আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাক্ষাৎকার : মনসুর আজিজ/সক্ষাৎকার গ্রহণ: ওরওয়া জাফরান//নিব ৩৪



? সময়কে ছড়া ধারণ করে না ছড়া সময়কে ধারণ করে Ñ ধন্যবাদ নিবপরিবারকে ছড়া নিয়ে আমাকে কিছু কথা বলার সুযোগ দেয়ার জন্য। পাঠকদেরকে ছড়াশুভেচ্ছা জানাচ্ছি। দুটো কথাই ঠিক। আমরা যখন পড়ছি- ‘ধান ফুরোল পান ফুরোলো খাজনার উপায় কি/আর কটা দিন সবুর করো/রসুন বুনেছি’ তখন কিন্তু একটা সময়ের সমাজচিত্র আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। আবার যখন পড়ছি- কর্ণফুলির ব্যাঙ ডাকছে হাঁড়িতে আজকাল’ (আল মাহমুদ) ‘রক্ত দিয়ে পেলাম শালার আজব স্বাধীনতা’ (আবু সালেহ) এটা দেবো ওটা দেবো/চন্দন ফোঁটা দেবো/বাঁশ দেবো শক্ত।

/ এতটুকু ঝরবে না রক্ত (সাজজাদ হোসাইন খান) তখন কিন্তু আমাদের চোখের সামনে এক একটা সময়ের সমাজচিত্র ভেসে ওঠে। মানুষের সামাজিক জীবন, রাজনৈতিক জীবন ভেসে ওঠে। এখানে সময়কে ছড়া ধারণ করেছে আবার ছড়াও সময়কে ধারণ করেছে। ? অসমান্তরাল ছড়ার মাঝে অসমান্তরাল ছড়া কি তার রূপ যৌবন হারিয়ে ফেলে না Ñ ছড়ার বিন্যাস একসময় পয়ার ছিল। এরপর এর বিন্যাস সমান্তরাল অসমান্তরাল নানা দিকে বাঁক নিয়েছে।

ছড়ার েেত্র বৈচিত্র্য এসেছে। আপনি যদি প্রথম লাইনে চারমাত্রা দেন আবার দ্বিতীয় লাইনে দশ মাত্রা দেন আবার তৃতীয় লাইনে এসে ছয় মাত্রা আর চতুর্থ লাইনে এসে দুইমাত্রা করেন তাহলেও এটা অসমান্তরাল হবে। কিন্তু পাঠক পথ চলতে গেলে নুড়িরর মিছিলে বারবার হোচট খেয়ে পড়ে যাবে। অসমান্তরাল বিন্যাস যদি একটি কাঠামোর ভিতর দিয়ে করা যায় তাহলে পাঠক চলার পথে একটা ছন্দময় আনন্দ পাবে। তাতে সমান্তরাল বিন্যাসের একঘেয়েমি থেকে পাঠকমন ছড়ার নতুন স্বাদ পেতে পারে।

অসমান্তরাল বিন্যাসে কাজী নজরুল ইসলামই সবচেয়ে বেশি নতুনত্ব এনেছেন। এখন তরুণদের ভিতর এর প্রবণতা বেশি চোখে পড়ে। আমাকে আকৃষ্ট করে। আমি বিমোহিত হই। আবার অনেকের লেখায় বিরক্তি এসে যায়।

মূল কথা হল আপনি সমান্তরাল লিখলেন না অসমান্তরাল লিখলেন সেটা বড় কথা নয়, লেখাটায় লেখার গুণ, ছড়ার গুণ কতটা ধারণ করতে পেরেছে সেটাই মূল কথা। অসমান্তরাল ছড়া তার রূপ যৌবন হারাতে যাবে কেন? কিশোরী তো তার রূপ হারাতে পারে না। অসমান্তরাল বিন্যাসটা আমার কাছে চপল চঞ্চল কিশোরীর মতোই মনে হয়। ? বর্তমানে যে জটিল সময় আমরা আবর্তন করছি সেখানে ছড়া কিরূপ স্বার রাখছে Ñ চমৎকার স্বার রাখছে। অতীতের তুলনায় ছড়াকারগণ এখন অনেক বেশি সাহসী।

আগের তুলনায় ছড়াকারগণ অনেক বেশি স্বাধীনতা ভোগ করছেন। আগের ছড়াকাররা পশুপাখি ও নানা প্রতীক ব্যবহার করে তাদের মনের আকুতি ছড়ায় প্রকাশ করতেন। এখনকার বক্তব্য অনেক সরাসরি। বর্তমান জটিল সময়ে সরকারের সরাসরি সমালোচলা করেও ছড়া লেখা হচ্ছে, মানুষের দুর্ভোগ, দুর্দশা, সামাজিক অবয় সরাসরি উঠে আসছে ছড়ায়। এমনকি সাম্রাজ্যবাদ, বর্ণবাদ, সামন্তবাদ, যুদ্ধ, পরিবেশ সংরণ প্রত্যেকটি জটিল মুহুর্তেই ছড়াকারগণ সোচ্চার।

