ইতিহাসের পেছনে ছুটি তার ভেতরটা দেখবার আশায়
জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর নাটোরের উপজেলা চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ নূর বাবু হত্যা মামলার ১১ আসামিকে বৃহস্পতিবার সংবর্ধনা দিয়েছেন নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বাবু হত্যা মামলার প্রধান আসামি ঘোষণা দিয়েছেন, সাত দিনের মধ্যে তাদের অপরধের প্রমাণ হাজির করতে না পারলে বনপাড়ার ব্যবসায়ীদের দেখে নেওয়া হবে।
এদিকে আসামিদের জামিনের খবর পেয়ে শঙ্কিত হয়ে উঠেছে সানাউল্লাহ নূরের পরিবার।
গত ৬ মার্চ হাইকোর্ট থেকে জামিন পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নাটোর জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান এ মামলার ১১ আসামি।
এরা হলেন- রাসেল ওরফে রাপ্পু, বাদশা মণ্ডল, আশরাফুল ইসলাম, লুৎফর রহমান, রেজাউল করিম, হাশেম মৃধা, গৌতম ঘোষ, আব্দুল খালেক, মো. হাবিব, বাবলু মোল্লা ও বাবু মোল্লা।
গত বছর ৮ অক্টোবর সকালে জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া বাজারে সন্ত্রাসীরা বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা সানাউল্লাহ নূরকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে। নিহতের স্ত্রী মহুয়া নূর এ ঘটনায় বাদী হয়ে ২৭ জনের নাম উল্লেখসহ ৪৭ জনের বিরুদ্ধে বড়াইগ্রাম থানায় একটি মামলা করেন।
পরে ২৮ অক্টোবর নাম উল্লেখ করে আরও ২৮ জনের বিরুদ্ধে রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজির কাছে সম্পূরক অভিযোগ দাখিল করেন তিনি।
বর্তমানে অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক আহম্মদ আলী মামলাটির তদন্ত করছেন। ঘটনার পাঁচ মাস পরও আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারেননি তিনি।
জামিন ও মুক্তি
আসামিদের আইনজীবী আরিফুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, গত ৬ মার্চ বিচারপতি মো. শামসুল হুদা ও আবু বক্কর সিদ্দিকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মামলার ১১ আসামিকে ছয় মাসের জামিন দেয়।
আরিফুর রহমান বৃহস্পতিবার সকালে নাটোরের মুখ্য বিচারিক হাকিমের কাছে তাদের জামিননামা দাখিলের অনুমতি চান। হাকিম মোহাম্মদ শরিফ উদ্দিন প্রত্যেকের দশ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিননামা দাখিলের নির্দেশ দিলে দুপুরে তা দাখিল করেন আসামিদের আইনজীবী।
বিকেলে জামিননামা নাটোর কারাগারে পৌঁছালে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ১১ জনকে মুক্তি দেওয়া হয় বলে আরিফুর রহমান জানান।
কারাগারের ফটকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা মুক্তিপ্রাপ্তদের ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেন।
পরে মোটর শোভাযাত্রা করে তাদের বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদের শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শ্রদ্ধা জানানোর পর এই হত্যা মামলার প্রধান আসামী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জাকির হোসেন সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন।
তিনি বলেন, "আমরা বাবুকে হত্যা করিনি। অথচ বনপাড়ার কিছু লোক আমাদের শাস্তির দাবিতে মিছিল মিটিং করেছে, মানববন্ধন করেছে। এবার আমরা দেখবো, তারা আমাদের দুঃখ-কষ্টের জন্য কি করে।
"
জাকির হোসেন এ মামলায় আগেই আগাম জামিন পেয়েছেন।
সংবর্ধনা
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানারো পর মুক্তিপ্রাপ্তদের নিয়ে বনপাড়া বাজারে সংবর্ধনা সভার আয়োজন করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ।
