"সকল বস্তু তার বিপরীত বস্তুর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠে"
মহান আল্লাহর শান্তি ও রহমত রাসূল ﷺ এর উপর, তার পরিবার, সাহাবী ও কিয়ামত পর্যন্ত তাদেরকে যারা অনুসরণ করবে তাদের উপর অর্পিত হোক।
বর্তমান প্রজন্মের তরুনদের অনেকের মাঝেই একটি প্রশ্ন মাথায় ঘুরে-ফিরে কিন্তু তার যথাযোগ্য উত্তর তারা খুজে পাননা। প্রশ্নটি হচ্ছে, সঠিক দল কোনটি? কারণ, বর্তমান সময়ে প্রচলিত বিভিন্ন দল সমূহের কাছে আপনি যান তারা আপনাকে কোরআন এবং সুন্নাহ’র দলীল বের করে দেখাবে আর বলবে আমরাই হচ্ছি একমাত্র সঠিক দল, আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাহ’র অনুসারী। নীচের কথোপকথনটি এই বিষয়টি বুঝতে আরো সাহায্য করবে,
১ম জনঃ কি ব্যাপার বসে বসে কি ভাবছ?
২য় জনঃ ভাবছিলাম, সঠিক দল কোনটি? কারণ, যে দলের কাছে যাই না কেন তারা তো কোরআন-সুন্নাহ’র দলীল বের করে দেখায় আর সুন্দর ব্যাখ্যা প্রদান করে! কিন্তু রাসূল ﷺ বলেছেন, আমার উম্মাহ ৭৩ দলে বিভক্ত হবে যাদের মধ্যে মাত্র একটি দলই হবে জান্নাতী আর বাকীগুলো জাহান্নামী! তাহলে সঠিক দল কোনটি?
১ম জনঃ ঠিক বলেছ, যে দলের কাছেই যাই না কেন তারা কোরআন-সুন্নাহ’র দলীল বের করে দেখায় আর প্রত্যেক দলই তাদের নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে উল্লসিত। সত্যিই ভাবনার বিষয়….
এই বিষয়টি নিয়ে আলোকপাত করতে চেষ্টা করব, ইনশাল্লাহ বিষয়টি মুসলিম ভাইদের নিকট পরিস্কার হয়ে উঠবে।
ইমাম ইবনুল কায়্যিম রহিমাহুল্লাহ বলেঃ
“ইলম হচ্ছেঃ যা আল্লাহ তাআলা বলেছেন, যা আল্লাহর রাসূল ﷺ বলেছেন এবং যা রাসূল ﷺ এর সাহাবীরা বলেছেন। এগুলো এমন নয় যে এর মধ্যে কিছু মিথ্যা রয়েছে। রাসূল ﷺ এর সুন্নাহ এবং ফকীহদের(আলেমদের) মতামতের মধ্যে আমরা যে দ্রুততার সাথে অজ্ঞের মতো মতানৈক্যে পৌছে যাই তা ইলম নয়। ”
ইবনুল কায়্যিম রহিমাহুল্লাহ চমৎকারভাবে ইলমের সংজ্ঞা বলেছেন কিন্তু তিনি যে এই সংজ্ঞা দিয়েছেন তা কি নিজের ইচ্ছা মতো দিয়েছেন? না মোটেই তা নয়, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ তাকে যথেষ্ট ইলম দান করেছিলেন। ইবনুল কায়্যিম রহিমাহুল্লাহ ইলমকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন,
প্রথম ভাগ হচ্ছে, যা আল্লাহ বলেছেন;
দ্বিতীয় ভাগ হচ্ছে, যা রাসূল ﷺ বলেছেন এবং
তৃতীয় ভাগ হচ্ছে, যা সাহাবীরা বলেছেন।
এর প্রমাণ কি? হয়তো অনেকের মাঝেই এই প্রশ্ন জেগে উঠেছে।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় ভাগের প্রমাণ হচ্ছে, রাসূল ﷺ এর নিম্নোক্ত হাদীসটি, যেটি একটি মুতাওয়াতির* হাদীস এবং বুখারী ও মুসলিম উভয়েই তাদের সহীহ গ্রন্থতে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন।
*মুতাওয়াতিরঃ যে হাদীসের সনদ সকল স্তরেই বর্ণনাকারীর সংখ্যা এত বেশী যে, তাদের সকলে একত্রিত হয়ে মিথ্যা কথা রচনা বা বলা স্বভাবতই অসম্ভব বলে মনে হয়, এইরুপ হাদীসকে হাদীসে মুতাওয়াতির বলে।
