আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যুদ্ধপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ, সাধুবাদ জানাই…………



অবিশ্বাস্য সংখ্যাগরিস্টতা পেয়ে ক্ষমতায় আসা মহাজোট সরকার যুদ্ধপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে। বিচারক, তদন্তকারী এবং আইনজীবী প্যানেল চুড়ান্ত করা হয়েছে। সরকারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। যুদ্ধপরাধী হিশাবে অভিযুক্তদের অধিকাংশই জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সাথে জড়িত। জামাত-শিবিরের প্রতি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বলে পরিচিত মহল যে দৃস্টিভঙ্গী পোষন করেন, তার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, আমার নিজের দৃস্টিভঙ্গী তার চাইতে অনেকটাই আলাদা।

আবার জামাত-শিবিরের রাজনৈতিক দর্শনের যে প্রায়োগিক দিক, তার অনেক জায়গায় আমার আপত্তিও আছে। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত রাজনোইতিক দৃস্টিভঙ্গী যাই হোক, গনতান্ত্রিক চেতনা মত প্রকাশের যে স্বাধীনতা সংরক্ষন করে, তার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই এই ইস্যুতে কিছু আলোচনা করব। আমার ব্যক্তিগতভাবে এতে কোনো সন্দেহ নাই যে, যুদ্ধপরাধীদের বিচারের প্রসংগটি আওয়ামীলীগ ও তার শুভাকাঙ্খিদের যতটা না মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি দায়বদ্ধতা তার চাইতেও অনেক বেশী রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য এক ধরনের ধুর্ত ও কৌশলী পলিটিক্স। বিগত সময়ে জামাতের সাথে আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক মৈত্রি, আওয়ামীলীগের এবং মহাজোটের মদ্ধ্যেই অভিযুক্ত যুদ্ধপরাধীদের অবস্থান এবং অভিযুক্ত যুদ্ধপরাধীদের সাথে তাদের আত্বিয়তা, ব্যবসা বানিজ্য এই পলিটিক্স এর চেহারাকে খুব সহজেই নগ্ন করে দেয়। দ্বিতীয়ত, এই বিচার কতটুকু ন্যায়বিচার হবে, তা নিয়েও আমি ব্যক্তিগতভাবে আস্থাহীনতায় ভুগছি।

জামাত-শিবিরের প্রতি আওয়ামীলীগ ও প্রগতিশীলদের ফ্যসিবাদী আচরনের অনেক উধাহরন একেবারে হাতের কাছেই পাওয়া যায়। ২৮ শে অক্টবর বা সাম্প্রতিক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা তো এখনো পুরনো হয় নাই। যারা সুজোগ পেলেই জামাত শিবিরকে নির্মুল করার জন্য সব করতে পারে, তাদের ব্যবস্থাপনায় ন্যায়বিচার নিয়ে অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে করা আশংকাকে যৌক্তিক মনে করার যথেস্ট যুক্তি রয়েছে। তৃ্তীয়ত, যে আইনে বিচার করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তার ব্যাপারে দেশে বিদেশে অনেকেই আপত্তি করেছেন। এই আইনের অধীনে ন্যায় বিচার যথেস্ট বিঘ্নিত হবে।

ইন্টারন্যাশনাল বার এসোসিয়েশান এই আইন সংশোধন করার জন্য মতামত দিয়েছে। এই বিষয়গুলো যথেস্ট গুরুত্ব এবং বিবেচনার দাবী রাখলেও, তা কোনোক্রমেই যুদ্ধপরাধীদের বিচারের উদ্যোগকে বাতিল করে দেয় না। কারন, অপরাধের বিচার হতেই হবে, নৈতিক ও ধর্মীয় মানদন্ডে তা না চাওয়ার কোনো কারন থাকতে পারে না। দ্বিতীয়ত, আওয়ামীলীগের রাজনোইতিক বলয়ের বাইরেও একটি বিরাট অংশ এই বিচার মনে প্রানে চান। তৃ্তীয়ত, মুক্তিযুদ্ধে যারা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন, তাদের ইমোশন অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন এবং চতুর্থত, মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধপরাধী প্রসংগ নিয়ে যে বিভাজন, তার একটি উপসংহার প্রয়োজন আমাদের ভবিষ্যতের জন্য।

কাজেই, এই বিচার যত তারাতারি হবে ততই ভাল, এমন কি জামাত-শিবিরের ভবিষ্যত রাজনীতির জন্য ও। যদি সত্যিকার অর্থেই ন্যায়বিচার হয় (ন্যুরেম্বার্গ সহ বিশ্বের অধিকাংশ যুদ্ধপরাধীদের বিচারই ন্যায়বিচার হয় নাই), তাহলে সব পক্ষই সাধুবাদ জানাবে। যারা অভিযুক্ত হবে তাদেরকে বাদ দিয়ে কালিমা মুক্ত হয়ে জামাত শিবির নতুন করে তাদের রাজনীতি শুরু করবে, তুরস্ক এর একেপির মত দলের নাম বদলে পরের সারির নেতারা এগিয়ে আসলে খুব তারাতারি জনপ্রিয়তা পাবে এই নতুন দলটি। একসাথে মুক্তিযুদ্ধের আবেগকে পুজি করে আওয়ামী চেতনার ব্যবসা বন্ধ হবে, বন্ধ হবে যৌবনজ্বালার গায়ে মুক্তিযুদ্ধের ছাপ মারার নোংরা প্রগতিশীলতার ও। আর যদি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করে বিচারের নামে প্রহসন হয়, তাহলে জামাতের ৭১ এর ভুলের বড় রকমের প্রায়শ্চিত্য হবে।

সেটিও তাদের রাজনীতির ক্যাপিটাল হয়ে থাকবে, কিছুটা সহানুভুতিও হয়তো পাবে তারা। তবে, সংগোপনে জামাত শিবিরের নিজস্ব বলয়ে একটা প্রতিহিংসাও জন্ম নিবে, বিভাজন ও হয়তো থামবে না। ন্যায়বিচার না হলে, আন্তর্জাতিকভাবেও আমরা সমালোচিত হব, আভ্যন্তরিন বিভাজন বাড়বে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তি কিছুটা হলেও কলঙ্কিত হবে। সরকারের প্রতি আহবানঃ ১। বিচারকে প্রলম্বিত করে আগামী নির্বাচন পর্জন্ত নিবেন না।

২। যুদ্ধপরাধীদের বিচার আর ইস্লামী রাজনীতিকে নির্মুল – এই দুইকে সরলীকরন না করাই ভাল হবে। ৩। অভিযুক্ত ব্যক্তি অপরাধী প্রমানিত না হওয়ার আগ পর্জন্ত অন্তত সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা সংযত বক্তব্য দিবেন। ৪।

মহাজোট ও আওয়ামীলীগের মদ্ধ্যে যে সকল ব্যক্তির বিপক্ষে অভিযোগ আছে তাদের ও বিচারের আওতায় আনতে হবে। পুনশ্চঃ বিচার প্রক্রিয়া শেষ করেই আমরা যেন এদেশের দুখী দরিদ্র মানুষ আর সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি একটু নজর দেই। মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই মানবেতর জীবন যাপন করছে। কেবল বিচারের মধ্য দিয়েই তাদের প্রতি আমাদের দায়বোধ শেষ হবে না। গতবারের আইলা বিদ্ধস্ত মানুষগুলো এখনও কস্টে আছে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.