হৃদয় ছবি
পরিবারে দম্পতিযুগলের মান-অভিমানের পালা আসে পালা ক্রমে। যেমনি দিনের পর রাত আর রাতের পরে দিন, তেমনি চিরন্তন সত্য হলো দম্পতিযুগলের অভিমানের পালা বদল।
ধরুন একদিনের তর্কযুদ্ধে আপনি বিজয়ী হয়ে সগৌরবে বুকটা ফুলিয়ে সটান হয়ে দাঁড়ালেন, কিন্ত হায় একি... পেট তো গৌরব অনুভুতি বোঝে না। বউ তো বাপের বাড়ি, রান্নার ব্যাবস্থা কি!!! হোটেলের ছাইপাশ কিনেওতো খাওয়া গেলো না অথবা পেট খারাপ হওয়ার ভয়ে কেনা হোটেলের খাবার খাওয়া হলো না অথবা ব্লাব্লা... রুটি খেয় আর কতক্ষন...
ধরুন কালকে একটা লাল গোলাপ অথবা একটা শাড়ি নিয়ে ভাবিকে আনতে যাবেন ঠিক করেছেন। কিন্তু এখন কি খাবেন?
ঝটপট নেমে পড়ুন এই ব্লগটির একটি প্রিন্ট-আউট নিয়ে।
মনে রাখবেন আজকে কিন্তু হেল্পের জন্য ভাবিকে পাচ্ছেন না।
============================রান্নার প্রস্তুতি
প্রয়োজনীও রান্নার উপকরণ
১. চাল এক পোয়া (এক গ্লাস)
২. ডিম দুইটা
৩. পেঁয়াজ দুইটা বড় সাইজের
৪. কাঁচা মরিচ ২ টা
৫. তেল কোয়ার্টার কাপ (ছোটো চায়ের কাপ হলেই হলো)
৬. লবন, গুড়া মরিচ, জিরা গুরা এইরকম আরো গুড়াটুড়া থাকলে প্রত্যেকটি এক চামচ নিয়ে নিন, তবে গোল মরিচ বা এলাচি গুড়া নিয়েন না কিন্তু।
৭. হলুদ আধা চামচ।
প্রয়োজনিও রান্নার সরঞ্জাম
১. ভাত রান্নার পাত্র (মিডিয়াম বা ছোটো)
২. মিডিয়াম সাইজ কড়াই (ছোটো হলে হবে না)
৩. ছুড়ি
৪. ভাত লাকড়ানোর কাঠি
কম্পোলসারি আইটেম
১. টিশু পেপার বা চোখ মোছার রুমাল (কম্পোলসারি)
২. গামছা
---------------------------------------------------------------
============================রান্নার ধারা
কার্য ধারা
১. কোমোরে গামছা গিট্টু মারুন।
২. চাল ধুয়ে ভাতের পাত্রে নিন।
যতটুকু চাল তার দ্বিগুন পানি নিন। এক গ্লাস চাল হলে দুই গ্লাস পানি, সোজা হিসাব।
৩. এবার চুলায় বসিয়ে দিন। গ্যাস বার্ণার হলে গ্যাসের মাপ মাঝামাঝি রাখলেই চলবে।
৪. ভাতের পানি বল্কানো শুরু হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
যখন থেকে বল্কানো শুরু হবে তখন থেকে ২ মিনিট অপেক্ষা করুন। এবং ভাত নামিয়ে রাখুন। ভাত লাকড়ানোর কাঠি দিয়ে ভাতের জড়তা ভাঙ্গুন। ফ্রিজে ঢোকাবেন না। বা হালকা আচে কোনো তাপেও রাখবেন না।
একদম স্বাভাবিক ভাবে রাখুন ১৫ মিনিট। এ সময়ে নিচের ধাপ গুলো কম্প্লিট করুন।
৫. পেঁয়াজ ছুলে নিন। পেঁয়াজ মরিচ ধুয়ে নিন। পেঁয়াজের দু প্রান্তে কাটুন এবং মরিচের বোটা ফেলে দিন।
৬. পেঁয়াজ মরিচ কুচি কুচি করে কাটুন। একদম হাই কোয়ালিটি কুচি কুচি করা লাগবে না (কারন এতো খাইট্টা কাম নাই)। সাবধান, আপনার কিন্তু ছুড়ি কাচির অভিজ্ঞতা অসাধারণ, আবার হাত কেটে বসে থাকবেন না। তবে কেটে গেলে সমস্যা নাই, পরের দিন ভাবিকে দেখাবেন। এতে অনেক সহানুভুতি সম্বলিত বেশি আদর পাবেন সেটা নিশ্চিত।
