জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর দেয়া একখানা চিঠি আর শহীদ স্বামীর এক জোড়া জুতাকে অবলম্বন করে বাসন্তী রানী দাস কাটিয়ে দিয়েছেন আটত্রিশটি বছর। এ দু’টি স্মৃতির মাঝে তিনি দেখতে পান শহীদ স্বামী আর স্বাধীনতার প্রিয় মুখ। খুঁজে পান বঙ্গবন্ধুর হাতের স্পর্শ। এ দীর্ঘ সময়ে দুঃখ কষ্টে জীবন কাটালেও স্মৃতি চিহ্ন দু’টি হাতছাড়া করেননি। বরং চিঠি ও জুতা দেখেই তিনি ভুলে থাকেন দুঃখ কষ্ট, না পাওয়ার বেদনা আর অকাল বৈধব্যের যন্ত্রণা।
স্মৃতি দু’টিকে বসিয়েছেন দেবতার আসনে। দেবতার মতো স্মৃতি দু’টিকে প্রণাম করে প্রতিদিনের কাজ-কর্ম শুরু করেন। জীবনের পড়ন্ত বেলায় খুব একটা বড় কিছুর প্রত্যাশা নেই। এ দু’টি প্রিয় স্মৃতি মাথার ওপর রেখে কাটিয়ে দিতে চান জীবনের বাকিটা সময়। শহীদ জায়া বাসন্তী রানী দাসের (৬৭) বাড়ি পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে চিকনিকান্দী বন্দরে।
স্বামী শান্তিরঞ্জন দাস ছিলেন স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে এলাকার অন্যতম ধর্ণাঢ্য ব্যবসায়ী। তাঁর ছিল পাইকারি মুদি ব্যবসা। তিন-চারশ’ মণ মালামাল বহন করার বিশাল নৌকা ভর্তি মুদি পণ্য নিয়ে ঝালকাঠি, মাদারিপুর, মুলাদিসহ দক্ষিণাঞ্চলের বড় বড় হাটে ব্যবসা করতেন। সুখ সমৃদ্ধ সে দিনগুলোর কথা আজও মনে পড়ে শহীদ জায়া বাসন্তী রানী দাসে’র। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাকে নিজ হাতে রেঁধে ভাত খাইয়েছেন এবং টাকা-পয়সা দিয়ে সহায়তা করেছেন।
নৌকা দিয়ে রাতের আঁধারে নদী পার করে দিয়েছেন। আর এসবই এক সময় তাঁর জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তার অপরাধে পাকিস্তানী হানাদার আর রাজাকার-আলবদররা তাঁর জীবন থেকে সুখ সমৃদ্ধির সোনালী দিনগুলো কেড়ে নিয়েছে। বিয়ের মাত্র বারো বছরের মধ্যে স্বামী হারিয়ে দিশেহারা হয়। মাথা গোঁজার স্থায়ী ঠাঁই না থাকলেও এ শহীদ পরিবারটির কাছে রয়েছে দু’টি অমূল্য সম্পদ।
এর একটি হচ্ছে শহীদ শান্তি রঞ্জন দাসের এক জোড়া পাদুকা, আর জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে স্বাক্ষর করা একখানা চিঠি। স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষে বাজারের একটি দোকানের নিচ থেকে কুড়িয়ে পেয়েছিলেন কালো রংয়ের প্লাস্টিকের জুতা জোড়া। বাঁ পায়ের জুতাটির অংশ বিশেষ ইঁদুরে খেয়ে ফেলেছে।
তারপরেও এ জুতা জোড়ার মূল্য পরিবারটির কাছে অনেক। আর স্বাধীনতার কয়েক মাস পর বাসন্তী রানী দাস বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষর করা একখানা চিঠি ও দুই হাজার টাকা পেয়েছিলেন।
যে চিঠিতে বঙ্গবন্ধু গভীর শ্রদ্ধার সাথে তাঁর স্বামীর আত্মত্যাগে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। স্বাধীনতা পরবর্তী উনচল্লিশ বছর ধরে শহীদ পরিবারটি বঙ্গবন্ধুর দেয়া সার্টিফিকেট আর শহীদের জুতা পরম যত্নে আগলে রেখেছেন। শুধু তাই নয়। সবাইকে অবাক করে দিয়ে এ দু’টি স্মৃতি তুলে রেখেছেন ঠাকুরঘরে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।