আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সংবর্ধনায় কাঁদলেন তারা, কাঁদালেনও

উদ্ধারের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে তারা নিজেরাই আবেগাকান্ত হয়ে পড়েন, আর তা ছুঁয়ে যায় অনুষ্ঠানের সবাইকে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ক্যাফেরিয়ায় সংবর্ধনা দেয়া হয় ৩১ জন উদ্ধারকর্মীকে। ফ্রেন্ডস ফর হিউম্যানিটি নামের একটি সংগঠন এই উদ্যোগ নেয়।
ভবন ধসে নিহতের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালনের পর পুরো অনুষ্ঠান জুড়েই দর্শকদের মধ্যে ছিলো পিনপতন নীরবতা।
উদ্ধারকর্মী আসমা আক্তার লিজা বলেন, “সহস্রাধিক লোক মারা গেছেন।

কিন্তু যারা এখনো আহত অবস্থায় আছে তাদের দিকেও খেয়াল করা দরকার। ’
আহত দুই নারীর ছবি দেখিয়ে তিনি বলেন, রেহানার পা নেই, শিল্পীর নেই হাত।
ওই দুজনকে উদ্ধৃত করে লিজা বলেন, “আমার হাত ছিলো, এখানে আমার পা ছিলো। কোথায় গেলো তা? আমার হাত ফিরিয়ে দাও, পা ফিরিয়ে দাও।
“আমি তা পারি না।

আমি কেবল হাত পাততে পারি। আমি আমার পা এগিয়ে দিতে পারি,” কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন লিজা।
নাট্যকর্মী লিজা সাভারে রানা প্লাজা ধসের পর থেকে সেখানকার উদ্ধার তৎপরতায় ছিলেন। এখনো হাসপাতালে অবস্থান করে আহতদের সেবা দিচ্ছেন তিনি।
স্বাভাবিকভাবে বক্তব্য শেষ করতে পারেননি লিজা।

কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে যান। এরপর মাইক ফিরিয়ে দিয়ে মঞ্চ থেকে চলে যান।
উদ্ধারকর্মী আ স ম আল আমিন, এসএইচ সুমন, এমএইচ আকবরিও কাঁদেন এবং কাঁদান দর্শক-শ্রোতাদের।
তাদের বক্তব্যের সময় মঞ্চে উপবিষ্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকসহ অন্য অতিথিদেরকেও চোখ মুছতে দেখা যায়।
উদ্ধারকাজের অংশ নেয়া পুরান ঢাকা প্রভাতী আইডিয়াল স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র মনোয়ার হোসেন তুষার বলেন, “সবাই যখন উদ্ধারকাজে যায় তখন আমি এই ভেবে সেখানে যাই- ‘বড়রা যাইতে পারলে আমি যেতে পারব না কেন?’”
টানা ২২ দিন ধরে তুষার উদ্ধারকাজে অংশ নেন, যে ভবন ধসে নিহত হয় সহস্রাধিক মানুষ।

 
উদ্ধারকর্মী ওমর ফারুক বাবুর বোন আয়েশা মিয়াজী বলেন, “আমার ভাইকে হাসপাতালে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। নিখোঁজ হওয়ার আগে ফোনে আমাকে সেই আশঙ্কার কথাও জানিয়েছিলো সে। ”
গত ২৪ এপ্রিল ধসের পর উদ্ধার কাজে অংশ নিয়ে ৩০ এপ্রিল অসুস্থ হয়ে পড়েন ওমর ফারুক বাবু। প্রথমে সাভারের একটি হাসপাতালে, পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন তিনি। ৫ মে হাসপাতাল থেকে নিখোঁজ হওয়ার পর ৭ মে পাশের ওয়ার্ডে তার লাশ পাওয়া যায়।


আয়েশা বলেন, “ভাই আমার বলেছিলো, আমাকে তারা গলায় ফাঁস দিয়ে মারতে চায়। আমি এসব কথা ডাক্তারদের সঙ্গে আলাপ করলে তারা বলেছিলেন, ভয়ের কারণে সে এসব কথা বলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমার ভাইয়ের আশঙ্কাই সত্যি হলো। তাকে গলায় ফাঁস দিয়েই মারা হয়। ”
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ভবন ধসের ঘটনার পুনরাবৃত্তিরোধে দায়ী সবাইকে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।


অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক খোন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন, অধ্যাপক শাহিন ইসলাম, অধ্যাপক জিয়াউর রহমান ও ফ্রেন্ডস ফর হিউম্যানিটির সংগঠক আরিফুল হক কবির বক্তব্য রাখেন।
নিহত উদ্ধারকর্মী এজাজ উদ্দীন কায়কোবাদ এবং ওমর ফারুক বাবুর পরিবারের সদস্যরা অনুষ্ঠানে ক্রেস্ট গ্রহণ করেন। বাকি ২৯ জনকেও ক্রেস্ট দেয়া হয়।
এজাজ গত ২৮ এপ্রিল রাতে ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়া পোশাক শ্রমিক শাহীনাকে উদ্ধার করতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হন। পরে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.