আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনেক প্রতিবন্ধী নারীদের ঘর ভাংছে তার প্রতিবন্ধিতার কারণে



শ্রীমতি আলো রানি একজন জন্মগত শারীরিক প্রতিবন্ধী নারী। বরিশাল জেলার মেহেদীগঞ্জ উপজেলার পৌরসভার অন্তর্গত কাঁকড়ি গ্রামে এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম গ্রহণ করে। চার ভাই-বোনের মধ্যে সে সবার ছোট। দারিদ্র ও প্রতিবন্ধিতার কারণে বিদ্যালয়ে লেখা-পড়া শেখার সৌভাগ্য হয় নি। মাত্র বার বছর বয়সে বাবা-মা উভয়কে হারান।

ফলে বড় ভাইয়ের লালন-পালনে বড় হয়। যৌবনে পদার্পণ করলে এক রিকসা চালকের সাথে যৌতুকের বিনিময়ে হিন্দু রীতি অনুযায়ী বিয়ে হয়। কিন্তু দুই সন্তান জন্ম গ্রহণ করার পর স্বামী তাকে ডিভোর্স দেন। ফলে সন্তানসহ ভাইয়ের বাড়িতে ফিরে আসে। এভাবে কাটে কয়েক বছর।

বর্তমানে ‘বরিশাল ডিজএ্যাবল্ড পিপলস্ অর্গানাইজেশন টু ডেভেলপমেন্ট (বরিশাল ডিপিওডি) নামক সংগঠনের ‘‘পারসনস্ উইথ ডিজএ্যাবিলিস সেলফ ইনেসিয়েটিভ টু ডেভেলপমেন্ট (পিএসআইডি)’’ প্রকল্পের মাধ্যমে ঋণ ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে বর্তমানে ম্যাট বোনার কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছে। কেস স্টাডি-২: জুলেখা আকতার একজন গ্রামীণ শারীরিক প্রতিবন্ধী নারী। গাজীপুর জেলার কামারজুরি গ্রামের জুলহাস মিয়া নামে এক হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম। মাত্র চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত লেখা-পড়া করার সুযোগ ভাগ্যে জুটেছে। পরিণত বয়সে বিয়ে হয় এক দরিদ্র দিন মজুরের সাথে।

গায়ে হলুদ শুকাতে না শুকাতে তার প্রতিবন্ধিতাকে নিয়ে শুরু হয় স্বামী ও শাশুড়ি কর্তৃক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। জুলেখা ওসব নির্যাতন, লাঞ্ছনা-গঞ্জনা নীরবে সহ্য করতে থাকে। এক সময় নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি চলে আসে। এমন সময় ‘এনএফভিএইচ’ নামে একটি সংগঠন একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় বেজ লাইন সার্ভের মাধ্যমে তাকে সনাক্ত করে। এরপর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলে।

এতে সে আত্মপ্রত্যয়ে বলিয়ান হয়ে ওঠে। তার পর ঋণ নিয়ে পৌলট্রি ফার্ম করে স্বাবলম্বী হয়েছে। শুধু শ্রীমতি আলো রানী ও জুলেখা আকতাই নয়, আমাদের বাংলাদেশে প্রায় ৭৫ লাখ নারী বিভিন্ন প্রতিবন্ধিতার শিকার। এরা সবচে অবহেলিত। একদিকে নারী অন্যদিকে প্রতিবন্ধী।

এছাড়া প্রতিবন্ধিতার কারণে প্রায় ১০ লক্ষ বিবাহযোগ্য নারীর বিয়ে হচ্ছে না। অথচ তাদের প্রজনন ক্ষমতা রয়েছে। বিবাহিত প্রতিবন্ধী নারীদের অনেকে বিনা কারণে তালাক প্রাপ্তা হচ্ছে। স্বামী ও স্বামীর পরিবার কর্তৃক নানা কায়দায় নির্যাতিত হচ্ছে। আইন সম্বন্ধে অবগত না হওয়ায় অনেকে আইনের আশ্রয় নিতে পারছেনা।

অনেকে আইনের আশ্রয় নিলেও প্রতিকার পায় না। সমাজ অসচেতন বলে ‘ করুণ রোদনে তিলে তিলে ক্ষয়’ হচ্ছে এসব বিবাহ উপযোগী নারীদের জীবন বললেন, বিশিষ্ট সমাজকর্মী ও মনোবিজ্ঞানী ডা. ফাহমিদা মঞ্জু মজিদ। তিনি আরো বলেন, প্রতিবন্ধী নারীদের প্রতিবন্ধিতার কারণে ডিভোর্স দিলে কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। তাই বাংলাদেশের আইনে প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য সংশোধনী আনা প্রয়োজন। বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতি (বিপিকেএস)-এর নির্বাহী পরিচালক আবদুস সাত্তার দুলাল বলেন, আজকাল প্রতিবন্ধী নারীরা ঘরে বসে নেই।

তারা বিভিন্ন আয়বর্ধকমূলক কাজের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে। বিয়ের ক্ষেত্রে পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করা উচিত। কারণ, এরাও মানুষ। এরা কারো বোন, কারো ফুফু, কারো খালা। প্রতিবন্ধিতার কারণে প্রতিবন্ধী নারীরা স্বামীর পরিবার কর্তৃক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতিত হচ্ছে।

সে জন্য প্রয়োজন কঠোর আইন। জাতীয় প্রতিবন্ধী নারী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের মহাসচিব, আশরাফুন নাহার মিষ্টি বলেন, প্রতিবন্ধী নারীদের আইনী সহায়তার জন্য আমরা ইতোমধ্যে মহিলা আইনজীবী সমিতি ও সরকারের সংশি¬ষ্ট মন্ত্রণালয় সমূহের সাথে যোগাযোগ করছি। সরকারের নিকট আমাদের দাবি তালাক প্রাপ্তা প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য ‘স্পেশাল আশ্রম কেন্দ্র’ স্থাপনের। লেখক- আজমাল হোসেন মামুন (উন্নয়নকর্মী, ব্লগার ও সাংবাদিক) আনল মসজিদ রোড, দক্ষিণখান, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০। মোবাইল: ০১১-৯১০৮৯০৭৫


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.