হাদীসটি হচ্ছেঃ “মানবজাতীর মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে আমার প্রজন্ম……” (বুখারী ও মুসলিম)
অর্থাৎ যে প্রজন্মের মধ্যে রাসূল ﷺ এবং তার সাহাবীরা বর্তমান ছিলেন।
আর তিনটি ভাগেরই প্রমাণ হচ্ছে, কোরআনের এই আয়াতটি,
“যে ব্যক্তি তার কাছে প্রকৃত সত্য স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর রাসূলের বিরুদ্ধচারণ করবে এবং বিশ্বাসীদের অনুসৃত পথ ছেড়ে অন্য পথ অনুসরণ করবে, তাকে আমি সেই দিকেই পরিচালিত করব যেদিকে সে ধাবিত হয়েছে, তাকে আমি জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো, (আর) তা কত নিকৃষ্ট আবাসস্থল” (সূরা নিসাঃ ১১৫)
আল্লাহ তাআলা আলোচ্য আয়াতে, সত্য স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর রাসূলের বিরুদ্ধচারণ করবে – বলে থেমে যাননি, বরং তিনি বলেছেন, “যে ব্যক্তি তার কাছে প্রকৃত সত্য স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর রাসূলের বিরুদ্ধচারণ করবে এবং বিশ্বাসীদের অনুসৃত পথ ছেড়ে অন্য পথ অনুসরণ করবে, এই বিশ্বাসীদের পথ বলতে বুঝানো হয়েছে রাসূল ﷺ এর সাহাবীদের।
কারণ,
রাসূল ﷺ আমাদের নিকট কোরাআনের ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন, যাকে আমরা তিন ভাগে ভাগ করতে পারি।
এক. রাসূল ﷺ এর কথা বা বক্তব্য
দুই. রাসূল ﷺ এর কাজ
তিন. রাসূল ﷺ এর মৌন সম্মতি।
এখন,
কারা রাসূল ﷺ এর কথা বা বক্তব্য শুনেছেন এবং কারা আমাদের নিকট রাসূল ﷺ এর কথা বা বক্তব্য পৌছে দিয়েছেন ? উত্তরঃ সাহাবীরা।
কারা আমাদের নিকট রাসূল ﷺ এর কাজের বর্ণনা পৌছে দিয়েছেন? উত্তরঃ সাহাবীরা।
রাসূল ﷺ কাদের কথা, কাজের মৌন সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন? উত্তরঃ সাহাবীদের।
এই সাহাবীদের বিষয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন,
“মোহাজের ও আনসারদের মাঝে যারা প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং পরবর্তীতে যারা তাদের একদম যথার্থভাবে অনুসরণ করেছে। আল্লাহ তাআলা তাদের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও আল্লাহ তাআলার উপর সন্তুষ্ট হয়েছে, আল্লাহ তাআলা তাদের জন্যে এমন এক (সুরম্য) জান্নাত তৈরী করে রেখেছেন যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে; আর তাই (হবে) সর্বোত্তম সাফল্য। ” (সূরা তওবাঃ ১০০)
মোহাজেরঃ মোহাজের হচ্ছে তারাই যারা মক্কা থেকে মদীনাতে হিজরত করেছিলেন।
আনসারঃ যারা মদীনার অধিবাসী ছিলেন, যারা মোহাজেরদের সাহায্য করেছিলেন।
রাসূল ﷺ বলেন,
“আমার উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রজন্ম আমার প্রজন্ম...” (বুখারী ও মুসলিম)
রাসূল ﷺ এর এই সুপরিচিত হাদীসটি কথা প্রায় সবাই জানেন,
“আমার উম্মত ৭৩ ভাগে বিভক্ত হবে, যাদের মধ্যে একটি ব্যতীত সবগুলোই জাহান্নামে যাবে”।
সাহাবীরা জিজ্ঞেস করেছিল, কারা সেই দল ওহে আল্লাহর রাসূল? তিনি বলেছিলেনঃ এটি হচ্ছে জামাহ।
