ইমরোজ
বিদ্যুৎ এর যাওয়া আসার মধ্যে থেকে আমরা অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছি। আমাদের দেশের চতুর্দিক থেকে যেন রাহু লেগেছে। একদিকে যেমন আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি অপর দিকে বিদ্যুৎ নিয়ে দেশে একটা তোলপাড় শুর হয়েছে।
এমনটা হবেই এটাই স্বাভাবিক। চাকরি করতে গিয়ে আমার একটা অভিজ্ঞতা হয়েছিল।
যে অফিসে ছিলাম সেই অফিসের ম্যানেজমেন্ট ছিল অত্যন্ত দুর্বল। তাদের অধীনস্থ কর্মকর্তারা কে কি করছে সেই দিকে যেন কারও নজর নেই। এভাবে চলতে চলতে শুরু হলো কর্মী ছাটাই। মজার ব্যাপার হলো ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বহীনতার দায় আমাদের চাকুরেদের উপর এসে পড়ত। সপ্তাহে একটা মিটিং হবার কথা ছিল অফিসের বড় কর্তাদের সাথে।
সেই মিটিং হলো মাসে একবার। এবং সেই মাসে একবারের মিটিং-এ ম্যানেজমেন্ট মানে মালিক পক্ষ আমাদের উপর ঝাপায়ে পড়তেন। মদ্দা কথা আমাদের দায়িত্বহীনতাই যেন প্রতিষ্ঠানের সব রকম ক্ষতির কারণ। মালিক পক্ষ কিন্তু ঠিকই জানত তাদের অবস্থানও ঠিক নয়। কিন্তু তারপরেও তারা এইকাজটি করতে একটুও দ্বিধা করত না।
তখন থেকেই তাদের থেকে আমাদের দূরত্ব বাড়তে লাগলো। তখন থেকে সেন্স অব ওনারশিপ জনিসটা আমাদের সমস্ত চাকুরেদের মধ্য থেকে চলে গেল।
এইভাবে চলতে থাকলে একপর্যায়ে আমি চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে আসি।
এই গল্পটার সাথে আমাদের দেশের একটা বড় ধরণের মিল আছে। আমাদের দেশের সরকার এত দুর্বল এবং কান্ডজ্ঞানহীন যে তারা কোনভাবেই কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
পারছে না নিজেদের একটা অঙ্গসংগঠনকেও সামলাতে। সুতরাং সরকার তাদের ব্যর্থতার দায় এখন জনগণের উপর চাপাচ্ছে। সেটা কেমন করে? জনগণকে এখন বলা হচ্ছে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে। কিন্তু নিজেরা সেটা করছে না। সাংসদদের বেতন বাড়াচ্ছে জনগণের টাকায়, বিদ্যু\ গ্যাস ও পানির মূল্য বাড়াচ্ছে দফায় দফায়, যেন জনগণই সব সমস্যার উৎস এবং তাদেরকে কাবু করেই এর সমাধান করা হবে।
এভাবেই সরকারের সাথে জনগণের দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। এটা সব সরকারের আমলে একটা বাস্তবতা।
আমাদের এ গন্ডি থেকে বের হয়ে আসার উপায় কি? আপাত দৃষ্টিতে কোন উপায় দেখা যাচ্ছে না। কারণ আমাদের নীতিনির্ধারকেরা অশিক্ষিত নন, তারা অতিমাত্রায় শিক্ষিত (বুদ্ধিজীবী)। এই অতিশিক্ষিত মানুষের সাথে আমার বুদ্ধি পাল্লায় টিকবে না।
তাই আমার উপায় বাতলানোর প্রশ্নই উঠে না।
এখন আমার অবস্থা অনেকটা আবুল মকসুদের মত হয়েছে। এই কয়েকদিন আগের একটা লেখায় তিনি বলেছিলেন,আপাতত আশাবাদী হবার মত কিচ্ছু নাই। তাই আমি আশাবাদী হতে চাই না। আমি চির হতাশাবাদী।
আমিও সেরকমই বলতে চাই, আমি আশাবাদী নই।
আমাদের অঘোষিত রাজতন্ত্র থেকে বের হতে হবে। দেশের দুইটা পরিবার আমাদের বন্দী করে ফেলেছে তাদের নোংরা রাজনীতির বেড়াজালে। না! আমি বলছি না কোন নতুন রাজনৈতিক আদর্শ আমাদের দরকার। কিন্তু আমাদের দরকার পুরো সিস্টেমটাকে বদলে দেওয়া, যেন প্রত্যেক দলের ভেতরে গণতন্ত্রের চর্চা হয় এবং নতুন নতুন নেতা বের হয়ে আসেন।
আমাদের এখন সবার আগে দরকার সেই সংস্কার।
সমস্যা সমাধান করতে হলে আমাদের আগে বুঝতে হবে সমস্যাটা কি? বিদ্যুৎ নাই, পানি নাই, এগুলো কিন্তু সমস্যা নয়। এগুলো হলো ইমপ্যাক্ট বা রেজাল্ট। গত বিশ বছর ধরে অরাজকতা, অন্ধতা ও গণতন্ত্রের আরালে রাজতন্ত্র চর্চার ফল আজকের এই সব সমস্যা!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।