? অনেকে অভিযোগ করে বর্তমানে সমাজনির্ভর ছড়া লেখা হচ্ছে না
- প্রশ্নটা বিতর্কিত- আমার মনে হয়, সামগ্রিক অর্থে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ছাড়ার ক্ষেত্রে অভিযোগটা যথার্থ নয়। একসময় এ অভিযোগটা জোরালোভাবে শোনা যেতো কিন্তু এখন তেমন একটা শোনা যায় না। বরং আমি বলবো, এখন প্রচুর পরিমাণে সমাজনির্ভর ছড়া লেখা হচ্ছে এবং প্রচুর সংখ্যক ছড়ালেখকও বেরিয়ে এসেছে। তবে যথেষ্ট মানসম্পন্ন ও ভালো ছড়া লেখা হচ্ছে না- এ অভিযোগ তুমি করতে পারো
? বর্তমানে অণুকাব্যের নামে পর্নোছড়া লেখা হচ্ছে আপনার অভিমত কি
-হ্যাঁ, এটা ঠিক যে, অণুকাব্যের নামে পর্নোছড়াও কেউ কেউ লিখছে। ফলে ছড়ার মানক্ষুন্ন হচ্ছে এবং এতে ছড়ার ঐতিহ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
আমার মনে হয়, পর্নোছড়ার লেখকরা ছড়া ও কাব্য বা কবিতার আসল পার্থক্যটাই বোঝে না কিংবা ছড়া লিখতে না পারার ব্যর্থতা ঢাকার জন্যই অণুকাব্যের আশ্রয় নিচ্ছে, আরকী? প্রসঙ্গত: বলি- ইদানিং অনেক ছড়াই আমি পড়ি কিন্তু তা ছড়া-কবিতা কোনোটাই হয়ে ওঠে না। আসলে ছড়া লেখাটা অতো সহজ নয়, ছড়া লেখার আগে তাই যথার্থ ছন্দজ্ঞান ও ছড়ার বেশিষ্ট্যটাই রপ্ত করা চাই
? এখন রাজনৈতিক ছড়া বেশি লেখা হচ্ছে তেমন শিশুতোষ রচনা দেখা যায় না কেনো
-জীবনের সবদিক নিয়েই এখন ছড়া লেখা হচ্ছে বলে রাজনৈতিক ছড়াকেও উপেক্ষা করা চলবে না। তবে রাজনৈতিক ছড়ার ভিড়ে প্রকৃত ছড়া অর্থাৎ শিশুতোষ ছড়া ও শক্তিমান ছড়াশিল্পীর আবির্ভাব খুব একটা ঘটছে না, এটাই আশংকার বিষয়। আমার মনে হয় না যে, রাজনৈতিক ছড়ার কারণে সামাজিকতা উপেতি হচ্ছে। তবে ছড়াকারদের সরাসরি রাজনৈতিক ছড়া লেখাটা একদম অনুচিৎ অর্থাৎ কোনো রাজনৈতিক দলের পাবলম্বন করে ছড়া লেখা ঠিক নয়।
কেনো না ছড়াশিল্পী আর রাজনৈতিক কর্মী কনোই একসত্তা হতে পারে না
? অনেকেরই অভিযোগ মানসম্পন্ন বা অলংকারসমৃদ্ধ ছড়া খুব একটা লণীয় হচ্ছে না
- আমাদের পথপ্রদর্শক ও অগ্রজ শক্তিমান ছড়াকারদের আদলে বর্তামানে অনেকেই ছড়ালেখায় মনোযোগী নয়। আগেই বলেছি এজন্যই এখন মানসম্পন্ন বা অলংকারসমৃদ্ধ ছড়া খুব একটা লণীয় হচ্ছে না। বুঝেই হোক আর না বুঝেই হোক অনেকেই ভুলে যান যে, ছড়া মূলত: চটুলছন্দে রচিত নিরেট ছন্দপ্রধান একটা শিল্প যা পাঠকের মনে রিদম বা ঢেউ সৃষ্টি করে, হৃদয়-মন আন্দোলিত করে। প্রকৃতপে ছড়া ছন্দনির্ভর আদৌ বক্তব্যনির্ভর নয়- একথা ভুললেই ছড়া কিন্তু আর ছড়ার স্থানে থাকে না। ছড়ার অলংকারই হচ্ছে চটুলছন্দ।
কিন্তু দুখের বিষয় যে, আজকাল এমন ছড়া লেখা হচ্ছে যা নামেই ছড়ামাত্র এবং একারণেই জনপ্রিয় ছড়াও তেমন সৃষ্টি হচ্ছে না
? ছন্দকে ছড়া না ছড়াকে ছন্দ করায়ত্ত করবে
- এটা একটা কঠিন ও বিতর্কিত প্রশ্ন্। মুরগি আগে না ডিম আগের মতো আরকি? আসলে ছন্দই হচ্ছে ছড়ার প্রাণ ও অলংকার- ছড়াতে বক্তব্যটা অগ্রাধিকার পায় না। অগ্রাধিকার পায় সুন্দর সুন্দর ও আকর্ষণীয় ছন্দবন্ধ এবং ছন্দিত বাক্য। সুতরাং ছন্দকে ছড়া না ছড়াকে ছন্দ করায়ত্ব করবে- এ বিতর্কে না গিয়ে বরং বলি, ছড়াকারই ছন্দকে করায়ত্ব ও রপ্ত করার মাধ্যমেই আমাদের আকর্ষণীয় ছড়া উপহার দেবে। এক্ষেত্রে শক্তিমান ও দক্ষ ছড়াশিল্পীর ভূমিকাটাই মুখ্য
? সময়ই কী ছড়ার জন্মবেদনা
- সময়ের প্রয়োজনে আমরা ছড়া লিখি- কথাটা আংশিক সত্য।
প্রকৃতপে আমরা জীবনের জন্যই ছড়া লিখি-যে ছড়া সময়কেও অতিক্রম করে যেতে পারে, কালের স্রোতে হারিয়ে যাবার ভয় থাকে না। যুগযুগ ধরে প্রচলিত এধরনের অসংখ্য ছড়াই এর উদাহরণ এবং এখনো আমাদের সমাজে তা প্রচলিত ও সমানভাবে জনপ্রিয়। জীবনতো আসলে একার্থে সময়ের যোগফলমাত্র। তাই সময়কে ছড়ার জন্মবেদনা বলতে আপত্তি নেই আমার
? তরুণ ছড়াকাররা নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে এটা সমর্থনযোগ্য
- তুমি বলছো- তরুণ লেখকরা ছড়ায় নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে। হ্যাঁ এটা ভালো ক্ষলণ যদি ওতে ছড়ার মানোন্নয়ন তথা ছড়ার গঠনশৈলী, অবকাঠামো, ছন্দ-মাত্রা ইত্যাদি বিষয়ে নতুনত্ব আনার প্রয়াস থাকে।
তাহলে তো এটা শুধু সমর্থনযোগ্যই নয় অনুপ্রেরণাযোগ্যও বটে
সাক্ষাৎকারগ্রহণ: আফসার নিজাম
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।