ভালো লাগে বই পড়তে
‘আমারে তো ঝাঁঝরা করি দিছে...!’ বলছিলেন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আবুল কালাম (৪০)। গতকাল বুধবার দুপুরে হাসপাতালের তিন তলার নয় নম্বর ওয়ার্ডে তাঁর শয্যাপাশে গেলে স্ত্রী বিলকিস বেগম চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র দেখিয়ে জানালেন, আহত ব্যক্তিদের মধ্যে তাঁর স্বামীর শরীরেই সবচেয়ে বেশি ৩৩টি গুলি লেগেছে।
সিলেটের জৈন্তাপুর সীমান্তে গত রোববার ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে আহত ১৯ জনের মধ্যে কালাম একজন। কালামের হাত-পা-বুক-পেটে গুলিবিদ্ধ হওয়ার স্থানগুলো দেখিয়ে বিলকিস বলেন, ‘কোনো জায়গা বাকি নাই, ছিটা গুলি (শটগানের ছররা গুলি) পেটে গিয়া আটকি রইছে...!’ শরীরে তীব্র যন্ত্রণা, তার পরও বর্ণনা দিচ্ছিলেন সেদিনের ঘটনার। তাঁর ভাষ্য, সেদিন বিএসএফ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে ভারতীয় খাসিয়াদের হাতে থাকা বন্দুক কেড়ে নিয়ে নির্বিচারে গুলি করে।
গুলিবিদ্ধদের উদ্ধার করার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে সীমান্তবর্তী ডিবির হাওর গ্রামের জহিরুল ইসলাম জানান, আহত হয়েছিলেন অনেকে। কেউ গুলিতে আর কেউ গুলতিতে। এর মধ্যে কালামকে উদ্ধার করা হয়েছে রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতির মধ্যে। তিনি জানান, সারা শরীর তাঁর রক্তাক্ত। কোথায় কী হয়েছে, কেউ জানেন না।
লোকটি ধানখেতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিলেন। দুই হাতে রশি বেঁধে আড়াই ঘণ্টা পথ ধানখেত দিয়ে টেনে টেনে নিরাপদে এনে তারপর পাঠানো হয় হাসপাতালে। অবস্থা বেশি গুরুতর হওয়ায় তাঁকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
জৈন্তাপুরের নিজপাট ইউনিয়নের ডিবির হাওরপারের ঘিলাতইল গ্রামের বাসিন্দা কালাম। ওসমানী হাসপাতালের চতুর্থ তলায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন একজন মুক্তিযোদ্ধাসহ আহত আরও পাঁচজন।
ঘটনা সম্পর্কে তাঁদের সবারই অভিন্ন ভাষ্য। ‘আমরার দেশে ঢুকি আক্রমণ সইতা পারিনি?’ এমন প্রশ্ন তুলে মুক্তিযোদ্ধা সোলেমান মিয়া (৭০), আসকর হোসেন (৪৫), রাম বিশ্বাস (২৫), আবদুর রহমান (২৪) ও মোহাম্মদ কবির (৩০) বর্ণনা করলেন সেদিনের ঘটনা।
তাঁরা জানান, গত রোববার সকাল নয়টা থেকে ভারতীয় খাসিয়ারা হাওরে মাছ ধরার চেষ্টায় সীমান্ত অতিক্রমের তোড়জোড় শুরু করে। ডিবির হাওরসহ পার্শ্ববর্তী ফুলবাড়ী, আসামপুর গ্রামের সাধারণ মানুষেরা তাঁদের পরিবারের নারী ও শিশু সদস্যদের নিরাপদে পৌঁছে দিয়ে বিডিআর সদস্যদের সাহস জোগাতে অবস্থান নেন এলাকায়। দুপুরবেলা যখন সীমান্ত (সীমান্ত পিলার নম্বর ১২৮৫) অতিক্রম করে প্রায় এক কিলোমিটার বাংলাদেশ অভ্যন্তরে ভারতীয়রা প্রবেশ করে, তখন তাদের হাতে ছিল গুলতি।
বৃষ্টির মতো গুলতি দিয়ে আঘাত করে ভারতীয়রা এগোচ্ছিল। পেছনে ছিল বিএসএফ। গ্রামবাসীর একটি দল গুলতির সঙ্গে আর কী কী অস্ত্র আছে পর্যবেক্ষণ করতে হামাগুড়ি দিয়ে মন্দিরটিলার কাছাকাছি গিয়ে দেখেন, দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্রও রয়েছে ভারতীয় খাসিয়াদের হাতে।
মুক্তিযোদ্ধা সোলেমান মিয়া জানান, একসঙ্গে চারটি গুলতির আঘাত তাঁর কপালে লাগলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। আবুল কালাম, আসকর হোসেন, আবদুর রহমানসহ ১০ থেকে ১২ জনের একদল গ্রামবাসী অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের প্রতিরোধ করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন।
আসকর হোসেন জানান, গ্রামের লোকদের বাঁচাতে বিডিআর কৌশলী হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। ভারতীয়দের মতো বিডিআর তাত্ক্ষণিক উত্তেজনা দেখালে গ্রামের কেউ আর প্রাণে বাঁচত না।
২১ রাইফেল ব্যাটালিয়নের একজন কর্মকর্তা জানান, সেদিন বিডিআরের ভূমিকা ছিল রক্ষণাত্মক। বিডিআর ভারতীয়দের মতো আক্রমণাত্মক হলে পরিস্থিতি অন্য রকম হয়ে যেত। ভারতীয় খাসিয়াদের হাত থেকে বন্দুক কেড়ে নিয়ে যখন বিএসএফ গুলি ছোড়া শুরু করে, তখন বিডিআর জবাবে পাল্টা গুলি ছোড়ে।
এরপর অনুপ্রবেশকারীরা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়।
ওসমানী হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ১৯ জনের মধ্যে আহত ছয়জনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে স্থানান্তর করা হয়। তাঁদের মধ্যে গুলতির আঘাতপ্রাপ্ত সোলেমান মিয়াকে গতকাল হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকি পাঁচজন চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে আবদুর রহমানের বুকে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।
জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ১২ জন। গতকাল পর্যন্ত চিকিৎসাধীন রয়েছে আখতার হোসেন (১৬) নামে এক কিশোর। তার ভাই বিল্লাল হোসেন জানান, জমি চাষ করতে গিয়ে আখতার গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
******এভাবে আর কত দেখতে হবে? এটার কি কোন স্থায়ী সমাধান হবে না?******
সরকার কি সীমান্তবর্তী বাঙালিদের নিরাপত্তা দিবে না?....
সূত্রঃ প্রথম আলো
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।