একটি জরুরি সরকারের অধীনে আমরা দুটি বছর পার করেছি । সেখানেও ছড়াকারদের সাহসী পঙক্তি সময়ের স্বার রেখেছে। টিপাইবাঁধের বিরুদ্ধে ছড়াকারদের সাহসী উচ্চারণ পরিবেশবাদী, রাজনৈতিক -সামাজিক সংগঠনকেও এগিয়ে আসতে ভূমিকা পালন করেছে। ? অনেকে ছড়া ও ছড়াকবিতার বিদ্যমান পার্থক্য স্বীকার করছে না। এতে কি দুটি বিষয়ের বিলুপ্তি ঘটে নতুন কিছু সৃষ্টি হবে, না ছড়া কবিতার মধ্যে একটি জটিলতা সৃষ্টি করবে? Ñ ঢালাওভাবে সবার েেত্র এটা বলা ঠিক নয়।

কিশোরকবিতা আর ছড়াকবিতা এক নয়। একটা সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে। অনেকে তো ছড়াকেও কবিতা বলতে চান। ছড়াও এক ধরনের কবিতা। কবিতার গুণ ছড়ার ভিতর থাকলে তা কবিতাও হতে পারে।

আবার অনেক কবিতায় ছড়ার গুণও ল্য করা যায়। তাই বলে কিন্তু কবিতা ছড়া হয়ে যায় না বা ছড়া কবিতা হয়ে যায় না। কিশোরকবিতার কিছু চারিত্র্য আছে। কিশোরবেলার বিস্তৃত, সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম, অনুসন্ধিৎসু বিষয় আশয়, জানা অজানা নানা বিষয় উঁকি দেয় কিশোর কবিতার জানালায়। যে কবিতা ছড়ার ঢঙে লেখা হয় তা ছড়া কবিতা।

একটি বক্তব্যের প্রকাশ এতে থাকে। কিশোর কবিতাকিশোর মনের ভাবনাকাশে উঁকি দেয়। কখনো কিছু বলে, কখনো মুখটিপে হেসে চলে যায়। কিন্তু ছড়া কবিতায় এই আলো আঁধারী চলে না। মনে হয় না দুটি বিষয়ের বিলুপ্তি ঘটবে।

এগিয়ে যাবে আরো পরিশীলিত রূপে। আগে তো এই দুটো বিষয় নিয়ে আলাদা বিশ্লেষণও দেখা যায়নি। কেউ যদি দুটো বিষয়কে একত্র করে কবিতা লেখে; যাতে কিছুটা কবিতা থাকবে আবার কিশোরকবিতার লুকোচুরি থাকবে। তাতে করে একটি কবিতা হবেÑ সেটাকে যে নামেই ডাকা হোক না কেন। ? বর্তমান সাহিত্যে ছড়া একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পমাধ্যম।

কিন্তু ছড়াকারদের সে তুলনায় গুরুত্ব প্রদান করা হচ্ছে না, কেনো? Ñ ছড়া নিঃশন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পমাধ্যম। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে সাহিত্য েেত্র ছড়াকাররা সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। যার কারণে অনেকেই ট্র্যাক পরিবর্তন করেন। শুধু ছড়াকার হিসেবে পরিচিত এরকম লেখকের সংখ্যা হাতে গোনা। ‘ছড়া একটা বিষয় হলো না কি’Ñ এরকম একটা নাক সিঁটকানো ভাব থেকেই ছড়াকারদের গুরুত্ব প্রদান করা হচ্ছে না।

এজন্য ছড়াকাররাও কম দায়ী নয়। একটা কথা আছে আদায় করে নিতে হয়। কবিতা নিয়ে প্রবন্ধ নিবন্ধ বের হয়। কবিতার আলোচনা সমালোচনা সাহিত্য রয়েছে। কিন্তু ছড়ার নেই।

রবীন্দ্র নজরুল জীবনানন্দের কবিতাকে নানাভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। কিন্তু ছড়া! সুকুমার রায়ের ছড়ার শিল্পগুণ, অন্নদা’র ছড়ার বিষয়বৈচিত্র্যÑ এরকম কোনো প্রবন্ধ বা গবেষণা কি আমাদের হাতে আছে? নেই। একটি কবিতার বই বের হলে তার গ্রন্থালোচনা হয়। কবিরা করেন। কিন্তু ছড়া! ছড়ার বইয়ের তীè আলোচনা সমালোচনা হয়? হয় না।

ছড়াকারদের গদ্য রচনায় এগিয়ে আসতে হবে। সাহিত্যপাতায় ছড়ার জন্য জায়গা করে নিতে হবে। এটি একটি সামষ্টিক উদ্যোগ। কোন ব্যক্তির একার পে এটি করা সম্ভব নয়। সরকারও তার দায় এড়াতে পারেন না।

ছড়াকার সংখ্যালঘু স¤প্রদায় নয়। বাংলা একাডেমিসহ অন্যান্য সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে। একটি হাউজিং কোম্পানীর বিজ্ঞাপনে যে টাকা খরচ হয় তা দিয়ে পঞ্চাশটি ছড়ার বই বের হতে পারে। পাঁচ জন ছড়াকারকে সম্মাননা দেয়া যায়। সামাজিক দায়িত্ব ছড়াকার এড়িয়ে যান না।

তাদেরও যাওয়া উচিৎ নয়। নিব উৎসঙ্গ সৃজন চিন্তনের একটি শোভণ ছড়াপত্র বর্ষ-দশ, সংখ্যা-৩৪, মার্চ-২০১০

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.