আর পেঁয়াজ কাটার সময় ভাবিকে স্মরণ করুন আর দু চোখ ভরে কান্না করুন। টিশু দিয়ে চোখ মুছে ফেলুন, এতো কান্না করবেন না প্লিজ। হাজার হোক আপনিও আমার মতোই। আর আমার মতো কারো চোখে জল আমি সইতে পারি না।
৭. কড়াই এ কোয়ার্টার কাপ তেল গরম করুন।
তেলে একফোঁটা পানি ছেড়ে দেখতে পারেন যে তেল গরম হলো কি না। তেল গরম হলে শন শন শব্দ করে পানি বাষ্প হবে।
৮. এবার পেঁয়াজ এবং মরিচ কুচি তেলে ছাড়ুন। তবে কোমোরে গিট্টা দিয়ে রাখা গামছা দিয়ে হাত আবৃত করে নিন, তা নাহলে তেলের ছিটা লাগতে পারে। আবার দেখবেন যে হাতের গামছা যেনো আগুনের স্পর্শে না যায়।
তাহলে কি হবে সেটা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
৯. এবার চামচ দিয়ে আস্তে আস্তে নাড়ুন যেনো পেঁয়াজ পুড়ে না যায়। যদি দেখেন পেয়াজকুচি গুলো লাল হয়ে যাচ্ছে তখন লবন গুড়ো মশলা গুলো ঢেলে দিন। আধা কাপ পানি ও দিন। আবার নাড়তে থাকুন।
পানিগুলো শুকিয়ে যাবে তবে পুরোপুরি শুকাতে গেলে মশলা পুড়বে। তাই যখন দেখবেন পানি শুকিয়ে মশলা কিছুটা ঘন হয়ে যাচ্ছে তখন ডিম দুটা ভেঙ্গে দিয়ে দিন। আবার থ্রি স্টুজেসের মতো হাতুড়ি দিয়ে খোশা সহ গুড়ো গুড়ো করে দেবেন না।
১০. ডিম ছাড়ার সাথে সাথেই চামচ দিয়ে নাড়তে থাকুন যাতে ডিম পুড়ে না যায়। ডিমগুলো মশলার সাথে মিশলেও সাদা বর্ণ ধারন করবে।
দেরি না করে সাথে সাথে ভাতগুলো কড়াই এ ঢেলে দিন। এবার নাড়তে থাকুন। নেড়ে নেড়ে ভাতগুলো ডিম, মশলাগুলোর সাথে মিশিয়ে নিন (গরম কড়াই এর মধ্যেই রেখেই) ।
১১. যদি দেখেন পট পট শব্দ হচ্ছে তাহলে ভাত কড়াই চুলা থেকে নামিয়ে ফেলুন। এবং নরমাল তাপমাত্রায় রেখে দিন ১০ মিনিট।
এ সময়ের মধ্যে রান্নার সরঞ্জামগুলো ধুয়ে ফেলুন, রান্নার অপ্রয়োজনীয় অবশিষ্ট গুলো পরিষ্কার করুন, এবং খাবার টেবিল সুন্দর করে গুছিয়ে নিন।
---------------------------------------------------------------
============================খাওয়ার পালা
এবার খেতে বসুন। ও আমাকে ধন্যবাদ দিতে ভুলবেন না যেনো। খাবার শেষে ভাবিকে স্পেশাল ধন্যবাদ দেবেন, যে তিনি এর চাইতেও অনেক কম্প্লেক্স এবং সুস্বাদু খাবার আপনাকে খাওয়ান। এখন প্রমিজ করুন যে আর কক্ষনো ভাবি কে বলবেন না "তুমি সারাদিন কি করো" অথবা "তোমার কাজ আমদের তুলনায় অনেক সহজ" ইত্যাদি ইত্যাদি।
-----------------------------------------------------------
আপনাদের কমেন্ট সদা স্বাগত
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।