মাত্র ৬৬ বলে অপরাজিত ১৭৫ রান করে সারাবিশ্বকে আরেকবার দেখালেন তাঁর অতিমানবীয় ক্ষমতা। ২১ এপ্রিল আইপিএলে তিনি মাত্র ৩০ বলে সেঞ্চুরি করেন, যা কোনো ধরনের ক্রিকেটে দ্রুতগতির শতক। এ ইনিংসে ছিল ১৭টি ছক্কা। শুধু টি-টোয়েন্টি কিংবা ওয়ানডে নয়, তিনি টেস্ট ক্রিকেটেরও অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। টেস্টে তাঁর রয়েছে দুটি ট্রিপল সেঞ্চুরি।
গেইলের জন্ম ২১ সেপ্টেম্বর ১৯৭৯, জ্যামাইকায়।
আমার ছোটবেলা কেটেছে রোলিংটন শহরে। সাবিনা পার্কের ছায়ায় বড় হতে হতে সব সময় দুটো স্বপ্ন দেখতাম। প্রথম স্বপ্ন ছিল, আমি জ্যামাইকার হয়ে খেলব। দ্বিতীয় স্বপ্নটিও একই রকম, আমি খেলব ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে।
সৌভাগ্যক্রমে আমার দুটো স্বপ্নই পূরণ হয়েছে।
আমি সব সময় পরিশ্রম ও মাথা খাটিয়ে খেলি। আমি নিজেকে নিয়ে বড়াই করি না। আজ আমি ক্রিকেটার হিসেবে যেখানে উঠেছি, সেখানে আসতে কি কষ্ট করতে হয়নি? আমার যদি সাফল্যের জন্য ক্ষুধা ও প্রত্যাশা না-ই থাকত, তাহলে কি আমি এখানে আসতে পারতাম? চারপাশে কিছু লোক থাকবেই, যারা সমালোচনা করা ছাড়া কিছুই বোঝে না। তারা নিজেরা নিজেদের কাজে অমনোযোগী; কিন্তু অন্যদের সমালোচনায় ব্যস্ত তারা।
এ রকম কিছু লোক আমার টেস্ট ক্যারিয়ার-সেরা ৩৩৩ রানের পরও আমাকে অবহেলা করেছে।
আমি কখনোই কিছু লুকাই না। আমি ক্রিস্টোফার হেনরি গেইল। আমি যা বিশ্বাস করি, তা-ই বলি। আমি পেশাদার ক্রিকেটার।
আমি জ্যামাইকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক। আমার সামর্থ্যে যা আছে, তা-ই আমি করি। ক্রিকেটই আমার রুটি-রুজি।
ক্রিকেটার হিসেবে আমি এখন ক্যারিয়ারের শেষ দিকে। অন্যান্য পেশার লোকজন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা করে।
তারা ষাট বছর পর্যন্ত কাজের সুযোগ পায়, অর্থকড়ি জমায়। কিন্তু ক্রিকেটাররা মাত্র আট বছর তাদের ক্যারিয়ার গড়ার সময় পায়। বয়স ২৪ থেকে ৩২ বছর পর্যন্ত তারা পরিশ্রম করে টাকা জোগায়, যেন বাকি জীবনটা ভালোমতো চলে যায়। ক্রিকেটারদের মধ্যে কেউ কেউ ভাগ্যবান, যারা পরবর্তী সময় কোচ বা ভারাভাষ্যকার হিসেবে ক্যারিয়ার বিস্তৃত করার সুযোগ পায়। সত্যি বলতে, আমার এমন কোনো সুযোগ বা ইচ্ছা নেই।
আমি আমার পরিবারকে সব সময়ের জন্য বেশি গুরুত্ব দিতে চাই।
আমি আমার ক্রিকেট দলের বন্ধুদের একটি কথা জানাতে চাই, আমি ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে বিশ্বসেরা অনেক বোলারের মুখোমুখি হয়েছি। ঘণ্টায় ১০০ মাইল বেগে বল করে, এমন বোলারের সামনে দাঁড়িয়ে ওপেন করেছি। তাদের সামনে নির্ভয়ে দাঁড়াতাম। কারণ, আমি বিশ্বাস করি, আমি দাঁড়াতে পারি।
তোমাদের বলতে চাই, তোমরা যদি বিশ্বাস না করো, তাহলে তোমরাও দাঁড়াতে পারবে না।
তরুণদের বলব, হতাশ হয়ো না। যখন দেখবে একটি পথ বন্ধ হয়ে গেছে, তখন আরেকটি পথের দরজা খুলে যাবে তোমার জন্য। নিজের ওপর বিশ্বাস রেখে এগিয়ে চলো। সৎ থাকো।
আমি এমনই এক পথে চলার চেষ্টা করছি। আমার আত্মবিশ্বাস আছে, আমি পথের সব বাধা জয় করবই।
