আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশিষ্টজনদের প্রতিক্রিয়া : জনগণের দুঃসময়ে মন্ত্রী-এমপিদের বেতন বাড়ানো স্বার্থপরতা



দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ জনপ্রতিনিধিদের বেতন বাড়ানোর উদ্যোগকে জনগণের সেন্টিমেন্টের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শনের শামিল বলে মনে করেন বিশিষ্টজনরা। তারা বলেন, একদিকে গ্যাস, বিদ্যুত্ ও পানি সঙ্কট, অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনজীবন অতিষ্ঠ। নাগরিক দুর্ভোগ কমানোর প্রচেষ্টাই এখন সরকারের এক নম্বর কাজ। কিন্তু এমন খারাপ সময়ে জনপ্রতিনিধিরা ক্ষমতা পেয়ে নিজেদের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে ফেললেন, এটা কলঙ্কজনক অধ্যায়। তারা স্বার্থপরতার পরিচয় দিয়েছেন।

এ ইস্যুতে বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থানের প্রশংসা করে তারা বলেন, জনদুর্ভোগ কমাতে সংসদে বিরোধী দলকে আরও সোচ্চার ভূমিকা রাখতে হবে। প্রসঙ্গত, গত রোববার জাতীয় সংসদে ছয়টি পৃথক বিলের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, বিচারপতি এবং সংসদ সদস্যদের বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ বিলগুলোর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। নিজেদের বেতন বাড়ানোর বিরুদ্ধে এই প্রথম সংসদে বিরোধিতা করার দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো। এ বিষয় নিয়ে আমার দেশ-এর সঙ্গে কথা বলেছেন বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. তালুকদার মনিরুজ্জামান, বিশিষ্ট চিন্তাবিদ বদরুদ্দীন উমর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মাহবুবউল্লাহ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম।

ড. তালুকদার মনিরুজ্জামান : বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও জাতীয় অধ্যাপক ড. তালুকদার মনিরুজ্জামান বলেন, দেশের মানুষ কষ্টে আছে। বিদ্যুত্ নেই, গ্যাস নেই, পানি নেই—এটা এখন সব পরিবারের প্রধান বার্তা। এই জনদুর্ভোগ কমানোর প্রচেষ্টাই হওয়া উচিত সরকারের প্রধান কাজ। এ মুহূর্তে এমপি-মন্ত্রীদের বেতন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়ে সরকার বুঝিয়ে দিয়েছে, জনগণের বেঁচে থাকার অধিকারের চেয়ে নিজেদের সচ্ছলতার বিষয়টি তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তবে বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বেতন বাড়ানোর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে উচিত কাজটিই করেছেন বলে আমার মনে হয়।

বিরোধী দল হিসেবে এটা যথাযথ পদক্ষেপ হয়েছে। নাগরিক দুর্ভোগকে এক নম্বর সমস্যা ধরে বিরোধী দলও জাতীয় সংসদে ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, দু’নেত্রীর বিতর্ক ইতিবাচক। দু’নেত্রী যে পরস্পর কথা বলছেন, এটা আমাদের জন্য সুখবর। দু’নেত্রী সংসদে যাচ্ছেন। বেতনভাতা বাড়ানোর পদক্ষেপের সমালোচনা করে অধ্যাপক তালুকদার মনিরুজ্জামান বলেন, সরকার যেসব ক্ষেত্রে গণবিরোধী পদক্ষেপ নেবে কিংবা ব্যর্থতার পরিচয় দেবে, সেসব বিষয়ে বিরোধী দলকে সংসদে আরও সোচ্চার হতে হবে।

জনগণের দাবিগুলো নিয়ে তর্কবিতর্ক করলে ভালো হবে। বদরুদ্দীন উমর : বিশিষ্ট চিন্তাবিদ বদরুদ্দীন উমর বলেন, নিঃসন্দেহে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে জনগণের সঙ্গে নেতিবাচক আচরণ করেছেন। এর মাধ্যমে তারা প্রমাণ করেছেন, জনগণের দুর্ভোগ কমানোর চেয়ে নিজেদের ভালো থাকাটা তাদের কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। তবে বেতন বাড়ানোর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বেগম খালেদা জিয়াও মহিমান্বিত কাজ করেছেন, তা বলা যাবে না। কেননা তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকতেও জনপ্রতিনিধিদের বেতন বাড়িয়েছিলেন।

ক্ষমতাধররা জনগণের চেয়ে যে নিজেদের অধিক প্রাপ্তিকে গুরুত্ব দেন তা আবারও প্রমাণিত হলো। আজ দেশে বিদ্যুত্, পানি, গ্যাস সঙ্কট এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সময়ে শ্রমিক, শিক্ষক ও কম বেতনের কর্মচারীদের বিষয়টি ভাবা হয়নি। সরকারের এ উদ্যোগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিএনপিও এক্ষেত্রে ‘এক ঢিলে দুই পাখি মারা’র মতো অবস্থান নিয়েছে। তারা ভালো করে জানে, বিরোধিতা করলেও সংসদে এ বিল পাস হবে। আর তাতে তাদের সংসদ সদস্যরাও লাভবান হবে।

আবার বিরোধিতা করে কিছু রাজনৈতিক ফায়দাও নিলো বিএনপি। ড. এমাজউদ্দীন আহমদ : বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, গত এক বছরে হাজারো সমস্যায় মানুষের জীবন অতিষ্ঠ। ভয়ঙ্কর একটি সময় পার করছে দেশ। এমন সময়ে জনপ্রতিনিধিরা ক্ষমতা পেয়ে নিজেদের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে ফেলল, এটা কলঙ্কজনক অধ্যায়। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে এমন কর্মকাণ্ড অস্বস্তিকর।

এমনিতেই ৪৪ থেকে ৪৭ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে। মানুষের জীবন দুর্বিষহ। জনগণের কষ্টকে গুরুত্ব না দিয়ে বেতন বাড়াল। এজন্য অপেক্ষা করারও চিন্তা করল না। এটা জনগণের জন্য অপমানকর।

ড. মাহবুবউল্লাহ : বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মাহবুবউল্লাহ বলেন, জনগণ যখন চরম কষ্টে আছে, তখন সংসদে এ ধরনের একটি প্রস্তাব আসা এবং তা পাস করা জনগণের সঙ্গে মশকরা করার মতো। এর মাধ্যমে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেয়া হয়েছে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বিরোধী দল প্রতিবাদ করেছে। আমার মনে হয়, এক্ষেত্রে বিএনপি সঠিক রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েছে। ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে।

বিদ্যুত্, পানি ও গ্যাস সঙ্কটে নাগরিকরা বিপর্যস্ত, সেখানে নিজেদের বেতন বাড়িয়ে জনপ্রতিনিধিরা স্বার্থপরতার পরিচয় দিয়েছেন। এর মাধ্যমে জনগণকে ধিক্কার দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ উদ্যোগ প্রমাণ করে তারা নাগরিকের কষ্ট লাঘবে দায়িত্ব পালনে আগ্রহী নয়। এ পরিস্থিতিতে বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থানের প্রশংসা করে ড. ওবায়দুল বলেন, শিক্ষকসহ সব শ্রেণী-পেশার মানুষের জীবন দুর্বিষহ। এ পরিস্থিতিতে জনদুর্ভোগ নিয়ে বিরোধী দলের আরও সোচ্চার ভূমিকা পালন করা উচিত।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।