আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এবার লাশের মিছিলে ইলোরা : বখাটেদের উৎপাতের বলি



সিমি, পিংকি আর তৃষার পর এবার বখাটেদের উৎপাত সইতে না পেরে খোদ রাজধানীতে আÍহননের পথ বেছে নিয়েছে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী উম্মে কুলসুম ইলোরা (১৪)। শামিল হয়েছে লাশের মিছিলে। বখাটেদের যন্ত্রণা আর অপমানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চিরতরে বিদায় নিয়েছে এ দুনিয়া থেকে। শনিবার দুপুরে খিলগাঁওয়ের মধ্য নন্দিপাড়ার বাসায় বিষপান করে ইলোরা। গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ইলোরার মৃত্যুর খবরে তার স্বজনরা হাসপাতালে ভিড় করেন। তাদের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে হাসপাতালের বাতাস। নিহত উম্মে কুলসুম ইলোরা দক্ষিণ বনশ্রী মডেল স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। এদিকে এ ঘটনার উত্ত্যক্তকারী যুবক রেজাউলকে শনিবার রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। কুলসুমের মা হালিমা বেগম জানান, স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে রেজাউল নামের স্থানীয় এক যুবক প্রায় এক বছর ধরে তার মেয়েকে বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করে আসছিল।

তাদের বাসার সামনে বন্ধুদের নিয়ে প্রায় সময় আড্ডা দিত রেজাউল। বাসা থেকে বের হলেই পিছু নিত। মোবাইল ফোনে আজেবাজে কথা বলত। এসব ঘটনার পর প্রায় দেড় মাস আগে তার মেয়ে ইলোরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করা বন্ধ করে দেয়। হালিমা বেগম জানান, এসব ঘটনার পর তিনি নিজে বনশ্রী প্রজেক্ট হাইস্কুলে তার মেয়েকে নিয়ে যেতেন।

তিনি বলেন, অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় প্রায় এক সপ্তাহ আগে তিনি রেজাউলের বাবা-মা এবং এলাকার গণ্যমান্যদের কাছে এ বিষয়ে বিচার দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বৃহস্পতিবার স্কুলে নিয়ে যাওয়ার পথে হালিমা বেগমের সামনেই রেজাউল ও তার সঙ্গীরা ইলোরার হাত ধরে টানাটানি করে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে হালিমা বেগম বলেন, শনিবার বেলা ১টার দিকে স্কুল থেকে বাসায় আসে তার মেয়ে। তিনি নিজেই মেয়েকে স্কুল থেকে সঙ্গে করে নিয়ে আসেন। সবাই দুপুরের খাবার খেয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিল।

বিকাল ৪টার দিকে সবার অজান্তে ঘরের একটি কক্ষে কীটনাশক পান করে ইলোরা। এরপর অচেতন অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। চিকিৎসকরা কিশোরী মেয়েটিকে মৃত ঘোষণার পর আÍীয়-স্বজন কান্নায় ভেঙে পড়েন। মেয়ের বুকে মাথা রেখে চিৎকার করে হালিমা বেগম বলছিলেন, ‘ওরা আমার বুকের ধনকে বাঁচতে দিল না। এখন কে আমাকে মা বলে ডাকবে? তোরা আমার ইলোরাকে ফিরিয়ে এনে দে।

’ স্বজনদের কান্নায় তখন হাসপাতালের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। মা-বাবা ও ভাইবোনের বুকফাটা আর্তনাদ দেখে উপস্থিত অনেকের চোখ ভিজে যায়। কুলসুমের বড় ভাই বাবু জানান, রেজাউলের অত্যাচারের কারণে প্রায় ১৫ দিন আগে থেকে ইলোরাকে তার মা স্কুলে আনা-নেয়া করছিলেন। এর আগে সে স্কুল ভ্যানে যাতায়াত করত। রেজাউলের বিরক্তের কারণে কুলসুম যে মোবাইলটি ব্যবহার করত তাও গত দেড় মাস আগে বন্ধ করে দেয়া হয়।

এ ব্যাপারে রেজাউলের বাবা-মাসহ আÍীয়-স্বজনের কাছে অভিযোগ করেও লাভ হয়নি। তাদের কাছে অভিযোগ করলে তারা আমলেই নিতেন না। এ কারণে ইলোরার পড়াশোনা বন্ধ করে দেয়ার বিষয়টি তারা চিন্তা-ভাবনা করছিলেন। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার মায়ের সামনে ইলোরাকে অপমান করে রেজাউল ও তার বন্ধুরা। বাবু জানান, ১ ভাই ও ৪ বোনের মধ্যে কুলসুম সবার ছোট।

প্রায় ২ বছর আগে বড় বোন লিপি আগুনে পুড়ে মারা যান। অপর দুই বোন অপি ও অনিক স্কুলে পড়ে। উম্মে কুলসুম ইলোরার বাবা নিজাম উদ্দিন অডিট অফিসার। তাদের গ্রামের বাড়ি পাবনার বেড়া উপজেলার কাজীরহাটে। এ ব্যাপারে খিলগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ নাজিমউদ্দিন যুগান্তরকে জানান, শনিবার রাত সোয়া ১টায় নাসিরাবাদ ইউনিয়নের ত্রিমোহনী এলাকায় অভিযান চালিয়ে উত্ত্যক্তকারী রেজাউলকে গ্রেফতার করা হয়।

তাকে থানায় এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। সে এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত। রেজাউল ইলোরাকে উত্ত্যক্ত করার কথা স্বীকার করেছে। এর আগে রাজধানীর মিরপুরে বখাটে যুবকের যন্ত্রণা সইতে না পেরে মেধাবী ছাত্রী পিংকি আÍহত্যা করে। পরে তার কথিত প্রেমিক মুরাদকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

২০০১ সালে খিলগাঁওয়ে বখাটেদের উৎপাত সইতে না পেরে আÍহত্যা করেন নারায়ণগঞ্জ চারুকলার ছাত্রী সিমি। এসব ঘটনায় মামলা হলেও বিচারে অপরাধীদের বড় কোন সাজা হয়েছে তেমন জানা যায়নি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.