আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিমান নেই তবুও বিমানে যাতায়াত!



দেশের জন্য জাতীয় সংসদে আইন প্রণয়ন করেন যারা, সেই আইন প্রণেতাদেরই কারও কারও বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বাড়তি যাতায়াত বিল গ্রহণের সুস্পষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঢাকায় বসবাস করেন, অথচ নিজ জেলা থেকে বিমানে ঢাকায় যাতায়াত করে সংসদ অধিবেশনে যোগ দেন মর্মেও বিল নেন কেউ কেউ। এমনকি লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, পঞ্চগড় ও জয়পুরহাটের অনেক সংসদ সদস্যও প্রথমে সড়ক পথে সৈয়দপুর বিমানবন্দর এবং সেখান থেকে বিমানে ঢাকায় যাতায়াত দেখিয়ে বিল নেন সংসদ সচিবালয় থেকে। অথচ সৈয়দপুরে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চলাচল করছে না গত দু'বছর ধরে। অ্যারো বেঙ্গলও বন্ধ রয়েছে বহু বছর ধরে।

অথচ সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে ঢাকায় যাতায়াতের বিল তুলে নিচ্ছেন এসব সাংসদ। যদিও অধিকাংশ সাংসদের ক্ষেত্রে এ ধরনের অনিয়মের অভিযোগ নেই। বেশ কয়েকজন যাতায়াত ভাতাও নেন না। তারপরও সংশ্লিষ্টদের অভিমত, একজন আইন প্রণেতাও যদি এ ধরনের অনিয়মের আশ্রয় নেন, তা অনাকাঙ্ক্ষিতই বলতে হবে, যা গুরুতর অনিয়ম। এ প্রসঙ্গে কয়েকজন সাংসদের দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা যায়।

বিএনপির মহিলা সাংসদ শাম্মী আকতার ঢাকায় থাকেন। নির্বাচনী গেজেটে তার স্থায়ী ঠিকানা হবিগঞ্জের চুনারুঘাট। ঢাকায় থেকেও তিনি নিয়মিত সড়ক ও বিমান পথে যাতায়াতের ভাড়া নিয়ে চলেছেন। প্রতিবার যাতায়াত বিল নেন সাড়ে ১১ হাজার টাকারও বেশি। অথচ সড়কপথে যাতায়াত দেখালে হবিগঞ্জ-ঢাকা ২৫২ কিলোমটার দূরত্ব ৬ টাকা হারে যাওয়া ও আসায় ভাড়া হয় ৩ হাজার টাকা মাত্র।

কিন্তু তিনি প্রতিবার হবিগঞ্জ থেকে সিলেট বিমানবন্দর এবং সিলেট থেকে ঢাকা বিমানে আসার ভাড়াসহ সড়ক ও আকাশপথ মিলিয়ে (১৫০০ + ৯৯৫০) টাকা করে মোট ১১,৪৫০ টাকা বিল নিচ্ছেন। জাতীয় সংসদের হিসাব শাখার বিল নম্বর ৩১২৬ মারফত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে ২০০৯-এর সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বেশ কয়েকবার বিল নিয়েছেন কখনোবা বিল ১৩ হাজার টাকারও বেশি হয়েছে। এমনকি বিরোধী দলের সংসদ বর্জনকালীন (দ্বিতীয় ও তৃতীয় অধিবেশনে) বিলও নেওয়ার প্রমাণ আছে। যদিও ওই সময়ে বিরোধী দলের কোনো সদস্য সংসদেই যোগ দেননি! এ ধরনের অনৈতিকতার পরিচয় শুধু শাম্মী আকতার দেননি, আরও অনেক সাংসদের বাড়তি বিল গ্রহণের নজির রয়েছে। যারা উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে সৈয়দপুর বিমানবন্দর হয়ে আকাশপথে ঢাকা এসেছেন বলেও বিল নিয়েছেন, বিমান পথ বন্ধ থাকা সত্ত্বেও।

লক্ষ্মীপুর-৪-এর এমপি আশরাফ উদ্দিন নিজের বাড়ি থেকে লঞ্চে চট্টগ্রাম এবং সেখান থেকে বিমানে ঢাকায় আসার বিল করেছেন। চট্টগ্রাম অঞ্চলের আরও অনেক সাংসদ বিমানে যাতায়াতের বিল নিয়েছেন। তারা প্রথমে সড়ক পথ তারপর বিমান বিল করে প্রায় ১২ হাজার টাকার মতো যাতায়াত বিল নেন। মৌলভীবাজার এলাকার সাংসদরাও একইভাবে বিমান ভ্রমণ বিল নেন। এ ব্যাপারে শাম্মী আকতার ঢাকায় বসবাস করে বিমানের ভাড়া বাবদ বিল নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আমি নতুন এমপি।

কোন যুক্তিতে এভাবে বিল নেওয়া হয়, তা চিফ হুইপসহ সিনিয়র এমপিরা ভালো বলতে পারবেন। বিল কীভাবে তৈরি করা হয় আমি জানি না। স্টাফরা তৈরি করে দেয়। বিলে উল্লেখ করা তারিখে যাতায়াত না করলেও এলাকায় তো যাওয়া-আসা করতেই হয়। সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, বিমান ভ্রমণ দেখিয়ে এ ধরনের অতিরিক্ত বিল নেন প্রায় ২০০ সাংসদ।

অতিরিক্ত বিল ও ভ্রমণ পাস নিয়ে সাংসদদের অতিরিক্ত বিমান ভ্রমণের কারণে বছরে বাড়তি খরচ হয় ২০০ কোটি টাকারও বেশি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.