাজিক অবক্ষয় কোন স্তরে গিয়ে পৌঁছেছে।
বিয়ের সময় স্বামী রাজ্জাককে যৌতুক হিসেবে একটি মোটর সাইকেল বুঝিয়ে দেয়া হয়। পূর্ব নির্ধারিত গহনাগাটিও দেয়া হয় হিসেব মতো। তারপরও সে বিয়ের অনুষ্ঠানে নগদ ৫০ হাজার টাকা দাবি করে বসে। এ নিয়ে হৈ হট্টগল হয়। বিয়ের মাত্র দুই মাসের মধ্যে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে অসংখ্যবার নির্যাতন করা হয়েছে।
বিয়ের প্রথমদিকের সময়গুলো স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা ও হৃদ্যতা গড়ে ওঠার সময়। সম্পর্কের উষ্ণতা ভালোবাসার কারণে সাধারণত সংসারের অভাব অনটন মানুষ ভুলেই যায়। কিন্তু আমাদের কি হলো, সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেল নগদ অর্থ। ভালোবাসা হৃদয়ের টান সবকিছুর উর্দ্ধে উঠে গেল অর্থ। অর্থলোভী কেউ কেউ নিজের সম্পত্তি বাড়াতে শ্বশুরবাড়ির থেকে অর্থ সম্পদ চায়।
আবার আছে রোজি রোজগার না করে শ্বশুরের সম্পদ দিয়ে অলস জীব কাটাতে চায়। কেউ কেউ আছে যৌতুকের টাকা দিয়ে মাদক সেবনের মতো ক্ষতিকর কাজ করে থাকে। এর জন্য সামাজিক সচেতনতা নেই। নেই কোন কার্যকর সামাজিক আন্দোলন।
ঘুরে ফিরে যৌতুকের বলি গৃহবধূর মিছিল দীর্ঘতর হচ্ছে।
আমাদের আইন, শাসন ও বিচার ব্যবস্থা যেন এর নীরব দর্শক। যৌতুক নিয়ে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনা ঘটলে দোষি ব্যক্তির শাস্তির বিষয়টি বেশিরভাগ সময়ই গৌণ হয়ে যায়। প্রথমত যারা এ ধরনের বড় অপরাধ করে তারা স্থানীয় রাজনৈতিক আশ্রয় পায়। এ কারণে পুলিশ এ নিয়ে সক্রিয় হতে চায় না। অন্যদিকে দেশের পুলিশের মধ্যে দুর্নীতির এমন বিস্তার ঘটেছে তারা এ ঘটনাগুলো নিজেদের উদ্বৃত্ত আয়ের সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করে।
হত্যাকারিরা রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়ার পাশাপাশি অর্থকড়ি দিয়ে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে। আর কোন নূরজাহান যৌতুকের বলি হোক তা কেউই চায় না। এজন্য দরকার খুনি ও তার সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। স্থানীয় প্রশাসন গুরুত্বের সাথে হত্যাকান্ডের বিষয়টি নিলে এটি সারা দেশের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে।
টেন্ডারের আরেক বলি
টেন্ডারবাজির সর্বশেষ রক্তাক্ত নজির দেখা গেল উত্তরবঙ্গের পঞ্চগড়ে।
টেন্ডার দখল করতে গিয়ে ক্ষমতাসীন দলের একটি দল ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপুরি কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষকে। গুরুতর জখম হয়েছে আরো ১০ জন। একইদিন উত্তরবঙ্গের অপরজেলা দিনাজপুরে টেন্ডার দখলকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দলের উপদলগুলোর মধ্যে সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছে। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষকলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগসহ ক্ষমতাসীন দলের অসংখ্য দল উপদল। যেখানে পেশিশক্তি যার বেশি সে সেখানকার ভাগ্য নিয়ন্ত্রা।
অন্য কেউ ভাগ বসাতে চাইলে এর সমাধান হয় রক্ত দিয়ে। সারাদেশে একই পরিস্থিতি। সরকারের পক্ষ থেকে এসব নিয়ন্ত্রণের সস্তা বুলির অভাব নেই। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সব মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী এসবের বিরদ্ধে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করতে কার্পণ্য করেন না কেউ। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সরকারি সম্পত্তি লুণ্ঠনে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে রক্তের হোলিখেলা মোটেও কমছে না।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার ১০টি খাস পুকুর ইজারার শিডিউল জমা দেয়া নিয়ে গত বৃহস্পতিবার সংঘর্ষে ফারুক হোসেন (১৮) নামে এক ছাত্রলীগ কর্মী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের একটি অংশ জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার বাড়ি ভাঙচুর করেছে। ঘটনার জের ধরে তেঁতুলিয়া-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। ক্ষমতাসীন দলের হানাহানি নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না। আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষের জীবন।
আওয়ামী লীগ নেতা আবু তোয়াবুর রহমান, যুবলীগ নেতা জুলফিকার ও সেলিম দীর্ঘদিন ধরে টেন্ডারসহ সর্বপ্রকার অবৈধ সরকারি সুযোগ-সুবিধা একচেটিয়া ভোগ করে আসছেন। তারাই পঞ্চগড়ের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। সদর উপজেলার ১০টি খাস পুকুরও তারা লিজ নেয়ার পায়তারা করছিল। যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একটি অংশ তাদের একচেটিয়া অবৈধ কর্মকান্ডে ভাগ বসাতে চাইলে সংঘর্ষ ও হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। একইদিন দিনাজপুরে সংঘর্ষের ঘটনাটি একই কারণে।
দিনাজপুর গণপূর্ত বিভাগের ১৪ কোটি টাকা কাজের দরপত্র দাখিলকে কেন্দ্র করে ঘটনাটি ঘটে। দিনাজপুর জেলা কারাগারের কয়েদি ব্যারাক নির্মাণের জন্য চারটি গ্রুপের মোট ১৪ কোটি টাকার দরপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন ছিল বৃহস্পতিবার। সকাল থেকেই অস্ত্রসজ্জিত হয়ে ক্ষমতাসীন দলের একটি গ্রুপ টেন্ডার বাক্স দখল করে নেয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী সমর্থিত ঠিকাদাররা দরপত্র ফেলতে এলে প্রতিপক্ষ গ্রুপ তাদের বাধা দেয়। দুই গ্রুপের ক্যাডাররা এ সময় একে অপরের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে।
অস্ত্রের ঝনঝনানি ও ককটেল বিস্ফোরণে আশপাশের লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা প্রাণভয়ে কার্যালয় ছেড়ে নিরাপদে আশ্রয় নেন।
দুটি ঘটনা উত্তরবঙ্গে দুটি জেলায় একইদিন ঘটেছে। এখন পুরো বাংলাদেশে প্রতিদিনকার চিত্র এটি। কারণ একটাই জনগণের সম্পদকে নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা অনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা।
ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন সংগঠনের নামে তা ঘটছে। এযেন সার দেশব্যাপী এক অরাজকতা। ক্ষমতাসীন দলের মদদ ছাড়া যা সম্ভব নয়। অমূল্য প্রাণহানির পাশাপাশি দেশের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ নষ্ট হচ্ছে এর ফলে। জনগণের জীবনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে।
জনজীবনের স্বাভাবিকতা নষ্ট হচ্ছে। নিজেদের মধ্যে কোন্দল আর এর জের টানতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। রাস্তা অবরোধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হচ্ছে। অনেকে মান সম্মান ভুলুন্ঠিত হচ্ছে। কিন্তু সরকার নির্বিকার।
বুলি আছে শক্তিশালী কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই। মানুষ এর অবসান চায়। সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ চায়। মূল লেখা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।