আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যুদ্ধপরাধীদের বিচার



যুদ্ধপরাধীদের বিচার মার্চ মাস আসলেই আমি একটা বিষয় খুব করে লক্ষ্য করি দেশের মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম কিভাবে জেগে ওঠে। পত্রিকাগুলোতে থাকে স্বাধীনতার কথা,যুদ্ধপরাধীদের বিচার নিয়ে অনেক রকম কথা। এবারও তার ব্যতিক্রম হয় নি। তবে এবারই প্রথম মনে হচ্ছে সত্যি সত্যি যুদ্ধপরাধীদের বিচারটা হবে। ঠিক যখন যুদ্ধপরাধীরা তাদের গায়ের থেকে এ চিহ্নটা ছলে বলে কৌশলে মুছেই ফেলেছে।

আমার বয়স যখন বারো বছর তখনকার একটা গল্প মনে পড়ে গেল এবারের বিচার হওয়া প্রায় নিশ্চিত ভেবে। আমি তখন সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। আমার শরীরের সবচেয়ে গোপন অঙ্গে এক ধরনের পাঁচড়া জাতীয় রোগ দেখা দিলো। এটা এমন একটা বয়স আর এমন একটা জায়গায় যে কাউকে বলতে পারলাম না আমি। দিন যায় আর আমার অবস্থার অবনতি হতে থাকে।

ঠিকমতো হাটতেও পারি না আমি। অবশেষে একদিন আমার immediate বড় ভাইকে বিষয়টা জানাই আমি। সে আমাকে একজন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। আমার অবস্থা দেখে ডাক্তার প্রথম যে কথাটা বলেছিলো সেটা হলো ‘একটু দেরি হয়ে গেলো না’। স্বাধীনতার আজ সাঁইত্রিশ বছর পরে যখন যুদ্ধপরাধী পশুগুলো দেশের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করে দেশটাকে পঁচিয়ে গলিয়ে নষ্ট করে ফেলেছে তখন দেশবাসীকে বিচারের প্রত্যাশা দেওয়া হলো,তাই আমার মনেও প্রশ্ন জাগে ‘একটু দেরি হয়ে গেলো না’।

তবু আজও যদি এদের বিচার করে শাস্তি দেওয়া সম্ভব হয় তবে দেশের মানুষগুলো আরও একবার মুক্ত হতে পারবে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। রাজাকার শব্দটার সাথে আমার প্রথম যখন পরিচয় হয় তখন আমি জানতামই না রাজাকার আসলে কারা। সে সময় রূপকথার গল্পের প্রতি ছিলো অনেক অনেক বেশি টান। তাই ধরেই নিয়েছিলাম রাজার মত কেউ হবে আর কি?এরপর যখন জানতে পারলাম স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যারা স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছিলো তাদেরই একটা দল রাজাকার। তখন থেকেই এসব পশুদের প্রতি জন্ম নেয় ঘৃণা।

বোধ করি এদেশের প্রত্যেকটি বিবেকবান মানুষ তাদের আমার মতো ঘৃণা করে। তাদের প্রতি ঘৃণা অটুট থাকলেও সতেরো বছর বয়স পার করার পর আমি জেনেছি আমার প্রথম ধারণার সাথেই এদের মিল খুঁজে পাওয়া যায় বেশি। তারা এদেশে রাজার মতই আছে। এ রাজ্য দখল করেই আছে। এ রাষ্ট্রের শত্রু হয়েও শাসক হয়ে থাকে।

আজব এক ব্যাপার স্বাধীনতার পরে জন্মেছি আমি সুতরাং যে আমাকে একজন রাজাকার দেখতে চাইলে হারিকেন নিয়ে খোঁজা উচিত ছিলো সেই আমাকে হয়তো তারই অনুগত হয়ে চাকরি করতে হবে। বিচারটা তাই এদেশের কোটি কোটি মানুষের সাথে বুক মিলিয়ে আমিও চাই। বিচারের নামে যেন জনগণের সাথে প্রহসন না করা হয়। মার্চ মাস পেরিয়ে গেলো। এখন আর এ বিচার নিয়ে কিছুই হয়তো পত্রিকায় আসবে না।

তারা আবার ডিসেম্বর মাসের জন্য অপেক্ষা করবে! তাই ভয় হচ্ছে বিচার কি থেমে যাবে না’কি তা কচ্ছপ গতিতে এগিয়ে চলবে! আমি নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি এবার যদি বিচার না হয় তবে সাঁইত্রিশ কেন চুয়াত্তর বছর পরও তা সম্ভব হবে না। তখন মানুষ ভুলেই যাবে এদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় রাজাকার বলে একদল পশু ছিলো যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিলো!হয়তো তারাই মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যাবে!এজন্য যারা এই বিচারের বিষয়টার সাথে জড়িত তাদের কাছে আবেদন বিচারটা যেন থেমে না থাকে। দেশের মানুষ যেন এ বিচারের সমাপ্তি দেখতে পায়। শাস্তির ধরনটা কেমন হবে সেটা নিয়ে অনেক কিছুই ভাববার আছে। তবে যারা এ বিচারের বিষয়টা নিয়ে আছে তাদেরকে সঠিক সিদ্ধান্তই নিতে হবে।

এমন যেন না হয় পাঁচ বছর পরে ঐ সব যুদ্ধপরাধীরাই আবার এদেরকে নিয়েই বিচার শুরু করে। বিচারের বিষয়টা নিয়ে শুধু এটুকুই বলব কোন যুদ্ধপরাধীরাই যেন সাধারন ক্ষমায় রক্ষা পেয়ে না যায়। যুদ্ধপরাধীদের পাশাপাশি আমি আর একটা বিষয় খুব ভালোভাবে লক্ষ্য করেছি বাংলাদেশ হওয়ার সাঁইত্রিশ বছর পরেও এদেশের মাটি থেকে পূর্ব পাকিস্তান নামটা যায় নি। ১৯৭১ সালের সেই ভয়াবহ যুদ্ধের সময় বুয়েটে ক্লাস হয়েছিলো একথা প্রথম শুনে অবাক হয়েছিলাম বটে কিন্তু কল্পনাও করতে পারি নি তার চেয়ার বেঞ্চের পেছনে আজও EPUET(East Pakistan University Of Engineering And Technology) লেখা থাকবে। কি এক আশ্চর্য ব্যাপার আমরা বাংলাদেশ পেয়েছি সাঁইত্রিশ বছর হলো কিন্তু বুয়েটের মতো জায়গা থেকেও ‘East Pakistan’ শব্দটা যায় নি।

বিষয়টা কারো কোনদিন চোখে পড়ে নি না’কি চোখে পড়েও স্বাভাবিক মনে হয়েছে সেটা বলতে পারি না। কিন্তু যে ‘East Pakistan’ বাহ্যিক ভাবে আজও ঘোরা ফেরা করছে সে যে যুদ্ধপরাধীদের মনের মাঝে ক্ষনে ক্ষনে করূনস্বরে হানা দেয় না একথা বলা কঠিন। আমরা যদি এই হানা প্রজন্মের পর প্রজন্ম বয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেই তবে পরিস্থিতি কতটা ভয়ানক হবে কল্পনা করা যায়। তাই এদেশের সর্বস্তরের মানুষের সাথে একাত্ম ঘোষনা করে আমিও বলি আমরা যুদ্ধপরাধীদের বিচার চাই এবং অতি অবশ্যই এ বিচারের নামে আমাদের সাথে যেন প্রহসন না করা হয়।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.