এই হাদীসটির আরেকটি বর্ণনা ধারা রয়েছে যেখানে এই জামাহ শব্দটির ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। যেখানে রাসূল ﷺ বলেছেনঃ এটি হচ্ছে সেই দল, যে দলে আমি এবং আমার সাহাবীরা রয়েছি।
এখন আয়াতটি পুনরায় পড়ে দেখুন,
“যে ব্যক্তি তার কাছে প্রকৃত সত্য স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর রাসূলের বিরুদ্ধচারণ করবে এবং বিশ্বাসীদের অনুসৃত পথ ছেড়ে অন্য পথ অনুসরণ করবে, তাকে আমি সেই দিকেই পরিচালিত করব যেদিকে সে ধাবিত হয়েছে, তাকে আমি জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো, (আর) তা কত নিকৃষ্ট আবাসস্থল” (সূরা নিসাঃ ১১৫)
আল্লাহ তাআলা আলোচ্য আয়াতে, সত্য স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর রাসূলের বিরুদ্ধচারণ করবে - বলে থেমে যাননি, বরং তিনি বলেছেন, “যে ব্যক্তি তার কাছে প্রকৃত সত্য স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর রাসূলের বিরুদ্ধচারণ করবে এবং বিশ্বাসীদের অনুসৃত পথ ছেড়ে অন্য পথ অনুসরণ করবে, এই বিশ্বাসীদের পথ বলতে বুঝানো হয়েছে রাসূল ﷺ এর সাহাবীদের।
এই সাহাবীরাই হচ্ছেন বিশ্বাসী, এখন কেউ যদি এই সাহাবীদের অনুসৃত পথ ছেড়ে নিজের আবিস্কৃত কোন পথ, মতের অনুসারী হয় তাহলে তার গন্তব্যস্থল যে জাহান্নাম সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।
আজ এই বিষয়টি আমরা ভুলে গেছি। আজকে আমাদের মাঝে যারা ইসলামের দাওয়াতের কাজ করেন বা যতগুলো ইসলামী দল আছে তারা কি এই বিশ্বাসীদের অনুসৃত পথ মেনে চলেন? তারা কি তাদের দাওয়াতে, ইসলামের ব্যাখ্যা প্রদানে এই বিশ্বাসীদের অনুসৃত পথের ব্যাখ্যা দেন? উত্তরটি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হবে, না! কারণ, অধিকাংশ মানুষই আজ নিজস্ব প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, নিজে যা বুঝে তাই দিয়ে দল, মত গঠন করেছেন আর তাদের সেই নিজস্ব মতবাদ ইসলামের নামে প্রচার করে বেড়াচ্ছেন। আর যার কারণে আজ অমুক ইসলাম, তমুক জামাত, অমুক জোট, তমুক শাসনতন্ত্র প্রভৃতি গড়ে উঠেছে। সবাই বলবে আমরা কোরআন ও সুন্নাহ’র অনুসারী কিন্তু তারা বিশ্বাসীদের অনুসৃত পথের বাইরে যেয়ে চলছেন তা মেনে নিবেন না। পূর্বে বিভিন্ন বাতিল দলের আবিভার্ব হয়েছিল যেমনঃ খারেজী, বাতেনী, মাতুরিদি, মুতাজিলা, আশ’আরী প্রভৃতি।
প্রতিটি দলই বলতো আমরা কোরআন ও সুন্নাহর অনুসারী কিন্তু বাস্তবে তারা ছিল তাদের নিজস্ব প্রবৃত্তির অনুসারী। তারা ইসলামের ব্যাখ্যা নিজেরা যা বুঝতো তাই দিতো, কোরআনের তাফসীর নিজেরা যা বুঝে তাই বলে বেড়াতো। বর্তমানে এই সব সম্প্রদায়ের আগের মতো দল হিসেবে বলিষ্ঠ পরিচিতি নেই কিন্তু তার চেয়েও মারাত্মক আকার ধারণ করে একই মতালম্বী লোকজন আজ সব দলের সাথে মিশে গেছে আর সবাই বলে বেড়াচ্ছে আমরা কোরআন ও সুন্নাহর অনুসারী। কাদেয়ানী সম্প্রদায়, তাদের কাছে যান তারাও বলবে আমরা কোরআন ও সুন্নাহ’র অনুসারী!