আমি গত বিপিএলে [বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ] ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের হয়ে একটি সেঞ্চুরি করেছিলাম। এর আগেরবার যখন বাংলাদেশ সফরে যাই, তখন ঠিকমতো খেলতে পারছিলাম না। ঢাকায় পৌঁছানোর ১২ ঘণ্টার মধ্যে এমন একটি শতক আমার জন্য ছিল বড় অর্জন।
এর মাধ্যমে আমি আবার ফিরে আসছি বলেই ঘোষণা দিই। খেলায় যখন এক পাশে উইকেট পড়ছে, তখন আরেক পাশে দাঁড়িয়ে নিজের খেলা খেলে যাওয়াটা বেশ কষ্টকর। এ ধরনের পরিস্থিতিতে আমি সব সময়ই মাথা ঠান্ডা রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাই। কিন্তু আমি রান রেটের দিকে খেয়াল রাখি। আমি সব সময় চেষ্টা করি বেশি বল খেলতে।
সব ধরনের পরিস্থিতিতে আপনাকে সব সময়ই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে থাকতে হবে। খেলার শেষ ওভারের দিকে, আমি সুযোগে থাকি। ভালো বলটিকে বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে বোলারদের চমকে দেওয়ার চেষ্টা করি। আমি শুধু সেঞ্চুরি করার জন্য কিংবা ধুমধাম শট খেলার জন্য মাঠে নামি না। অনেকে মনে করে, বড় বড় ছক্কা হাঁকানো বেশ কষ্টকর।
কিন্তু যখন সুযোগ আসবে, তখন আমি বসে থাকব নাকি! সহজ বলগুলোকে বুদ্ধি খাটিয়ে ছক্কা বানাতেই মজা। তবে আমি কেন যে ছক্কা হাঁকাই কিংবা বড় বড় শট খেলি, তা নিজেই জানি না! এটা মনে হয় আমার সহজাত। আমি কোনো কিছু চিন্তা না করেই তা করি। সত্যি বলতে কি, মন ও শরীরকে একসঙ্গে পরিচালনা করতে হবে। দ্বিধা থাকা চলবে না।
মাঠে চেষ্টা করতে হবে, কিন্তু সব সময় মাথা ঠান্ডা রাখা বেশি জরুরি। বড় বড় সাইজের ছক্কা হাঁকাতে হলে শরীর ও মনের মধ্যে ব্যালান্স থাকা জরুরি। বোলাররা কখনোই সহজ বল করবে না। কিন্তু কঠিন বলকে নিজের মতো করে বানিয়ে ছক্কা হাঁকাতে হবে। প্রথম ছক্কা মারার পর এমনিতেই মানসিক শক্তি শরীরে ভর করে।
ছক্কা পেটানোর জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। ছক্কা হাঁকাতে কার না ভালো লাগে!
অনেকেই আমাকে প্রশ্ন করেন, আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সময় গ্যাংনাম স্টাইলে নাচানাচি করি। আইপিএলে কেন নয়? আমি মনে করি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সময়ই তো বেশি নাচা যায়। যদি আপনি উইকেট পান, পুরো খেলাটাই ক্রিস গেইলের জন্য, তখন তো আপনি নাচবেনই। আমি আনন্দে বিশ্বাসী, আমি দর্শকদের আনন্দ দিতে চাই।
কখনো কখনো আমি ওভারের প্রথম বল বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে দিই। তখন আমার বোলারকে প্রশ্ন করতে ভীষণ ইচ্ছা করে, ‘ওহে বোলার, তুমি কি আমার জন্য দুঃখ পেয়েছ?’ আমরা তো এ জন্যই আইপিএলে খেলতে এসেছি। আমাদের জন্য অনেক অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। আমাদের সেরাটাই তো দেখানো উচিত।
ইএসপিএন ক্রিকইনফোর সাক্ষাৎকার অবলম্বনে লিখেছেন জাহিদ হোসাইন খান।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।