প্রগতিশীল রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিরোধের মুখে গত বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরায় জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশ হতে পারেনি। ২ এপ্রিল দিনাজপুরে এবং সর্বশেষ গত শুক্রবার সিলেটেও কর্মসূচি পালন করতে পারেনি জামায়াত।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার-প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে সারা দেশে কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে এভাবেই প্রতিরোধের মুখে পড়ছে জামায়াত। মূলত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ও স্বাধীনতার পক্ষে নানা সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াতের কর্মসূচি প্রতিরোধে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
জামায়াত সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে দলের নেতারা উদ্বিগ্ন।
তবে তাঁরা কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন, বাধা এলেও মাঠ ছাড়া যাবে না। কারণ, সে ক্ষেত্রে কর্মীদের মনোবল নষ্ট হয়ে যাবে। এ কারণে ছোট আকারে হলেও জড়ো হয়ে মিছিল-সমাবেশ করতে হবে। দলের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের একজন সদস্য বলেন, ‘আমরাও মাঠ ছাড়ব না। এতে সংঘর্ষ হলে হবে।
’
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শাখা সংগঠনগুলোকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে নিয়ে ও জনগণের সমর্থনে জামায়াতকে প্রতিরোধ করার কথা বলেছি। বিভিন্ন জায়গায় জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনে এ কাজ হচ্ছে। ’
জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যতটুকু পারি চেষ্টা করে যাব। ’ তিনি অভিযোগ করেন, প্রশাসন ও পুলিশ ব্যবহার করে তাঁদের কর্মসূচি বানচাল করা হচ্ছে। তবে তাঁরাও এটার মোকাবিলা করবেন।
কর্মসূচি যেগুলো আছে, সেগুলো পালনের চেষ্টা করবেন।
এই করতে গেলে সংঘর্ষের আশঙ্কা আছে কি না, জানতে চাইলে কামারুজ্জামান বলেন, ‘সরকার নিজেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছে, যাতে আমরা সংঘাতে জড়িয়ে পড়ি। তবে আমরা ধৈর্য ধারণ করে যাচ্ছি। নিয়মতান্ত্রিক পন্থার বাইরে আমরা যাব না। ’
পরিকল্পনা ভণ্ডুল: চলতি বছরের শুরুর দিকে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ক্ষেত্র তৈরি করার চেষ্টা করছিল জামায়াত।
দলের আমির মতিউর রহমান নিজামী গত ১৬ জানুয়ারি সিলেট, ২৬ জানুয়ারি চট্টগ্রাম, ৭ ফেব্রুয়ারি সিলেট ও ৯ ফেব্রুয়ারি খুলনা মহানগরে সমাবেশ করে এসেছেন।
এরপর বরিশাল ও ঢাকা মহানগরে সমাবেশ করার পরিকল্পনা থাকলেও জামায়াত তা করতে পারেনি। রাজশাহী সফরের পরদিন গত ফেব্রুয়ারি মাসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরের তাণ্ডবে ছাত্রলীগের কর্মী ফারুক হত্যার পর থেকে জামায়াতের সব পরিকল্পনা থেমে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির একজন সদস্য বলেন, সমাবেশ আয়োজনের দায়িত্ব ছিল বরিশাল জামায়াতের। তারা সুবিধামতো সময় করতে পারেনি।
আর ঢাকায় সমাবেশ করার কথা ছিল সবার পরে। বরিশালেরটা না হওয়ায় ঢাকারটাও হয়নি।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে পরিস্থিতি বর্ণনা করে তাঁর সাহায্যও কামনা করেছিলেন নিজামী। কিন্তু তাও পাননি। আহকামে হেফাজত কমিটি নামের একটি সংগঠন তৈরি করে তাদের মাধ্যমে ধর্মভিত্তিক অন্য সংগঠনগুলোকেও মাঠে নামানোর চেষ্টা করেছিল জামায়াত।
সে চেষ্টা এখনো সফল হয়নি।
প্রতিরোধ: ২ এপ্রিল দিনাজপুরে জেলা মজলিসে শুরার সম্মেলন ও সমাবেশ ডেকেছিল জামায়াত। আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, এ টি এম আজহারুল ইসলামসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সম্মেলনে উপস্থিত থাকার কথা ছিল। লোকভবনে কর্মসূচির কথা বলা হলেও গোপনে কর্মসূচির প্রস্তুতি নেওয়া হয় স্থানীয় আদর্শ স্কুলে।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন আগের দিন সন্ধ্যার পর শহরে মশাল মিছিল ও বেশ কয়েকটি স্থানে পথসভায় ঘোষণা করে, দিনাজপুরে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতকে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হবে না।
পরদিন শহরের পাহাড়পুরে জেলা জামায়াতের কার্যালয়ে পুলিশ পাহারায় মজলিসে শুরা করে জামায়াত।
সাতক্ষীরায় গত বৃহস্পতিবার সমাবেশ ডেকেছিল জামায়াত। গত মঙ্গলবার সাতক্ষীরা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও স্থানীয় ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি প্রগতিশীল বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময় করে ঘোষণা করে, স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত মুজাহিদকে সাতক্ষীরায় কোনো মিছিল-সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। গত বুধবার সকালে এসব সংগঠনের শত শত নেতা-কর্মী শহরে মিছিল করেন।
গত বৃহস্পতিবার সকালে কয়েক হাজার লোক জামায়াতকে প্রতিরোধ করতে সাতক্ষীরা শহরে জড়ো হয়।
জামায়াত যেখানে সমাবেশ ডেকেছিল, সেই শহীদ আবদুর রাজ্জাক পার্কে অবস্থান নেয় নির্মূল কমিটি। এ পরিস্থিতিতে ভোর ছয়টার স্থানীয় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে। এ পরিস্থিতিতে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতারা খুলনা থেকে আর সাতক্ষীরায় যাননি।
সর্বশেষ গত শুক্রবার সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির বার হলে বিভাগীয় সম্মেলন ডেকেছিল জামায়াত। সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম আগের রাতে সিলেট পৌঁছে আল হামরা শপিং সিটিতে অবস্থান নেন।
কিন্তু সিলেটের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন জামায়াতকে প্রতিরোধের ডাক দেয়। রাত ১২টায় কয়েক শ লোক আল হামরা শপিং সিটি ঘেরাও করে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ গত শুক্রবার সকাল সাতটায় জেলা আইনজীবী সমিতির বারের ফটকে অবস্থান নেয়। এ পরিস্থিতিতে মহানগর পুলিশ কমিশনার সংশ্লিষ্ট এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে। পরে সংবাদ সম্মেলন করে জামায়াত কর্মসূচি বাতিল করার ঘোষণা দেয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।