হয়তো অনেকের নিকট বিষয়টি পরিস্কার হচ্ছে না, ছোট একটা উদাহরণ দেই ইনশাল্লাহ বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে। জামাতে নামাজে কাতার সোজা করে দাড়ানোর নিয়ম কি? সাধারণত মসজিদগুলোতে কাতার বরাবর সোজা দাগটানা থাকে আর সেগুলো বরাবর দাড়ানোকেই কাতার সোজা বলে অভিহিত করা হয়।
কিন্তু বিশ্বাসীরা(সাহাবীরা) কি এভাবে দাড়াতেন?
নু’মান ইবনে বশীর (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেনঃ তোমরা অবশ্যই কাতার সোজা করে নিবে, তা না হলে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের মাঝে বিরোধ সৃষ্টি করে দিবেন।
আনাস (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল ﷺ বলেনঃ তোমরা কাতার সোজা করে নাও। কেননা, আমি আমার পিছনের দিক থেকেও তোমাদের দেখতে পাই। আনাস (রা) বলেন, আমাদের প্রত্যেকেই তার পাশ্ববর্তী ব্যক্তির কাঁধের সাথে কাঁধ এবং পায়ের সাথে পা মিলাতাম। (উভয় হাদীস সহীহ বুখারীর আযান অধ্যায় থেকে নেওয়া হয়েছে)
যে দলগুলো ইসলাম নামধারী তারা জামাতে নামাজে এভাবে দাড়ায় কি? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উত্তর, না।
কাঁধের সাথে কাঁধ এবং পায়ের সাথে পা মিলানো তো দূরের কথা মাঝে যথেষ্ট জায়গা রেখে দাড়ান, গরম কাল আসলে তো কথাই নেই যতদূর পারা যায় সরে সরে দাড়ানো হয় আবার একটু মলিন কাপড়-গরীব হলে নাক সিটকানো মনোভাব চলে আসে। যে লোকগুলো বলে বেড়ায় আমরা ইসলাম কায়েম করবো, বয়ান হবে বহুত ফায়দা হবে অথচ তারা জামাতে নামাযেই আল্লাহর সামনেই ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে পারল না, বিশ্বাসীদের অনুসৃত পথ অনুসরণ করতে পারল না, সে লোকগুলোর দ্বারা মসজিদের বাইরে এসে কিভাবে ইসলাম কায়েম হবে? রাসূল ﷺ সত্যই বলেছেন, তোমরা অবশ্যই কাতার সোজা করে নিবে, তা না হলে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের মাঝে বিরোধ সৃষ্টি করে দিবেন। আজকে দেখুন এই ইসলাম নামধারী দলগুলো মানুষগুলোর মধ্যে কত বিরোধ! তাদের মাঝে কতই না মতের অমিল! একদল আরেক দলকে শত্রু ঠাওর করে বেড়ায়।
এখানে শুধু ছোট একটি উদাহরণ দিলাম, এরকম আরো অনেক কাজ রয়েছে যা বর্তমান প্রচলিত ইসলামী দলগুলো শুধু অবহেলাই না বরং কতিপয় ক্ষেত্রে গুরুত্বহীন মনে করে আর বলে বেড়ায় আগে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করতে হবে তারপর এসব। এই দলগুলো কি বুঝাতে চায়? তারা কি নিজেদের ভিত্তিহীন মতবাদকে বিশ্বাসীদের(সাহাবীদের) চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে করে? অবস্থাদৃষ্টে তাই মনে হয়।
কোরআন ও হাদীসের মনগড়া ব্যাখ্যা দেওয়া, এমন সব কথা বলা, এমন কর্মপদ্ধতীর অনুসরণ করা যা সর্বশ্রেষ্ঠ তিনটি প্রজন্মের কেউই করেন নি।
ইরবাদ ইবনে সারিয়াহ (রা) কর্তৃক বর্ণিত,
আল-ইরবাদ বলেনঃ একদিন আল্লাহর রাসূল ﷺ আমাদের জামাতে নামাজে ইমামতি করলেন, এরপর আমাদের দিকে ঘুরে বসলেন এবং দীর্ঘক্ষণ আমাদের উপদেশ দান করলেন এবং এক সময় তার চোখ দিয়ে অশ্রু পতিত হচ্ছিল এবং তার হৃদয় সন্ত্রস্থ হয়ে গিয়েছিল।
একজন লোক বললোঃ ওহে আল্লাহর রাসূল! এটি বিদায়ী ভাষণ বলে মনে হচ্ছে, কাজেই আপনি আমাদেরকে কি করতে হবে বলে আদেশ করেন?