বনপাড়া পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক খোকন মোল্লার সভাপতিত্বে এই সভায় বক্তব্য রাখেন বড়াইগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আরিফুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জাকির হোসেন, সাবেক ছাত্র নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন ও যুবলীগ নেতা সামসুজ্জোহা।
এ অনুষ্ঠানে জাকির হোসেন বলেন, "আমরা যে বাবু হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলাম- তা সাত দিনের মধ্যে বনপাড়ার ব্যবসায়ীদের প্রমাণ করে দিতে হবে। নইলে আমরা শপথ করছি, সাত দিন পর আমরা তাদের বিচার করবো।
"
সংবর্ধনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এ মামলার চার নম্বর আসামি খোকন মোল্লা বলেন, "সাত দিন নয়, আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তারা আমাদের জন্য কি করে তা দেখাতে হবে। নইলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। "
পরিবার শঙ্কিত
নিহত সানাউল্লা নূরের স্ত্রী মহুয়া নূর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "যারা দিনের আলোয় শত শত মানুষের সামনে আমার স্বামীকে নির্মমভাবে হত্যা করলো, তারা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। ঘটনার সময় ধারণ করা ভিডিও চিত্রেও এসব আসামিদের দেখা গেছে। অথচ সরকার এখন পর্যন্ত মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারলো না।
আসামিরা মামলা উঠিয়ে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে উল্লেখ করে মহুয়া বলেন, "এ অবস্থায় আমি সন্তানদের নিয়ে কোথায় যাবো ভেবে পাচ্ছি না। "
সংবর্ধনা নিয়ে প্রতিক্রিয়া
চাঞ্চল্যকর এই মামলার আসামিদের জামিন পরবর্তী সংবর্ধনা নিয়ে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
সানাউল্লাহ নূর বাবু হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষি ও বড়াইগ্রাম থানা যুব দলের সভাপতি সর্দার রফিক বলেন, "আসামিদের স্পর্ধা দেখে আমি হতাশ। তারা সংবর্ধনার পরপরই আমাকে ফোন করে বলেছে, 'বাবুর মতো তোর স্ত্রীকেও খুব তাড়াতাড়ি বিধবা করা হবে। তোর কি বাপ মারা গেছে যে, তুই মামলার সাক্ষি হয়েছিস?'
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী বলেন, "এটা মগের মুল্লুক হয়ে গেছে।
নইলে হত্যা মামলা চালু থাকা অবস্থায় আসামিরা কিভাবে সংবর্ধনা সভা করে?"
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও আইনজীবী সাজেদুর রহমান খান বলেন, "আসামিরা বাবুকে হত্যা করেছে কি না তার নিষ্পত্তি আদালত করবে। তাই এখনই সংবর্ধনা দেওয়া উচিত হয়নি। যারা এটা করেছে তারা আমাদের না জানিয়ে করেছে। "
ব্যবসায়ীদের বিচারের হুমকি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "এটা অনুচিত। কারণ কোনো ঘটনার পর হরতাল হলে ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়।
এটা তাদের দোষ নয়। "
সূত্র : বিডিনিউজ টোয়েন্টফোর ডটকম
সানাউল্লাহ নূর হত্যা মামলা
বিবেকের তার গুলো ছিড়ে যাচ্ছে, কেউ কি বলতে পাড়েন কোথায় গেলে শান্তি পাবো ? মানুষ পিটিয়ে হত্যা করে এরা ক্ষমতায় এসেছে, এ কথা কে না যানে, এক্ষনে কেউ আবার আমাকে জামাত-শিবির সমর্থক বলবেন না, আমার কথা সে যেই হোক মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করা কোন সভ্য বিবেক সমর্থন করতে পারে না । নাটোরের এ হতভাগা লোকটিকে যে পিটিয়ে মারা হয়েছে এবং এই আসামীরাই যে এর আসল আসামী তা দিবালোকের মত সত্য । অথচ আমাদের বিচার ব্যবস্থায় তারা এখন মুক্ত, আমরা কোথায় যাচ্ছি ?????????????????
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।