আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সামুর ব্লগার সাংবাদিক ফয়েজ এখনো কমিউনিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন

Only I know what is my goal, My heart is my temple.

ছাত্রলীগের কয়েক সন্ত্রাসীর হাতে গুরুতর আহত সাংবাদিক ফয়েজ এখনো হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন। তিনি বর্তমানে মগবাজার ওয়ারলেস গেটস্থ কমিউনিটি হাসপাতালের ৫১৯ নম্বর শয্যায় ভর্তি রয়েছেন। ফয়েজ এখনো স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছেন না। চিকিৎসকরা বলছেন, তাকে চাপা মার দেয়ার কারণে এ অবস্থা হয়েছে। তার স্বাভাবিক হতে দীর্ঘদিন প্রয়োজন হবে।

জীবনের শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত তাকে এর জরে টানতে হবে। গত ৪ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলকায় শাহাবাগ থানার সামনে পুলিশের উপস্থিতিতে এসএম হলের ছাত্রলীগ সভাপতি সাদিদ জাহান সৈকতের নেতৃত্বে একদল ছাত্রলীগ নামধারী ইংরেজী দৈনিক নিউ এজ প্রকাশনা সাপ্তাহিক বুধবারের নিজস্ব প্রতিবেদক আহম্মদ ফয়েজ ও সাপ্তাহিকের সাংবাদিক আনিস রায়হানের ওপর হামলা করে। তারা সড়কের ওপর ফেলেই তাকে পা দিয়ে মাড়ই করে। এ সময় শাহবাগ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলেই দর্শকের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। তাদের কাছ থেকে পরিচয়পত্রও ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

এরপর তাদের আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন উন্নত চিকিৎসার জন্য ফয়েজকে কমিউনিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৪ এপ্রিল রাত আটটায় আমাকে ফোন করে ফয়েজ জানায় ছাত্রলীগ একদল সন্ত্রাসী তার ওপর হামলা করেছে। এ সংবাদ শুনেই আমি ও বুধবারের নির্বাহী সম্পাদক ভয়েজ অব আমেরিকার বাংলাদেশ প্রতিনিধি আমীর খসরু শাহবাগের দিকে এগিয়ে যাই। কিন্তু এর আগেই ফয়েজও আনিসকে স্থানীয় লোকজন ঢাকা মেডিকেল হাসপাতলের জরুরী বিভাগে নিয়ে যায়।

আমরা দুজনের অবস্থা দেখে আতকে উঠি। পুরো শরীরের কোথাও এক ইঞ্চি স্থান ছিলনা যেখানে আঘাত করা হয়নি। এ কোন সভ্য দেশে আমরা বাস করছি? শুধু লেখার কারণে কোন সাংবাদিককে এভাবে মারধর করা হতে পারে তা ছিল আমার ধারনারও অতীত। আমি সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রলীগ সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপনকে ফোন দিলাম। তিনি আমার ফোন ধরলেন।

শুনেছি অন্য কোন সাংবাদিকের ফোন তিনি ধরেন নি। তিনি আমাকে বললেন, ওরা কি এত মারধর করেছে? আমি বললাম, তিনি এখন হাসপাতলে। ছাত্রলীগ সভাপতি বিস্ময় প্রকাশ করলেন। বললেন, কারণ কি আমি তা বের করে আপনাকে ফোন দিচ্ছি। তিনি আর ফোন দেননি।

আমি অফিসে সংবাদ পেয়েই কয়েকটি টেলিভিশনে কর্মরত আমার বন্ধুদের জানিয়ে স্ক্রল সংাবদ পরিবেশন করাই। সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে সাংবাদিকরা ঢাকা মেডিকেলে ছুটে যান। তারা নিস্তেজ অবস্থায় দুজন সাংবাদিককে মেডিকেলের জরুরী বিভাগে পড়ে থাকতে দেখেন। দুজনের মুখমন্ডল এত ফুলে গিয়েছিল যে তাদের চিনতে কষ্ট হচ্ছিল। অনেকের চোখ দিয়েই তখন পানি বের হয়ে যাচ্ছিল।

আমরা রাত ১১ টার দিকেই হাসপাতলের ৩১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নিরাপত্তার কারণেই দুজনকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করি। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে- সাপ্তাহিক বুধবার সমাজ ও রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক বিকাশের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ। এ কারণে অন্যায় ও অনিয়মের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছি। আমি মিডিয়াতে বলেছি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠন। কিন্তু তাদের একটি অংশের সাম্প্রতিক কর্মকান্ড তাদের ঐতিহ্য, সরকারের নীতি এমনকি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সঙ্গে খাপ খায়না।

আমরা আমাদের পত্রিকায় “ নিয়ন্ত্রণহীন ছাত্রলীগ” শিরোনামে এ কথাগুলোই তুলে ধরেছিলাম। আর ছাত্রলীগ সর্বশেষ এ কর্মকান্ড দিয়ে এ বক্তব্যকেই সত্যে প্রতিপন্ন করেছে। এদিকে দুই সাংবাদিক আহম্মদ ফয়েজ (সাপ্তাহিক বুধবার) এবং আনিস রায়হানকে (সাপ্তাহিক) মারধর করার ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। সামহোয়ার ইন ব্লগেও অনেকে প্রতিবাদ করেছেন। আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশ (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ের একাংশ (ডিইউজে) প্রতিবাদ বিবৃতিতে এই ন্যাক্কারজনক হামলায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এবং অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার ও বিচার দাবি করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা এ ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রক্টরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসশনের কয়েকজন দুই সাংবাদিককে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। উক্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সাপ্তাহিক বুধবারের নির্বাহী সম্পাদক আমীর খসরু শাহবাগ থানায় আহম্মদ ফয়েজের জীবনের নিরাপত্তা এবং ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এছাড়া সাপ্তাহিকের প্রধান প্রতিবেদক মাহিউদ্দিন নিলয় বাদী হয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন, এসএম হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সাদিদ জাহান সৈকতসহ অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

কিন্তু ঘটনার পর চার দিন অতিক্রম হলেও পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এতে আমরা আরো বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছি। আমরা আশা করবো সরকার মতপ্রকাশের অধিকারকে বন্ধনহীন করার প্রয়াসে এ ঘটনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.