তারপর তিনি ﷺ বল্লেনঃ আমি তোমাদের আল্লাহকে ভয় করতে নির্দেশ দিচ্ছি এবং একজন আবিসিনিয়ান দাসের ( যদি সে মুসলমানদের নেতা হয়) কথা শুনবে এবং মান্য করবে, যারা আমার পর জীবিত থাকবে তারা অনেক অনৈক্য দেখতে পাবে। তখন তোমরা আমার সুন্নাহকে এবং আমার পর সঠিক পথে পরিচালিত খলিফাদের অনুসরণ করবে। একে আকড়ে ধরে রাখবে।
নতুন উদ্ভাবন পরিত্যাগ করবে, (দ্বীন ইসলামে) প্রত্যেক নতুন উদ্ভাবনই বিদআহ আর প্রত্যেক বিদআহই হচ্ছে পথভ্রষ্টতা। (Model Behavior of the Prophet (Kitab Al-Sunnah) , Dawud :: Book 40 : Hadith 4590)
রাসূল ﷺ এর সুন্নাহ’র একনিষ্ঠ অনুসারী কারা সাহাবারা। যার দলিল হচ্ছে মুতওয়াতির হাদিসটি –
রাসূল ﷺ বলেন,
“আমার উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রজন্ম আমার প্রজন্ম...” (বুখারী ও মুসলিম)
অর্থাৎ প্রথম প্রজন্ম হচ্ছে আমাদের সামনে ইসলামের মডেল। একনিষ্ঠ অনুসরণ করতে হবে তাদের, তারা যেভাবে ইসলামকে বুঝেছিল, যেভাবে পালন করেছিল সেভাবেই পালন করতে হবে। এই দলটিই হচ্ছে একমাত্র দল কারণ, রাসূল ﷺ বলেছেনঃ এটি হচ্ছে সেই দল, যে দলে আমি এবং আমার সাহাবীরা রয়েছি।
বিষয়টি এমন নয় যে, আমার মনে যা ভাল লাগল তাই শুধু মানলাম আর বাকীগুলো ভাল লাগলো না বা মনে সায় দিল না বলে অমান্য করলাম। এমন যদি হয় তাহলে সে প্রকৃত মুসলামনই নয় বরং তার মাঝে মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান তাতে কোনই সন্দেহ নেই। আজ এত এত দল অমুক ইসলাম, তমুক জামাত, অমুক ঐক্যজোট, তমুক শাসনতন্ত্র প্রভৃতি ইসলামের নামে এমনসব কাজ করে বেড়াচ্ছে যা মুসলমানদের ক্ষতি ব্যতীত আর কিছুই হয়নি। তাদের কার্যক্রমে মুসলিমরা দিশেহারা হয়ে আজ মুসলিম হয়েও, ইসলাম নামক নিয়ামতটি পেয়েও ইসলাম কি সে সম্পর্কে অজ্ঞ।
তাই রাসূল ﷺ এর সুন্নাহকে সম্পূর্ণ আকড়ে ধরার কোনই বিকল্প নেই, ইসলামকে বুঝতে হবে সাহাবীদের মতো করে।
নতুন কোন ব্যাখ্যা, নতুন কোন পদ্ধতী আবিস্কার করা যাবে না কারণ সেটা যে বা যারা করবে তারা বিশ্বাসীদের অনুসৃত বাইরে চলে যাবে। আর বিশ্বাসীদের অনুসৃত বাইরের পথের গন্তব্যস্থল জাহান্নাম। সঠিক দল একটাই আর তারা হল রাসূল ﷺ এর সুন্নাহ’র একনিষ্ঠ অনুসারী, বিশ্বাসীদের(সাহাবাদের) অনুসৃত পথের অনুসারী। এর বাইরে আর যত মত ও পথ, যত ব্যাখ্যা, যত আকর্ষণীয় হোক না কেন সেগুলো যে বাতিল তাতে কোনই সন্দেহ নেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।