আজকের প্রথম আলো পত্রিকার প্রথম পাতার প্রধান খবর,"ভন্ড পীর ভয়ংকর চিকিত্সা"। এ সংক্রান্ত আমার ব্লগার বন্ধুদের কারও কারও মন্তব্য আমি পড়ার চেষ্টা করেছি। এখন আমার জীবনের অভিজ্ঞতাটুকু আপনাদের সাথে ভাগ করার লোভটুকু সামলাতে পারছিনা।
যেহেতু কর্মজীবনের সবটুকু সময় দরিদ্রদের দারিদ্র বিমোচনে উত্সর্গ করেছি তাই অভিজ্ঞতার ভান্ডারও অনেক বড়।
আমরা জানি আমাদের দেশের দরিদ্র মানুষেরা চিকিত্সা সুবিধা বঞ্চিত।
সকলের মতো এ বিষয়টিও আমাকে বিচলিত করেছে। তাই দরিদ্রদেরকে স্বল্পমূল্যে আধুনিক চিকিত্সাসেবা কিভাবে দেয়া যায় তা নিয়ে বিস্তর চিন্তা ও ধারণা তৈরী করার পর ২০০৪ সালে সপ্তডিঙ্গায় স্বাস্থ্য কার্যক্রম শুরু করলাম। কোন বিদেশী সাহায্য ছাড়াই এ কার্যক্রম শুরু করলাম। আমার ছোট ভাইকে ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতাল থেকে প্যারামেডিক কোর্স করালাম। (অবশ্য দুর্জনেরা ভাববেন আমার ভাই কেন অন্য কোন মানুষ কি ছিল না? অন্য কোন মানুষও যে কতটা দায়িত্ব পালন করে এবং প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখে সে অভিজ্ঞতা না হয় অন্য কোনদিন ভাগ করে নেবো।
আজ চিকিত্সাসেবা প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলি। ) তারপর ভাইকে আমার যশোর আঞ্চলিক কার্যালয়ে প্যারামেডিক ডাক্তার হিসাবে নিয়োগ দিলাম। একজন মোটিভেটর ও একজন খন্ডকালীন এম বি বি এস ডাক্তার নিয়োগ দিলাম। আর ফার্নিচার বানানো হলো। এই কার্যক্রম সুষ্ঠভাবে ব্যবস্থাপনা করা ও জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য এলাকাবাসীদের নিয়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করলাম।
যশোর শহর ও শহরতলীতে বিভিন্ন এলাকায় স্বাস্থ্য বীমা করানোর কাজ শুরু করলাম। নিয়মটা ছিল এরকমঃ টাকা ১২০ দিয়ে ১টি পরিবারের ১ বছরের জন্য একটি বীমা করানো হবে। একটি পরিবারের মোট ৮জন এই স্বাস্থ্যবীমা থেকে চিকিত্সা সেবা পাবে। প্যারামেডিক ডাক্তার বীমাধারী পরিবারে মাসে ১বার করে যাবে। বীমার আওতায় যারা আছেন তাদের নাড়ীর গতি, রক্তচাপ, ওজন পরীক্ষা করবে।
যদি কোন অসঙ্গতি দেখে তাহলে সে সাথে সাথে চিকিত্সা সেবা দেবে। যদি সে সময় না পায় তাহলে রোগীকে বিকালে ক্লিনিকে আসার জন্য বলবে। যদি বেশী জটিলতা থাকে তাহলে সাপ্তাহিক ক্লিনিকে এম বি বি এস ডাক্তারকে দেখাবে। যদি হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন হয় তাহলে আমাদের যশোরে অবস্থিত সবগুলি বড় হাসপাতালের সাথে চুক্তি আছে তারা সর্বোচ্চ ৪০% কমিশনে রোগী দেখবে। (সাধারণঃ এই কমিশনগুলি ডাক্তাররা পায়।
কিন্তু সপ্তডিঙ্গা কোনদিন এই কমিশন নেয় নি। ) প্রয়োজনে ঢাকায় ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতাল ও এইটাম হাসপাতাল তাদেরকে সর্বোচ্চ ৪০% কমিশনে চিকিত্সা সেবা দেবে। একজন রোগী যখন ক্লিনিকে আসবে তখন সে ১০টাকা দিয়ে একটি টিকেট নেবে। সেই টিকেটে সে ১ মাসের মধ্যে যতোবার ফলোআপে আসবে পরামর্শ নিতে পারবে, কোন নতুন টিকেট নেয়ার প্রয়োজন নেই।
আমি ৩বছর যাবত্ এই কর্মসূচী পরিচালনা করেছি।
কিন্তু আমি মাত্র ২০০ থেকে ৩০০ মানুষকে পেয়েছি যারা স্বাস্থ্যবীমা করেছেন। যারা একবার বীমা করেছেন তারা ২য়বার রিনিউ করেন নি। কারণ এই কর্মসূচীর আওতায় যারা ছিলেন তাদের ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হয় নি। যারা গেছেন তারাও কম খরচে চিকিত্সা সুবিধা পেয়েছেন। কিন্তু তারপরেও এই কর্মসূচী জনপ্রিয়তা পায়নি।
ফলে টাকা১২০ কে তারা একটি অপ্রয়োজনীয় খরচ হিসাবে দেখেছে, আর সপ্তডিঙ্গার আয়ের একটি উত্স হিসাবে দেখেছে। এই কর্মসূচী পরিচালন ব্যয়ের কথা কিন্তু কেউ বিবেচনায়ও আনে নি। অথচ আমার কার্যক্রমটি পরিচালনা করার জন্য কোন টাকা পাইনি। বেশী না এক বছরে মাত্র ৩০০০ স্বাস্থ্য বীমা হলে আমার কার্যক্রমটি অনেক সুন্দরভাবে চলতে পারতো। কিন্তু হয়নি।
অথচ দেখেন কি আশ্চর্য্য ব্যাপার বাচ্চাকে ধরে উল্টা করে বেধে রেখেছে, তার পা ধরে ঘোরাচ্ছে, তার পেটের উপরে পা দিয়ে দাড়াচ্ছে কিন্তু মায়েরা তার কাছে চিকিত্সা সেবা পাওয়ার জন্য আসছে। মানসিক রোগী মাকে চিকিত্সা করানো জন্যে ছেলে আসছে। সুস্থ না হলে কেউ টাকা ফেরত্ চাচ্ছে না। বরং আশেপাশের মানুষ কমপক্ষে ১০টাকা এবং বেশীরভাগ মানুষ ৩০ থেকে ৪০টাকা দিয়ে এই তামাশা দেখছে। কারণ আমরা কী বলবো? মানুষ সত্যিই কী চায় তার সঠিক চিকিত্সা, মানবিক ব্যবহার? না কি পাশবিকতা করতে যেমন পছন্দ করে তেমনি দেখতে পছন্দ করে? আপনাদের কি মনে হয়?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।